রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪


অরিত্র অম্বুধ দত্ত।

২০২০ সালে করোনার ঢেউ আছড়ে পড়ার পরই শুরু হল লকডাউন। আমরা সবাই তখন গৃহ-বন্দি হয়ে পড়লাম। তবে আমার পথ চলা শুরু তখন থেকেই। সময়টা ২০২০-এর মার্চ মাসের শেষ দিকে হবে। ইতিমধ্যে আমি ‘আত্মদীপ ইয়াং স্কলার ২০১৯’-এর ওয়ার্কশপের দৌলতে এই ‘কম্পিটিটিভ এক্সামস’-এর জগৎ সম্পর্কে খানিকটা পরিচিত হয়েছিলাম। কিন্তু এ বিষয়ে আমার খুব বেশি ধারণা ছিল না। কারণ, লকডাউনের আগে পর্যন্ত স্কুলের পড়াশোনা করবার পর অন্য কিছু পড়ার অবকাশই পেতাম না।

যাই হোক, ঘরে আটকে থাকার দৌলতে হাতে সময় অনেকটা বেড়ে গেল। আমি ইউটিউবে খোঁজা শুরু করলাম এই ‘কম্পিটিটিভ’ জগতে প্রবেশ করবার সঠিক পথ কী? ইউটিউবে ‘আনঅ্যাকাডেমি’-এর ‘এনটিএসই-এর পরীক্ষা সংক্রান্ত ক্লাস দেখে আমার ভালোলাগা শুরু হল। ধীরে ধীরে ‘আনঅ্যাকাডেমি প্লাস প্ল্যাটফর্ম’ এর সঙ্গে যুক্ত হলাম আরও ভালো করে ক্লাসের জন্য। ‘এনটিএসই স্টেজ-ওয়ান’-এর জন্য প্রস্তুতি নিতে নিতে কখন যে আমার জেইই (JEE)-এর ভিত গড়ে উঠলো সেটা তখন বুঝতে পারিনি। এ সবের পাশাপাশি অঙ্কের চর্চা চালিয়ে যাচ্ছিলাম, যা ‘এনটিএসই’ এবং জেইই (JEE)-তেও কাজে এসেছিল। ২০২১-এর জানুয়ারিতে ‘এনটিএসই স্টেজ-ওয়ান’ হবার পর থেকে আমি জেইই (JEE) এর জন্য পুরোপুরি মনোনিবেশ করলাম।
জেইই (JEE) এর প্রস্তুতিতে শিক্ষকদের কাছ থেকে আমি যা যা শিখেছি সেগুলো এখানে তুলে ধরছি।
 

ফান্ডামেন্টালস

জেইই (JEE) প্রিপারেশনের সময় দিনের পুরো সময়টা জেইই-এর জন্য দেওয়া উচিত। প্রতিদিন ক্লাস করতে চার থেকে ছয় ঘণ্টা লেগে যাবে। এরপর বাকি সময় (Self Study Time) যতটা সম্ভব ক্লাস নোটসের রিভিশন আর স্যারেদের দেওয়া হোমওয়ার্কে দেওয়া উচিত। মনে রাখতে হবে, ‘Self Study Duration ≥ Class Duration’। এক্ষেত্রে একটা টাইম টেবিল বানিয়ে নেওয়া সুবিধাজনক। সাধারণত কোন সময় ক্লাস হবে, সেটা আগে থেকে জানা থাকে। তাই কখন সেলফ স্টাডি করতে হবে সেটা আগে থেকে ঠিক করে নিলে একটা শৃঙ্খলা বজায় থাকবে প্রতিদিনকার রুটিনে।

