বিয়ের অ্যালবাম থেকে।
জীবনে প্রথমবার প্রেম আসে খুব অদ্ভুত ভাবে। শোনা যায়, একবার পঞ্চম নাকি অনেক ব্যস্ততার মাঝে কিছুটা সময় বের করে দার্জিলিং বেড়াতে গিয়েছিলেন শচীন ভৌমিক আর সুরকার জুটি লক্ষ্মীকান্ত-প্যায়ারেলালকে সঙ্গে নিয়ে। ঘটনাচক্রে একই সময় সেখানে বেড়াতে যান তৎকালীন বম্বের কয়েকজন তরুণী। তাঁদের মধ্যে একজনকে পঞ্চমের প্রথম দর্শনেই ভালো লেগে যায়। আলাপ করতেও তিনি দেরি করেননি। সেই তরুণীর নাম রীতা প্যাটেল। আলাপচারিতায় প্রকাশ পায় যেরীতা পঞ্চমের একজন অনুরাগী।
আরডি-র ভ্রমণসঙ্গীরা বেশ বুঝতে পারছিলেন রীতার প্রতি পঞ্চমের এই অনুভূতির বিষয়টি। গুঞ্জন, সে-বার দার্জিলিং ভ্রমণের সময় বেশ কয়েকবার রীতার সঙ্গে নানা অছিলায় দেখাও করেন তিনি। মজার কথা হল, শচীন ভৌমিক আর লক্ষ্মীকান্ত-প্যায়ারেলাল নাকি এই দেখা করার বিষয়ে পঞ্চমকে অনেক সাহায্যও করেছিলেন। এই ভাবেই কেটে যায় দার্জিলিং ভ্রমণের দিনগুলি।
এর পর তাঁরা যে যার মতো বম্বেতে ফিরে আসেন। এদিকে, রীতা তখনও পঞ্চমকে যোগাযোগের জন্য কোনও ঠিকানা অথবা ফোন নম্বর দিতে রাজি ছিলেন না। অগত্যা পঞ্চমকে খালি হাতেই মায়ানগরীতে ফিরতে হয়। তারপরের কয়েক মাস দু’জনের মধ্যে কোনও যোগাযোগই ছিল না। হঠাৎ একদিন পঞ্চমের কাছে একটি ফোন আসে। তাঁকেচমকে দিয়ে ফোনের ওপার থেকে রীতার গলা ভেসে আসে। সুরকারের উত্তেজনার বাঁধ ভেঙে যায়। কিছুক্ষণ কথা হওয়ার পর রীতা পঞ্চমকে তাঁর সঙ্গে সিনেমা দেখতে যাওয়ার একটি প্রস্তাব দেন। একটুও দেরি না করে আরডি সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। কথা মতো ঠিক সময় তিনি পৌঁছে যান প্রেক্ষাগৃহে। রীতা তাঁকে নিয়ে যান নির্দিষ্ট আসনে। কিন্তু, কিছুক্ষণ সিনেমা চলার পর রীতা পঞ্চমকে একটু অপেক্ষা করতে বলে আসন ছেড়ে উঠে যান। পঞ্চম অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু রীতা সেদিন আর ফিরে আসেননি। অগত্যা পঞ্চমও বাড়ি ফিরে আসেন।
এর পর তাঁরা যে যার মতো বম্বেতে ফিরে আসেন। এদিকে, রীতা তখনও পঞ্চমকে যোগাযোগের জন্য কোনও ঠিকানা অথবা ফোন নম্বর দিতে রাজি ছিলেন না। অগত্যা পঞ্চমকে খালি হাতেই মায়ানগরীতে ফিরতে হয়। তারপরের কয়েক মাস দু’জনের মধ্যে কোনও যোগাযোগই ছিল না। হঠাৎ একদিন পঞ্চমের কাছে একটি ফোন আসে। তাঁকেচমকে দিয়ে ফোনের ওপার থেকে রীতার গলা ভেসে আসে। সুরকারের উত্তেজনার বাঁধ ভেঙে যায়। কিছুক্ষণ কথা হওয়ার পর রীতা পঞ্চমকে তাঁর সঙ্গে সিনেমা দেখতে যাওয়ার একটি প্রস্তাব দেন। একটুও দেরি না করে আরডি সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। কথা মতো ঠিক সময় তিনি পৌঁছে যান প্রেক্ষাগৃহে। রীতা তাঁকে নিয়ে যান নির্দিষ্ট আসনে। কিন্তু, কিছুক্ষণ সিনেমা চলার পর রীতা পঞ্চমকে একটু অপেক্ষা করতে বলে আসন ছেড়ে উঠে যান। পঞ্চম অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু রীতা সেদিন আর ফিরে আসেননি। অগত্যা পঞ্চমও বাড়ি ফিরে আসেন।
আরও পড়ুন:
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৩: ‘তিসরি মঞ্জিল’ ছিল পঞ্চমের প্রথম অগ্নিপরীক্ষা
