অশোককুমার।
অনেক দিন আগের কথা। সাংবাদিকতার কাজে মুম্বইয়ে গিয়ে সেবার প্রথম পরিচয় হল শ্রদ্ধেয় অশোককুমারের সঙ্গে। ঘটনাটা এরকম—হিন্দি ছবির প্রখ্যাত প্রযোজক ও পরিচালক বি আর চোপড়ার সঙ্গে দেখা করতে তাঁর অফিসে গিয়েছিলাম। সঙ্গে ছিলেন ফোটোগ্রাফার টুলু দাস। মুম্বইয়ে গেলেই বি আর চোপড়ার সঙ্গে দেখা করাটা আমাদের রুটিনের মধ্যে পড়ত। অফিসের রিসেপশনে জানতে পারলাম, দাদামণি এসেছেন। বি আর চোপড়ার সঙ্গে জরুরি কথাবার্তা বলছেন। আমাদের একটু অপেক্ষা করতে হবে। আগেই ভিজিটিং কার্ড পাঠিয়েছিলাম। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না। বি আর চোপড়া তাঁর চেম্বারে আমাদের আসতে রিসেপশনে খবর পাঠালেন। ইন্ডাস্ট্রির সকলেই অশোককুমারকে ‘দাদামণি’ বলে সম্বোধন করতেন।
চোপড়াজির চেম্বারে ঢুকতেই অশোককুমার টুলুদাকে দেখে বললেন, ‘কী হে তুমি এখানে?’ চোপড়াজি একটু অবাক হয়ে বললেন, ‘দাদামণি, আপনি ওঁকে আগে থেকেই চেনেন?’ অশোককুমার স্মিত হেসে বললেন, ‘টুলু তো অনেকদিন ধরে মুম্বইয়ে যাতায়াত করছে। ওঁকে আলবাত চিনি৷ আর শুধু চিনি বললে ভুল হবে৷ খুব ভালো করে চিনি।’ এরপর দাদামণির সঙ্গে আমার পরিচয় হল। প্রণাম করলাম। আমাকে আশীর্বাদ করলেন। দাদামণি তাঁর চেম্বুর-এর বাড়িতে যেতে বললেন আমাদের। সেই থেকে হিন্দি ছবির কিংবদন্তি অভিনেতা অশোককুমারের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ক্রমশ বেড়েছে। তাঁকে আরও কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। দাদামণির মতো একজন বরণীয় মানুষের স্মরণীয় সঙ্গ আমার সম্পদ। এত নামী মানুষ অথচ কত বিনয়ী ও আন্তরিক ছিলেন।
অভিনয়ের বাইরে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার ব্যাপারে দাদামণির বিলক্ষণ আগ্রহ ছিল। হোমিওপ্যাথি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। প্রতি শনিবার ও রোববার চেম্বুরের বাড়িতে টানা কয়েক ঘণ্টা রোগী দেখতেন। বিনে পয়সায় ওষুধপত্রও দিতেন। ইন্ডাস্ট্রির অনেকের মুখেই শুনেছি, ভালো রোগ নির্ণয় করতেন। তাঁর চিকিৎসায় অনেকেই উপকৃত হয়েছেন। অশোককুমার নিজে ছিলেন অ্যাজমার রোগী। সম্ভবত সে কারণেই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার প্রতি আকৃষ্ট হন। চিকিৎসাশাস্ত্রের প্রতি আকর্ষণ ছাড়াও চিত্রকলার দিকেও খুব ঝোঁক ছিল দাদামণির। তাঁর আঁকা বেশ কয়েকটি পেইন্টিং দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। প্রতিটি পেইন্টিং বেশ উচ্চমানের।
