বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।

ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে দেখা যাবে অতীতে যে সমস্ত সভ্যতা গড়ে উঠেছে তা নদীমাতৃক অঞ্চলে। আমাদের ভারতবর্ষ নদীমাতৃক দেশ। কৃষি ও পশুপালন নির্ভর আমাদের জীবন। বর্তমানে শিল্পের ছটা গায়ে লাগলেও এগুলি মিথ্যা হয়ে যায় না। কৃষি ও পশুপালনের পাশাপাশি মৎস্য ক্ষেত্রেও আমাদের জীবন জড়িত। মাছ যে শুধু আমাদের খাবারের চাহিদা মেটায় তা নয়, দেশের অর্থনীতিতেও বিশেষ সাহায্য করে এই ব্যবসা। তাই কেন্দ্র সরকারের নয়া প্রকল্প হল ‘প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনা’।
কীভাবে আবেদন করবেন এই প্রকল্পে, এই প্রকল্পের সুবিধা কী, কারা পাবেন এই প্রকল্পের সুবিধা সমস্ত কিছু সবিস্তারে আলোচনা করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনা প্রকল্পের রূপদান
ভারতের প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে বিহারের রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং মৎস্য-পশুপাখি ও দুগ্ধ পালনের রাজ্যমন্ত্রী উপস্থিতিতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ‘প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনা’র কথা ঘোষণা করেন। ২০২০-২১ থেকে ২০২৪-২৫ সময় কালের মধ্যে এই প্রকল্পের জন্য সরকার বিনিয়োগ করতে চলেছেন প্রায় ২০ হাজার ৫০ কোটি টাকা। যার মধ্যে ১২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা সামুদ্রিক, অভ্যন্তরীণ মৎস্য ও জলজ চাষে সুবিধাভোগী ভিত্তিক কার্যক্রমের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে এবং মৎস্য পরিকাঠামোর জন্য ৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনা প্রকল্পের কারণ কী?
ভারতবর্ষ থেকে যে মৎস্য রফতানি হয় তার আয় দশ লক্ষ কোটি টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা।
মৎস্যে এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডে কৃষক ও মৎস্যজীবীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ লাভজনক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা।
মৎস্যের আয় দ্বিগুণ করার পাশাপাশি জেলে বা মৎস্যজীবীদের আয় অন্তত পক্ষে দ্বিগুণ করা।
এই মৎস্য ব্যবসায় ক্ষতির পরিমাণ ২০ থেকে ২৫ শতাংশের পরিবর্তে প্রায় ১০ শতাংশে কমিয়ে আনা।
২০২৪-২৫ সাল পর্যন্ত অতিরিক্ত ৭০ লক্ষ টন উৎপাদন বৃদ্ধি করা।

মৎস্য শিক্ষার জন্য শংসাপত্র পাবে এমন কোর্সের সূচনা
আরাবাড়ির মৎস্য কলেজের ছাত্রদের মৎস্য শিক্ষার সুবিধা দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের অবদানের কথাও বলা হয়েছে। এই শিক্ষার শংসাপত্র প্রদানের জন্য আরাবাড়িতে অবস্থিত সকল মৎস্য কলেজ এ বছরই চালু হবে। জনবল সহ একাধিক প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে চাইছে সরকার।

প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনা ই-সমাধান এর উদ্যোগ
২০২১ সালের ৮ আগস্ট পোথিয়া ব্লকের আরাবাড়িতে অবস্থিত মৎস্য কলেজে পরিচালিত সম্প্রসারণ কার্যক্রম সহ মৎস্য শিক্ষার পর্যালোচনা করেন। কলেজ অডিটোরিয়াম থেকে মুকেশ সাহানি ই-সমাধান প্রকল্পের সূচনা করেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকরা যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে মাছচাষের সমস্যা কাটিয়ে উঠবেন।

