ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।
ভারতীয় দার্শনিক চিন্তাধারা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে উপনিষদের যুগেই আত্মবাদ বিশেষ একটি রূপ পরিগ্রহ করে। উপনিষদসমূহে আত্মার বহু বর্ণনা পরিলক্ষিত হয়। যেমন—ছান্দোগ্য উপনিষদে আত্মাকে অমর, শোকহীন, সত্য সঙ্কল্পযুক্ত বলা হয়েছে। আত্মাকে কোনও ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ‘অঙ্গুষ্ঠমাত্র’ আত্মা হৃদয় গুহায় অবস্থান করেন। বৃহদারণ্যক উপনিষদে যাজ্ঞবল্ক্য তাঁর ‘নেতি নেতি’ মতবাদের দ্বারা আত্মাকে উপস্থাপন করেছেন। এই আত্মা শাশ্বত ও অপরিবর্তনীয়। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আত্মা সম্বন্ধে অনেক মতবাদ গড়ে উঠেছে। পালি দীঘনিকায়ের ব্রহ্মজাল সুত্তে এই রকম অনেক মতবাদের পরিচয় আছে। যেমন— শাশ্বতবাদীরা বলেন আত্মা এবং বিশ্ব শাশ্বত। অপর কেউ বলেছেন, আত্মা আংশিক শাশ্বত, আংশিক অশাশ্বত। অমরা বিক্ষেপবাদীরা আত্মা সম্বন্ধে সঠিক উত্তর দিতেন না। কেউ বিশ্বাস করতেন যে, আত্মা এবং সৃষ্টি অকারণসম্ভূত। কেউ বলতেন মৃত্যুর পর আত্মা থাকে এবং সচেতন অবস্থায় থাকে। অন্যরা বলতেন মৃত্যুর পর আত্মা অচেতন অবস্থায় থাকে। উচ্ছেদবাদীরা বিশ্বাস করতেন যে, মৃত্যুর পর আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। আত্মবিষয়ক এই রকম বহু মতবাদ ভারতবর্ষে প্রাক্ বৌদ্ধযুগে সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল। বুদ্ধদেব বুদ্ধত্ব লাভের পর সারনাথে পঞ্চবর্গীয় ভিক্ষুর নিকট ‘ধর্মচক্রপ্রবর্তন সূত্র’ দেশনা করে এক সপ্তাহের অভ্যন্তরেই আবার তাঁদের নিকট ‘অনাত্মালক্ষণসূত্র’ দেশনা করে স্থায়ী শাশ্বত আত্মার অস্তিত্ব খণ্ডন করেছিলেন। আমরা এই ‘অনাত্মালক্ষণসূত্র’ এবং ‘মিলিন্দ প্রশ্ন’ অনুসারে বৌদ্ধদের এই নৈরাত্ম্যবাদ সংক্ষেপে আলোচনা করব।
বৌদ্ধমতে, আত্মা কায়, মনস্ বা চিত্ত এবং বিজ্ঞানের সংঘাত বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে ‘রূপ’, দেহ বা কায়ার সমর্থক এবং ‘নাম’ মানসিক উপাদানের দ্যোতক। বৌদ্ধমতে অন্তর্জগতে কোনও স্থায়ী পদার্থ, স্থায়ী জ্ঞাতা বা আত্মা নেই। অন্তর্জগৎ পর্যবেক্ষণ করলে আমরা পাই বিভিন্ন বিজ্ঞান। এমন নয় যে, এই বিজ্ঞান আছে ‘আত্মা’ নামক কোনও দ্রব্যকে