মুম্বইয়ে গেলে দাদামণির বাড়িতে মাঝে মাঝে যেতাম। গল্পগুজব করতে ভালোবাসতেন। তিনি ছিলেন প্রবাসী বাঙালি। কিন্তু বাংলার প্রতি অসম্ভব টান ছিল তাঁর। কলকাতায় কোথায় কী হচ্ছে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে চাইতেন। বাংলা ও বাঙালির গল্পে তিনি বুঁদ হয়ে যেতেন। একবার কথায় কথায় আমাকে বলেছিলেন, ‘পরজন্ম বলে যদি কিছু থাকে তবে আমি যেন বাঙালি হয়েই জন্মগ্রহণ করি।’
সে বহুদিন আগের কথা। অন্ধকারের বুক চিরে ছুটে চলেছে ট্রেন। সেই ট্রেনের থার্ডক্লাস কম্পার্টমেন্টে বছর বাইশের এক সুদর্শন যুবক গভীর চিন্তামগ্ন। হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেন ছেড়েছে। যুবকের গন্তব্য বম্বে। তাঁর নাম অশোককুমার গাঙ্গুলি। তিনি এক বুক আশা নিয়ে বম্বে চলেছেন হিমাংশু রায়ের সঙ্গে দেখা করতে। হিমাংশু রায় বম্বের মালাডে ‘বম্বে টকিজ’ খুলেছেন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন দেবিকারানি। ‘বম্বে টকিজ’ ছিল পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি। সেখানকার আরও দুজন নামকরা ব্যবসায়ী এর অংশীদার ছিলেন। একজনের নাম এফ আর দিনশো, অন্যজন ফিরোজ শেঠনা। হিমাংশু রায়ের মতো এতবড় একজন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব তাঁর মতো এক নব্য যুবককে কীভাবে গ্রহণ করেন সেটাই ছিল অশোককুমারের একমাত্র চিন্তার কারণ। কলকাতায় আইনশাস্ত্র পড়তে এসে হঠাৎ তাঁর মনে চিত্রপরিচালক হওয়ার ইচ্ছে জেগেছে। সেজন্যই মাঝপথে পড়াশোনা থামিয়ে অশোককুমার রওনা হলেন বম্বের অভিমুখে।
চোপড়াজির চেম্বারে ঢুকতেই অশোককুমার টুলুদাকে দেখে বললেন, ‘কী হে তুমি এখানে?’ চোপড়াজি একটু অবাক হয়ে বললেন, ‘দাদামণি, আপনি ওঁকে আগে থেকেই চেনেন?’ অশোককুমার স্মিত হেসে বললেন, ‘টুলু তো অনেকদিন ধরে মুম্বইয়ে যাতায়াত করছে। ওঁকে আলবাত চিনি৷ আর শুধু চিনি বললে ভুল হবে৷ খুব ভালো করে চিনি।’ এরপর দাদামণির সঙ্গে আমার পরিচয় হল। প্রণাম করলাম। আমাকে আশীর্বাদ করলেন। দাদামণি তাঁর চেম্বুর-এর বাড়িতে যেতে বললেন আমাদের। সেই থেকে হিন্দি ছবির কিংবদন্তি অভিনেতা অশোককুমারের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ক্রমশ বেড়েছে। তাঁকে আরও কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। দাদামণির মতো একজন বরণীয় মানুষের স্মরণীয় সঙ্গ আমার সম্পদ। এত নামী মানুষ অথচ কত বিনয়ী ও আন্তরিক ছিলেন।
অভিনয়ের বাইরে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার ব্যাপারে দাদামণির বিলক্ষণ আগ্রহ ছিল। হোমিওপ্যাথি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। প্রতি শনিবার ও রোববার চেম্বুরের বাড়িতে টানা কয়েক ঘণ্টা রোগী দেখতেন। বিনে পয়সায় ওষুধপত্রও দিতেন। ইন্ডাস্ট্রির অনেকের মুখেই শুনেছি, ভালো রোগ নির্ণয় করতেন। তাঁর