বনবাসী জ্যেষ্ঠ রামকে ফিরিয়ে আনতে চলেছেন কুমার ভরত। পথে রামের সখা নিষাদরাজ গুহর সঙ্গে সাক্ষাৎ। নিষাদপতির মনে সন্দেহের জটিলতা। এই সশস্ত্র ভরত, হয়তো রামের কারণে, নিষাদরাজের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলবেন। নিজেদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করে, তিনি ভরতের সাক্ষাতে নিজের আশঙ্কা প্রকাশ করলেন। গুহর সমস্ত আশঙ্কা দূর করলেন ভরত।
মহাকাব্যের কথকতা
পর্ব-৯৭: পাণ্ডবদের নিজরাজ্যে প্রত্যাবর্তন ও রাজ্যার্দ্ধপ্রাপ্তিতে, সদর্থক চিন্তার অবদান
আলিঙ্গনাবদ্ধা, কমলনয়না দ্রৌপদীর স্পর্শে যেন এক অশুভ ইঙ্গিত। গান্ধারীর মনে হল, এই পাঞ্চালীই হবেন আমার পুত্রদের মৃত্যুর কারণ। পরিষ্বজ্যৈব গান্ধারী কৃষ্ণাং কমললোচনাম্। পুত্রাণাং মম পাঞ্চালী মৃত্যুরেবেত্যমন্যত।। সুবলকন্যা গান্ধারী, সুচিন্তিত, যুক্তিসঙ্গত, সিদ্ধান্ত জানালেন বিদুরকে। আপনার যদি রুচিকর মনে হয় তবে, অন্যতম, লগ্ন, নক্ষত্র এগুলির যোগে শুভ তিথিতে সমস্ত উপকরণ সহযোগে, দেবী কুন্তীকে, বধূমাতা রাজপুত্রীসহ, পাণ্ডুর আলয়ে সত্বর নিয়ে যান।
পর্ব-৯৬: রাজনৈতিক পরিসরে অখ্যাতি ও সন্দেহর আবিলতা থেকে কি মুক্তি সম্ভব?
বনবাসী রামের সন্ধানে ভরতের যাত্রাপ্রস্তুতি সম্পূর্ণ হল। ভোরবেলায় শয্যা ত্যাগ করেই ভরত, উত্তম রথে আরোহণ করে, রামের দর্শনলাভের ইচ্ছায় যাত্রা শুরু করলেন। তাঁর সম্মুখবর্তী অশ্বযুক্ত সূর্যতুল্য রথে, চললেন মন্ত্রী ও পুরোহিতগণ। নয় সহস্র সুসজ্জিত হাতি ইক্ষ্বাকুকুলনন্দন ভরতের অনুগমন করল। ষাট সহস্র রথে,ধনুক ও নানা অস্ত্রধারী যোদ্ধারা যশস্বী সত্যসন্ধ ভরতের সহযাত্রী হলেন। শত সহস্র অশ্বারোহী সেনা, সত্যপ্রতিজ্ঞ জিতেন্দ্রিয় ভরতকে অনুসরণ করলেন।
পর্ব-৯৫: বিরোধিতায় নয়, মৈত্রীবন্ধনেই রয়েছে পারিবারিক ও রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানসূত্র
দুর্যোধনের পরিকল্পিত চক্রান্ত ও বিভেদ সৃষ্টির মাধ্যমে পাণ্ডবদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করে তাঁদের ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার পন্থায় কর্ণের মোটেই আস্থা নেই। কর্ণের প্রস্তাব ছিল—চতুরঙ্গ সেনা নিয়ে সোজাসুজি দ্রুপদরাজ্য আক্রমণ এবং পাণ্ডবদের দ্রুত নিজেদের রাজ্যে এনে তাঁদের বশে আনা। সন্তুষ্ট প্রৌঢ় রাজা ধৃতরাষ্ট্র প্রাজ্ঞ,বিজ্ঞ স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শগ্রহণে আগ্রহী।
পর্ব-৯৪: দশরথপুত্র ভরত, এক ব্যতিক্রমী চরিত্র, বর্তমানের নিরিখে এক বিরলতম প্রজাতি