মনে রাখা দরকার, এই পরীক্ষায় পাশ করার জন্য কমপক্ষে ১-২ বছরের সাধনা লাগে। তাই শরীর খারাপ হওয়া এই ম্যারাথনের জন্য একদমই ভালো নয়। প্রতিদিন সঠিক সময়ে সকালে ওঠা, নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া, খাবার খাওয়া, বিশ্রাম নেওয়া সব কিছুর জন্য বাঁধাধরা সময় রাখা উচিত। এরকম একটা রুটিন মেনে চলতে প্রথম প্রথম কষ্টসাধ্য মনে হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। তখন নিজের সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব হয়। অনেকের ক্ষেত্রেই কারও কারও এই সমস্যা দেখা যায়। তারা বুঝতে পারে না, তাদের সময় কখন চলে যাচ্ছে। কারণ, তারা নির্দিষ্ট রুটিন মেনে কাজ করে না। টাইম টেবিল বানিয়ে নিজের সময়কে সমস্ত কাজের জন্য ভাগ করে দিতে হবে।

আমার নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে বলতে পারি, রাত জেগে পড়ার চেয়ে সকালে তাড়াতাড়ি উঠে পড়াশোনা করা ভালো। কারণ, বিষয়কে মনে রাখার জন্য (Retaining Ability) সকালে পড়া বেশি কার্যকর। আর খাবারের ক্ষেত্রে আমাদের সব সময় বলা হতো, কখনও পেট পুরো ভর্তি করে না খেতে। কারণ, তাতে খাবার কয়েক ঘণ্টা পর পর্যন্ত শরীরের কার্যক্ষমতা কম থাকে। বরং কয়েক ঘণ্টা অন্তর অন্তর অল্প পরিমাণে খাবার খাওয়ার অভ্যেস রাখা ভালো, এতে আগের সমস্যাটাও থাকে না। এখানে একটা কথা উল্লেখ্য, কখনও কোনও পরিকল্পনা ১০০ শতাংশ পালন করা সম্ভব নয়। সেজন্য যতটা সম্ভব চেষ্টা করতে হবে পরিকল্পনা মাফিক চলার। নিজের পড়াশোনার সময়কে টাইম টেবিলে সাজানোর সময় একটা বিষয়ে মনে রাখা খুবই জরুরই, সকাল ৯ থেকে দুপুর ১২টা এবং দুপুর ২ থেকে বিকেল ৫টা এই সময় পড়াশুনা করতেই হবে। কারণ প্রায় সমস্ত পরীক্ষাই এই সময়ের কাছাকাছি হয়। তাই শুরু থেকেই পরীক্ষার সময় যতটা ফোকাস থাকা দরকার ততটা নিজের সেলফ স্টাডি টাইমেও যদি আনা যায়, তাহলে পরীক্ষার ভয় খুব সহজেই কাটিয়ে ফেলা যায়।

যেহেতু এখন প্রায় সব পরীক্ষার একেকটা পেপার তিন ঘণ্টা একটানা হয়, সেজন্য ‘সেলফ স্টাডি টাইম’-এ পড়াশোনা করার সঙ্গে অন্য কোনও কাজ করা যাবে না (যেমন কারর সঙ্গে কথা বলা, ফোন দেখা ইত্যাদি)। আর তিন ঘণ্টার স্লটে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথমেটিকস সবগুলোকেই পড়তে হবে সময় ভাগ করে করে। আর অবশ্যই চেয়ার-টেবিলে বসে পড়ার অভ্যাস করতে হবে। বিছানায় শুয়ে নয়।

আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪: শুভ পরিণয়বেলা

ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-৪: রাজ পরিবারের সঙ্গে বিবাহ সম্পর্ক ও ব্রাহ্মবাদ

ক্লাস চলাকালীন স্যারেরা যা বোঝাবেন সেটাকে নিজের ভাষায় নোট করতে হবে ক্লাসের মধ্যেই, এই নিজের হাতে লেখা নোটগুলোই পরে থিওরির কাজ করবে। স্যারেরা যে হোমওয়ার্ক দেবেন সেটাকে নির্দিষ্ট সময়ের আগে যথাসাধ্য শেষ করতে হবে। হোমওয়ার্ক করার সময় মনে রাখতে হবে, যতগুলো প্রশ্নই সলভ করা হোক না কেন, টাইমার লাগিয়ে সলভ করতে হবে পরীক্ষার চাপকে উপলব্ধি করবার জন্য। এক্ষেত্রে গড়ে প্রতি প্রশ্নের জন্য ৩ মিনিট (ম্যাথমেটিকস, ফিজিক্স ও ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রির জন্য)। আর গড়ে প্রতি প্রশ্নের জন্য ৩০ সেকেন্ড এক মিনিটে (অর্গানিক ও ইনর্গানিক কেমিস্ট্রি) সলভ করতে হবে।