চিকিৎসায় অনেকেই উপকৃত হয়েছেন। অশোককুমার নিজে ছিলেন অ্যাজমার রোগী। সম্ভবত সে কারণেই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার প্রতি আকৃষ্ট হন। চিকিৎসাশাস্ত্রের প্রতি আকর্ষণ ছাড়াও চিত্রকলার দিকেও খুব ঝোঁক ছিল দাদামণির। তাঁর আঁকা বেশ কয়েকটি পেইন্টিং দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। প্রতিটি পেইন্টিং বেশ উচ্চমানের।
মুম্বইয়ে গেলে দাদামণির বাড়িতে মাঝে মাঝে যেতাম। গল্পগুজব করতে ভালোবাসতেন। তিনি ছিলেন প্রবাসী বাঙালি। কিন্তু বাংলার প্রতি অসম্ভব টান ছিল তাঁর। কলকাতায় কোথায় কী হচ্ছে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে চাইতেন। বাংলা ও বাঙালির গল্পে তিনি বুঁদ হয়ে যেতেন। একবার কথায় কথায় আমাকে বলেছিলেন, ‘পরজন্ম বলে যদি কিছু থাকে তবে আমি যেন বাঙালি হয়েই জন্মগ্রহণ করি।’
সে বহুদিন আগের কথা। অন্ধকারের বুক চিরে ছুটে চলেছে ট্রেন। সেই ট্রেনের থার্ডক্লাস কম্পার্টমেন্টে বছর বাইশের এক সুদর্শন যুবক গভীর চিন্তামগ্ন। হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেন ছেড়েছে। যুবকের গন্তব্য বম্বে। তাঁর নাম অশোককুমার গাঙ্গুলি। তিনি এক বুক আশা নিয়ে বম্বে চলেছেন হিমাংশু রায়ের সঙ্গে দেখা করতে। হিমাংশু রায় বম্বের মালাডে ‘বম্বে টকিজ’ খুলেছেন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন দেবিকারানি। ‘বম্বে টকিজ’ ছিল পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি। সেখানকার আরও দুজন নামকরা ব্যবসায়ী এর অংশীদার ছিলেন। একজনের নাম এফ আর দিনশো, অন্যজন ফিরোজ শেঠনা। হিমাংশু রায়ের মতো এতবড় একজন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব তাঁর মতো এক নব্য যুবককে কীভাবে গ্রহণ করেন সেটাই ছিল অশোককুমারের একমাত্র চিন্তার কারণ। কলকাতায় আইনশাস্ত্র পড়তে এসে হঠাৎ তাঁর মনে চিত্রপরিচালক হওয়ার ইচ্ছে জেগেছে। সেজন্যই মাঝপথে পড়াশোনা থামিয়ে অশোককুমার রওনা হলেন বম্বের অভিমুখে।
দাদামণি'র (অশোককুমার) সঙ্গে এক বিশেষ মুহূর্তে লেখক।
হিমাংশু রায়ের বেশ ভালো লেগেছিল কলকাতা থেকে আসা সুদর্শন যুবাকে। ‘বম্বে টকিজ’-এর ক্যামেরা বিভাগে একটা চাকরি জুটেছিল অশোককুমারের। সামান্য মাইনে। মাসকয়েক পর ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট। এডিটিং ও মিক্সিং শেখাও হয়ে গেল তাঁর। এখন স্বাধীনভাবে ‘বম্বে টকিজ’-এর ব্যানারে একটি ছবি পরিচালনা করতে পারলেই স্বপ্ন সফল। কিন্তু ঈশ্বরের ইচ্ছে ছিল অন্যরকম।
