বুধবার ১৩ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

শিশুদের জ্বর থেকে তরকা হওয়া খুব একটা স্বাভাবিক ঘটনা। সাধারণত ৬ মাস থেকে ৬ বছর পর্যন্ত বয়সের শিশুদের এই সমস্যা দেখা যায়। অনেকেরই হয়তো জানা নেই, শিশু এই রোগে আক্রান্ত হলে সেই পরিবারে থাকা অন্য শিশুরও একই সমস্যা হতে পারে। যদিও এটা কোনও ছোঁয়াচে রোগ নয়। জ্বরে আক্রান্ত শতকারা তিন থেকে চারজন শিশুর এরকম তরকায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
 

তরকার উপসর্গ

শিশুর শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ বেড়ে গেলে জ্বরের সঙ্গে খিচুনি হতে পারে। আবার কারও কারও খিচুনি হওয়ার পরেও জ্বর হয়। এছাড়াও চোখ উল্টে যাওয়া, এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা, শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি কম হওয়া, মুখ দিয়ে লালা বেরনো, নীল হয়ে যাওয়া, জ্ঞান হারিয়ে ফেলা, প্রস্রাব বা পায়খানা হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
 

তরকার লক্ষণ কী কী

তরকা সাধারণত ৩ থেকে ৫ মিনিট স্থায়ী হয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ১৫ মিনিট পর্যন্তও থাকতে পারে।

জ্বরের প্রথম দিনেই সাধারণত খিচুনি হয়।

বাচ্চার স্বাভাবিক গড়ন ও গঠনে কোনও ক্ষতি হয় না।

প্রথমবার জ্বর হলে সাধারণত একবারই খিচুনি হয়। অবশ্য ক্ষেত্র বিশেষে দু’ থেকে তিন বারও হতে পারে।

খিচুনির পর এর কোনও প্রভাব থাকে না।

জ্বরজনিত খিচুনির জন্য মস্তিষ্কের কোনও ক্ষতি হয় না।

 

তৎক্ষণাৎ করণীয়

প্রথমেই ঘড়িতে চোখ রাখুন। এসময় বাড়ির সদস্যদের ধৈর্য হারালে চলবে না। পাশাপাশি শিশুকেও শান্ত রাখার চেষ্টা করুন।

বাচ্চাকে মেঝেতে বা সমান জায়গায় নরম বিছানায় মাথার নীচে নরম বালিশ দিয়ে শুইয়ে দিন।

শিশুকে এমন জায়গায় রাখতে হবে, যাতে সে পড়ে না যায় বা আঘাত না লাগে।

এক পাশ করে শুইয়ে দিতে হবে, যাতে মুখ থেকে নিঃসৃত লালা বা গ্যাঁজা শ্বাসনালীতে চলে যেতে না পারে।

মলদ্বারে একটা প্যারাসিটামল সাপোজিটরি এবং একটা ডায়াজিপাম সাপোজিটরি দিলে তাড়াতাড়ি জ্বরও কমে যাবে, আবার তরকাও থামবে। তবে মুখে কোন ওষুধ দেওয়া যাবে না।

বাচ্চার শরীর থেকে পোশাক খুলে ফেলতে হবে। চশমা পরা থাকলে তাও খুলে ফেলুন।

কাছাকাছি কোনও ধারাল অস্ত্র রাখা যাবে না।

ঘরের আলো কম করে দিতে হবে।
 

কী কী করবেন না

খিচুনির সময় চামচ বা অন্য কোনও কিছু মুখে ঢোকানোর চেষ্টা করবেন না।

হাত ও পা ধরে জোর করে খিচুনি বন্ধ করার চেষ্টা করা উচিত নয়।

বাচ্চাকে রোদে রাখা যাবে না।

ঠান্ডা জল দিয়ে স্নান করানো উচিত নয়।
 

চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

প্রথমবার জ্বর থেকে তরকা হলে শিশুকে হাসপাতালে বা শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে অবশ্যই নিয়ে যেতে হবে।

তরকা থেমে গেলে, জ্বর হওয়ার দিন থেকে তিনদিন পর্যন্ত শিশুর বয়স ও ওজন অনুযায়ী প্যারাসিটামল দিনে চারবার, সঙ্গে ক্লোবাজাম (Clobazam 5mg) দিনে দু’ বার খাওয়াতে হবে। শিশুর অন্য সময় জ্বর হলেও তরকা প্রতিরোধের জন্য তিনদিন একইরকম চিকিৎসা করতে হবে।

তবে পরিস্থিতি একেবারেই নিয়ন্ত্রণে না এলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে দেরি করবেন না।
 

জরুরি সতর্কতা

জ্বরজনিত তরকা হলে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দিলে বাচ্চার শরীর যদি নীল হতে শুরু করে তাহলে দ্রুততার সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ তা সামাল দেওয়ার জন্য শিশু যে স্কুলে পড়ে সেখানে সেই ব্যবস্থা থাকা জরুরি।

এইসব শিশু যাতে আগুন বা জলের কাছে না যায় তার জন্য সদা সতর্ক থাকতে হবে।

শিশু বাড়ির বাইরে গেলে তার সঙ্গে অভিভাবকদের থাকা বাঞ্ছনীয়।

ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

যোগাযোগ: ৯৮৩০২৯৪৯৩২


Skip to content