বই প্রকাশ অনুষ্ঠান।
ঠাকুরবাড়ি নিয়ে গল্পের মালা। মিথ্যে বানানো গল্প নয়, ষোলোআনা সত্যি। কত ধরনের ঘটনা, কোনওটি আনন্দ-সুখের, আবার কোনওটি বা দুঃখ-বিষাদের। সেসব গল্প প্রতি রবিবার ‘সময় আপডেটস’ এ লেখেন পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। হ্যাঁ, লেখাগুলি বের হয় ‘গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি’ নামে। সময় আপডেটসের সেই সূচনালগ্ন থেকে নিয়মিত লিখছেন পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আর ১৫-১৬টি লিখলেই ‘গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি’ একশোয় পৌঁছবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ‘গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি’ অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
প্রথম ৪০টি লেখা নিয়ে ‘গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি’ নামেই বই বেরিয়েছিল বছরখানেক আগে। বইটি খুবই জনপ্রিয় হয়। পয়লা বৈশাখের দিন প্রকাশিত হল আরও ৪০টি লেখা নিয়ে এ পর্যায়ে দ্বিতীয় বই ‘না-জানা ঠাকুরবাড়ি’। কফি হাউসের তেতলায় দীপ প্রকাশনের বিপণিতে এই প্রকাশ অনুষ্ঠানটি হয়। বিপণির নিজস্ব হলে পাঠক-দর্শকের উপস্থিতিতে পয়লা বৈশাখের বিকেলবেলাটি বড় মাধুর্যময় হয়ে উঠেছিল। ‘না-জানা ঠাকুরবাড়ি’ ছাড়াও দীপ প্রকাশনের আরও কয়েকটি বই এদিন প্রকাশিত হয় বহু বিদগ্ধ মানুষের উপস্থিতিতে।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৫৬: রামায়ণে রামচন্দ্রের যাত্রাপথ সুগম হওয়ার কারণেই কি সীতার উপস্থিতি?
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৯৮: মাছচাষে সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে খুবই সতর্কতা প্রয়োজন
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪২: সুন্দরবনের বাঘের ভবিতব্য
পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বইটিতে কত না কৌতূহল জাগানো ঘটনার সমাবেশ! ‘নোবেল’ প্রাপ্তির পর সংবর্ধনা সভায় রবীন্দ্রনাথ ক্ষোভ-বেদনা উগরে দিয়েছিলেন। নৌকো উল্টে সত্যেন্দ্রনাথের আইসিএস পড়তে যাওয়াই বানচাল হতে বসেছিল। বাড়ির কাজের লোককে সম্পত্তির অধিকার দিতে দ্বিজেন্দ্রনাথ পাল্টে ছিলেন দলিল। কন্যা-বিয়োগের বেদনা ছবির মধ্যে মিশিয়ে দিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ। গায়ের জামা উড়বে বলে ফিতে দিয়ে বেঁধে রাখতেন দ্বিজেন্দ্রনাথ। গগনেন্দ্রনাথ আনন্দ পেতেন ঘুড়ি উড়িয়ে। ঠাকুরবাড়িতে পোশাকআশাক নিয়েও হয়েছে যথেষ্ট ভাবনাচিন্তা । রসনা-পরিতৃপ্তির দেদার ব্যবস্থা ছিল। রাখা হয়েছিল ফরাসি-পাচক।
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব-৫: কৃষ্ণ মাণিক্য সিংহাসনে বসেই উদয়পুর থেকে রাজধানী সরিয়ে আনেন আগরতলায়
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৩৬: সুখের লাগিয়া