এমনভাবে টাইমার লাগাতে হবে, যাতে একটা বিষয়ে একটানা যেন অন্তত ৬০ মিনিট সলভ করা হয়। তারপরে অন্য বিষয়ে যাওয়া যাবে। তিন ঘণ্টার স্লট শেষ হবার পর ‘Answer key’ দেখে উত্তর মেলাতে হবে। যে যে প্রশ্নগুলো ভুল হয়েছে তাতে (যদি কয়েক ঘণ্টা পরে দ্বিতীয় বার প্রচেষ্টা করবার অবকাশ থাকে তাহলে সেটা করতে হবে। নয় তো সময় কম থাকলে একবার চেষ্টা করার পরেই সরাসরি) ‘Given Solution’ (যদি থাকে) বা ‘Theory notes’ ঘেঁটে সঠিক উত্তর আর তার ব্যাখ্যা বার করতে হবে। একবার সেই ব্যাখ্যা পড়ে নিয়ে তারপর না দেখে হোমওয়ার্ক-এর খাতায় নিজে থেকে সেই ব্যাখ্যাটা লিখতে হবে (বিশেষ করে ম্যাথমেটিকস, ফিজিক্স, ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রির ক্ষেত্রে)।

যে ধাপে নিজে থেকে লিখতে সমস্যা হবে, তাকে পরের ক্লাসে টিচারের কাছ থেকে পরিষ্কার করে নিতে হবে বিষয়টি। এই পুরো ধাপ বা পর্যায়গুলো মেনে চললে তবেই কোনও একটা চ্যাপ্টার সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা আসবে এবং গভীরতা বাড়বে। সেলফ স্টাডির সময়ে এটা মনে রাখতে হবে, ‘Learning Phase’-এ (ক্লাস ইলেভেন ও ক্লাস টুয়েলভের সেই সময় যখন আমরা নতুন কিছু শিখছি) ৪০ শতাংশ সময় অঙ্ক, ৩০ শতাংশ সময় ফিজিক্স আর বাকি ৩০ শতাংশ কেমিস্ট্রিতে দিতে হবে। ‘Revision Phase-এ (ইলেভেন ও টুয়েলভের শেষে যখন আমরা পুরনো পড়াকে আবার পড়ি) কেমিস্ট্রি ৫০ শতাংশ, অঙ্ক ২৫ শতাংশ আর ফিজিক্সের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ সময় দিতে হবে। ‘Revision Phase’-এ ‘Learning Phase’-এর সময়ে সলভ করা প্রশ্নগুলিকে আবার সলভ করতে হবে, যতক্ষণ না তাতে বিষয়টি পরিষ্কার হচ্ছে (যদি তার সঙ্গে শিক্ষকরা কোনও ‘Revision material’ দেন তবে সেটাও করতে হবে)
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩০: প্রচুর প্রোটিন, তাই যতখুশি ডাল খান?

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৬৬: ঈল মাছের এই রহস্য নিশ্চয়ই একদিন উদঘাটন হবে

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, যেকোনও বিষয়ে (বিশেষত ইনর্গানিক আর অর্গানিক কেমিস্ট্রিতে) যদি কোনও কিছু (fact বা theorem বা result) মনে রাখলে প্রশ্ন তাড়াতাড়ি এবং সঠিকভাবে সলভ করা যাবে, তাহলে তাকে মুখস্থ করে নিতে হবে। টার্গেট যে পরীক্ষা আছে তার ‘প্রিভিয়াস ইয়ার কোশ্চেন’ (PYQ) দেখে আন্দাজ করে নিতে হবে পরীক্ষাতে কী রকমের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হচ্ছে। সেই টপিকগুলোতে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: কোনও টপিক একবার ঠিকঠাক করে নেওয়ার পর সে ধারা একই ভাবে বজায় রাখতে হবে। নিয়মিত একটা বা দুটো করে হলেও ওই টপিকের প্রশ্ন সলভ করতে হবে। প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গে স্যারেরা জেইই (JEE)-এর যে ‘মক টেস্ট’ নেবেন সেগুলোতে বসা বাধ্যতামূলক। ‘মক টেস্ট’-এ প্রাপ্ত নম্বরকে নিজের ব্যর্থতা কিংবা সাফল্য হিসেবে না দেখে বরং প্রস্তুতির ফাঁক বা খামতিকে ঠিক করার সুযোগ হিসেবে বিশ্লেষণ করতে হবে, যাতে পরের টেস্টে প্রস্তুতিকে আরও ভালো জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়। মনে রাখতে হবে, পরীক্ষার প্রস্তুতি একটা ম্যারাথন দৌড়। তাই কোনও সময় যদি কেউ পিছিয়ে পড়েও যায়, হার্ডওয়ার্ক করে সে সহজে সামনে এগিয়ে আসতে পারে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে।

