সিদ্ধার্থ গৌতম মানব জীবনের অন্যতম ব্যাধি দুঃখের মূল উৎস অনুসন্ধানে ব্রতী হন এবং দীর্ঘ
তপশ্চর্যার অন্তে বোধি লাভ করে যে তত্ত্বটি আহরণ করেন তা হল প্রতীত্যসমুৎপাদতত্ত্ব। এর
সাহায্যে তিনি তুলে ধরেন যে মানুষের জীবনে দুঃখ যা জরামরণ নামে খ্যাত, তা কোন
আকস্মিক ঘটনা বা কোন দৈব দুর্বিপাক নয়, তা প্রকৃতপক্ষে কারণশৃঙ্খলা সঞ্জাত। অতএব, এই
দুঃখের অবসান ঘটানোর জন্য গুরুকৃপা বা দেবতার অনুগ্রহের প্রয়োজন নেই, যা প্রয়োজন তা
হল, দুঃখের মূল উৎস যে অবিদ্যা তার বিনাশ করা। অবিদ্যা নাশের জন্য অষ্টাঙ্গিক মার্গের
অনুশীলন একান্ত প্রয়োজন। বুদ্ধদেবের এই অনুভব চতুরার্য সত্যের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে।
আর, চতুরার্য সত্যের মূল স্তম্ভ হল প্রতীত্যসমুৎপাদ তত্ত্ব।
তপশ্চর্যার অন্তে বোধি লাভ করে যে তত্ত্বটি আহরণ করেন তা হল প্রতীত্যসমুৎপাদতত্ত্ব। এর
সাহায্যে তিনি তুলে ধরেন যে মানুষের জীবনে দুঃখ যা জরামরণ নামে খ্যাত, তা কোন
আকস্মিক ঘটনা বা কোন দৈব দুর্বিপাক নয়, তা প্রকৃতপক্ষে কারণশৃঙ্খলা সঞ্জাত। অতএব, এই
দুঃখের অবসান ঘটানোর জন্য গুরুকৃপা বা দেবতার অনুগ্রহের প্রয়োজন নেই, যা প্রয়োজন তা
হল, দুঃখের মূল উৎস যে অবিদ্যা তার বিনাশ করা। অবিদ্যা নাশের জন্য অষ্টাঙ্গিক মার্গের
অনুশীলন একান্ত প্রয়োজন। বুদ্ধদেবের এই অনুভব চতুরার্য সত্যের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে।
আর, চতুরার্য সত্যের মূল স্তম্ভ হল প্রতীত্যসমুৎপাদ তত্ত্ব।
অনিরোধমনুৎপাদমনুচ্ছেদমশাশ্বতম্।
অনেকার্থমনানার্থমনাগমমনির্গমম্।।
(মূলমধ্যমকারিকা ১.১)
অনেকার্থমনানার্থমনাগমমনির্গমম্।।
(মূলমধ্যমকারিকা ১.১)
প্রসিদ্ধ দার্শনিক নাগার্জুন তাঁর মূলমধ্যমকারিকা গ্রন্থে প্রতীত্যসমুৎপাদ তত্ত্বকে বোঝাতে গিয়ে
এমন আটটি বিশেষণই প্রয়োগ করেছেন। এই গ্রন্থকে ভিত্তি করে চন্দ্রকীর্তি যে প্রসন্নপদা টীকা
রচনা করেন সেখানে প্রতীত্যসমুৎপাদের অর্থ বিশ্লেষণ করা আছে। ‘প্রতীত্যসমুৎপাদ’ একটি
সমাসবদ্ধ পদ, যার অবয়ব দুটি পদ — ‘প্রতীত্য’ ও ‘সমুৎপাদ’। ‘প্রতি’ পূর্বক ‘ই’ ধাতুর উত্তর
‘ল্যপ্’ প্রত্যয় করে নিষ্পন্ন ‘প্রতীত্য’ কথার অর্থ হল প্রাপ্তিকে অপেক্ষা করে। আর ‘সম্’ পুর্বক
‘উৎ’ পূর্বক ‘পদ’ ধাতু থেকে নিষ্পন্ন ‘সমুৎপাদ’ শব্দের অর্থ প্রাদুর্ভাব। এই ব্যাখ্যা অনুসারে
