বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


সায়ন সাহা।

করোনা পরিস্থিতিতে মাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যেই আমাদের স্কুলে জেইই এবং নিট-এর জন্য পড়ানো শুরু করা হয়েছিল। আমি পঞ্চম শ্রেণি থেকেই নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয়ের ছাত্র। একাদশ শ্রেণিতেও এই বিদ্যালয়ে ভর্তি হই। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়াশুনা করবো বলে জীববিদ্যা নিইনি। আমার বিষয়গুলি ছিল: বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন এবং পরিসংখ্যানবিদ্যা।
মূলত ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়াশুনার ওপর মনোসংযোগ করলেও, বিদ্যালয়ের সিলেবাস-ভিত্তিক পড়াশুনাও নিয়মিত করেছি। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সর্বতোভাবে আমাকে সহায়তা করছেন। আমাদের বিদ্যালয় আবাসিক হওয়ায় বন্ধুদের সব সময় পাশে পেয়েছি। তবে আমায় সর্বাধিক সহায়তা করেছেন আমার মা-বাবা ও আমার দাদু-দিদা। সব কঠিন পরিস্থিতিতে আমার পাশে থেকে আমাকে সাহস জুগিয়েছেন। আমি সব সময় তাদের প্রতি ঋণী থাকবো।
আরও পড়ুন:

শিক্ষক দিবস আসলে ভাবার দিন, ভাবতে শেখানোর দিন

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-১১: মাতৃরূপে প্রথম পুজোগ্রহণ

স্যারেরা সব সময় আমাদের বুঝিয়ে বলতেন ক্লাসের পড়া ক্লাসে করতে, যাতে শেষ সময়ে পরীক্ষার সময় চাপ না সৃষ্টি হয়। হোস্টেলের নিয়মানুবর্তিতা আমার পড়াশুনায় যথেষ্ট সাহায্য করেছে। তাছাড়াও বছরের কিছু কিছু সময়ে বিদ্যালয় পরিচালিত নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বক্তৃতা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে।
আরও পড়ুন:

যত মত, তত পথ, পর্ব-৫: ঈশ্বরের আনন্দ ও সংসার—শ্রীরামকৃষ্ণ ও রবীন্দ্রনাথ

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-১৪: মুহূর্ত মিলায়ে যায় তবু ইচ্ছা করে, আপন স্বাক্ষর রবে যুগে যুগান্তরে

বিদ্যালয় বছরে তিনবার করে পরীক্ষা নেওয়া ছাড়াও অন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এর সহায়তায় দুটি মক টেস্ট নিয়েছে, যার ফলে পরীক্ষায় লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে আমি যথাযথ ধারণালাভ করেছি। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার দু’ মাস আগে স্যারেরা অতিরিক্ত ক্লাস নিয়েছেন। এই সময়ে ধরে টেস্ট পেপার করানো ছাড়াও রচনা ও অন্যান্য লিখন যত্ন সহকারে প্রতিটি ছাত্রকে শিখিয়েছেন, যার ফলে পরীক্ষায় অনেক উপকৃত হয়েছি।
আরও পড়ুন:

ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-১০: সাবিত্রীদেবীর দৃষ্টিতে টুকরো সময়

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৭: নাক বন্ধ হলেই নাকের ড্রপ? এতে শরীরে কোনও ক্ষতি হচ্ছে না তো?

জানুয়ারি থেকে জাতীয় স্তরে নানা পরীক্ষা শুরু হয়ে যাওয়ায় উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার সিলেবাসের পড়ায় সামান্য ভাটা পড়ে। জানুয়ারি মাসে জেইই মেন-এর পরীক্ষার পর থেকে আবার পুরোদমে উচ্চমাধ্যমিকের পড়াশুনা শুরু করি। টেস্ট পেপার থেকে বড় প্রশ্ন বেছে উত্তর তৈরি করা, পাঠ্য বই গুলি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়া, প্রভৃতি কাজে মা আমায় সাহায্য করেছেন। অতিমারি পরবর্তী পরিস্থিতিতে বাবা প্রয়োজনীয় বইগুলি জোগাড় করে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১৩: সুন্দরবনের গ্রামরক্ষক দেবতা আটেশ্বর

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-২৮: প্যায়ার করনে ওয়ালে প্যায়ার করতে হ্যায় শান সে— আশার কণ্ঠ ও আরডি-র সুর, অনবদ্য

ইঞ্জিনিয়ারিংকেই মূল উদ্দেশ্য মনে করলেও উচ্চমাধ্যমিকের জন্য যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি, আশা করেছিলাম যে পরীক্ষায় বেশ ভালো ফল হবে। রাজ্যে প্রথম দশের মধ্যে স্থান লাভ করে আনন্দিত হয়েছি। মনে হয়েছে পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। তবে যে কারণে আমি সর্বাধিক উচ্ছ্বসিত হয়েছি, তার কারণ আমার মা-বাবা ও দাদু-দিদার মুখে আনন্দের ছাপ। তাঁদের পরিশ্রম ও সহায়তার জন্য আমি সর্বদা কৃতজ্ঞ থাকব।
* সায়ন সাহা, নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় নবম স্থান অধিকারী।

Skip to content