 

অঙ্ক

জেইই (JEE) প্রস্তুতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল অঙ্ক। এটা এমন একটা বিষয় যেটা শিখতে হলে পরিষ্কার ধারণা এবং অজস্র প্রাসঙ্গিক প্রশ্নের অনুশীলন একসঙ্গে চাই।

একে আগে থেকে মাস্টার লেভেলে নিয়ে যেতে হলে সবচেয়ে ভালো উপায় হল NSEJS (যদিও এখন এতে অঙ্ক আসে না, তাই প্রিভিয়াস ইয়ার কোশ্চেন সলভ করলেই হবে), PRMO-এর প্রস্তুতি নেওয়া (বিশেষত বীজগণিত আর জ্যামিতিতে)।

আমার মতে, অষ্টম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সময়ে যদি কাউকে জেইই (JEE)-এর জন্য প্রস্তুতি হতে হয়, তাহলে এই দুটি পরীক্ষার জন্য ইউটিউব ও বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে যে সব লেকচার আছে, সেগুলিই সবচেয়ে ভালো সম্পদ। এর সঙ্গে শিক্ষকদের দেওয়া হোমওয়ার্ক (DPP, Sheets etc.) এবং বিভিন্ন বইয়ের প্রশ্নেরও প্র্যাকটিস করে নেওয়া ভালো।

ক্লাস ইলেভেন থেকে জেইই (JEE)-এর আসল পাঠ্যক্রম শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে ক্লাসে বোঝানো বিভিন্ন বিষয়গুলো (বিশেষত কোনও result বা proof ) এবং ‘Classroom illustration’ প্রবলেমকে বারবার না দেখে লিখে প্র্যাকটিস করা উচিত। কেন না যদি এগুলো কেউ বুঝে নিতে পারে তবে সে অন্য কঠিন প্রবলেমকে কয়েকটা সহজ ভাগে ভেঙে সলভ করে নিতে পারবে। আর এরপরেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল, যতটা সম্ভব প্রবলেম-এর প্র্যাকটিস করা। আর অঙ্কে প্রথম প্রথম দক্ষতা আসে না, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উন্নতি হতে থাকে। যে কোনও ভালো ইনস্টিটিউটের পুরো ‘ম্যাথসের মেটিরিয়াল’ এক্ষেত্রে অনেক।

আরও পড়ুন:

ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-৯: যে তোরে পাগল বলে তারে তুই বলিস নে কিছু

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬৯: গাধা পিটিয়ে ঘোড়া

 

ফিজিক্স

ফিজিক্সের থিওরি বোঝবার ক্ষেত্রে অঙ্কের মতোই পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। এক্ষেত্রে আরও বেশি পেন চালাতে হবে। বিশেষ করে হোমওয়ার্কের ক্ষেত্রে। সাধারণত এরকম হয়, প্রথম প্রথম খুব কম সংখ্যায় প্রবলেম ঠিকভাবে সলভ হয়। এ ক্ষেত্রে না ঘাবড়ে গিয়ে প্রথমে সহজ প্রবলেম অনেকগুলো সংখ্যায় করতে হবে, তার পর ধীরে ধীরে কঠিন প্রবলেমের দিকে অগ্রসর হতে হবে। এতে শেষ পর্যন্ত এসে কঠিন প্রবলেমও সহজ হয়ে যাবে, কিন্তু সময় লাগবে। যে কোনও ভালো ইনস্টিটিউটের পুরো স্টাডি মেটেরিয়াল এক্ষেত্রে যথেষ্ট।

