শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

বেশিরভাগ শিশুই কোনও ওষুধই খেতে চায় না। সেটা তরল ওষুধই হোক বা ট্যাবলেট হোক,শিশুদের এই ওষুধ না খেতে চাওয়ার পিছনে কিছু কারণ আছে —
ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজনটা শিশু বুঝতে পারে না।বয়স পাঁচ থেকে ছয় বছর না হওয়া পর্যন্ত ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজনটা না বুঝতে পারাটাই স্বাভাবিক।
বেশিরভাগ ওষুধই শিশুদের কাছে বিষাদ বা তেতো লাগে।
ওষুধের স্বাদ ও রঙ শিশুর পছন্দ নাও হতে পারে।
ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল খেতে শিশুর অসুবিধা হতে পারে।
 

ওষুধ খেতে না চাইলে বাচ্চাকে কীভাবে রাজি করাবেন?

ওষুধ খেতে ভয় পাওয়াটা যে শিশুর যথাযথ সেটা মেনে নিয়ে শিশুকে বোঝাতে হবে ওষুধ খাওয়াটা জরুরি কেনও।
শিশু ঠিক কিভাবে ওষুধ খেতে পছন্দ করে তা জেনে নিন। চামচ দিয়ে, ড্রপার দিয়ে অথবা কাপের মধ্যে- যেভাবে শিশু পছন্দ করে সেভাবেই আপনাকে চেষ্টা করতে হবে।
শিশু যা কিছু খাবে সেটারই প্রশংসা করতে হবে এবং তার জন্য মাঝে মাঝে কিছু একটা উপহার দিতে হবে। সে ওষুধ খেলে উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে এবং সেটা মেনে চলতে হবে।
শিশু সোফায় বসে, কোলে বসে না বিছানায় বসে ওষুধ খেতে পছন্দ করে তা বুঝে আপনাকে সেভাবেই খাওয়াবার চেষ্টা করতে হবে।
ফ্লেভার ওষুধ শিশুদের কাছে সহজে গ্রহণযোগ্য।
আপনার ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিন- নির্ধারিত ওষুধটি অন্য কোনও তরল খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো যায় কিনা। সেক্ষেত্রে যে দুধ, ফলের রস বা অন্য খাবারের সঙ্গে ওষুধটি মেশাবেন সেটা পুরো না খাওয়াতে পারলে ডোজ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
খেলার ছলে শিশুদের ওষুধ খাওয়াতে নেই।
ট্যাবলেটের সাইজ বড় হলে ছোট টুকরো করে খাওয়ানো যায়।
শিশু কি রকমের ওষুধ খেতে চায় তরল না ট্যাবলেট — সেটা শিশুকেই পছন্দ করতে দিন।
শিশুদের ওষুধ সবসময়ই বসে খাওয়ানো উচিত। শিশুর শোয়া অবস্থায় কখনোই ওষুধ খাওয়ানো উচিত নয়।
মুখে সবসময় হাসি রাখুন।

 

শিশুদের ওষুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে আরও কয়েকটি সতর্কবার্তা

শিশুদের সঠিক ডোজে ওষুধ খাওয়াতে হবে।
ফিডিং বোতলে কখনও ওষুধ খাওয়াতে নেই।
প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ খাওয়াতে হবে।
মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ খাওয়ানো অপরাধ।
সময় মেনে ওষুধ খাওয়াতে হবে।
সকল ওষুধ শিশুদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে।
সিরিঞ্জে করে ওষুধ খাওয়ানো বিজ্ঞানসম্মত নয়।

আরও পড়ুন:

কোভিশিল্ড টিকা নিয়েই মৃত্যু মেয়ের, হাজার কোটি ক্ষতিপূরণ চেয়ে বিল গেটসকে নোটিস বম্বে হাই কোর্টের

প্রসবের সময় বা জন্মের পর সদ্যোজাতের মৃত্যু হলে ৬০ দিনের ছুটি পাবেন কেন্দ্রীয় সরকারি মহিলা কর্মীরা

 

শিশুদের ওষুধ খাওয়ানোর সঙ্গে খাবারের সম্পর্ক

সাধারণভাবে প্রায় সব ওষুধই শিশুদের খাবারের আগে দিতে হয়। দুধ বা খাবার খাওয়ার পরে যেকোনও ওষুধ খাওয়ালেই শিশুদের একটা বমির প্রবণতা দেখা যায়। কখনও কখনও বমি হয়। তাই সব ওষুধই খাওয়ার আগে খাওয়ানো ভালো। এমনকি, যে ওষুধগুলো খালি পেটে খাওয়াতে নেই, যেমন— অ্যাসপিরিন, ব্যথার ওষুধ, আইব্রুফেন, ডাইক্লোফেনাক, স্টিরয়েড — এগুলোও হালকা কিছু খাইয়ে তার অন্তত ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরে খাওয়ানো বিধেয়। মুখে বা জিভে লাগানোর ওষুধ যেমন মাউথ জেল, মাউথ ওয়াশ, কোট্রাইমাজল সবসময়ই খাবারের পরেই লাগানো উচিত।
 