‘প্রতীত্যসমুৎপাদ’ কথার অর্থ হল হেতু প্রত্যয়কে অপেক্ষা করে যে কোন ভাব পদার্থের উৎপত্তি, যা
উৎপন্ন হয় বা কার্য তা কোন কারণ থেকেই উৎপন্ন হয়। প্রত্যেক কার্যই কারণ নির্ভর বা
কারণের অধীন। কারণ তিরোহিত হলেই কার্য তিরোহিত হয়। সুতরাং, প্রত্যেক বস্তুর অস্তিত্ব
কারণের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা শর্তাধীন।
জগতের কার্যকারণ শৃঙ্খলা প্রবাহের নামান্তর হল প্রতীত্যসমুৎপাদ। বৌদ্ধ মতে, বস্তু ক্ষণে ক্ষণে
পরিবর্তনশীল। প্রথম ক্ষণের বস্তু দ্বিতীয় ক্ষণে বিনষ্ট হয় এবং প্রথম ক্ষণের সদৃশ আরেকটি বস্তু
উৎপন্ন হয় যা আবার তৃতীয় ক্ষণে বিনষ্ট হয়। বস্তু হল পরিবর্তনশীল সদৃশ অবস্থার প্রবাহমাত্র।
প্রশ্ন হল, এই প্রবাহের অন্তর্গত দুটি সদৃশ অবস্থার মধ্যে সম্বন্ধ কিরূপ? একটি ব্যাখ্যা হল—
পরিবর্তিত অবস্থাগুলির মধ্যে কোন সম্বন্ধ নেই। এই মতবাদ যদৃচ্ছাবাদ। এই মতবাদ অনুসারে,
জগত অসম্বন্ধ ঘটনার সমাহার। কোনও কার্যকারণের নিয়ম জগতে কাজ করছে না। আরেকটি
ব্যখ্যা হল —পরিবর্তিত অবস্থাগুলির মধ্যে কার্যকারণ সম্বন্ধ আছে। বস্তু যা তা তার স্বভাবের
দ্বারাই নির্ধারিত হয়। প্রতিটি বস্তুর নিজস্ব স্বভাব আছে এবং তার স্বরূপ ঐ স্বভাবের দ্বারাই
নির্ধারিত। এই মতানুসারে, একটি অবস্থা থেকে যে আরেকটি অবস্থার উৎপত্তি তা বস্তুর
স্বভাবের জন্যই হয়। আমাদের ইচ্ছা বা অনিচ্ছার উপর কোন কিছু ঘটা নির্ভর করে না।
প্রতীত্যসমুৎপাদ তত্ত্ব এই উভয় মতবাদের বিরোধী। যদৃচ্ছাবাদের বিরোধীতা করে এই মতবাদ
বলে যে, কারণ থাকলে কার্য হয়। প্রত্যেকটি বস্তুর উৎপত্তি কারণ নির্ভর বলে শর্তাধীন,
কোন কিছুই আকস্মিক ভাবে ঘটতে পারে না। আবার প্রতীত্যসমুৎপাদ তত্ত্ব স্বভাববাদেরও
বিরোধী। কেন না, স্বভাববাদ অনুযায়ী পরিবর্তনের গতি অনিবার্য। অর্থাৎ যা ঘটবে তা
অবশ্যম্ভাবীরূপে ঘটবে। কিন্তু প্রতীত্যসমুৎপাদ তত্ত্বে মানুষের প্রচেষ্টার যথেষ্ট মূল্য আছে। কেন না,
কার্যকারণের যে শৃঙ্খল তা রোধ করা সম্ভব। এর জন্য কারণগুলি জানা প্রয়োজন।
প্রতীত্যসমুৎপাদ নিয়মরূপ কার্যকারণ শৃঙ্খলে দ্বাদশটি গ্রন্থি আছে। তাই একে দ্বদশ নিদান ও বলা
হয়। দ্বাদশ নিদান হল— অবিদ্যাসংস্কার নামরূপ ষড়ায়তন স্পর্শ বেদনা তৃষ্ণা উপাদান ভব জাতি
জরামরণ।
একদিকে যা কারণ অপরদিকে তাই কার্য। এই কার্যকারণ পরম্পরার সংযোগে যেন একটি চক্র