আশ্রয় করে। এরকম কোনও ‘আত্মা’ নামক দ্রব্যের সাক্ষাৎ আমরা পাই না (পুদ্গল নৈরাত্ম্য)। এমনকী বিষয়ের অতিরিক্ত স্থায়ী বাহ্য দ্রব্যও নেই (ধর্ম নৈরাত্ম্য)। বৌদ্ধমতে বিজ্ঞান বা চৈতন্যের প্রবাহই আত্মা। বিজ্ঞান ক্ষণিক। বিজ্ঞান একটি ক্ষণে উৎপন্ন হয় এবং পরক্ষণে বিনষ্ট হয় এবং নতুন আরেকটি বিজ্ঞানের উদ্ভব হয়। এই পরিবর্তনশীল বিজ্ঞানপ্রবাহের অতিরিক্ত আত্মা বলে পৃথক কোনও সত্তা নেই। চক্র, আসন, ছত্র প্রভৃতি অংশের একটি বিশেষ সন্নিবেশকে বোঝাতে ‘রথ’ শব্দের ব্যবহার হয়। এই অংশগুলির অতিরিক্ত ‘রথ’ বলে স্বতন্ত্র বস্তু নেই। যেমন— বৃক্ষসমূহের অতিরিক্ত ‘বন’ বলে কিছু নেই। আত্মা হচ্ছে নাম বা প্রতীকমাত্র, যা পঞ্চস্কন্ধের সমুদায়কে বোঝায়। পঞ্চস্কন্ধের অতিরিক্ত আত্মা বলে কোনও পদার্থ নেই। পঞ্চস্কন্ধ হল—
● রূপ স্কন্ধ
● বেদনা স্কন্ধ
● সংজ্ঞা স্কন্ধ
● সংস্কার স্কন্ধ
● বিজ্ঞান স্কন্ধ
আত্মা নামক সংঘাতের নির্মাতা দৈহিক অবস্থা সমূহকে ‘রূপ’, আর, বেদনা, সংজ্ঞা, সংস্কার এবং বিজ্ঞানকে একত্রে ‘মন’ বলা হয়। আত্মা দেহ-মনের (নাম-রূপের) সংঘাত ভিন্ন আর কিছু নয়। ধম্মপদে বলা আছে—পদ্মফুলের গন্ধ তার পাপড়ি, রং বা পরাগে থাকে একথা যেমন কেউ বলতে পারে না, তেমনি একথা বলা যায় না যে, রূপ স্কন্ধ বা বেদনা স্কন্ধ বা অন্য কোনও স্কন্ধ হচ্ছে আত্মা। রূপাদি পঞ্চস্কন্ধের এক-একটি আত্মা নয়। পঞ্চস্কন্ধের সমাহার-ই আত্মা। বৌদ্ধদের এই মতবাদের নাম-ই নৈরাত্ম্যবাদ।
বৌদ্ধ সাহিত্যে এই মতবাদের পূর্ণ তাৎপর্য বিশ্লেষণ করার জন্য বহু উপাখ্যান বিবৃত হয়ে আছে। ‘মিলিন্দ প্রশ্নে’ রাজা মিলিন্দ ও বৌদ্ধ সন্ন্যাসী নাগসেনের উপাখ্যানটি এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে। রাজা মিলিন্দ যখন কিছুতেই নৈরাত্ম্যবাদের ব্যাখ্যার পূর্ণ তাৎপর্য গ্রহণ করতে পারছিলেন না তখন নাগসেন প্রশ্ন করেন—রাজা কি পদব্রজে না রথে চড়ে এসেছেন? রাজা রথে এসেছেন জানার পর নাগসেন প্রশ্ন করেন—রথ কী? অক্ষ কি রথ? চক্র কি রথ? ছত্র কি রথ?—ইত্যাদি। এমনভাবে নাগসেন রথের প্রত্যেকটি অংশ নিয়ে যখন প্রশ্ন করলেন এগুলি কি আলাদাভাবে রথ?