মুখের আড়ালে লুকিয়ে থাকে যন্ত্রণা। ( চিত্রকলা: সংগৃহীত)
ভাগ- ২
আলো জ্বলে অন্য অংশে–প্রশান্তের
নার্সিংহোমের রিশেপসন বেতের
সোফায় বসে আছে– মোটাসোটা
ডাক্তার প্রশান্ত- অমলকান্তি পৌঁছোয়
– কাঁধের ব্যাগ ছাড়া।
অমলকান্তি: কেমন আছিস প্রশান্ত! চিনতে পারচিস তো?
প্রশান্ত: আরে অমলকান্তি! বোস বোস! অনেক রোগা হয়ে গিয়েছিস! খাওয়াদাওয়া করছিস না?
অমলকান্তি: খাচ্ছি তো! আমারটা বোধ হয় হাড়ে শুষে নিচ্ছে!
প্রশান্ত: আমার বেলা সেটা গতরে বাড়ছে বলচিস?! হা হা হা ! কী করছিস?
অমলকান্তি: একটা প্রিন্টিং প্রেসে কাজ করতাম! সেই গত যুগের ঘটঘটাং। তো কালের নিয়মে সেটা উঠে গেলো। মালিক বিশ্বম্ভর রায় এক সময়ের জমিদার মানুষ-দরাজ মন! সেই লোহালক্কড় সরিয়ে সেখানেই একটা আধুনিক জেরক্স মেসিন বসিয়ে দিলেন। তোর খবর বল!
প্রশান্ত: আমার চলছে নার্সিং হোম বাড়ি। এখন অবশ্য আমি এখানে আপোয়েন্টেড ডাক্তার — আমি চাকরি করি।
অমলকান্তি: চাকরি করিস?
প্রশান্ত: নার্সিং হোমের মালিক আমার খুব পরিচিত- আডমিনিস্ট্রেটিভ দায়-দায়িত্ব সব তার- অ্যান্ড চন্দ্রাণী ইস ভেরি এফিসিয়েন্ট!
অমলকান্তি: চন্দ্রাণী মানে!
প্রশান্ত: হ্যাঁ আমার বউ! ওই এখন সব সামলায়। এ সবের ঝক্কি খুব!
অমলকান্তি: হ্যাঁ আমি জানি! প্রথম ঠিকানা খুঁজে যেদিন এসে ছিলাম সেদিন তোর নার্সিংহোমে বিস্তর ঝামেলা। ডেড বডি থানা পুলিশ!
প্রশান্ত: মানে তুই কি (ফোন বাজে- রিংটোন “আগুনের পরশমণি” –কার কল দেখে অমলকান্তির কাছে সময় চেয়ে নেয় প্রশান্ত) – হ্যাঁ বলুন শান্তাপ্রসাদজি! প্লট দেখেছেন? আপনি স্যাটিসফায়েড? কামালগাজির জমির মতো লিগাল ঝঞ্ঝাট নেই তো? হ্যাঁ হ্যাঁ — ফাইন! দেন প্লিজ গো আহেড – ইয়েস ওক্কে!! হ্যাঁ — কী কথা হচ্ছিল!
অমলকান্তি: সেদিন তোর নার্সিংহোমে বিস্তর ঝামেলা, আমার আসার ব্যাপারটা তোর খেয়াল থাকার কথাও নয়! আমি যখন ঢুকছি তখন তোকে পুলিশের জীপে
প্রশান্ত: ওহ! আই সি! কিন্তু তুই তো তার পরেও বোধহয়…
অমলকান্তি: হ্যাঁ, তখন তোকে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে কিন্তু তুই খুব…
প্রশান্ত: ইয়েস আই ক্যান ক্লিয়ারলি রিমেম্বার! তুই জানতে চাইলি কী হয়েছে। অন্য কেউ হলে এড়িয়ে যেতাম। কিন্তু তোকে সেদিন বলে ছিলাম যে সুধীর আমার হয়ে অন্যায়ের সব দায় মাথায় নিয়ে জেলে গিয়েছে! কারণ সুধীরও যে আমাদেরই সঙ্গে স্কুলে…
নার্সিংহোমের রিশেপসন বেতের
সোফায় বসে আছে– মোটাসোটা
ডাক্তার প্রশান্ত- অমলকান্তি পৌঁছোয়
– কাঁধের ব্যাগ ছাড়া।
ভাগ- ৩
আলো জ্বলে লেখকের অংশে – অমলকান্তি টার্ন করে
অমলকান্তি: আমি ভাবতে পারছি না অপু, একজন ডাক্তার এ কথা বলছে! সেদিন কাগজে পড়লাম রাজ্য সরকারের ভর্তুকিতে চলা মেডিকেল কলেজে একজন ডাক্তারি স্টুডেন্টের পেছনে প্রতিবছরে সরকারের খরচ কমবেশি এক থেকে দু’ লক্ষ টাকা।
লেখক চশমাখুলে তাকায় – অমলকান্তি হাত পা নেড়ে অনেক কথা বলে তার কথা শোনা যায় না – লেখকের কথা আবহে শোনা যেতে থাকে।
লেখক (আবহ): আমাদের মধ্যে যে এখন মাস্টারি করে অনায়াসে সে ডাক্তার হতে পারত, যে ডাক্তার হতে চেয়েছিল, উকিল হলেও তার এমন কিছু ক্ষতি হতো না।
কাজের মাসি রেণুদি চা নিয়ে আসে– লেখকের সম্বিত ফেরে অমলকান্তি এসে চা নেয়।
রেণুদি: দাদা আপনাদের চা!