হিমাংশু রায়ের ছিল জহুরির চোখ। অশোককুমারের মধ্যে একজন সফল অভিনেতা হওয়ার সবরকম গুণ রয়েছে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। ‘জীবন নাইয়া’ ছবির নায়িকা দেবিকারানি। কিন্তু নায়ক নিয়ে ভীষণ সমস্যায় পড়ে গেলেন হিমাংশু রায়। শেষপর্যন্ত তাঁর উপর্যুপরি অনুরোধে দেবিকারানির বিপরীতে নায়কের চরিত্রে অভিনয় করতে সম্মত হলেন অশোককুমার। ১৯৩৬ সালে ‘জীবন নাইয়া’ মুক্তি পেয়েছিল। অশোককুমারকে দর্শকরা নায়করূপে সাদরে বরণ করে নেন। তাঁর দ্বিতীয় ছবি ‘অচ্ছুৎ কন্যা’ দারুণ চলে। সুপারহিট। আর এ ছবি থেকেই অশোককুমারের জয়যাত্রা শুরু। এরপর ‘৩৯, ‘৪০ ও ‘৪১ পরপর তিন বছরে তাঁর ছ’টি ছবি মুক্তি পায়। এগুলোর মধ্যে ‘কঙ্গন’, ‘বন্ধন’ ও ‘ঝুলা’ বক্স অফিসে রীতিমতো সাড়া ফেলে।
‘অচ্ছুৎ কন্যা’-য় দেবিকারানি ও অশোককুমার জুটি জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছয়। দেবিকারানি অশোককুমারের থেকে বয়সে কিছুটা বড় ছিলেন। অভিনয়ের সময় বেশি মাথা নাড়ালে দর্শকদের অসুবিধা হয় একথা দেবিকারানি অশোককুমারকে শিখিয়েছিলেন। অশোককুমারকে অভিনয়ের ব্যাপারে নানান বুদ্ধি পরামর্শ দিতেন—যা একজন ভালো অভিনেতা হয়ে উঠতে তাঁকে যথেষ্ট সাহায্য করেছিল। একবার এক সাংবাদিক অশোককুমারের কাছে জানতে চান তিনি কি কখনও দেবিকারানির প্রেমে পড়েছিলেন? অশোককুমার খুব মজা করে কথা বলতেন। তাঁর রসবোধ ছিল প্রচণ্ড। দাদামণি বলেন, ‘আমার তখন যা বয়স যে কোনও মেয়ের প্রেমে পড়ে যেতাম। ২৫ বছর বয়সে বিয়ে হওয়া পর্যন্ত এই অবস্থা গিয়েছে। তবে দেবিকারানিকে মনে মনে ভালো লাগলেও তিনি যেরকম ব্যক্তিত্বসম্পন্না ছিলেন, প্রেম নিবেদন করে গিলোটিনে মাথা দিই আর কী!’ পরে দেবিকারানির সঙ্গে অশোককুমারের সম্পর্ক মোটেও ভালো ছিল না।
অশোককুমারের নায়িকাদের মধ্যে লীলা চিটনিস ছিলেন অন্যতম। তবে তাঁর সঙ্গে অশোককুমারের কোনও ইমোশনাল সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। রোগা চেহারার লীলা চিটনিস অদ্ভুত ঢঙে হাঁটতেন। চোখদুটো ভারী সুন্দর ছিল। অশোককুমার-লীলা চিটনিস অভিনীত ‘ঝুলা’ ছবিটিও মাসের পর মাস বাজার দখল করে রাখে।
নলিনী জয়ন্ত এমন একজন নায়িকা যাঁর সঙ্গে ম্যাটিনি আইডল অশোককুমারের সত্যি সত্যিই একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অশোককুমার নিজেই একথা স্বীকার করেছেন। তেমন বড় অভিনেত্রী ছিলেন না নলিনী জয়ন্ত। তবে সুন্দরী ও জনপ্রিয়। তাঁর প্রেমে প্রায় ভেসে যাচ্ছিলেন অশোককুমার। সুরাইয়ার সঙ্গেও কয়েকটা ছবি করেছিলেন তিনি। ‘খিলাড়ি’ করার সময় তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন অশোককুমার। কিন্তু ততদিনে দেব আনন্দকে ভালোবেসে ফেলেন সুরাইয়া।
—চলবে