—রাজা মিলিন্দ বুঝলেন রথের কোনও একটি অংশ পৃথকভাবে রথ নয়। অক্ষ চক্র, আসন, ছত্র ইত্যাদির সমন্বয়ে সুসংবদ্ধতা হেতু রথ। ইহা সংজ্ঞা মাত্র, ব্যবহারিক নাম মাত্র। নাগসেন জানালেন ঠিক এইরূপেই কেশ লোমাদি রূপ এবং বেদনা সংজ্ঞা সংস্কার বিজ্ঞান—এই পঞ্চস্কন্ধের সুসংবদ্ধতা হেতুই নাগসেন। এইগুলিকে আশ্রয় করেই ‘নাগসেন’–এই সংজ্ঞা, ব্যবহার, প্রকাশ ও নামমাত্র প্রবর্তিত হয়। পরমার্থতঃ এখানে পৃথক কোনও ব্যক্তি বা অবয়বীস্বরূপ ব্যক্তি বা আত্মার উপলব্ধি হয় না।
বৌদ্ধমতে, সংঘাতরূপ আত্মা একটি ক্ষণের বেশিকাল অভিন্ন সৎ নয়। সংঘাত নিয়ত পরিবর্তনশীল। নিয়ত পরিবর্তনশীল সংঘাতরূপ আত্মাকে ‘সন্তান’ বলা হয়েছে। নামরূপাত্মক আত্মা ক্ষণিক ও পরিবর্তনশীল যেহেতু আত্মার নির্মাতা উপাদানগুলি ক্ষণিক ও সদা পরিবর্তনশীল। বৌদ্ধরা বলেন, আত্মার উপাদানই বহ্নিশিখা, জলের প্রবাহ বা ফেনার পুঞ্জের মতো নিয়ত পরিবর্তনশীল এরা একটি ক্ষণে উৎপন্ন হয়ে পরক্ষণেই বিনষ্ট হয়। বৌদ্ধমতে, মানুষের মধ্যে আত্মা বলে স্থায়ী সত্তা না থাকলেও তার জীবনের বিভিন্ন অবস্থার মধ্যে ধারাবাহিকতা আছে। জীবনের এই ধারা বা প্রবাহের মধ্যে যে কোনও একটি অবস্থা যেমন তার পূর্ববর্তী অবস্থা থেকে উদ্ভূত, তেমনি তা আবার তার পরবর্তী অবস্থাকে সৃষ্টি করে। জীবনের এই ধারাবাহিকতার মূলে আছে কার্য-কারণ সম্বন্ধ, যা বিভিন্ন অবস্থার মধ্যে যোগসূত্র রক্ষা করে চলেছে। তাই ব্যক্তিটি তার সারা জীবনে নিজেকে একই অভিন্ন ব্যক্তি বলে উপলব্ধি করে। ‘মিলিন্দ প্রশ্নে’ নাগসেন এই চিত্ত সন্ততিকে প্রদীপশিখার সঙ্গে তুলনা করেছেন। একই প্রদীপ সারারাত জ্বলে। কিন্তু রাত্রির প্রথম ভাগের যে প্রদীপশিখা এবং রাত্রির মধ্যভাগের প্রদীপশিখা এক নয়। আবার রাত্রির মধ্যভাগের প্রদীপশিখা ও রাত্রির শেষভাগের প্রদীপশিখা এক নয়, আবার এরা ভিন্নও নয়। তেমনি মানুষের জীবনের বিভিন্ন অবস্থার মধ্যেও এরূপ একটি ধারাবাহিকতা আছে। একই ব্যক্তির শৈশব, কৈশোর, যৌবন, বার্ধক্য একও নয় আবার ভিন্নও নয়। একই ধর্মসন্ততি বা চিত্তসন্ততি ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তিত হয়ে শৈশব, কৈশোর, যৌবন, বার্ধক্যের রূপ পরিগ্রহ করে। কায় ও চিত্তধারার অবিরাম উৎপত্তি ও বিলয়ের মধ্যেই যেন স্থায়ী বলে প্রতীত হয় ব্যক্তিজীবন।
