আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ মার্চ ২০২৩ মাধ্যমিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। জীবনবিজ্ঞান পরীক্ষা ২৮ ফেব্রুয়ারি হবে। এতদিন যা পড়েছি, যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি এবং পরীক্ষা কেন্দ্রের জন্য কী কী কথা মনে রাখা দরকার, সেটা মনে করিয়ে দিতেই এই লেখা। পাঠ্য বিষয়ের কোন কোন অংশ বিশেষ ভাবে দেখা দরকার সেটাও এখানে আলোচনার চেষ্টা করব।
প্রথমেই বলব, তোমরা প্রতিটি অধ্যায়ের পাঠ্য বিষয় ভালোভাবে পড়বে। মূল বইটি প্রথমে ভালো করে পড়ে তারপর প্রশ্ন ও তার উত্তর অংশ অনুশীলন করতে হবে। জানি, তোমরা সেভাবেই করেছ।
● প্রথম ভাবমূলে মোট পাঁচটি উপাংশ— গাছেদের চলন ও গমন, গাছের হরমোন, প্রাণির হরমোন, প্রাণির স্নায়ুতন্ত্র এবং প্রাণির গমন।
● দ্বিতীয় ভাবমূলে আছে কোষ ও তার বিভাজন, জনন, ফুল গাছের জনন, বৃদ্ধি ও বিকাশ।
● তৃতীয় বিভাগটি বংশগতি ও জিনগত রোগ দুটি অধ্যায় নিয়ে তৈরি হয়েছে।
● চতুর্থ অধ্যায়ে আছে বিবর্তন ও অভিযোজন এবং শেষ ভাবমূ্লে আছে চারটি অংশ, নাইট্রোজেন চক্র, পরিবেশ দূষণ, পরিবেশ ও মানুষ ও জীববৈচিত্র্য ও সংরক্ষণ।
পরীক্ষার আগে সিলেবাসের প্রতিটি অংশকে সাজিয়ে মনে রাখা খুব দরকার। কোথায় কি আছে সেটা মনে গেঁথে নিতে হবে। যেমন ধরো, গাছেদের হরমোন ও প্রাণিদের হরমোন অধ্যায় দুটি পাশাপাশি রেখে আমাদের ভাবতে হবে। গাছ কী কী হরমোন বের করে বলে আমরা জানতে পেরেছি, তাদের উৎস কোথায়, কী কী কাজ তারা করে, সেখান থেকেই জেনে নিতে হবে। ঠিক সেভাবেই প্রাণিদের হরমোন গ্রন্থি, হরমোনের নাম, কাজও সেভাবেই জানতে হবে।
এ ভাবে পড়লে লাভ হবে। কারণ তুলনামূলক প্রশ্ন, যেমন উদ্ভিদ ও প্রাণি হরমোনের পার্থক্য, ভৌত ও রাসায়নিক সমন্বয়ের তফাৎ, হরমোনের রাসায়নিক গঠনের তারতম্য, কাজের প্রকারভেদ এসব সহজেই বুঝতে পারা যাবে। একইভাবে উদ্দীপনায় সাড়া দেওয়ার বেলায় গাছ ও প্রাণিদের কী তফাৎ হয় সেটাও এভাবে পড়া যেতে পারে। এই ভাবমূল থেকে নিউরোনের ছবি, স্নায়ুর গঠনের ধারণাচিত্র, নিউরোগ্লিয়া কাকে বলে, মস্তিস্কের বিভিন্ন অংশ, চোখের ছবি অভ্যাস করতে হবে। উদ্ভিদ জনন অধ্যায়টি উদাহরণসহ ছকের মতো করে সাজিয়ে তৈরি করতে পারলে উপকার হবে। অবজেকটিভ প্রশ্নের উত্তর দিতে সুবিধা হবে।
কোষ ও কোষ বিভাজন অধ্যায়টি থেকে কোষ অঙ্গাণু, তাদের কাজ জেনে রাখতে হবে। কোষচক্র, মাইটোসিস ও মিয়োসিস কোষ বিভাজনের দশা, উপদশা বৈশিষ্ট্য জেনে রাখো। কোষের অধ্যায় থেকে ছবিও তৈরি করতে হবে, বিশেষ করে কোষ বিভাজনের ছবি। ক্রোমোজমের ছবিও আঁকতে হবে। বৃদ্ধি ও বিকাশ অধ্যায়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকেও নানারকম প্রশ্ন আসতে পারে, যেমন বৃদ্ধির দশা, বৃদ্ধি ও বিকাশের পার্থক্য ইত্যাদি। বংশগতি অধ্যায় থেকে মেন্ডেলিজম, একসংকর ও দ্বিসংকর ক্রস, বংশগতির সুত্র, সূত্রের ব্যাতিক্রম, টেস্ট ও ব্যাকক্রস জেনে রাখো। মনে রেখো এখান থেকে অনেক পার্থক্য, ডেফিনিশন ও অবজেকটিভ প্রশ্ন আসে। জিনগত রোগের মধ্যে অটোজোমাল ও সেক্স ক্রোমোজোমাল রোগের উদাহরণ জেনে রাখ। থ্যালাসেমিয়ার কারণ, প্রতিরোধের উপায়, বর্ণান্ধতার প্রকার ও হিমোফিলিয়ার বংশানুসরণ জেনে রাখবে।