ওষুধ খাওয়ানোর সঠিক নিয়ম

চামচ দিয়ে তরল ওষুধ খাওয়ালে চামচে ওষুধ নিয়ে মুখের কোণ দিয়ে আস্তে আস্তে ঢেলে দিতে হয়। এতে জিভের পেছনের দিকে তেতো সাধ অনুভূত হওয়ায় যে কোষ থাকে, তার সংস্পর্শ এড়ানো যায়।

ট্যাবলেট খাওয়ানোর সময় আগে মুখে একটু জল দিয়ে ট্যাবলেটটি মুখে পুরে দিয়ে গিলতে বলতে হবে। বড় শিশুদের এটা আগে বুঝিয়ে বললে এই টেকনিক কার্যকর হবে।

ট্যাবলেটের আকার শিশুর তুলনায় বড় মনে হলে টুকরো করে ভেঙে খাওয়াতে হবে। ট্যাবলেটের পরিবর্তে তরল একই ওষুধ পাওয়া গেলে সেটা খাওয়ানোই বেশি ভালো। ছোট শিশুকে ট্যাবলেট গুলে খাওয়াতে হলে তার সঙ্গে একটু মধু বা চিনি মিশিয়ে দিতে হবে- যাতে সেটা শিশুর পক্ষে সহজে গ্রহণযোগ্য হয়।

ওষুধের পরিমাণ মাপার জন্য কখনওই খাবার টেবিলের বা রান্নাঘরের চামচ ব্যবহার করা যাবে না। এক চামচ বলতে পাঁচ এমএল বোঝায় সেটা সঠিক মাপের ডিভাইস দিয়ে মাপতে হবে। যে কোনও সিরাপের ঢাকনা দেওয়া যে প্লাস্টিকের ছিপি থাকে, সেখানে আড়াই এমএল, পাঁচ এমএল এবং দশ এমএল এর দাগ থাকে। এগুলো দিয়েও শিশুর মুখে ঢেলে ঠিক ভাবে খাওয়ানো যায় না। এগুলোর থেকে ড্রপারে ওষুধ নিয়েও শিশুকে ভালোভাবে খাওয়ানো যায়। সেক্ষেত্রে সঠিক পরিমাণের ওষুধ খাওয়ানোর পরেও ছিপির গায়ে লেগে থাকা তরল ওষুধ একটুখানি খাবার জলে ধুয়ে আবার খাওয়াতে হবে, না হলে আন্ডার ডোজ ওষুধ খাওয়ানো হবে। এর জন্য এক ধরনের ওষুধ খাওয়ানোর চামচ পাওয়া যায় যেখানে এক এমএল থেকে দশ, কুড়ি এমএল পর্যন্ত দাগ থাকে। তাতেই মেপে সেটা দিয়ে শিশুর মুখে সরাসরি খাওয়ানো যাবে। সেটা ব্যবহার করলেও শেষে জল দিয়ে ধুয়ে খাওয়াতে হবে।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১: আলোছায়ায় ‘দৃষ্টিদান’

পর্ব-২০: শিল্পীর শৈল্পিকতায় মৎস্য সন্ধান

 

কোনও ওষুধ খেয়ে বমি করলে কি আবার সেই ওষুধ খাওয়ানো উচিত?

তরল ওষুধ ১৫ থেকে ২০ মিনিটে এবং ট্যাবলেট ২০ থেকে ৩০ মিনিটে ৮০-৯০% শোষিত হয়। সুতরাং তরল ওষুধ খাওয়ার কুড়ি মিনিট পরে এবং ট্যাবলেট খাবার আধঘণ্টা পরে বমি করলে পুনরায় সেই ওষুধ খাওয়াবার দরকার নেই। কিন্তু তার আগে বমি করে ফেললে বমি করার অন্তত আধঘন্টা পরে সেই ডোজ আবার খাওয়ানো যায়। তবে যে শিশুদের ওষুধ খাওয়ালেই বমি হয় তাদেরকে বমির জন্য ডমপেরিডন বা অনডেনসেট্রন সিরাপ বা ট্যাবলেট খাইয়ে অথবা ইনজেকশন দিয়ে তার আধঘন্টা পরে অন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ দিতে হবে।

ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

যোগাযোগ: ৯৮৩০২৯৪৯৩২


Skip to content