আগামী ২৭ এপ্রিল উচ্চমাধ্যমিক জীববিদ্যার পরীক্ষা৷ ৭০ নম্বরের মধ্যে ১ নম্বরের জন্য ১৪টি সঠিক উত্তর বেছে নেওয়ার প্রশ্ন থাকে। সঙ্গে ১ নম্বরের ৪টি প্রশ্ন থাকে। দুটি মিলিয়ে মোট ১৮ নম্বর। পাঠ্যাংশের প্রায় সব জায়গা থেকেই এখানে প্রশ্ন আসতে পারে। কাজেই সাজেশন নয়, এখানে বিগত বছরের ও নমুনা প্রশ্নের বই থেকে অভ্যাস করা জরুরি৷ এখানে যে ধরনের প্রশ্ন থাকে ধারাবাহিকতা অনুযায়ী, সেগুলি গতানুগতিক। ফলে পাঠ্যবিষয়ের সঙ্গে যাদের যোগাযোগ আছে তারা সহজেই উত্তর করতে পারবে। বিকল্প নির্বাচনমূলক প্রশ্নের উত্তর করবার সময় মনে রাখবে যে যতগুলি বিকল্প দেওয়া থাকে, তার মধ্যে একটি উত্তর সঠিক, বাকিগুলি ভুল। সেক্ষেত্রে যদি মনে হয় একাধিক উত্তর ঠিক, সেখানে প্রশ্ন ছেড়ে আসবে না। তোমার বিচারে যেটি ঠিক মনে হবে, সেটি লিখবে। পরীক্ষায় প্রয়োজনের বেশি উত্তর লেখা যেমন ঠিক নয়, তেমনি, ছেড়ে আসাও ঠিক নয়। খাতায়, প্রশ্নের ক্রম অনুসারে পরপর উত্তর লেখা উচিত৷
এবার আসি ২ নম্বরের প্রশ্নের প্রসঙ্গে। এখানে যুগ্ম বিকল্প ভিত্তিক ১০টি প্রশ্ন থাকে যার থেকে ৫টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। ইতর পরাগযোগের দুটি সুবিধা, মৌমাছির লিঙ্গ নির্ধারণ পদ্ধতি, প্লিওট্রফি কাকে বলে ও তার উদাহরণ, মলিকিউলার সিজার (কাঁচি) ও মলিকিউলার গ্লু (আঠা) কাকে বলে, ইত্যাকার প্রশ্ন এখানে অংশে আসে বা আগে এসেছে। ধরাবাঁধা নিয়ম বা বাক্যের সংখ্যা নির্ভর করে প্রশ্নের ধাঁচের ওপর, কোথায় কতটা লিখতে হবে, সেটা তোমরাই ঠিক করবে। অতিরিক্ত লেখার অভ্যাস ঠিক নয়, আবার মৌমাছির লিঙ্গ নির্ধারণের প্রশ্নে একটি ওয়ার্ড ডায়াগ্রাম করে দিলে বা ইতর পরাগযোগের প্রশ্নে বলা না থাকলেও উদাহরণ দেওয়া প্রয়োজন। এগুলো সবই তোমরা প্র্যাক্টিসের সময় খেয়াল করবে।
উপরের দুটি অংশ থেকে সাজেস্টিভ কিছু প্রশ্ন তৈরি করে যাওয়া ঠিক হবে না, কারণ পাঠ্যবিষয়ের যেকোনও জায়গা থেকেই প্রশ্ন আসতে পারে। তার চাইতে ৫০টি নমুনা প্রশ্নপত্রের (উচ্চমাধ্যমিক সহ) গড়ে ১০টি হিসেবে ৫০০টি প্রশ্ন তৈরি করে যাওয়া ঠিক হবে। এবার আসি, ৩ নম্বরের ৯টি ও ৫ নম্বরের ৩টি প্রশ্নের উত্তরের জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে সেই আলোচনায়। ৩ নম্বরের প্রশ্নের ৯টি প্রশ্নের সাধারণত ৫টির বিকল্প প্রশ্ন থাকে। চারটি সরাসরি উত্তর করতে হয়, অর্থাৎ বাধ্যতামূলক। ইউনিট অনুসারে যে যে অংশগুলি এখানে বিশেষ প্রণিধানযোগ্য বা জরুরি এখানে উল্লেখ করলাম।
ইউনিট: ১
● পরাগযোগের বিবিধ প্রকার ও তার উদাহরণ
● উদ্ভিদের দ্বিনিষেক (ছবিসহ)
● অ্যাপোমিক্সিস, পার্থেনোজেনেসিস, পার্থেনোকার্পি, পলিএম্ব্রায়নি কাকে বলে ও উদাহরণ।
● মানুষের জননতন্ত্রের গঠন অংশগুলির নাম ও কাজ।
● শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয়ের গঠনচিত্র।
● স্পার্মাটজেনেসিস ও উজেনেসিসের ঘটনাবলি।
● শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর গঠন।
● নিষেকের পর্যায়গুলির প্রাথমিক ধারণা থাকা দরকার। কী কী ঘটে পরপর জেনে রাখতে হবে।
● প্ল্যাসেন্টার গঠন ও কাজ। হরমোনের ভূমিকা।
● জনসংখ্যা বৃদ্ধি, এসটিডি, ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন।
ইউনিট: ২
● মেন্ডেলিজম’র ব্যতিক্রম—অসম্পূর্ণ প্রকটতা ও সহ প্রকটতা। বহুজিন উত্তরাধিকার ও প্লিওট্রফি। মাল্টিপল অ্যালীল। সবগুলির উদাহরণ দিতে হবে।
● ডাউন’স, টার্নার’স ও ক্লাইনেফেল্টার’স সিন্ড্রোম।
● ডিএনএ—জিনবস্তু, গ্রীফিতের পরীক্ষা।
● ডিএনএ অণুর গঠন, ভৌত ও রাসায়নিক।
● আরএনএ প্রকার।
● ডিএনএ প্রতিলিপিকরণ বা রেপ্লিকেশন, ট্রান্সক্রিপশন সংক্ষিপ্ত ধারণা।
● ল্যাক ওপেরণের গঠন ও তার চিত্র।
● ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টিং কাকে বলে? হিউম্যান জিনোম প্রোজেক্ট।
● হার্ডিওয়েনবার্গ নীতি ও তার প্রয়োগ।
● ডারউইন তত্ত্বের ধারণা।
ইউনিট: ৩
● সহজাত ও অর্জিত অনাক্রম্যতা কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
● অ্যান্টিবডির গঠন ও প্রকার, কাজ।
● টিকা ও টিকাকরণ।
● প্যাথোজেন ও প্যারাসাইটের পার্থক্য। উদাহরণ।
● ম্যালেরিয়া, অ্যাসকেরিয়েসিস, অ্যামিবায়োসিস কীভাবে ছড়ায়, কেন ঘটে, প্রতিকারের উপায় কী কী?
● ক্যানসার—প্রকার, কোষের বৈশিষ্ট্য।
● এইচআইভি
● বয়ঃসন্ধিকালীন সমস্যা, নেশার প্রভাব।
● খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে জীবাণুর ভূমিকা।
● বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের নানা দিক। শক্তি উৎপাদন।
● বায়ো কন্ট্রোল এজেন্ট ও জৈব সার।
ইউনিট: ৪
● প্লাসমিড, ভেক্টর, রেসট্রিকশন এন্ডোনিউক্লিয়েজ, ক্লোনিং, জিন থেরাপি, রিকম্বিন্যান্ট ডিএনএ’র মতো বিবিধ বিষয়ের সংজ্ঞা ও উদাহরণ।
● কৃষিতে জৈবপ্রযুক্তির ব্যবহার। জিএমও’র গুরুত্ব ও মতদ্বৈততা। বিটি তুলো, বেগুন ইত্যাদি।
● ইনসুলিনের উৎপাদন ও ব্যবহার।
● জৈবনিরপত্তা, বায়ো-পাইরেসি, পেটেন্ট।
ইউনিট: ৫
● বায়োমের ধারণা, হ্যাবিটাট ও নিশে’র ধারণা ও উদাহরণ।
● জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জন্মহার, মৃত্যুহার, বৃদ্ধি কার্ভ বা লেখ।
● জনসংখ্যার বৃদ্ধির কারণ ও ফলাফল।
● জীবের বিবিধ সম্পর্ক—মিথোজীবীতা, পরজীবীতা, কমেনসালিজম, অ্যামেনসালিজম ইত্যাদি। উদাহরণ।
● জীববৈচিত্র্যের নানা দিক।
এই বিষয়গুলি সামনে রেখে এবং পাঠ্যাংশের অন্যান্য দিকগুলিকেও গুরুত্বসহ দেখে গেলে তার থেকেই প্রশ্ন আসবে ধরে নেওয়া যায়। প্রশ্নচর্চা করে যাও। মনে রেখো, প্রকৃত যোদ্ধা কিন্তু সবসময় জয়লাভ করতে চায়। যুদ্ধে আত্মরক্ষা করতেই হয়, সেটা কিন্তু যুদ্ধ নয়। পরীক্ষা প্রস্তুতিতেও তাই শুধু উত্তরের চর্চাই শেষ কথা নয়। জিততে হলে প্রশ্নের ‘অস্ত্র’ কতটা ধারালো তার আগাম আন্দাজ থাকা চাই। অতএব, প্রশ্ন দেখো, উত্তর ভাবো। সেটাই একমাত্র পথ। শুভেচ্ছা রইল৷