পরের দুটি ভাবমূল থেকে গত বছর কোনও প্রশ্ন মাধ্যমিকে ছিল না। এবার থাকবে। কাজেই এখানে কোনও সাজেস্টিভ প্রশ্ন করবে না। যেকোনও জায়গা থেকেই প্রশ্ন আসতে পারে। তবে বিবর্তনের প্রমাণ ও তত্ত্ব অংশদুটি খুঁটিয়ে পড়বে। পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভব অংশটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। অভিযোজন অধ্যায়ে, প্রাণি ও উদ্ভিদের অভিযোজন বৈশিষ্ট্যগুলি পয়েন্ট করে নির্দিষ্ট করে তৈরি করবে। বেশি লেখার কোনও সুযোগ এখানে নেই। প্রাণিদের আচরণ সম্বন্ধীয় কিছু প্রশ্ন প্রতিবছর এখান থেকে এসেছে আগে। কাজেই সেগুলি পুরনো টেস্ট পেপার থেকে দেখে তৈরি করে রাখ।
নাইট্রোজেন চক্র খুব ভালো করে করবে। দুষণ থেকে প্রতিটি অংশ খুঁটিয়ে দেখবে। জল মাটি বাতাস কী কী ভাবে দূষিত হয়। এ ব্যাপারে কী কী করা যেতে পারে, তা নিয়ে তোমাদের ভাবনা কী, প্রশ্নে সেরকম বিষয় থাকতে পারে, পুরনো প্রশ্ন দেখে সেটা জেনে নিতে পারবে। জনসংখ্যার অপরিমিত বৃদ্ধি ও রোগের কারণ ও ফলাফল গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া জীববৈচিত্র্য ও সংরক্ষণ থেক অনেক রকম প্রশ্ন থাকে, সেগুলি টেস্ট পেপার থেকে দেখে রাখবে।
প্রশ্নোত্তর অনুশীলনের জন্য যত পারবে প্রশ্ন দেখবে। সময় ধরে লেখার অভ্যাস করে যাও। লেখা পরিচ্ছন্ন ও খাতা পরিপাটি হতে হবে। এখন লেখার অভ্যাস আমাদের কমেছে। লেখার সময় বাবান আর হাতের লেখার প্রতি যত্ন নেবে। কোনওরকম দায়সারা কাজ করবে না। যা করবে সুন্দর করে করবার চেষ্টা করবে। শুধু পরীক্ষা নয়, যেকোনও কাজেই যত্ন, ভালোবাসা থাকা চাই।
তোমাদের প্রশ্নপত্রে এমসিকিউ থাকবে ১৫টি। আর ২১টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে ১ নম্বরের জন্য। ২ নম্বরের ১২টি ও ৫ নম্বরের ৬টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। এ সব তোমরা জানো। কোন প্রশ্নের উত্তর কতটা লিখতে হব সেটা এইসময়ে তোমরা একবার দেখে নিও। প্রশ্নের নির্দেশ মেনে উত্তর করবে। প্রশ্নের নম্বর অনুসারে খাতায় পরপর উত্তর লেখার চেষ্টা করবে। আগে পরে করে না লেখাই ভালো।
৫ নম্বরের জন্য সম্ভাব্য কিছু নমুনা প্রশ্ন
● উদ্ভিদের ট্রপিক চলন কত প্রকার? উদাহরণ দাও।
● অক্সিন জিব্বারেলিন ও সাইটোকাইনিন হরমোনের উৎস ও কাজ লেখ।
● পিটুইটারি গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোনের নাম ও কাজ লেখ।
● ইনসুলিন হরমোনের কাজ উল্লেখ কর।
● শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয় নিঃসৃত হরমোনের নাম ও কাজ লেখ।
● মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের শ্রেণিবিভাজন কর। ছবিসহ নিউরোনের গঠন উল্লেখ কর।
● মানুষের মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ ছকের সাহায্যে দেখাও ও কাজ লেখ।
● মানুষের চোখের গঠন বিবৃত কর। ছবি-সহ। একনেত্র ও দ্বিনেত্র দৃষ্টি কী? হাইপারমেট্রোপিয়া ও মায়োপিয়া কাকে বলে?