রাজা দশরথের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। চতুর্দশ দিবসে রাজার কর্মসহায়ক মন্ত্রীরা সকলে মিলিত হয়ে ভরতকে বললেন, মন্ত্রীদের মাননীয় রাজা দশরথ। তাঁর গুরুত্ব গুরুর থেকেও বেশি। জ্যেষ্ঠ রাম ও মহাবীর লক্ষ্মণকে নির্বাসিত করে, রাজা আজ প্রয়াত হয়েছেন। নেতৃত্বহীন রাজ্যে কোন অপরাধমূলক কাজ এ পর্যন্ত ঘটেনি। হে মহাযশস্বি রাজনন্দন, আপনি আমাদের রাজা হন।
পর্ব-৯৩: পাণ্ডবদের ওপরে আধিপত্যবিস্তারের পক্ষে বিরুদ্ধবাদীর অভিমত ও তার প্রাসঙ্গিকতা
পঞ্চপাণ্ডব এখন বিবাহিত। বৈবাহিক সম্পর্কে তাঁরা দ্রুপদরাজের জামাতা। এ খবর অপরাপর রাজবৃন্দের কানে গেল, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুর্যোধন, তাঁর ভায়েরা, বন্ধু কর্ণ এবং তাঁর সমর্থকরা সকলে শুনলেন। শৈশব থেকেই যাঁরা পাণ্ডবদের প্রতি ঈর্ষাকাতর তাঁরা পাণ্ডবদের এই সৌভাগ্যের বৃত্তান্ত জেনে, যথারীতি বিষণ্ণ হলেন।
পর্ব-৯২: মানসিক আঘাতজনিত মৃত্যু ও তার পরবর্তী প্রতিহিংসার যৌক্তিকতা
পিতার মৃত্যু ও জ্যেষ্ঠ রাম ও সীতা, লক্ষ্মণের বনবাস এবং তার কারণ জেনে, কৈকেয়ীপুত্র ভরত, শোকে বিধ্বস্ত ও উত্তেজিত হলেন। বাগ্বিশারদ, ঋষি বশিষ্ঠ ভরতকে সান্ত্বনা দিলেন। হে রাজপুত্র মহাযশস্বি ভরত, শোকার্ত হয়ো না। সময় হয়েছে। নৃপতি দশরথের পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন কর। অলং শোকেন ভদ্রং তে রাজপুত্র মহাযশঃ। প্রাপ্তকালং নরপতে কুরু সংযানমুত্তমম্।।
পর্ব-৯১: একটি বিবাহের শুভ ও অশুভ প্রতিক্রিয়া
পাণ্ডব ও দ্রৌপদীর বিবাহ, মহাসমারোহে, সম্পন্ন হল। মহর্ষি ব্যাসদেব ছিলেন পাণ্ডবদের বল ও ভরসা। এই কারণে, দেবতাদের থেকেও তাঁদের ভয় ছিল না। প্রাসাদে, দ্রুপদরাজের মহিষীরা পর্যন্ত নিজেদের নামোল্লেখ করে, প্রত্যেকে, পাণ্ডবমাতা কুন্তীর পদবন্দনা করতেন। কৃষ্ণা পাঞ্চালী, ক্ষৌম বসন পরিধান করে, মাঙ্গলিক কাজ সম্পন্ন করলেন।
পর্ব-৯o: পিতামাতার অনৈতিক আচরণ কি সন্তানের সমালোচনার ঊর্দ্ধে?
মা, রানি কৈকেয়ীর প্রতি, কুমার ভরতের, ভর্ৎসনা ও অভিযোগের যেন শেষ নেই। তিনি, জননীকে তিরস্কারের পর তিরস্কার করে চললেন। ক্রোধান্বিত ভরত, তিক্ত ভাষায় বললেন, এ রাজ্য থেকে দূর হও রে, নির্মম, দুরাচারিণী কৈকেয়ি, ধর্ম তোমার সাহচর্য ত্যাগ করেছে, ওই মিথ্যে চোখের জল আর ফেল না।
পর্ব-৮৯: সমাজে বিতর্কিত বিষয়ের মীমাংসায় দৈব উদাহরণেই কি সমাধানসূত্র নিহিত?
যুধিষ্ঠিরের সিদ্ধান্ত—দ্রৌপদী পঞ্চ পাণ্ডবের ধর্মপত্নী হবেন। যুধিষ্ঠিরের স্থির প্রত্যয়, ন মে বাগনৃতং প্রাহ নাধর্ম্মে ধীয়তে মতিঃ। তাঁর কথা মিথ্যা হবার নয়, তার বুদ্ধিও ধর্মবিরুদ্ধ নয়। যুধিষ্ঠিরের সিদ্ধান্তের সঙ্গে মা কুন্তী সম্পূর্ণভাবে একমত। জননীর নির্দেশ—অর্জিত সামগ্রী পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে ভাগ করে নাও। দ্রুপদরাজ পড়েছেন ধর্মসঙ্কটে।
পর্ব-৮৮: খলনায়িকার ধার্মিক পুত্র?
