মঙ্গলবার ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪


শীতকালে বরফে ঢাকা রাস্তা।

Whose woods these are I think I know.
His house is in the village though;
He will not see me stopping here
To watch his woods fill up with snow.
….
The woods are lovely, dark and deep.
But I have promises to keep,
And miles to go before I sleep,
And miles to go before I sleep.

কবিতাটি মনে পড়লো একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক একটি পরিস্থিতিতে, যখন আমার গাড়ির চাকাটি রাস্তার ধারে ২ ফুট বরফের নিচে ফেঁসে আছে এক কনিফারের জঙ্গলে। বাইরে তখন রাতের অন্ধকারে, তুষার ঝড় আর মাইনাস ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় জমে যাওয়ার জোগাড়। এই হল আমার মেরুর দেশে প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা। এই সিরিজে সেই অভিজ্ঞতার কথাই বলবো। তবে শুরু করি একটু আগে থেকে।
আমার ছোটবেলা থেকে ইচ্ছা ছিল মেরু প্রদেশে এসে কাজ করার। আমি তখন রহড়া রামকৃষ্ণ মিশনে ষষ্ঠ কি সপ্তম শ্রেণিতে। তখন মিশনের মহারাজ এবং শিক্ষকদের উদ্যোগে দুই দক্ষিণমেরু-অভিযাত্রী ও বিজ্ঞানী এসেছিলেন তাঁদের অভিজ্ঞতার গল্প বলতে। মিশনের সভাগৃহ, বিবেকানন্দ হলে একটার পর একটা ছবি দেখাচ্ছেন তাঁরা মেরুর দেশের। সেখানকার বরফ, হিমবাহ, ঘরবাড়ি, জীবনযাত্রা, পশুপাখি, তাঁদের গবেষণাগার, কতরকমের সব ছবি; আর আমরা শুধু হাঁ করে দেখছি। সেদিন থেকে আমি মনে মনে ভেবেছিলাম যে, কখনও সুযোগ পেলে কোনও একটি মেরুর দেশে গিয়ে আমি থাকবো। তো, আজ এই ছত্রিশের দোরগোড়ায় এসে সেই ইচ্ছা পূরণ করা গেল ইউনিভার্সিটি অফ আলাস্কা-ফেয়ারব্যাঙ্কসে অধ্যাপনার চাকরি পাওয়ার দৌলতে।
তাছাড়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নাসার একটি কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ কেন্দ্র এবং সেই সংক্রান্ত গবেষণাগারও আছে। সেখানে গবেষণা করার একটা সুপ্ত ইচ্ছাও ছিল মনের মধ্যে।
আরও পড়ুন:

ফল কালারের রূপ-মাধুরী, পর্ব-১০: আশ মিটিয়ে দেখে ছিলাম অপূর্ব সেই রূপ…আর প্রকৃতিও সেদিন সবটুকু মেলে ধরেছিল আমার সামনে

জ্যোতির্লিঙ্গ যাত্রাপথে, পর্ব-১: চলার পথে খানিক ভণিতা

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১: ছুটি ও ছোটা ছুটি

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে যখন এই চাকরির সুযোগটি এসে গেল তখন আর না করতে পারলাম না। সুন্দরী উইসকনসিনের মায়া কাটিয়ে পাড়ি জমালাম সুদূর রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা।

আজ প্রায় এক বছর হল আমার ঠিকানা ফেয়ারব্যাঙ্কস, আলাস্কা। আলাস্কা নামটা শুনলেই বাকি পুরো পৃথিবীটার তুলনায় একটু বেশি রহস্যময় লাগে, আবার কখন বা মনে পড়ে যায় চার্লি চ্যাপলিনের ‘গোল্ডরাশ’ ছায়াছবিটির কথা। তো, এই ফেয়ারব্যাঙ্কসে এসে আমি প্রথমেই পড়লাম তুষারঝড়ের কবলে। তবে সে গল্প বলার আগে এই শহর এবং তার পারিপার্শ্বিক অবস্থান সম্পর্কে কিছু তথ্য জানিয়ে দিই।