বৌদ্ধমতে, আত্মা কায়, মনস্ বা চিত্ত এবং বিজ্ঞানের সংঘাত বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে ‘রূপ’, দেহ বা কায়ার সমর্থক এবং ‘নাম’ মানসিক উপাদানের দ্যোতক। বৌদ্ধমতে অন্তর্জগতে কোনও স্থায়ী পদার্থ, স্থায়ী জ্ঞাতা বা আত্মা নেই। অন্তর্জগৎ পর্যবেক্ষণ করলে আমরা পাই বিভিন্ন বিজ্ঞান। এমন নয় যে, এই বিজ্ঞান আছে ‘আত্মা’ নামক কোনও দ্রব্যকে আশ্রয় করে। এরকম কোনও ‘আত্মা’ নামক দ্রব্যের সাক্ষাৎ আমরা পাই না (পুদ্গল নৈরাত্ম্য)। এমনকী বিষয়ের অতিরিক্ত স্থায়ী বাহ্য দ্রব্যও নেই (ধর্ম নৈরাত্ম্য)। বৌদ্ধমতে বিজ্ঞান বা চৈতন্যের প্রবাহই আত্মা। বিজ্ঞান ক্ষণিক। বিজ্ঞান একটি ক্ষণে উৎপন্ন হয় এবং পরক্ষণে বিনষ্ট হয় এবং নতুন আরেকটি বিজ্ঞানের উদ্ভব হয়। এই পরিবর্তনশীল বিজ্ঞানপ্রবাহের অতিরিক্ত আত্মা বলে পৃথক কোনও সত্তা নেই। চক্র, আসন, ছত্র প্রভৃতি অংশের একটি বিশেষ সন্নিবেশকে বোঝাতে ‘রথ’ শব্দের ব্যবহার হয়। এই অংশগুলির অতিরিক্ত ‘রথ’ বলে স্বতন্ত্র বস্তু নেই। যেমন— বৃক্ষসমূহের অতিরিক্ত ‘বন’ বলে কিছু নেই। আত্মা হচ্ছে নাম বা প্রতীকমাত্র, যা পঞ্চস্কন্ধের সমুদায়কে বোঝায়। পঞ্চস্কন্ধের অতিরিক্ত আত্মা বলে কোনও পদার্থ নেই। পঞ্চস্কন্ধ হল—
আত্মা নামক সংঘাতের নির্মাতা দৈহিক অবস্থা সমূহকে ‘রূপ’, আর, বেদনা, সংজ্ঞা, সংস্কার এবং বিজ্ঞানকে একত্রে ‘মন’ বলা হয়। আত্মা দেহ-মনের (নাম-রূপের) সংঘাত ভিন্ন আর কিছু নয়। ধম্মপদে বলা আছে—পদ্মফুলের গন্ধ তার পাপড়ি, রং বা পরাগে থাকে একথা যেমন কেউ বলতে পারে না, তেমনি একথা বলা যায় না যে, রূপ স্কন্ধ বা বেদনা স্কন্ধ বা অন্য কোনও স্কন্ধ হচ্ছে আত্মা। রূপাদি পঞ্চস্কন্ধের এক-একটি আত্মা নয়। পঞ্চস্কন্ধের সমাহার-ই আত্মা। বৌদ্ধদের এই মতবাদের নাম-ই নৈরাত্ম্যবাদ।
বৌদ্ধ সাহিত্যে এই মতবাদের পূর্ণ তাৎপর্য বিশ্লেষণ করার জন্য বহু উপাখ্যান বিবৃত হয়ে আছে। ‘মিলিন্দ প্রশ্নে’ রাজা মিলিন্দ ও বৌদ্ধ সন্ন্যাসী নাগসেনের উপাখ্যানটি এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে। রাজা মিলিন্দ যখন কিছুতেই নৈরাত্ম্যবাদের ব্যাখ্যার পূর্ণ তাৎপর্য গ্রহণ করতে পারছিলেন না তখন নাগসেন প্রশ্ন করেন—রাজা কি পদব্রজে না রথে চড়ে এসেছেন? রাজা রথে এসেছেন জানার পর নাগসেন প্রশ্ন করেন—রথ কী? অক্ষ কি রথ? চক্র কি রথ? ছত্র কি রথ?—ইত্যাদি। এমনভাবে নাগসেন রথের প্রত্যেকটি অংশ নিয়ে যখন প্রশ্ন করলেন এগুলি কি আলাদাভাবে রথ?