নির্মিত হয়েছে যা জন্ম হতে জন্মান্তরে আবর্তিত হচ্ছে। এই কার্যকারণ শৃঙ্খল শুরু হয়েছে অনাদি
অবিদ্যা থেকে। যতক্ষণ অবিদ্যা রয়েছে ততক্ষণ অন্য নিদানগুলি একটির পর একটি উদ্ভূত
হচ্ছে। এর মধ্যে একটি অনিবার্যতা আছে। কিন্তু তা রোধ করা যায়। অবিদ্যা যা দুঃখের মূল
কারণ তা দূরীভূত হলে দ্বাদশ নিদান বা কার্যকারণ শৃঙ্খল বিনাশপ্রাপ্ত হয় এবং দুঃখের অবসান
হয়।
প্রতীত্যসমুৎপাদ শাশ্বতবাদ ও উচ্ছেদবাদের মধ্যবর্তী মতবাদ। শাশ্বতবাদ অনুসারে, কোন কোন
সত্তা নিত্য এবং শর্তনিরপেক্ষভাবে অস্তিত্বশীল। উচ্ছেদবাদ অনুসারে, কোনও কিছুর পূর্ণ বিনাশ হতে
পারে অর্থাৎ কোন কার্য না রেখেই তা বিনষ্ট হতে পারে। প্রতীত্যসমুৎপাদ অনুসারে, যা কিছু
প্রত্যক্ষগ্রাহ্য তা সবই অস্তিত্বশীল তবে প্রত্যেকটির অস্তিত্বই শর্ত সাপেক্ষ বা অন্য বস্তুর অস্তিত্বের
উপর নির্ভরশীল এবং সেই বস্তু বিনষ্ট হওয়ার সময় কোন কার্য রেখে যায়। সুতরাং,
প্রতীত্যসমুৎপাদবাদ তত্ত্বগতভাবে একদিকে যেমন শাশ্বতবাদ ও উচ্ছেদবাদের মধ্যবর্তী মতবাদ
অন্যদিকে তা যদৃচ্ছাবাদ ও স্বভাববাদের বিরোধী মতবাদ।
প্রতীত্যসমুৎপাদকে ধর্মের সঙ্গে অভিন্ন করে বলা হয় প্রতীত্যসমুৎপাদ ও ধর্ম অভিন্ন। ‘যে
প্রতীত্যসমুৎপাদকে জেনেছে সে ধর্মকে জেনেছে। আর, যে ধর্মকে জেনেছে সে প্রতীত্যসমুৎপাদকে
জেনেছে।’ প্রতীত্যসমুৎপাদ নিয়মই বৌদ্ধ ধর্ম দর্শনের মূল স্তম্ভ। এটি সার্বভৌম সর্বব্যাপক
কার্যকারণ বিধি। কার্যকারণের এই নিয়ম স্বততঃই জগতে কাজ করে চলেছে। এই নিয়ম ঈশ্বর
বা অন্য কোন চেতন সত্তার দ্বারা পরিচালিত নয়। এই তত্ত্ব থেকেই বৌদ্ধ দর্শনের অন্য প্রধান
তত্ত্বগুলি যেমন কর্মবাদ, অনিত্যতাবাদ, নৈরাত্ম্যবাদ যুক্তিসঙ্গতভাবেই নিঃসৃত হয়। পরবর্তীকালে
নাগার্জুন প্রতীত্যসমুৎপাদের উপর নির্ভর করেই শূন্যবাদের নির্মাণ করেন। পারমার্থিক দৃষ্টিকোণ
থেকে তিনি শূন্যতা বলতে নির্বাণকে বোঝালেও সংবৃতি সত্তার জগৎ তথা ব্যবহারিক জগতে
শূন্যতা বলতে প্রতীত্যসমুৎপাদকেই চিহ্নিত করেছেন।
ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।
এমন আটটি বিশেষণই প্রয়োগ করেছেন। এই গ্রন্থকে ভিত্তি করে চন্দ্রকীর্তি যে প্রসন্নপদা টীকা
রচনা করেন সেখানে প্রতীত্যসমুৎপাদের অর্থ বিশ্লেষণ করা আছে। ‘প্রতীত্যসমুৎপাদ’ একটি
সমাসবদ্ধ পদ, যার অবয়ব দুটি পদ — ‘প্রতীত্য’ ও ‘সমুৎপাদ’। ‘প্রতি’ পূর্বক ‘ই’ ধাতুর উত্তর