আমার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বাইরের দৃশ্য।

যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরে দ্বিতীয় শেষ বাসযোগ্য শহর এটি। এখানে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষের বাস। এছাড়া এই শহরের অধিক্ষেত্রের (জুরিসডিকশন) মধ্যে আছে ফোর্ট ওয়েইনরাইট, একটি সামরিক ঘাঁটি (মিলিটারি বেস) যেখানে থাকে আরও হাজার তিরিশেক যুক্তরাষ্ট্রীয় জওয়ান। এর পরে আরও উত্তরে আর্কটিক বৃত্তের ভিতরে উৎকিয়াজভিক বলে একটি শহর আছে বটে কিন্তু, সেখানে মাত্র হাজার চারেক মানুষের বাস। তাদের বেশিরভাগই ইন্যুপিয়াক বা ইনুইট (আলাস্কান এস্কিমো) উপজাতীয়। উৎকিয়াজভিক শহরটি মূলত খনিজ তেল উৎপাদনের স্বার্থেই ব্যবহার হয়। এখানে খাদ্য সরবরাহ প্রচণ্ড ব্যয় সাপেক্ষ হওয়ায় শুনেছি এখানকার বহু মানুষই শিকারের উপর নির্ভরশীল। মাছের সঙ্গে সঙ্গে মেরুর কাছে বলে অনেকেই এখানে তিমি, শ্বেতভল্লুক, সীল মাছ ইত্যাদিও শিকার করে থাকে জীবনধারণের উদ্দেশ্যে।
আরও পড়ুন:

অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-২: অনন্তের সন্ধান আর সেই দরজার তালা ও চাবি তো তাঁর কাছেই রাখা আছে

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-১: নারী কি আলাদা? তাঁরা পুরুষদের সঙ্গে বসতে ভয় পান? তাহলে কি এত আয়োজন শুধু তাঁদের ভয় দেখাতে…

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪৭: পুরীতে বাড়ি— রবীন্দ্রনাথের, গগনেন্দ্রনাথ-অবনীন্দ্রনাথের

সে যাই হোক, ফিরে আসি ফেয়ারব্যাঙ্কসে। ভৌগোলিক বিচারে ফেয়ারব্যাঙ্কস শহরটি অবস্থিত ৬৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে অর্থাৎ উত্তর মেরু (৬৬.৫ ডিগ্রি উত্তর) থেকে মাত্র দেড় ডিগ্রি নিচে। দূরত্বের বিচারে আর্কটিক বৃত্ত থেকে এই শহর মাত্র ২০০মাইল। পৃথিবী-খ্যাত ডালটন হাইওয়ে এই শহরকে যুক্ত করেছে আর্কটিক বৃত্ত তথা উত্তরমেরুর সঙ্গে। আরও উত্তরে, বৃত্তের মধ্যে আরও ৩০০ মাইল মতো চলে গেলে পৌঁছনো যাবে পৃথিবীর একদম শেষ প্রান্ত প্রুডহো-বে তে। তারপরেই শুধু হিমশৈলে ঘেরা নীল সাগর। সেখানে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার ষোলোআনা ইচ্ছা আছে আমার। তবে তার জন্য কিছুদিন এখানে অভ্যস্থ হওয়া দরকার। সে অভিজ্ঞতা না সঞ্চয় করা পর্যন্ত এই শহরের কথাই বলা যাক। অ্যাডভেঞ্চারের বিচারে সেও বড় কম নয়। বিশেষত যখন এসেই পড়তে হল এক অভূতপূর্ব তুষার ঝড়ের কবলে।—চলবে

ছবি: লেখক
 

বাইরে দূরে

লেখা পাঠানোর নিয়ম: এই বিভাগে পাঠকদের সঙ্গে আপনার সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কাহিনি ভাগ করে নিতে পারেন। ভ্রমণ কাহিনি লিখতে হবে ১০০০ শব্দের মধ্যে ইউনিকোড ফরম্যাটে। লেখার সঙ্গে বেশ কিছু ছবি পাঠাতে হবে। চাইলে ভিডিও ক্লিপও পাঠাতে পারেন। ছবি ও ভিডিও ক্লিপ লেখকেরই তোলা হতে হবে। ওয়াটারমার্ক থাকা চলবে না। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.co

* রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা (Mysterious Alaska) : ড. অর্ঘ্যকুসুম দাস (Arghya Kusum Das) অধ্যাপক ও গবেষক, কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস।

Skip to content