হিমাংশু রায়ের ছিল জহুরির চোখ। অশোককুমারের মধ্যে একজন সফল অভিনেতা হওয়ার সবরকম গুণ রয়েছে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। ‘জীবন নাইয়া’ ছবির নায়িকা দেবিকারানি। কিন্তু নায়ক নিয়ে ভীষণ সমস্যায় পড়ে গেলেন হিমাংশু রায়। শেষপর্যন্ত তাঁর উপর্যুপরি অনুরোধে দেবিকারানির বিপরীতে নায়কের চরিত্রে অভিনয় করতে সম্মত হলেন অশোককুমার। ১৯৩৬ সালে ‘জীবন নাইয়া’ মুক্তি পেয়েছিল। অশোককুমারকে দর্শকরা নায়করূপে সাদরে বরণ করে নেন। তাঁর দ্বিতীয় ছবি ‘অচ্ছুৎ কন্যা’ দারুণ চলে। সুপারহিট। আর এ ছবি থেকেই অশোককুমারের জয়যাত্রা শুরু। এরপর ‘৩৯, ‘৪০ ও ‘৪১ পরপর তিন বছরে তাঁর ছ’টি ছবি মুক্তি পায়। এগুলোর মধ্যে ‘কঙ্গন’, ‘বন্ধন’ ও ‘ঝুলা’ বক্স অফিসে রীতিমতো সাড়া ফেলে।
‘অচ্ছুৎ কন্যা’-য় দেবিকারানি ও অশোককুমার জুটি জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছয়। দেবিকারানি অশোককুমারের থেকে বয়সে কিছুটা বড় ছিলেন। অভিনয়ের সময় বেশি মাথা নাড়ালে দর্শকদের অসুবিধা হয় একথা দেবিকারানি অশোককুমারকে শিখিয়েছিলেন। অশোককুমারকে অভিনয়ের ব্যাপারে নানান বুদ্ধি পরামর্শ দিতেন—যা একজন ভালো অভিনেতা হয়ে উঠতে তাঁকে যথেষ্ট সাহায্য করেছিল। একবার এক সাংবাদিক অশোককুমারের কাছে জানতে চান তিনি কি কখনও দেবিকারানির প্রেমে পড়েছিলেন? অশোককুমার খুব মজা করে কথা বলতেন। তাঁর রসবোধ ছিল প্রচণ্ড। দাদামণি বলেন, ‘আমার তখন যা বয়স যে কোনও মেয়ের প্রেমে পড়ে যেতাম। ২৫ বছর বয়সে বিয়ে হওয়া পর্যন্ত এই অবস্থা গিয়েছে। তবে দেবিকারানিকে মনে মনে ভালো লাগলেও তিনি যেরকম ব্যক্তিত্বসম্পন্না ছিলেন, প্রেম নিবেদন করে গিলোটিনে মাথা দিই আর কী!’ পরে দেবিকারানির সঙ্গে অশোককুমারের সম্পর্ক মোটেও ভালো ছিল না।
অশোককুমারের নায়িকাদের মধ্যে লীলা চিটনিস ছিলেন অন্যতম। তবে তাঁর সঙ্গে অশোককুমারের কোনও ইমোশনাল সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। রোগা চেহারার লীলা চিটনিস অদ্ভুত ঢঙে হাঁটতেন। চোখদুটো ভারী সুন্দর ছিল। অশোককুমার-লীলা চিটনিস অভিনীত ‘ঝুলা’ ছবিটিও মাসের পর মাস বাজার দখল করে রাখে।
নলিনী জয়ন্ত এমন একজন নায়িকা যাঁর সঙ্গে ম্যাটিনি আইডল অশোককুমারের সত্যি সত্যিই একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অশোককুমার নিজেই একথা স্বীকার করেছেন। তেমন বড় অভিনেত্রী ছিলেন না নলিনী জয়ন্ত। তবে সুন্দরী ও জনপ্রিয়। তাঁর প্রেমে প্রায় ভেসে যাচ্ছিলেন অশোককুমার। সুরাইয়ার সঙ্গেও কয়েকটা ছবি করেছিলেন তিনি। ‘খিলাড়ি’ করার সময় তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন অশোককুমার। কিন্তু ততদিনে দেব আনন্দকে ভালোবেসে ফেলেন সুরাইয়া।
—চলবে