বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।

উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান শাখায় পড়ার পর সাধারণ মানুষের প্রথাগত ধারনা ইঞ্জিনিয়ারিং বা ডাক্তারি পেশায় কেরিয়ার তৈরি করাই সবথেকে ভাল। দ্বাদশ শ্রেনীতে যাদের বায়োলজি বা জীবনবিজ্ঞান পড়তে বেশি ভাল লাগে তারা প্রথাগতভাবে নিট (এনইইটি) পরীক্ষার মাধ্যমে ডাক্তারিতে সুযোগ পাওয়াটাই একমাত্র লক্ষ্য। প্রবেশিকা পরীক্ষায় সফল না হতে পারলেই মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ছে। উচ্চমাধ্যমিকের বায়োলজির তিনটি ভাগ— বোটানি বা উদ্ভিদবিদ্যা, জুলজি বা প্রাণীবিদ্যা এবং ফিজিওলজি বা শারীরবিদ্যা। এই শেষের ভাগটি যদি কারো পড়তে বেশি ভাল লাগে তাহলে কিন্তু ভবিষ্যতে ডাক্তারি পেশা ছাড়াও আরও অনেক সফল কেরিয়ার তৈরি করা সম্ভব। দ্বাদশ শ্রেণিতে যদি কেমিস্ট্রি বা রসায়ন ও বায়োলজি থাকে তাহলে স্নাতকস্তরে ফিজিওলজি নিয়ে পড়াশুনো করা যায়। আজ আমরা ফিজিওলজি নিয়ে পড়ে ভবিষ্যতে কি কি সুযোগ সুবিধা পেতে পারি সে বিষয়ে কিছু আলোচনা করবো।

ফিজিওলজি কি?
এটি বায়োলজির সেই শাখা যেখানে মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এবং তাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে বিশদে পড়াশুনো করানো হয়। বায়োলজির সবচাইতে আকর্ষণীয় বিষয় বিভাগটি হল ফিজিওলজি কারণ এখানে আমাদের নিজেদের শরীরের নানা কার্যকলাপ কিভাবে চলছে তা আমরা জানতে পারি। আর তাই একে বলা হয় শারীরবিদ্যা অর্থাৎ আমাদের শরীর সম্বন্ধে জানা।
ফিজিওলজির উপোযোগিতা বর্তমান দুনিয়ার নিরিখে বায়োলজির একমাত্র এই শাখাতেই কিন্তু নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। চিকিৎসা শাস্ত্রের সাথে ফিজিওলজি ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত। বর্তমানে মানবকল্যাণে ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে গবেষণা ক্ষেত্রে ফিজিওলজি পড়ুয়াদের সুযোগ বেশি। স্নাতকস্তরে ফিজিওলজি পড়লে পরবর্তিতে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় নানান সহযোগী বিষয়ে পড়াশুনো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। ডাক্তারি ছাড়াও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নানা ক্ষেত্রে ফিজিওলজির পড়ুয়ারা অনেকাংশেই এগিয়ে থাকবে।

স্নাতক স্তরে ফিজিওলজি পড়ার সুযোগ
আমাদের রাজ্যের এখন প্রায় সবকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনের বহু কলেজেই ফিজিওলজিতে স্নাতক ডিগ্রী পড়া যায় । তবে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি কলকাতা, বিদ্যাসাগর, বর্ধমান, কল্যাণী, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় (বারাসত) ও মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। এছাড়া মেদিনীপুর কলেজ, রামমোহন কলেজ ও শ্রীরামপুর কলেজে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়ার সুযোগ আছে।
কেরিয়ার তৈরি করতে ফিজিওলজির ভূমিকা স্নাতক স্তরে ফিজিওলজি পাশ করে যেমন উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় প্রচুর সুযোগ রয়েছে তেমনি নানা সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রেও চাকরীর সুযোগ রয়েছে। ডাক্তারি পেশা ছাড়াও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের নানান কাজের চাহিদার সাথে বর্তমানে ফিজিওলজির আকর্ষণ কিন্তু অনেকটাই বেড়েছে।

স্কুল শিক্ষকতা
যেহেতু স্কুলে জীবনবিজ্ঞান মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক উভয় স্তরেই পড়ানো হয় তাই স্নাতক পাশ করে বি.এড করেলে স্কুলে চাকরির সুযোগ রয়েছে।

কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে
ফিজিওলজিতে স্নাতকোত্তর পাশ করে নেট, সেট প্রভৃতি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে রাজ্য তথা দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সুযোগ রয়েছে । এছাড়া স্নাতক স্তরে ফিজিওলজি পড়ে যদি মেডিক্যাল ফিজিওলজিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পড়া যায় তাহলে দেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজেও অধ্যাপনার সুযোগ আছে। তবে মেডিক্যাল ফিজিওলজিতে স্নাতকোত্তর আমাদের রাজ্যে পড়ানো হয় না, উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি কলেজে এটি পড়ানো হয়। এদের মধ্যে মণিপালের কস্তুরবা মেডিক্যাল কলেজ, সিকিম মণিপাল বিশ্ববিদ্যালয়, পুদুচেরির কিছু বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ উল্লেখযোগ্য।

গবেষণা
ফিজিওলজিতে স্নাতকোত্তর পাশ করে নেটের জে. আর. এফ, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব রিসার্চ এলিজিবিলিটি টেস্ট বা রেট পাশ করলে বিভিন্ন জাতীয় স্তরের গবেষণাগারে ও দেশের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার সুযোগ রয়েছে। দেশের বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা যেমন ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশান (ডিআরডিও), কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর)এর অন্তর্গত বিভিন্ন সংস্থা, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের (আই সি এম আর) অন্তর্গত বিভিন্ন সংস্থা, টাটা ইন্সটিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ (টিআইএফআর), ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স (আই আই এস সি), ইত্যাদি নানা বিশ্বমানের গবেষণা সংস্থায় প্রচুর সুযোগ রয়েছে।

বিদেশে গবেষণা
ফিজিওলজিতে স্নাতকোত্তর পাশ করে এখানকার বহু ছাত্রছাত্রী আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, চিন, জাপান, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা বা গবেষণার জন্য যাচ্ছে। এজন্য বিভিন্ন স্কলারশিপ পাওয়ার সুযোগ আছে। আবার অনেকে গবেষণা (পিএইচ.ডি)-র পরে পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চের জন্য স্কলারশিপ নিয়েও বিদেশে যাচ্ছে।

ডায়েটেশিয়ান
স্নাতকোত্তরে ফিজিওলজিতে নিউট্রিশান স্পেশাল পেপার হিসাবে পড়া যায়। সেক্ষেত্রে পরবর্তিতে ডায়েটেটিক্সে ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট কোর্স করলে ডায়েটেশিয়ান হিসেবেও কেরিয়ার তৈরি করার সুযোগ থাকছে।

স্পোর্টস সায়েন্স বা ক্রীড়া বিজ্ঞান
বর্তমানে খেলার জগতেও ফিজিওলজি পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের কেরিয়ার তৈরির বেশ কিছু সুযোগ রয়েছে। স্নাতকোত্তরে যেমন স্পোর্টস ফিজিওলজি স্পেশাল পেপার নেওয়া যায় তেমনি স্নাতক পাশ করেও স্পোর্টস সায়েন্স বা ক্রীড়া বিজ্ঞান নিয়েও উচ্চশিক্ষার সুযোগ আছে। স্পোর্টস মেডিসিন, স্পোর্টস নিউট্রিশানের ওপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার ডিগ্রী পড়ান হয়। এছাড়া সাই বা স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার দপ্তরে নানা বিভাগে ফিজিওলজির ছাত্রছত্রীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি
ফিজিওলজিতে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর করে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিতে চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাওয়া যায়। মেডিক্যাল রিপ্রেসেন্টিটিভের চাকরি স্নাতক পাশ করেই পাওয়া যেতে পারে। এছাড়া ওষুধ কোম্পানিতে প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট ও রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগে ফিজিওলজির ছাত্রছাত্রীদের সুযোগ অন্যদের তুলনায় বেশি।

ল্যাব টেকনিশিয়ান
স্নাতক পাশ করার পর ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ানের ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট কোর্স করে বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে চাকরির সুযোগ আছে। তাছাড়া সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ও প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে এই ধরনের দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তির চাহিদাও অনেক বেড়েছে।

অন্যান্য চাকরি
শিক্ষকতা ও গবেষণায় অনেকের আগ্রহ নাও থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস, ওয়েস্ট বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস, ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিস, ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট সার্ভিস-এর মতো বেশ কিছু সরকারি চাকরির পরীক্ষায় ফিজিওলজির ছাত্রছাত্রীরা যথেষ্ট সফল। এছাড়া ব্যাংক, পোস্ট অফিস, রেল ইত্যাদি সরকারি ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার চাকরির সম্ভাবনা তো আছেই।

Skip to content