—রাজা মিলিন্দ বুঝলেন রথের কোনও একটি অংশ পৃথকভাবে রথ নয়। অক্ষ চক্র, আসন, ছত্র ইত্যাদির সমন্বয়ে সুসংবদ্ধতা হেতু রথ। ইহা সংজ্ঞা মাত্র, ব্যবহারিক নাম মাত্র। নাগসেন জানালেন ঠিক এইরূপেই কেশ লোমাদি রূপ এবং বেদনা সংজ্ঞা সংস্কার বিজ্ঞান—এই পঞ্চস্কন্ধের সুসংবদ্ধতা হেতুই নাগসেন। এইগুলিকে আশ্রয় করেই ‘নাগসেন’–এই সংজ্ঞা, ব্যবহার, প্রকাশ ও নামমাত্র প্রবর্তিত হয়। পরমার্থতঃ এখানে পৃথক কোনও ব্যক্তি বা অবয়বীস্বরূপ ব্যক্তি বা আত্মার উপলব্ধি হয় না।
বৌদ্ধমতে, সংঘাতরূপ আত্মা একটি ক্ষণের বেশিকাল অভিন্ন সৎ নয়। সংঘাত নিয়ত পরিবর্তনশীল। নিয়ত পরিবর্তনশীল সংঘাতরূপ আত্মাকে ‘সন্তান’ বলা হয়েছে। নামরূপাত্মক আত্মা ক্ষণিক ও পরিবর্তনশীল যেহেতু আত্মার নির্মাতা উপাদানগুলি ক্ষণিক ও সদা পরিবর্তনশীল। বৌদ্ধরা বলেন, আত্মার উপাদানই বহ্নিশিখা, জলের প্রবাহ বা ফেনার পুঞ্জের মতো নিয়ত পরিবর্তনশীল এরা একটি ক্ষণে উৎপন্ন হয়ে পরক্ষণেই বিনষ্ট হয়। বৌদ্ধমতে, মানুষের মধ্যে আত্মা বলে স্থায়ী সত্তা না থাকলেও তার জীবনের বিভিন্ন অবস্থার মধ্যে ধারাবাহিকতা আছে। জীবনের এই ধারা বা প্রবাহের মধ্যে যে কোনও একটি অবস্থা যেমন তার পূর্ববর্তী অবস্থা থেকে উদ্ভূত, তেমনি তা আবার তার পরবর্তী অবস্থাকে সৃষ্টি করে। জীবনের এই ধারাবাহিকতার মূলে আছে কার্য-কারণ সম্বন্ধ, যা বিভিন্ন অবস্থার মধ্যে যোগসূত্র রক্ষা করে চলেছে। তাই ব্যক্তিটি তার সারা জীবনে নিজেকে একই অভিন্ন ব্যক্তি বলে উপলব্ধি করে। ‘মিলিন্দ প্রশ্নে’ নাগসেন এই চিত্ত সন্ততিকে প্রদীপশিখার সঙ্গে তুলনা করেছেন। একই প্রদীপ সারারাত জ্বলে। কিন্তু রাত্রির প্রথম ভাগের যে প্রদীপশিখা এবং রাত্রির মধ্যভাগের প্রদীপশিখা এক নয়। আবার রাত্রির মধ্যভাগের প্রদীপশিখা ও রাত্রির শেষভাগের প্রদীপশিখা এক নয়, আবার এরা ভিন্নও নয়। তেমনি মানুষের জীবনের বিভিন্ন অবস্থার মধ্যেও এরূপ একটি ধারাবাহিকতা আছে। একই ব্যক্তির শৈশব, কৈশোর, যৌবন, বার্ধক্য একও নয় আবার ভিন্নও নয়। একই ধর্মসন্ততি বা চিত্তসন্ততি ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তিত হয়ে শৈশব, কৈশোর, যৌবন, বার্ধক্যের রূপ পরিগ্রহ করে। কায় ও চিত্তধারার অবিরাম উৎপত্তি ও বিলয়ের মধ্যেই যেন স্থায়ী বলে প্রতীত হয় ব্যক্তিজীবন।