শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


নাটকের একটি দৃশ্য।

‘রক্তকরবী’ এক মায়াকাহিনী, এক বিদ্রোহের গল্প। বাঁচার গল্প। পাঁকে ডুবন্ত সমাজের, দম বন্ধ করা বন্দিশালা ভাঙার গল্প। যক্ষপুরীর যান্ত্রিক খোদাইকরেরা আসলে আজও আছে। বদলেছে আঙ্গিক, বদলেছে সময়। কিন্তু রাজা আজও আছে, আছে সর্দার, আছে মোড়ল, আছে গোঁসাই। আছে শোষণ, আছে নিপীড়ন, আছে ধর্মের নামে মগজ ধোলাই। আর ঠিক তেমনই এই কারাগার ভাঙার জন্য আছে নন্দিনী এবং বিশুরা, যাদের এই যান্ত্রিক সমাজ মায়াবিনী, কুহকিনী বা পাগল বলে। ‘রক্তকরবী’ একশো বছর পূর্ণ করতে চলেছে, অথচ এই নাটক যে আজও কি ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক সেটা আরও একবার প্রমাণ করল অশোকনগর অভিযাত্রীর পরিচালনায় মঞ্চস্থ হওয়া এই নাটকের আধুনিক নাট্যায়ন।
কৌশিক চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায়, এই নাটকে নন্দিনীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন আনন্দী বসু এবং বিশু পাগলের চরিত্রে রয়েছেন রাতুল চন্দরায় এবং রাজার চরিত্রে পরিচালক নিজে। গোঁসাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ‘অভিযাত্রী’র প্রধান কৌশিক সরখেল। গোঁসাইয়ের গেরুয়া বসন এবং তার ধর্মকথার দাওয়াইয়ের মধ্যে লুকোনো সুক্ষ রাজনৈতিক স্যাটায়ার কোনওমতেই উপেক্ষা করা যায় না।
আরও পড়ুন:

সত্যি এবং মিথ্যে, সকল প্রেমিক-প্রেমিকারা ‘মিথ্যে প্রেমের গান’ দেখে আসতে পারেন

হেলদি ডায়েট: কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগছেন? সুস্থ থাকতে কোন ১০টি ফল খাবেন?

এই ‘রক্তকরবী’ একুশ শতকের প্রতিচ্ছবি। এখানকার যক্ষপুরীতে রাজা একটি বিশাল এলইডি স্ক্রিনের সামনে বসে সমস্ত কিছু পর্যবেক্ষণ করেন। চারিদিকে জাল এবং ছোট মনিটর দিয়ে তৈরি রাজার অন্ধকার জগৎ, যেখানকার বাতাসও যেন স্তব্ধ, নিশ্বাস-প্রশ্বাসও যান্ত্রিক। মঞ্চসজ্জার মাধ্যমে এই দম বন্ধ করা বন্দিশালাকে যথাযথ ভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা প্রশংসার দাবি রাখে।
আরও পড়ুন:

অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-৭: ঈশ্বরের ভালোবাসার সমুদ্রে ডুব দিলে তবেই ভক্তিরূপ মুক্তো খুঁজে পাওয়া সম্ভব

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫১: বিয়েশাদির ঠাকুরবাড়ি

তার মাঝে গোপনে প্রকৃতির আপন নিয়মে জঞ্জালের মাঝে ফোটে টকটকে লাল রক্তকরবী! যার সঙ্গে মিশে যায় শোণিতের গাঢ় লালিমা। যার আকর্ষণ অমোঘ। আর সেই রক্তকরবী মাথায় লাগিয়ে ঈশানী পাড়ার নন্দিন হয়ে ওঠে আরও মোহময়ী। সে ঘোর লাগায় সকলের চোখে— জীবনের ঘোর! সোনার সুড়ঙ্গের কালো অন্ধকার ভেদ করে নতুন করে বাঁচার আলো দেখায় সে! এমনকি পাষাণ হৃদয় রাজার মনেও সে ছোঁয়ায় তার যাদুর কাঠি।
নন্দিনীর ভূমিকায় আনন্দী সত্যই অনবদ্য। তাঁর কণ্ঠে গানগুলিও শ্রুতি মধুর। রাজা, কৌশিক চট্টোপাধ্যায়, রাজার ভূমিকায় যথাযথ। বিশু পাগলের অভিনয় প্রশংসনীয়। পাগলের গলায় “আ হান্ড্রেড মাইলস” কিংবা “ও আকাশ সোনা সোনা” গানগুলি আলাদা একটা মাত্রা এনে দেয়। স্থান-কাল-পাত্রের সীমানা অতিক্রম করে এক চিরন্তন রূপ দেয় দৃশ্যগুলিকে। তবে নন্দিনী এবং বিশু পাগলের কণ্ঠে “বড়ে আচ্ছে লগতে হ্যায়” গানটি একটু যেন বেমানান। ওখানে অন্য কোনও গান হয়তো ব্যবহার করা যেতে পারতো।
আরও পড়ুন:

খাই খাই: বাড়িতে বসবে আড্ডার আসর? বানিয়ে ফেলুন ভিন্ন স্বাদের গন্ধরাজ মোমো

জীবন খাতার প্রতি পাতায় যতই লেখো হিসাব নিকাশ/২

প্রত্যেক অভিনেতাই তাঁর চরিত্রের প্রতি যথাযথ সুবিচার করেছেন। তবে চন্দ্রার চরিত্রে সুতপা প্রসাদের অভিনয়হীন অভিনয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

নাটকটি কলকাতা এবং জেলার বেশ কয়েকটি মঞ্চে অভিনীত এবং প্রশংসিত হচ্ছে। কলকাতায় নাটকটির আগামী অভিনয় গিরিশ মঞ্চে, ২৬ ফেব্রুয়ারি, রবিবার, দুপুর তিনটে।

নাটকের শেষ দৃশ্যটি গভীর অর্থবহ—নব প্রজন্মের নন্দিনী এবং কিশোরের উত্থান, যা দৃপ্ত কণ্ঠে জানান দেয় বিপ্লবের মৃত্যু হয় না! অমৃতের পুত্রেরা সত্যিই মরে না!
* লেখিকা পর্ণা চৌধুরী ইংরেজির শিক্ষিকা, গভঃ বেসিক কাম মাল্টিপারপাস স্কুল, বাণীপুর।

Skip to content