মাতামহের রাজ্য থেকে ভরত অযোধ্যায় এসেছেন, পিতার ভবনে। সেখানে পিতার দর্শন না পেয়ে গেলেন মাতার আলয়ে। প্রবাসী পুত্রকে দেখে আনন্দে আত্মহারা কৈকেয়ী তাঁর স্বর্ণময় আসন ত্যাগ করলেন। ধার্মিক ভরত, দেখলেন তাঁর নিজভবন শ্রীহীন। সেখানে প্রবেশ করে, তিনি মায়ের শ্রীচরণ স্পর্শ করলেন। রানি কৈকেয়ী ভরতকে স্নেহভরে জড়িয়ে ধরলেন। তাঁর মাথার ঘ্রাণ নিয়ে ঠাঁই দিলেন নিজের কোলে।
পর্ব-৮৭: যুগধর্মের সমর্থনহীন ধর্মচিন্তার স্থান কোথায়?
দ্রুপদরাজ, যুধিষ্ঠিরকে ব্রাহ্মণোচিত আতিথ্য ও সৌজন্য প্রদর্শন করে, প্রফুল্ল মনে, সুদর্শন কৌন্তেয়র কাছে জানতে চাইলেন, কী ভাবে জানব? আপনারা ক্ষত্রিয়? না ব্রাহ্মণ? কিংবা গুণবান কোন বৈশ্য অথবা শূদ্র? আপনারা মায়ার আশ্রয় নিয়ে সর্বত্র বিচরণ করছেন যে। এমনও হতে পারে, আপনারা দেবতা, ছদ্মবেশে কৃষ্ণার দর্শনার্থী হয়ে এসেছেন। আপনি সত্য বলুন, কারণ এই বিষয়টিতে আমার গভীর সংশয় রয়েছে।
পর্ব-৮৬: সুযোগ্য প্রশাসকের মৃত্যুর অভিঘাত
অযোধ্যা, প্রয়াত রাজা দশরথের শোকে মুহ্যমান। রাজার অবর্তমানে রাজ্যের ভবিষ্যৎ বিষয়ে চিন্তিত মন্ত্রীবর্গ। পুরুষানুক্রমে, রাজতন্ত্রে, সিংহাসনের উত্তরাধিকারী জ্যেষ্ঠ পুত্র রাম। তিনি বনবাসী। সঙ্গে রয়েছেন ছায়াসঙ্গী অনুজ লক্ষ্মণ। অন্য দুই পুত্র, ভরত ও শত্রুঘ্ন মাতামহের আলয় কেকয়রাজ্যে অবস্থান করছেন। রাজাবিহীন রাজ্য যে অস্তিত্বহীন। অমাত্যদের অনুরোধক্রমে মহর্ষি বশিষ্ঠ অবিলম্বে কুমারদের বার্তা প্রেরণের আদেশ দিলেন। প্রথমেই কোন অশুভ সংবাদ নয়।
পর্ব-৮৫: সাফল্য কি বংশগত উত্তরাধিকার? না কি ব্যক্তিগত কৃতিত্বের প্রমাণ?
পাঞ্চালদেশে, দ্রুপদকন্যার স্বয়ংবর সভায়, বিজয়ী অর্জুন, বিজিতা দ্রৌপদীকে সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত হলেন তাঁদের আশ্রয়, কুম্ভকারগৃহে। অনুসরণরত রাজপুত্র ধৃষ্টদ্যুম্ন, তাঁর উদ্দেশ্য দুশ্চিন্তাগ্রস্ত পিতা দ্রুপদের উদ্বেগ প্রশমন। অজ্ঞাতপরিচয় কোন যুবক দ্রৌপদীকে জয় করলেন? তাঁর পরিচয় কী?
পর্ব-৮৪: অরাজকতার ফল ও একটি দুঃস্বপ্ন
রাজা দশরথ সদ্য প্রয়াত হয়েছেন। অযোধ্যায় সুগভীর শোকের আঁধার গভীরতর হল। সুদীর্ঘ রাত যেন আরও দীর্ঘ মনে হতে লাগল। অযোধ্যার আকাশে বাতাসে, শোকার্ত নাগরিকদের হাহাকার ধ্বনি। দুঃখভারাক্রান্ত রাত্রি অবশেষে অতিবাহিত হল। দিনের আলোয় শুরু হল রাজকর্মচারীদের কর্মতৎপরতা। বিশিষ্ট ব্রাহ্মণ মন্ত্রীরা তাঁদের মূল্যবান অভিমত প্রকাশ করলেন।