‘ল্যপ্’ প্রত্যয় করে নিষ্পন্ন ‘প্রতীত্য’ কথার অর্থ হল প্রাপ্তিকে অপেক্ষা করে। আর ‘সম্’ পুর্বক
‘উৎ’ পূর্বক ‘পদ’ ধাতু থেকে নিষ্পন্ন ‘সমুৎপাদ’ শব্দের অর্থ প্রাদুর্ভাব। এই ব্যাখ্যা অনুসারে
‘প্রতীত্যসমুৎপাদ’ কথার অর্থ হল হেতু প্রত্যয়কে অপেক্ষা করে যে কোন ভাব পদার্থের উৎপত্তি, যা
উৎপন্ন হয় বা কার্য তা কোন কারণ থেকেই উৎপন্ন হয়। প্রত্যেক কার্যই কারণ নির্ভর বা
কারণের অধীন। কারণ তিরোহিত হলেই কার্য তিরোহিত হয়। সুতরাং, প্রত্যেক বস্তুর অস্তিত্ব
কারণের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা শর্তাধীন।
জগতের কার্যকারণ শৃঙ্খলা প্রবাহের নামান্তর হল প্রতীত্যসমুৎপাদ। বৌদ্ধ মতে, বস্তু ক্ষণে ক্ষণে
পরিবর্তনশীল। প্রথম ক্ষণের বস্তু দ্বিতীয় ক্ষণে বিনষ্ট হয় এবং প্রথম ক্ষণের সদৃশ আরেকটি বস্তু
উৎপন্ন হয় যা আবার তৃতীয় ক্ষণে বিনষ্ট হয়। বস্তু হল পরিবর্তনশীল সদৃশ অবস্থার প্রবাহমাত্র।
প্রশ্ন হল, এই প্রবাহের অন্তর্গত দুটি সদৃশ অবস্থার মধ্যে সম্বন্ধ কিরূপ? একটি ব্যাখ্যা হল—
পরিবর্তিত অবস্থাগুলির মধ্যে কোন সম্বন্ধ নেই। এই মতবাদ যদৃচ্ছাবাদ। এই মতবাদ অনুসারে,
জগত অসম্বন্ধ ঘটনার সমাহার। কোনও কার্যকারণের নিয়ম জগতে কাজ করছে না। আরেকটি
ব্যখ্যা হল —পরিবর্তিত অবস্থাগুলির মধ্যে কার্যকারণ সম্বন্ধ আছে। বস্তু যা তা তার স্বভাবের
দ্বারাই নির্ধারিত হয়। প্রতিটি বস্তুর নিজস্ব স্বভাব আছে এবং তার স্বরূপ ঐ স্বভাবের দ্বারাই
নির্ধারিত। এই মতানুসারে, একটি অবস্থা থেকে যে আরেকটি অবস্থার উৎপত্তি তা বস্তুর
স্বভাবের জন্যই হয়। আমাদের ইচ্ছা বা অনিচ্ছার উপর কোন কিছু ঘটা নির্ভর করে না।
প্রতীত্যসমুৎপাদ তত্ত্ব এই উভয় মতবাদের বিরোধী। যদৃচ্ছাবাদের বিরোধীতা করে এই মতবাদ
বলে যে, কারণ থাকলে কার্য হয়। প্রত্যেকটি বস্তুর উৎপত্তি কারণ নির্ভর বলে শর্তাধীন,
কোন কিছুই আকস্মিক ভাবে ঘটতে পারে না। আবার প্রতীত্যসমুৎপাদ তত্ত্ব স্বভাববাদেরও
বিরোধী। কেন না, স্বভাববাদ অনুযায়ী পরিবর্তনের গতি অনিবার্য। অর্থাৎ যা ঘটবে তা
অবশ্যম্ভাবীরূপে ঘটবে। কিন্তু প্রতীত্যসমুৎপাদ তত্ত্বে মানুষের প্রচেষ্টার যথেষ্ট মূল্য আছে। কেন না,
কার্যকারণের যে শৃঙ্খল তা রোধ করা সম্ভব। এর জন্য কারণগুলি জানা প্রয়োজন।