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৮: পূর্ণ অপূর্ণ-র মাঝে পথ দেখায় ‘দেবত্র’
পর্দার আড়ালে, পর্ব-২৯: অমরগীতি ছবিতে রাজাবাবু চরিত্রে তরুণ মজুমদারের প্রথম পছন্দ ছিলেন ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়
পঞ্চম তখন ‘রীতাময়’। রীতা তখন পঞ্চমের শয়নে স্বপনে। কাজে মনোনিবেশ করাই দায়। এদিকে রীতার ফোন নম্বর না থাকায় যোগাযোগের কোনও রাস্তাই ছিল না। এমত অবস্থায় শচীন ভৌমিক পঞ্চমকে এক অভিনব উপায়ের কথা বলেন। তিনি পঞ্চমকে বলেন টেলিফোন ডিরেক্টরি নিয়ে বসে যতগুলি রীতা প্যাটেলের নামে ফোন নম্বর রয়েছে, প্রত্যেকটিতে একবার করে ফোন করে ‘রীতা প্যাটেল’ আছেন কি না সেটি জানতে। প্রস্তাবটি পঞ্চম লুফে নেন। বুঝুন মোবাইল, ইন্টারনেটহীন যুগে শুধু কারও নাম থেকে তাঁর ঠিকানা অথবা ফোন নম্বর খুঁজে বের করে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা কতই না কঠিন কাজ ছিল। কিন্তু পঞ্চম সেই অসাধ্য সাধন করেছিলেন। একেই বোধহয় বলে ভালোবাসার টান। একের পর এক ফোন করতে করতে এক সময় ফোন ঠিক পৌঁছে যায় তাঁর স্বপ্নের রানি রীতার নম্বরে। ফোনটি তোলেন রীতা স্বয়ং। কথা হয় দু’ জনের।
আরও পড়ুন:
চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১২: বাইগা রিসর্ট ও বস্তি
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৭: ওখানে কে?
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৩: আর্ষ মহাকাব্যদ্বয়ের আদি প্রচারমাধ্যম
পঞ্চমকে রীতা পরবর্তীকালে জানিয়েছিলেন, তাঁকেসিনেমায় নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি তাঁর বান্ধবীদের সঙ্গে বাজি ধরেছিলেন। আর তাই তিনি পঞ্চমকে প্রেক্ষাগৃহে আসতে বলেন। এটি শোনার পর কিছুটা হলেও কষ্ট পেয়েছিলেন পঞ্চম। তবুও রীতার এহেন আচরণকে বোধহয় বেশি গুরুত্ব দেননি তিনি। কথা এগোয়। শেষমেশ দুই পরিবারের সম্মতিতেই ১৯৬৬ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন দুজনে। শুরু হয় নতুন এক জীবন।
পঞ্চম ও রীতা।
কাটতে থাকে দিন,মাস, বছর। কিন্তু এক ছাদের নিচে থাকা সত্ত্বেও কোথাও যেন দু’জনের হৃদয়ের তার এক সুরে ও ছন্দে বেজে উঠছিল না। অহরহ ছন্দপতন ঘটছিল। কান পাতলেই শোনা যাচ্ছিল, রীতা সাংসারিক ক্ষেত্রে নাকি যথেষ্টই হিসেবি ছিলেন। আর পঞ্চম ছিলেন ঠিক তার উল্টো। রীতা অনেক ক্ষেত্রেই পঞ্চমের ওপর কিছুটা হলেও কর্তৃত্ব করে ফেলতেন। দিনের পর দিন এ ভাবে চলতে চলতে দু’জনের মধ্যে বাড়তে থাকে দূরত্ব। শোনা যায়, পঞ্চমের ঘনিষ্টরাও সেই সময় তাঁদের মধ্যে দূরত্ব ঘোচাতে এগিয়ে আসেননি কোনও এক অজানা কারণে। পঞ্চম তাঁর কাছের সহকর্মীদেরও অনুরোধ করেছিলেনরীতাকে একটু বোঝানোর জন্য। যদিও তাতে কোনও লাভ হয়নি।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৫: নৌকো উল্টে সত্যেন্দ্রনাথের আইসিএস পড়তে যাওয়া বানচাল হতে বসেছিল
স্বাদে-গন্ধে: সামনেই জন্মদিন? বিশেষ দিনের ভূরিভোজে বানিয়ে ফেলুন কাশ্মীরি পদ মটন রোগান জোস!
