রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী।

সারাদেশ জুড়ে চলছে তাপপ্রবাহ। পশ্চিমবাংলার কোনও কোনও শহর ও গ্রামাঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গিয়েছে। আগামী দিনে ৪৫-৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। গরমে জেরবার জনজীবন। রাজ্য সরকার বাধ্য হয়েছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে সাত দিনের ছুটি ঘোষণা করতে। গরমে যাঁরা বাড়ির বাইরে কাজকর্ম করেন, রাস্তাঘাটে ট্রামে বাসে ট্রেনে চাপেন, সাইকেলে, মোটরবাইকে করে দূরদুরান্ত যান, কল কারখানায় কাজ করেন, মাঠে চাষাবাদ করেন, জিনিসপত্র ফেরি করেন, উনুনের ধারে থেকে কাজ করেন বা রান্না করেন তাঁরাই বিশেষভাবে পর্য্যুদস্ত হচ্ছেন। আয়ুর্বেদ মতে, গ্রীষ্মকালে প্রতিদিন শরীরস্থ শ্লেষ্মা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং বায়ু দোষ বৃদ্ধি পায়। শরীরের শীতল ও স্নিগ্ধভাব কমে যায়। উষ্ণ এবং রুক্ষভাব ক্রমশ বেড়ে যায়।
যেহেতু গ্রীষ্মকাল, উত্তরায়নের সময় তাই একে আদানকাল বলে। প্রাকৃতিক নিয়মেই সূর্য্যের বল বাড়ে, এতে জীবজগৎ ক্রমশঃ দুর্বল ও রুক্ষ হয়ে পড়ে। সুতরাং বর্তমানের দাবদাহে আমরা প্রচণ্ড দুর্বল। এই অবস্থায় ক্ষীণ প্রকৃতির মানুষ, শিশু, বৃদ্ধ, রুগ্ন, শীর্ণ যাঁরা তাঁরা আরও বেশি বলহানিকর সমস্যায় পর্য্যুদস্ত হচ্ছেন।
 

প্রচণ্ড গরমের সাধারণ সমস্যা

হাঁসফাঁস করা, প্রচণ্ড ঘেমে যাওয়া, গায়ে জ্বালা বোধ, বমি বমি ভাব, খিদে না হওয়া, রুচি কমে যাওয়া, গ্রীষ্মকালীন ডায়েরিয়া, পেটে ব্যথা, জ্বর, সর্দি-কাশি, লু লাগা, হিট স্ট্রোক, অবসন্নতা, ঘামাচি হওয়া, ত্বকে বিভিন্ন রকমের দাগ হওয়া ইত্যাদি।

আরও পড়ুন:

বিধানে বেদ-আয়ুর্বেদ: অজীর্ণ রোগে ঘরে বসেই আয়ুর্বেদিক পদ্ধতিতে প্রতিকার সম্ভব

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৬: গরমে কক্ষনও ডিম খেতে নেই?

দশভুজা: আমি বনফুল গো: তিনিই ছিলেন ভারতীয় ছবির প্রথম সিঙ্গিং সুপারস্টার/১

 

গরমের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে কী কী করবেন?

সকালে সূর্যোদয়ের আগে বিছানা ছাড়বেন। শীতল জলে অল্প চন্দনের বাটা মিশিয়ে স্নান করবেন। সকাল ন টার আগে বাইরের কাজ সেরে নিন।

দরজা-জানলা বন্ধ রেখে লু ঢুকতে বাধা দেবেন। জানলার খড়খড়িতে জল ছিটিয়ে দিয়ে ঘরকে ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করবেন।

বাইরে যাঁরা কাজ করেন তাঁরা বড় বড় গাছের ছায়ায় বা জলা জায়গার পাশে বিশ্রাম নেবার ব্যবস্থা করবেন। মহুর্মুহু শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে ঢোকা ও বেরোনো উচিত নয়। গরম থেকে এসেই ঘর্মাক্ত অবস্থায় হাই-স্পিডে ফ্যানের নীচে বসা উচিত নয়।

সারাদিনে সাড়ে তিন থেকে চার লিটার জলপান করা উচিত। ফ্রিজের জল সাধারণ জলের সঙ্গে মিশিয়ে হালকা শীতল অবস্থায় পান করবেন। অথবা মাটির কলসির জলপান করবেন।

মৌরি মিছরি ও ধনে আগের দিন রাতে জলে ভিজিয়ে পরের দিন সকালে সেই জল পান করলে গরম লাগার মাত্রা কমে।

সারাদিনে লেবু-সহ নুন চিনির শরবত দুই থেকে তিনবার খাওয়া যায়।

আখের রস, ঘোলের সঙ্গে গোলমরিচ গুঁড়ো , সৈন্ধব লবণ ও চিনি মিশিয়ে শরবত, ডাবের জল, ঘৃতকুমারীর রস করে খেলে ভালো লাগবে।

মুসম্বি লেবুর রস, কচি ডাবের জল, অল্প বেদানা রস, শসা, পেয়ারা, আঙুর, কচি তালের শাঁস ইত্যাদি ফল উপকারী।

