বৃহস্পতিবার ৭ নভেম্বর, ২০২৪


দ্রুত তলিয়ে যাচ্ছে জোশীমঠ। ক্রমশ ঘরবাড়ি এবং রাস্তায় ফাটল বাড়ছে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে উত্তরাখণ্ড সরকার স্থানীয়দের দ্রুত সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিকল্পনা মতো বিপর্যস্তদের অন্যত্র সরিয়ে ফেলতে হেলিকপ্টারও নিয়ে আসা হয়েছে।
প্রশাসন বৃহস্পতিবার রাত থেকেই গাড়োয়াল হিমালয়ের গুরুত্বপূর্ণ জনপদ জোশীমঠে বসবাসকারীদের গাড়িতে করে আশ্রয় শিবিরে নিয়ে কাজ শুরু করেছে। শুক্রবারও উদ্ধারকাজ জোরকদমে চলেছে। তবে শুক্রবার বিকালের দিকে ফাটলের মুখ আরও বাড়তে থাকে। তাই প্রশাসন উদ্ধারকাজে আরও গতি এনে বসবাসকারীদের দ্রুত অন্যত্র সরাতে হেলিকপ্টার নিয়ে আসে।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামী সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকাজ চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বিপর্যস্ত এলাকা পরিদর্শনও করেছেন। এর তিনি জোশীমঠ নিয়ে দফায় দফায় জরুরি পর্যালোচনা বৈঠক করেন। সেই বৈঠকেই উদ্ধারকাজে হেলিকপ্টার ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০১১ সালের জনশুমারি অনুযায়ী, এখানকার জনসংখ্যা ১৬ হাজার ৭০৯। সব থেকে খারাপ অবস্থায় রয়েছেন যে বাসিন্দাদের এখনও উদ্ধার করা হয়নি তাঁরা। হাড়কাঁপানো শীতেও বাড়ির ভিতরে ঢুকতে চাইছেন না তাঁরা। শৈত্যপ্রবাহের মধ্যেও বাড়ি থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বার করে এনে রাস্তাতেই রাত কাটিয়ে অপেক্ষা করছেন, কখন তাঁরা আশ্রয় শিবিরে পৌঁছবেন।
এদিকে স্থানীয়দের দাবি, জোশীমঠ তলিয়ে যাওয়ার জন্য অনেকাংশে দায়ি ‘উন্নয়ন জোয়ার’। তাঁদের কথায়, লাগাতার পরিকাঠামোগত উন্নয়ন করতে গিয়ে বিপদই বেড়েছে। বড়বড় নির্মাণকাজ, গাছ কাটা, সুড়ঙ্গ তৈরি করা এবং পাহাড় কেটে নতুন জনবসতি তৈরিতে ক্রমশ আলগা হয়ে গিয়েছে জোশীমঠের জমি। তবে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকেও দায়ী করেছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন:

শীতে কাবু বাংলা, একাধিক জেলায় তাপমাত্রার পারদ ১০ ডিগ্রির নীচে, শনিবার কোথায় কত তাপমাত্রা?

বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-১: চায়ের দোকান থেকে বিশ্বজয়

তবে জোশীমঠ যেকোনও দিন হুড়মুড়িয়ে তলিয়ে যেতে পারে, তার আভাস দেওয়া হয়েছিল ৪৭ বছর আগেই। সমীক্ষক দল ‘মিশ্র কমিটি’ ১৯৭৬ সালে এক রিপোর্টে জানায়, হিমালয়ের ধসপ্রবণ এলাকার উপরে জোশীমঠ গড়ে উঠেছে। প্রাকৃতিক ও মানুষের কর্মকাণ্ডের জেরে এই শহরের স্থায়িত্ব খুব বেশি হলে ১০০ বছর। রিপোর্টে এও বলা হয়েছিল, ১০০ বছরের মধ্যেই হিমালয়ের কোলে তলিয়ে যাবে জোশীমঠ। তবে ১০০ বছর নয়, ৪৭ বছরেই সেই পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে এই শহর। এখানেই শেষ নয়, ১৯৭৬-এ ‘মিশ্র কমিটি’ ধস কী ভাবে আটকানো যায়, তা নিয়েও পরামর্শও দিয়েছিল। রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ভূমিধস ঠেকাতে বোল্ডার সরানো যাবে না। বন্ধ রাখতে হবে বড়সড় নির্মাণকাজ। পাশাপাশি গাছ না কাটার মতো বিষয়গুলিতে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন:

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১: ছুটি ও ছোটা ছুটি

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৩৭: মাছ বাজারের বর্জ্যই এখন মূল্যবান সামগ্রী প্রস্তুতের অন্যতম সেরা উপাদান হতে চলেছে

উত্তরাখণ্ডের ২,৬০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত জনপ্রিয় হিল স্টেশন জোশীমঠ কেন সে যাচ্ছে, তা জানতে রাজ্য সরকার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি দল গঠন করেছে। কেন্দ্রীয় সরকারও একটি বিশেষজ্ঞ দল গঠন করেছে। সেই সঙ্গে কেন্দ্র শুক্রবার জোশীমঠে ভূমিধসের ঘটনা ও তার প্রভাব খতিয়ে দেখতে একটি প্যানেলও গঠন করেছে।
উল্লেখ্য, গত কয়েক দিন ধরে ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছে জোশীমঠ তথা ‘গেটওয়ে অফ গাড়োয়াল’-এর মাটি। ফাটল ধরছে বাড়ি ও রাস্তাতে। অদ্ভুত শব্দ উঠে আসছে মাটির নিচ থেকে। এর পরই জোশীমঠের বসবাসকারীরা দ্রুত সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার দাবিতে পথে নামেন। এখনও পর্যন্ত চামোলি জেলার এই শহরে সাড়ে পাঁচশোরও বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিংধর জৈন, মাড়ওয়ারি, জেপি কলোনির মতো শহরের কিছু জায়গায় মাটি বসে নতুন করে ফাটল দেখা দিচ্ছে বাড়িঘরে।

Skip to content