 

ইনোর্গানিক কেমিস্ট্রি

ইনোর্গানিক কেমিস্ট্রিতে প্রথমে দিকের অধ্যায়গুলোতে লজিকের মাধ্যমে মনে রাখতে হবে। পরের দিকের ফ্যাকচুয়াল অধ্যায়গুলোর ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব মনে রাখা যায় তার চেষ্টা করতে হবে। এরকম টপিকগুলোকে প্রথমে একবার ভালো করে, কিন্তু খুব বেশি সময় না দিয়ে তৈরি করে ফেলতে হবে। তারপর অজস্র প্রবলেম প্র্যাকটিসের মাধ্যমে রপ্ত করতে হবে। এজন্যে কোচিং মেটেরিয়াল করা সবচেয়ে ভালো। এরপর যদি সময় থাকে তাহলে আরও অনেক বিইপত্র রয়েছে, সেগুলো দেখা যেতে পারে।

 

অর্গানিক কেমিস্ট্রি

যে থিওরি নোটস তৈরি হবে ক্লাস করতে করতে তাকে যতবার সম্ভব পড়ে মুখস্ত করার চেষ্টা করতে হবে। যেহেতু বিষয়টা ক্লাস টেন পর্যন্ত খুব বেশি পড়া হয় না, সেজন্য প্রথম প্রথম বুঝতে সমস্যা হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু বেশ কয়েক মাস পড়ার পর প্রশ্নের ধরন সহজে বুঝে ফেলা যায়। এ জন্য প্রস্তুতির শেষে ধীরে ধীরে অর্গানিক সহজ হয়ে যায়। এর জন্যও কোচিং মেটিরিয়াল যথেষ্ট।

 

ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রি

এখানেও থিওরি নোটস ভালো করে বানাতে হবে। সঙ্গে ‘Classroom Illustration’ বারংবার প্র্যাকটিস করে করে ছোট ছোট কনসেপ্টকে ধরে নিতে হবে। ফিজিক্যাল-এর ক্ষেত্রে যদি ছোট ছোট ‘স্টেপ ক্লিয়ার’ থাকে, তাহলে যে কোনও বড় প্রবলেমকে খুব সহজে ছোট ছোট স্টেপে ভেঙে সলভ করে নেওয়া যায়। শুধু এতে যে ক্যালকুলেশন পরীক্ষায় জিজ্ঞেস করা হয়, তার জন্য বিশেষভাবে প্র্যাকটিস করতে হবে ‘lengthy calculation problem’-এর (একই কথা অঙ্ক আর ফিজিক্সেও প্রযোজ্য শেষ কয়েক বছরের ট্রেন্ড অনুযায়ী)। এতে কোচিং মেটেরিয়ালই অনেক।

আরও পড়ুন:

দেখব এবার জগৎটাকে, পর্ব-১০: জলপথে আমাজন অরণ্যের গহনে

লাইট সাউন্ড ক্যামেরা অ্যাকশন, পর্ব-৮: ইতালিয়ান নিওরিয়ালিজম এবং ডি সিকার বাইসাইকেল থিভস

 

এনসিইআরটি

কোচিংয়ের ক্লাসে লেখা থিওরি নোটস-এর পাশাপাশি এনসিইআরটি (NCERT) পড়ে নেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে ‘NCERT EXEMPLAR PROBLEMS’ সলভ করে নেওয়া উচিত। কারণ তাতে জেইই মেন (মূলত) আর অ্যাডভান্সড (খানিকটা)-এ খানিকটা বেশি সুবিধা পাওয়া যায়। ইনোর্গনিক ও অর্গানিক কেমিস্ট্রির জন্য তো এনসিইআরটি এবং এনসিইআরটি ল্যাব ম্যানুয়াল অবশ্যই পড়ে যেতে হবে। জেইই মেন স্পেসিফিক টপিকগুলোর জন্যে আর বোর্ডের পরীক্ষার জন্যে তো এনসিইআরটি বাধ্যতামূলক।