এ বইতে রয়েছে এরকম বিস্ময় জাগানো নানা ঘটনা, ঘটনার বর্ণনা। ইংরেজদের চোখে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন ‘দাগী আসামী’। সেই আসামি-নিবাসে, জোড়াসাঁকোয় এসে লাটসাহেব খেতেন ভাজা চিঁড়ের সঙ্গে কড়াইশুঁটি। সত্যি, এসব ভাবা যায় না। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে রয়েছে কত না বিচিত্র আখান। আকাশ-ছোঁয়া যাঁর খ্যাতি, তাঁর দরজা সারাক্ষণই সাধারণ মানুষের জন্য খোলা থাকত।
আরও পড়ুন:
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১৮: মোহিতকুমারী এক মহিলা আত্মজীবনীকার
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮৪: নোবেল পাওয়ায় বন্ধু দিয়েছিলেন লজ্জাবতীর চারা
পরিবারজীবনে তিনি ছিলেন অতীব দায়িত্ববান। যেভাবে মরণাপন্ন রেণুকার সেবা-শুশ্রূষা করেছিলেন, তা ভাবা যায় না। সংসার-পরিজনের কাছে যিনি প্রতিমুহূর্তেই দায়বদ্ধ থেকেছেন, তাঁকে নিয়ে কদাকার গল্পকথার শেষ নেই। রাণুকে নিয়ে কত ইঙ্গিতময় কথাবার্তা! রাণুর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের প্রথম দেখা হয়েছিল মাধুরীলতার মৃত্যুর দিন। রাণুই জানিয়েছে, ‘অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নিষ্পন্ন করে এক ভিখারীর মতো তিনি আমাদের গৃহের সামনে এসে দাঁড়িয়ে ডাকছিলেন রাণু, রাণু কোথায় গেলে।’ রবীন্দ্রনাথ রাণুর মধ্যে মাধুরীলতাকে খুঁজে পেয়েছিলেন। পরে এক চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘সে যে মুহূর্তে বিদায় নিয়ে চলে গেল, সেই মুহূর্তেই তুমি আমার কাছে এলে… আমার মনে হল যেন এক স্নেহের আলো নেবার সময় আরেক আলো জ্বালিয়ে দিয়ে গেল।’
বইয়ের কভার।
এরপরও কি বানানো গল্প, মিথ্যে রটনা চলতেই থাকবে?
জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে কৃতী মানুষের অভাব ছিল না। মাথার ওপর তো রবীন্দ্রনাথ ছিলেনই, চারপাশে কত না কৃতী মানুষ, এমনকি পরিবারের মেয়ে-বউদেরও কৃতিত্বের শেষ ছিল না। তাঁরা কাজের মধ্য দিয়ে আজও আমাদের প্রাণিত করে চলেছেন, অথচ তাঁদের অনেকেরই ক্রমাগত অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে।
সৃষ্টিশীল মানুষটিকে জানার চেষ্টা রয়েছে এ বইতে। আমাদের মনে হয়েছে, এইসব টুকরো টুকরো ঘটনার মধ্য দিয়ে ঠাকুরবাড়ি সম্পর্কেও এক সামগ্রিক ধারণা গড়ে উঠবে। এসব ঘটনাবলি সাধারণজনের অজানা। ‘না-জানা ঠাকুরবাড়ি’কে আরও বেশি করে সাধারণ মানুষ জানুক।
জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে কৃতী মানুষের অভাব ছিল না। মাথার ওপর তো রবীন্দ্রনাথ ছিলেনই, চারপাশে কত না কৃতী মানুষ, এমনকি পরিবারের মেয়ে-বউদেরও কৃতিত্বের শেষ ছিল না। তাঁরা কাজের মধ্য দিয়ে আজও আমাদের প্রাণিত করে চলেছেন, অথচ তাঁদের অনেকেরই ক্রমাগত অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে।
সৃষ্টিশীল মানুষটিকে জানার চেষ্টা রয়েছে এ বইতে। আমাদের মনে হয়েছে, এইসব টুকরো টুকরো ঘটনার মধ্য দিয়ে ঠাকুরবাড়ি সম্পর্কেও এক সামগ্রিক ধারণা গড়ে উঠবে। এসব ঘটনাবলি সাধারণজনের অজানা। ‘না-জানা ঠাকুরবাড়ি’কে আরও বেশি করে সাধারণ মানুষ জানুক।