প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনা প্রকল্পের উদ্দেশ্য কীন
এই প্রকল্প চাষিদের আরও খরচ দিতে এবং তাঁদের বেতন দ্বিগুণ করতে সাহায্য করবে।
এই প্রকল্পের দ্বারা জিডিপি বাড়বে এবং কর্মসংস্থান তৈরি করবে।
এই প্রকল্পের দ্বারা খামারের প্রবেশপথ থেকে খুচরা আউটলেট পর্যন্ত সরবরাহ চেনের বর্তমান পরিকাঠামোকে উন্নতি করবে।
এই প্রকল্প উদ্যানজাত সামগ্রীর অপচয় কমাতে সাহায্য করবে।
এই প্রকল্প অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম এবং সমানভাবে মৎস্য সম্ভাবনার ক্ষেত্র উন্মোচন করবে।
এই প্রকল্প দেশের খাদ্য প্রস্তুতকারী অংশের উন্নয়ন সম্প্রসারিত করবে।
সক্রিয় মৎস্য ব্যবস্থাপনা এবং প্রশাসনিক পরিকাঠামো তৈরি করবে এই প্রকল্প।
এই প্রকল্প মৎস্যজীবী এবং মাছ পালনকারীদের উপার্জন বৃদ্ধি করবে।
এই প্রকল্প জেলে এবং মাছচাষিদের জন্য সামাজিক, শারীরিক এবং আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান করবে।
এই প্রকল্প মেরিটিং চেনের আধুনিকীকরণ এবং শক্তিশালীকরণ এবং গুণমানের উন্নতি বৃদ্ধি করবে।

কীভাবে আবেদন করবেন
যে সমস্ত মানুষ এই প্রকল্পে আবেদন করতে চান তাঁরা মৎস্য বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করতে পারেন। এই ওয়েবসাইটে লগ ইন করার পর ফর্মটি জমা দিতে হবে এবং সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি আপলোড করতে হবে। আবেদনকারীকে তার নিজস্ব এসসিপি-ডিপি আর প্রস্তুত করতে হবে এবং ফর্মের সঙ্গে তা জমা দিতে হবে। ডিপিআর এবং এসসিপি খরচের ইউনিট বেশি হতে পারে, তবে অনুদান ইউনিট খরচ অনুযায়ী দেওয়া হবে। ডিপি আর প্রস্তুত করার টেমপ্লেটটি অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা যেতে পারে। কৃষকদের জন্য ই-গোপাল অ্যাপ চালু করা হয়েছে। ই-গোপাল অ্যাপ প্লাটফর্মের সাহায্যে কৃষকরা গবাদিপশু সহ অন্যান্য বিষয় যেমন সব ধরনের রোগমুক্ত জার্মপ্লাজম ক্রয়-বিক্রয়, মানসম্পন্ন প্রজনন পরিষেবার প্রাপ্যতা এবং পশু পুষ্টির জন্য কৃষকদের পথপ্রদর্শক উপযুক্ত আয়ুর্বেদিক ওষুধ ব্যবহার করে পশুদের চিকিৎসা তথ্য জানতে পারবেন।

প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনা প্রকল্পে কী কী থাকছেন
মৎস্য চাষের জন্য নতুন পুকুর নির্মাণ।
জলজ পালনের জন্য বায়োফ্লক পুকুর নির্মাণ।
শোভাবর্ধনকারী মাছচাষ ইউনিট তৈরি করা।
মাছ খাওয়ানো উদ্ভিদ প্রদান।
একটি ব্রুড ব্যাংক প্রতিষ্ঠা।
সম্প্রসারণ ও সহায়তা সেবা প্রতিষ্ঠা।
সীতামারহিতে ফিস ব্রুড ব্যাংক স্থাপন।
রি-সার্কলেটরি অ্যাকুয়াক্যালচার প্রতিষ্ঠা।
কিষানগঞ্জে জলজ রোগ রেফারেল ল্যাবরেটরি স্থাপন।
বিহারে ডাঃ রাজেন্দ্রপ্রাসাদ কেন্দ্রীয় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাপক মৎস্য উৎপাদন প্রযুক্তি কেন্দ্রের উদ্বোধন করা।
নীল বিপ্লবের অধীনে পাটনায় সহায়তা করা ‘ফিস অন হুইলস’-এর দুটি ইউনিটের উদ্বোধন।

