শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


 

গৌরচন্দ্রিকা

গত শতাব্দীর ষাটের দশকের গোড়ায় ছবি বিশ্বাসের পৌরহিত্যে শিল্পীদের একটি নিজস্ব সংগঠন গড়ে ওঠে ‘অভিনেতৃ সংঘ’। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গোড়ার দিকে নিয়েছিলেন বিকাশ রায় ও ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ের কথা। ওই সময় মহানায়ক উত্তমকুমার অভিনীত প্রায় সব ছবি সুপারহিট। তিনি তখন শিল্পীদের এই নিজস্ব সংগঠন ‘অভিনেতৃ সংঘের’ সভাপতি। বাংলার শিল্পীরা তার সভ্য। কিন্তু বাঙালিদের দলাদলি তো সর্বজনবিদিত। সম্পর্কগুলি তখন ভাঙতে শুরু করেছে একটু একটু করে।

পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির মানুষ উত্তমকুমার তখন একান্ত নিরুপায় হয়ে অভিনেতৃ সংঘ ছেড়ে বেরিয়ে এলেন এবং শিল্পীদের জন্য নতুন এক সংগঠন তৈরি করলেন। নাম দিলেন ‘শিল্পী সংসদ’। নিজের ময়রাস্ট্রিটের ফ্ল্যাটে এই সংগঠনের কাজকর্ম শুরু হল। যথারীতি মহানায়ক উত্তমকুমার সভাপতি। অভিনেতৃ সংঘ ছেড়ে এই শিল্পী সংসদে যোগদান করলেন সুপ্রিয়া দেবী, বিকাশ রায়, মাধবী মুখোপাধ্যায়, জহর রায়, মলিনা দেবী, জহর গঙ্গোপাধ্যায়-সহ বহু বিশিষ্ট অভিনেতা-অভিনেত্রী। অভিনেতৃ সঙ্ঘে থেকেই গেলেন ভানু বন্দোপাধ্যায়, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অনুপ কুমার, দিলীপ রায় প্রমুখ শিল্পীরা। এতে দেখা গেল সেই সময়ে ভানু বন্দোপাধ্যায়ের ছবির সংখ্যা কমতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুন:

পর্দার আড়ালে, পর্ব-২৬: উত্তম কাছে এসে বললেন, “তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি সাবু, এ বার আমায় মাফ করে দে”

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব-৩৬: রামের সন্ধানে ভরতের যাত্রা সফল হল কি?

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৪: মন তোর শক্তিই ‘মন্ত্রশক্তি’

 

মূল ঘটনা

১৯৭২ সালের গোড়ায় বিমল মিত্রের কাহিনি অবলম্বনে সলিল দত্ত কাজ শুরু করলেন ‘স্ত্রী’ ছবির। সেখানে জমিদার মাধব দত্তের ভূমিকায় অভিনয় করছেন উত্তম কুমার। সীতাপতির চরিত্রে রয়েছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। মৃন্ময়ী চরিত্রে অভিনয় করতে এলেন নবাগতা আরতি ভট্টাচার্য। উত্তমকুমারের চরিত্রটি হল মাতাল, চরিত্রহীন জমিদারের। তাঁর নিকট সাগরেদরা অর্থাৎ খোসামোদকারীদের মধ্যে অন্যতম হলেন চাটুজ্জে। সেই চাটুজ্জে চরিত্রে ভানু বন্দোপাধ্যায়। নিয়মিত মেয়ে সাপ্লাই দেওয়াই হচ্ছে চাটুজের কাজ।

দীর্ঘদিন বাদে ফ্লোরে উত্তমকুমারের সঙ্গে ভানু বন্দোপাধ্যায়ের দেখা হল। একসময় এই উত্তম কুমার এবং ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় বহু বহু ছবিতে কাজ করেছেন। এমনকি স্টার থিয়েটারের দীর্ঘদিন চলা ‘শ্যামলী’ নাটকেও এরা দু’জনে অভিনয় করেছিলেন।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৮: জ্বরে ভাত খাবেন?

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫২: বইয়ের সব কপি কবির নির্দেশে বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল

স্বাদে-আহ্লাদে: সকালে জলখাবারে থাক নতুনত্ব, বানিয়ে ফেলুন সুস্বাদু পালক পনির পরোটা

আজ বহুদিন বাদে যখন শুটিং করতে এসে উত্তমকুমার ফ্লোর এর মধ্যে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখতে পেলেন তখন সকলের সামনে ভানু বন্দোপাধ্যায়কে উত্তম কুমার জিজ্ঞাসা করলেন “কেমন আছো ভানুদা।” ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় এতটুকু কাল বিলম্ব না করে বললেন, “আপনি যেমন রেখেছেন।” ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরে হতবাক হয়ে গেলেন উত্তমকুমার। তারপরে তিনি ভানু বন্দ্যোপাধ্যাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কি হল ভানুদা? এতদিন তুই করে বলতে, আজ হঠাৎ আপনি করে বলছ কেন?” ভানু বন্দোপাধ্যায় এতটুকু বিলম্ব না করে বলে উঠলেন, “যবে থেকে আপনি আমায় তুই থেকে তুমিতে উঠে এলেন তখন থেকে আমি তুই থেকে আপনিতে তুলে নিলাম বিষয়টি। “এই মজাদার উত্তর প্রত্যুত্তরে হাসির বন্যা বয়ে গেল নিউ থিয়েটার্স স্টুডিও ফ্লোরে। বাঙালির কাছে এই দুই শিল্পীর আবেদন কোনওদিনও ফুরোবার নয়।
 

পুনশ্চ

‘স্ত্রী’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭২ সালের ১৮ আগস্ট শ্রী, প্রাচী, ইন্দিরা প্রেক্ষাগৃহে। সুপার ডুপার হিট ছবি। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুদিন হল আগামী ৪ মার্চ। এই দুই শিল্পীকে স্মরণ করছি। উত্তম কুমারের উদ্দেশে এই লেখার মধ্যে দিয়ে রইল সশ্রদ্ধ প্রণাম। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশেও রইল সশ্রদ্ধ প্রণাম।


Skip to content