অমলকান্তি: ওফ রেণুদি আপনার টাইমিং-এর জবাব নেই। তুস।
কাজের মাসি রেণুদি অবাক হয়ে তাকাতেই অমলকান্তি বোকার মতো কথাটা গিলে নেয়-রেণুদি চলে যায় – লেখক একটু অবাক হয়ে বলে।
লেখক: রেণুদিকে আর কিছু বানাতে বলব!
অমলকান্তি: নানা!
লেখক: আরে আমি তো বুঝতে পারলাম তুমি যেন কিছু বলতে গিয়ে সঙ্কোচে শেষমেষ আর বললে না!
অমলকান্তি: অসাধারণ! এই জন্যেই তোমার লেখার কবিতা গানের এতো কাটতি- প্রায় সাড়ে বিরানব্বই ভাগ ঠিক বলে দিলে কিন্তু কিছু মনে করো না লেখক। ওই যে সাড়ে সাত শতাংশের তফাৎ, ওইটেই শনির সাড়ে সাতির মতো তফাৎ করে দিচ্ছে। বিভূতিভুষণ হচ্ছে না, সত্যজিৎ হচ্ছে না সুধীন দাশগুপ্ত হচ্ছেনা সলিল চৌধুরী হচ্ছে না। আনন্দ বক্সি এস ডি আর ডি বর্মণ লতা আশা কিশোর শ্যামল মান্না আরতি হেমন্ত সন্ধ্যা স্পর্শ করা যাচ্ছে না। সফটওয়ার আছে কম্পিউটার আছে অঢেল কর্পোরেট টাকার প্রমোশন আছে ছবি আছে টিভি আছে, কিন্তু কিছুতেই আর তফাত মোছা যাচ্ছে না।
লেখক: তার মানে ভালো যা কিছু সব আগে হয়ে গিয়েছে – এখন আর কিছু হচ্ছে না- এই তো।
অমলকান্তি: না না হচ্ছে তো। সংখ্যায় পিল পিলে বাচ্চার মতো গণ্ডায়-গণ্ডায় হচ্ছে। এতো হচ্ছে – এ তো খারাপ বা এতো একই রকম হচ্ছে কাউকে আর আলাদা করে মনে থাকছে না।
লেখক চশমাখুলে তাকায় – অমলকান্তি হাত পা নেড়ে অনেক কথা বলে তার কথা শোনা যায় না – লেখকের কথা আবহে শোনা যেতে থাকে।
কাজের মাসি রেণুদি চা নিয়ে আসে– লেখকের সম্বিত ফেরে অমলকান্তি এসে চা নেয়।
কাজের মাসি রেণুদি অবাক হয়ে তাকাতেই অমলকান্তি বোকার মতো কথাটা গিলে নেয়-রেণুদি চলে যায় – লেখক একটু অবাক হয়ে বলে।
আরও পড়ুন:
নাট্যকথা: রোদ্দুর ও অমলকান্তি/১
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩: এক ফ্লপ মাস্টার জেনারেল-র ‘মর্যাদা’ [২২/১২/১৯৫০]
ছোটদের যত্নে: সুস্থ ও পরিপুষ্ট সন্তানের জন্য এগুলি মেনে চলছেন তো? সন্তানসম্ভবাদের জরুরি পরামর্শে শিশু বিশেষজ্ঞ
মহাভারতের আখ্যানমালা, পর্ব-৩২: নির্জন বনপথে একাকিনী দময়ন্তী হেঁটে চলেন
ছোটদের গল্প: মায়ের আদর
ভাবনার আঁচড়। (চিত্রকলা: সংগৃহীত)
আরও পড়ুন:
ত্বকের পরিচর্যায়: দাদের সমস্যায় জেরবার? এই সব মানলে সারবে অসুখ
এক সপ্তাহে ৭ কেজি পর্যন্ত ওজন কমতে পারে শসার এই স্পেশাল ডায়েট মেনে চললে
শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব-৪: যুদ্ধযাত্রী নবীনকিশোর, ভীত-শঙ্কিত পিতৃহৃদয়
মাইগ্রেনও পুরোপুরি সেরে যেতে পারে, জেনে নিন এর থেকে বাঁচার সহজ উপায়
[বহুরূপী ব্যতীত আর কোনও নাট্যদলকে এ নাটকের মঞ্চাভিনয়ের অনুমতি দেওয়া হয়নি। নাটকটি ভারত সরকারের রেজিস্ট্রার অফ কপিরাইটস-এ দ্বারা আইনত রেজিস্ট্রিকৃত (L-76713/2018) নাটকের পূর্ণ বা আংশিক মঞ্চ, শ্রুতি বা চিত্রাভিনয় বা কোনপ্রকার অনুবাদ আইনত দণ্ডনীয়]