● মানুষের গমনে সাহায্যকারী পেশি ও অস্থির ভূমিকা লেখ।
● ক্রোমোজোমের ভৌতগঠন (ছবি) ও রাসায়নিক গঠন উল্লেখ কর।
● মাইটোসিস কোষ বিভাজনের দশাগুলি কী কী? তাদের বর্নণা দাও। ছবি-সহ।
● মিয়োসিস কোষ বিভাজনের গুরুত্ব লেখ।
● উদ্ভিদের অঙ্গজ ও অযৌন জননের বিভিন্ন পধতি লেখ। উদাহরণ সহ।
● পরাগযোগ কি? মাধ্যমের ওপর নির্ভর করে পরাগযোগ কত প্রকার এবং কী কী? উদাহরণ দাও।
● ফুলগাছের দ্বিনিষেক ছবিসহ ব্যাখ্যা কর।
● বৃদ্ধি ও পরিস্ফুটনের পর্যায়গুলি কিকি?
● বিজ্ঞানী মেন্ডেল’র করা এক ও দুই সংকর জননের জিনোটাইপিক ও ফিনোটাইপিক অনুপাত উল্লেখ করে সংরায়ণ দেখাও।
● মানব শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণে ক্রোমোজোমের ভূমিকা লেখ।
● বিজ্ঞানী মেন্ডেল’র প্রস্তাবিত বৈশিষ্ট্যের উত্তরাধিকার সম্বন্ধীয় সূত্রগুলি উল্লেখ কর ও তার সীমাবদ্ধতা লেখ।
● থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলিয়া ও বর্ণান্ধতা রোগের কারণ ও প্রতিরোধ উল্লেখ কর।
● পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভবের সম্ভাব্য ধারাবাহিক ধাপগুলি কী কী?
● ইউরে মিলার’র পরীক্ষার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।
● ল্যামার্ক ও ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব বর্ণনা কর।
● শব্দছকে নাইট্রোজেন চক্র উপস্থাপণ কর। নাইট্রিফিকেশন, ডিনাইট্রিফিকেশন, অ্যামোনিফিকেশন কাকে বলে, উদাহরণ দাও।
● ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার স্মস্যাগুলি উল্লেখ কর।
● জীববৈচিত্র্যের প্রকারভেদ ও গুরুত্ব লেখ। হ্রাসের কারণ কী? পিবি আর কী?
নমুনা হিসেবে এই ধরণের প্রশ্নগুলি অভ্যাস করে রাখো। এছাড়াও আরও বহু প্রশ্ন আছে যা পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলিও দেখবে। ছোট প্রশ্নের জন্য নানাধরণের প্রশ্ন দেখে যাও। পুরনো প্রশ্ন দেখো।
তোমাদের সকলের পরীক্ষা ভালো হবে। নিজেদের কাজের ব্যাপারে দায়িত্বশীল হবে, সিরিয়াস হবে। তাহলেই দেখবে সব কাজই ভালো করে করতে পারবে। অনেক শুভকামনা রইল।
* ক্লাসরুম (Classroom – Madhyamik 2023) : কাজরী সামন্ত (Kajari Samanta) জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষিকা, সোদপুর সুশীলকৃষ্ণ শিক্ষায়তন ফর গার্লস।