প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনা কীরূপে বাস্তবায়ন করা সম্ভবন
উৎপাদন, উৎপাদনশীলতা, গুণগতমান, বর্জ্যভূমি ও জলের উৎপাদনশীল ব্যবহারের জন্য অ্যাকোয়াকালচারের জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যাবহার করা যাবে।
বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য মেরিকালচার, সামুদ্রিক শৈবাল চাষ এবং শোভাবর্ধনকারী মৎস্য চাষের কার্যক্রমকে উন্নীত করা।
জম্বু-কাশ্মীর, লাদাখ, উত্তর পূর্বের জেলাগুলিতে নির্দিষ্ট উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে মৎস্য চাষে মনোযোগ দেওয়া।
লোনা জল এবং লবণাক্ত এলাকায় বিশেষ করে ঠান্ডা জলের মৎস্য চাষের উন্নয়ন এবং জলজ চাষের সম্প্রসারণের উপর থাকবে।
স্কিম বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ফরোয়ার্ড এবং ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ এবং এন্ড টু এন্ড সমাধান সহ সর্বোত্তম ফলাফল পেতে এলাকাভিত্তিক পদ্ধতি ব্যবহার করা।
স্কিমের লক্ষ্য হল গবেষণা ও সম্প্রসারণ সহায়তা পরিষেবাগুলিকে শক্তিশালী করার জন্য কৃষি গবেষণা ও শিক্ষা বিভাগ এবং আইসিএআর-এর সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয় তৈরি করা।
বহুবিধ মৎস্য কর্মকাণ্ড সুবিধাগুলির কেন্দ্র হিসেবে এই প্রকল্পের অধীনে অ্যাকোয়াপার্কগুলি তৈরি হবে।
এর অধীনে সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই ফিশারিজ ইনকিউবেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হবে।
*মৎস্য চাষি ও মৎস্য চাষিদের দর কষাকষির ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য মাছ চাষি উৎপাদনকারী সংস্থার মাধ্যমে সমষ্টিকরণ করা হবে।

কারা পাবেন এই প্রকল্পের সুবিধান
মৎস্য সমবায়।
মৎস্য ফেডারেশন।
মৎস্যজীবী।
মাছ চাষি।
উদ্যোক্তা এবং প্রাইভেট ফার্ম।
মাছ শ্রমিক ও মাছ বিক্রেতারা।
মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন।
মৎস্যখাতে স্বনির্ভর গোষ্ঠী এবং যৌথ দায়বদ্ধতা গোষ্ঠী।
মাছ উৎপাদনকারী সংস্থা বা কোম্পানি।
রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন বোর্ড।
এসসিএসটি, মহিলা, বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তি।

এই প্রকল্প প্রভাবের বিভিন্ন দিকন
*এই প্রকল্পটি মাছ উৎপাদনে বার্ষিক গড় বৃদ্ধি প্রায় নয় শতাংশ বজায় থাকবে।
এই প্রকল্পটির বর্তমান জাতীয় গড় তিন টন থেকে প্রতি হেক্টরে প্রায় পাঁচ টন জলজ চাষে উৎপাদনশীলতা বাড়বে।
মাছের উৎপাদন ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে ১৩৭.৫৮ লক্ষ মেট্রিক টন থেকে ২২০ লক্ষ মেট্রিক টনে উন্নীত করতে সাহায্য করবে।
এই প্রকল্প রফতানির আয়কে দ্বিগুণ করে ৪৬ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা থেকে ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে প্রায় দশ লক্ষ কোটি টাকায় উন্নীত করবে।
এই প্রকল্পটি সরবরাহ এবং মূল্য শৃঙ্খলের সঙ্গে মৎস্যখাতে প্রায় ৫৫ লক্ষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি করবে।
এই স্কিমটি মাথাপিছু ৫-৬ কেজি থেকে প্রায় ১২ কেজি পর্যন্ত গার্হস্থ মাছের ব্যবহার উন্নীত করবে।
এই যোজনার বলা হয়েছে ফসল তোলার পরের ক্ষতি ২০-২৫ শতাংশ কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনবে।

তথ্য : সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

Skip to content