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১২: ঘাম কমাতে পাউডার ব্যবহার করেন?
আরডি তখন মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ছিলেন। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে, কখনও কখনও তিনি বাড়ি ছেড়ে হোটেলেও রাত কাটাচ্ছিলেন। নিত্যদিনের সাংসারিক কলহ থেকে বোধহয় নিজেকে একটু দূরে রাখতে চেয়েছিলেন। বহুদিন হোটেলে বসেই তিনি সুর রচনার কাজ করে গিয়েছেন মনের ভিতরের চরম বেদনাকে সঙ্গী করে।
এদিকে, রীতাও নাকি তখন নিয়মিতভাবেসুরাপান করতে শুরু করেন। একসময় পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, বিচ্ছেদ অনিবার্য হয়ে পড়ে। অবশেষে ১৯৭১ সালে তাঁদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। অবসান ঘটে ৬ বছরের বৈবাহিক জীবনের।
প্রথম ভালোবাসার এই পরিণতি পঞ্চমের মধ্যে এমন এক গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছিল যারফলশ্রুতি হিসেবে পরবর্তীকালে আমরা বোধহয় তাঁর কাছ থেকে উপহার পেয়েছি অগণিত হৃদয়বিদারক সুর। যে সব সুর কানে এলে অনেক ক্ষেত্রেই আমাদেরও অতীতে পাওয়া কোনও গভীর বেদনার কথা মনে পড়ে যায়। যে বেদনা একান্তই নিজের। যে সব বেদনা হয়তো অন্য কারও সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার মতো নয়। যে বেদনা চিরনবীন হয়ে আমৃত্যু বেঁচে থাকে আমাদের মধ্যে।—চলবে
এদিকে, রীতাও নাকি তখন নিয়মিতভাবেসুরাপান করতে শুরু করেন। একসময় পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, বিচ্ছেদ অনিবার্য হয়ে পড়ে। অবশেষে ১৯৭১ সালে তাঁদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। অবসান ঘটে ৬ বছরের বৈবাহিক জীবনের।
প্রথম ভালোবাসার এই পরিণতি পঞ্চমের মধ্যে এমন এক গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছিল যারফলশ্রুতি হিসেবে পরবর্তীকালে আমরা বোধহয় তাঁর কাছ থেকে উপহার পেয়েছি অগণিত হৃদয়বিদারক সুর। যে সব সুর কানে এলে অনেক ক্ষেত্রেই আমাদেরও অতীতে পাওয়া কোনও গভীর বেদনার কথা মনে পড়ে যায়। যে বেদনা একান্তই নিজের। যে সব বেদনা হয়তো অন্য কারও সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার মতো নয়। যে বেদনা চিরনবীন হয়ে আমৃত্যু বেঁচে থাকে আমাদের মধ্যে।—চলবে
* পঞ্চমে মেলোডি (R D Burman): সৌম্য ভৌমিক, (Shoummo Bhoumik) সঙ্গীত শিল্পী।