 

বোর্ডের পরীক্ষা

আমি সিবিএসই বোর্ড-এর ছাত্র ছিলাম। তাই আমার ক্ষেত্রে স্কুল পরীক্ষার জন্যে শুধু ইংরেজি, বাংলা, ফিজিক্যাল এডুকেশন-এর প্রস্তুতি নিতে হতো। আমি স্কুল পরীক্ষার কয়েকদিন আগে এই বিষয়গুলোর যে যে টপিক আসছে পরীক্ষার আগে তাতে খানিকটা চোখ বুলিয়ে পরীক্ষা দিতে যেতাম। আর আমি বোর্ড পরীক্ষার জন্য তৈরি হয়েছিলাম পরীক্ষা শুরু হওয়ার পনেরো-কুড়ি দিন আগে থেকে। আগে থেকেই অধ্যায়গুলোর সম্পর্কে একটা ধারণা ছিল। তাই এই সময় আমি অধ্যায়গুলোর আরও ভিতরে ঢুকে বোর্ডের জন্য যে যে অংশ গুরুত্বপূর্ণ তাতে সময় দিয়ে প্রস্তুত করেছিলাম ‘CBSE Sample Paper’ এবং ‘CBSE Practice Paper’-এর পদ্ধতি অনুযায়ী। আমি ‘বোর্ডের প্রিভিয়াস ইয়ার কোশ্চেন’ অনুযায়ী কীভাবে লিখতে হয়, সেটা ‘sample answer sheet’ দেখে ধারণা করে নিয়েছিলাম। ‘Non-PCM’ বিষয়গুলোকে বারবার রিভিশন করে আমি প্রস্তুত করেছিলাম পরীক্ষার জন্য। এতো কম সময় দেবার পরেও ৯৭.৬ শতাংশ এসেছিল। যেটা প্রমাণ করে বোর্ডের প্রস্তুতির জন্য খুব বেশি সময় লাগে না, যদি ‘কম্পিটিটিভ এক্সাম’-এর প্রস্তুতি ঠিকঠাক থাকে।

যে কোনও ম্যারাথন দৌড়ে যেমন সব সময় একই গতিতে ছোটা যায় না, তেমনি ভাবে প্রস্তুতির সময় অনেক চড়াই-উৎ‌রাই থাকে সবার জীবনে। তাই সেটাকে স্বীকার করে নিতে হবে। নিজের খারাপ সময়ে হতাশ না হয়ে নিজেকে আরও উন্নতির চেষ্টা করতে হবে। সব সময় মোটিভেটেড থাকার চেষ্টা করতে হবে নিজের লক্ষ্যের কথা মনে রেখে। এটা মনে রাখা জরুরি, পরীক্ষার ফল ঠিক হয় ফাইনাল দিনে। তাই যত রকমের ভুল হতে পারে, তা ‘মক এক্সাম’-এর ঠিক করে নিতে হবে। সেই সঙ্গে তার থেকে শিক্ষা নিয়ে সেই ভুল দ্বিতীয় বার করা যাবে না (একটা ডায়েরি করতে পারলে ভালো হয়। যেখানে শুধু যা যা ভুল হয়েছে সেগুলো লেখা থাকবে। এই ডায়েরিতে বারবার চোখ বোলালেই আর আগের ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি হবে না।)। যে কোনও রকমের অসুবিধা হলে শিক্ষক এবং অভিভাবকদের সঙ্গে সমস্যাটাকে খুলে আলোচনা করা উচিত। এক্ষেত্রে সঠিক পথ কেবল তাঁরাই বাতলে দিতে পারবেন। নিজের প্রতি ভরসা রাখতে হবে। নিরবিচ্ছিন্ন পরিশ্রম করে যেতে হবে, তবেই জেইই-তে(JEE) র্যা ঙ্ক করা যাবে।

অরিত্র অম্বুধ দত্ত, ডব্লিউবিজেইই র‍্যাঙ্ক ৬, জেইই অ্যাডভান্সড এআইআর ১৬২।

Skip to content