সুসিদ্ধ ভাত, পাতলা ডাল, পটল, কলমি শাক, কুমড়ো, ঝিঙে, গাজর বিনস, অল্প উচ্ছে ইত্যাদি সব্জি কম মশলা-সহ রান্না করে অথবা স্যুপ হিসাবে খেলে ভালো হয়।

যাঁদের সুগার নেই তারা রসগোল্লা, অল্প দই, অল্প মিষ্টি খেতেই পারেন।

বৃদ্ধ, ক্ষীণ, শীর্ণ রোগী দুপুরবেলায় ঘুমাতে পারেন। খুব অবসন্নতা লাগলে যুবক বা শিশুরাও দুপুরে ঘুমাতে পারেন।

আরও পড়ুন:

হাত বাড়ালেই বনৌষধি: রোজ খাওয়ার পরে পান খান? অনেক ওষুধ কেনার খরচ বেঁচে যেতে পারে

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৮: সলিল চৌধুরীর সুরারোপিত গান খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতেন পঞ্চম

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬০: রাতদুপুরে বিপন্নকে বাঁচাতে হাটখোলার পাট আড়তের টাকা এসেছিল জোড়াসাঁকোয়

 

অসুস্থ হলে কী কী করবেন?

সর্দি-কাশি ও হাঁচি থাকলে সিতোপলাদি চূর্ণ দেড় গ্রাম থেকে তিন গ্রাম দিনে দু’বার মধু-সহ চেটে খাবেন।

বাড়ির রান্নাঘরে থাকা আদার শুঁঠের চূর্ণ, গোল মরিচের চূর্ণ ও তালমিছরি মিশিয়ে মধু-সহ খেলে উপকার পাওয়া যায়। জ্বর মাথাব্যথা ও সর্দি থাকলে লক্ষী বিলাস রস বা কফকেতু রস ২৫০ মিলিগ্রাম থেকে ৫০০ মিলিগ্রাম দিনে দু’বার খেতে পারেন।

বাড়ির আশেপাশে থাকা ছাতিম পাতার রস বা কালমেঘের রস এক চামচ করে দু’বার খাওয়া যেতে পারে। যদি ডায়েরিয়া হয় তাহলে কুড়চি ছালের চূর্ণ ৩ গ্রাম করে দু’বার খাওয়া যেতে পারে অথবা আয়ুর্বেদ শাস্ত্রোক্ত কূটজঘনবটি দুটি করে দু’বার বা লবঙ্গাদি বটি (৫০০) দুবার গরম জল-সহ খাওয়া যাবে।

গলার ব্যথা বা খুসখুসে কাশি হলে যষ্টিমধুর মূল টুকরো টুকরো নিয়ে চুষতে পারেন, অথবা শাস্রোক্ত চন্দ্রামৃত রস ২৫০ মিলিগ্রাম তিনবার চুষতে পারেন।

খিদে না থাকলে কালমেঘের বড়ি ৫০০ মিলিগ্রাম করে দিনে দুবার খাওয়া যেতে পারে।

প্রস্রাবে জ্বালা থাকলে আখের রস বেশি করে খেতে হবে। অথবা কুশ, কাশ, ইক্ষু, শর প্রভৃতির মূল ভেজানো জল ঘন ঘন খেতে পারেন।

লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা তো থাকবেই, কিন্তু বিশেষ করে পথ্য ও অপথ্যের দিকে নজর দিতে হবে।

আরও পড়ুন:

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৫২: প্রাকৃতিক উপায়ে মাছের ফলন বাড়াতে পুকুরে উদ্ভিদকণা ও প্রাণীকণার ভারসাম্য ঠিক রাখা জরুরি

বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-৮: ফ্রানজ বেকেনবাওয়ার: মহাকাল তাঁকে মনে রাখবে

স্বাদে-আহ্লাদে: ‘এগ পকেট’ পছন্দ? তা হলে বাড়িতেই বানান সহজ এই রেসিপি

 

পথ্য

দিনে ঘুম, শরবত, আখের রস, ডাবের জল, ধনে – মৌরি – মিছরি ভেজানো জল রক্তচন্দন বাটা সহ, পটল, উচ্ছে, বেগুন, তরমুজ, শসা, পাকাপেঁপে, ঘোল ইত্যাদি।
 

অপথ্য

রোদের সংস্পর্শে যাওয়া, মশলাদার ও তৈলাক্ত চর্বিযুক্ত খাবার, কড়া পাক খাবার, বেশি টক, ঝাল যুক্ত খাবার, রাত জাগা ইত্যাদি।

* বিধানে বেদ-আয়ুর্বেদ (Ayurveda) : ডাঃ প্রদ্যোৎ বিকাশ কর মহাপাত্র (Dr. Pradyot Bikash Kar Mahapatra), অধ্যাপক ও চিকিৎসক, ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্রাজুয়েট আয়ুর্বেদিক এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ।

Skip to content