প্রতীত্যসমুৎপাদ নিয়মরূপ কার্যকারণ শৃঙ্খলে দ্বাদশটি গ্রন্থি আছে। তাই একে দ্বদশ নিদান ও বলা
হয়। দ্বাদশ নিদান হল— অবিদ্যাসংস্কার নামরূপ ষড়ায়তন স্পর্শ বেদনা তৃষ্ণা উপাদান ভব জাতি
জরামরণ।
একদিকে যা কারণ অপরদিকে তাই কার্য। এই কার্যকারণ পরম্পরার সংযোগে যেন একটি চক্র
নির্মিত হয়েছে যা জন্ম হতে জন্মান্তরে আবর্তিত হচ্ছে। এই কার্যকারণ শৃঙ্খল শুরু হয়েছে অনাদি
অবিদ্যা থেকে। যতক্ষণ অবিদ্যা রয়েছে ততক্ষণ অন্য নিদানগুলি একটির পর একটি উদ্ভূত
হচ্ছে। এর মধ্যে একটি অনিবার্যতা আছে। কিন্তু তা রোধ করা যায়। অবিদ্যা যা দুঃখের মূল
কারণ তা দূরীভূত হলে দ্বাদশ নিদান বা কার্যকারণ শৃঙ্খল বিনাশপ্রাপ্ত হয় এবং দুঃখের অবসান
হয়।
প্রতীত্যসমুৎপাদ শাশ্বতবাদ ও উচ্ছেদবাদের মধ্যবর্তী মতবাদ। শাশ্বতবাদ অনুসারে, কোন কোন
সত্তা নিত্য এবং শর্তনিরপেক্ষভাবে অস্তিত্বশীল। উচ্ছেদবাদ অনুসারে, কোনও কিছুর পূর্ণ বিনাশ হতে
পারে অর্থাৎ কোন কার্য না রেখেই তা বিনষ্ট হতে পারে। প্রতীত্যসমুৎপাদ অনুসারে, যা কিছু
প্রত্যক্ষগ্রাহ্য তা সবই অস্তিত্বশীল তবে প্রত্যেকটির অস্তিত্বই শর্ত সাপেক্ষ বা অন্য বস্তুর অস্তিত্বের
উপর নির্ভরশীল এবং সেই বস্তু বিনষ্ট হওয়ার সময় কোন কার্য রেখে যায়। সুতরাং,
প্রতীত্যসমুৎপাদবাদ তত্ত্বগতভাবে একদিকে যেমন শাশ্বতবাদ ও উচ্ছেদবাদের মধ্যবর্তী মতবাদ
অন্যদিকে তা যদৃচ্ছাবাদ ও স্বভাববাদের বিরোধী মতবাদ।
প্রতীত্যসমুৎপাদকে ধর্মের সঙ্গে অভিন্ন করে বলা হয় প্রতীত্যসমুৎপাদ ও ধর্ম অভিন্ন। ‘যে
প্রতীত্যসমুৎপাদকে জেনেছে সে ধর্মকে জেনেছে। আর, যে ধর্মকে জেনেছে সে প্রতীত্যসমুৎপাদকে
জেনেছে।’ প্রতীত্যসমুৎপাদ নিয়মই বৌদ্ধ ধর্ম দর্শনের মূল স্তম্ভ। এটি সার্বভৌম সর্বব্যাপক
কার্যকারণ বিধি। কার্যকারণের এই নিয়ম স্বততঃই জগতে কাজ করে চলেছে। এই নিয়ম ঈশ্বর
বা অন্য কোন চেতন সত্তার দ্বারা পরিচালিত নয়। এই তত্ত্ব থেকেই বৌদ্ধ দর্শনের অন্য প্রধান
তত্ত্বগুলি যেমন কর্মবাদ, অনিত্যতাবাদ, নৈরাত্ম্যবাদ যুক্তিসঙ্গতভাবেই নিঃসৃত হয়। পরবর্তীকালে
নাগার্জুন প্রতীত্যসমুৎপাদের উপর নির্ভর করেই শূন্যবাদের নির্মাণ করেন। পারমার্থিক দৃষ্টিকোণ
থেকে তিনি শূন্যতা বলতে নির্বাণকে বোঝালেও সংবৃতি সত্তার জগৎ তথা ব্যবহারিক জগতে
শূন্যতা বলতে প্রতীত্যসমুৎপাদকেই চিহ্নিত করেছেন।
ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।