বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


লেকটোমাহক

হাইওয়ে-৪২ ধরে ডোর কাউন্টি যখন পৌঁছলাম তখন বাজে প্রায় সকাল এগারোটা। সেখানে পৌঁছে দেখি লোকে লোকারণ্য সেদিন। চলেছে ফল ফেস্ট আর তার সঙ্গে স্থানীয় শিল্পীদের হস্তশিল্প ও কারুশিল্পের মেলা। ওই মেলায় দশ-পনেরো মিনিট ঘুরে আমরা গিয়ে ঢুকলাম একটি স্থানীয় রেস্তোরাঁয়। ফল কালার দেখার নেশায় রাস্তায় কিছু খাওয়া হয়নি। আর তার সঙ্গে উদ্দেশ্য হল যে পরিচারক বা পরিচারিকাদের সঙ্গে একটু কথাবার্তা বলে স্থানীয় জায়গা সম্পর্কে কিছুটা জেনে নেওয়া। ইন্টারনেটের মাধ্যমে এর আগেই দেখেছি এখানে একটি আঁকাবাঁকা রাস্তা করা আছে যার দুপাশ জুড়ে শুধুই বার্চ এস্পেনের মেলা। এক পরিচারিকার থেকেই জানলাম যে সেটা উত্তর দিশায় এখান থেকে আরও পনেরো মিনিট মতো দূরে। পাশের রাস্তা দিয়ে ডানদিকে বেঁকে আবার হাইওয়ে-৪২ ধরে সোজা চলে গেলেই ওখানে পৌঁছে যাব।
দুপুরের খাওয়া সেরে চললাম সেদিকে। আঁকাবাঁকা রাস্তার শুরুতে এসেই আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো হয়ে গেলাম। ছবিতে যা দেখেছি এ যে তার থেকেও অনেক অনেক বেশি সুন্দর। যদিও একটু ভিড় সেদিন, তবুও মনে হল, রঙিন জীবন বলে সত্যিই যদি কিছু থাকে, তাহলে ওইদিনই আমি তাকে দেখেছি, উপভোগ করেছি, আর বেঁচেছি প্রাণ ভরে। এটা হাইওয়ে-৪২- এর একদম শেষ প্রান্ত এই আঁকাবাঁকা পথটুকু ধরে আর দশ মিনিট গেলেই রাস্তা শেষ হয়ে মিশে যাবে গ্রিন-বে-তে। পর্যটনের স্বার্থেই রাস্তার এই শেষ প্রান্তটুকু অমন আঁকিয়ে বাঁকিয়ে তৈরি করা হয়েছে। রাস্তার শুরুতেই একধারে গাড়িটা দাঁড় করিয়ে নিজের মতো ঘুরতে লাগলাম দুজনে এদিক ওদিক। আশ মিটিয়ে দেখছি ফল কালার।

লেকটোমাহক

আরও পড়ুন:

ফল কালারের রূপ-মাধুরী, পর্ব-৩: বাইরের প্রকৃতিকে হাঁ করে গিলছে বন্ধু, শেষ এক ঘণ্টা কেউ কারও সঙ্গে কথা বলিনি

অমরনাথের পথে, পর্ব-৩: চন্দনবাড়ি থেকে শুরু হল যাত্রা

আমার বন্ধু তো পারলে সেদিনই উইসকনসিনে চাকরির আবেদন করে পাকাপাকিভাবে চলে আসে এখানে। সে যা-ই হোক, সেদিন ওইটুকু রাস্তা যে কতবার হেঁটে এপাশ-ওপাশ করেছি তার কোনও ঠিক নেই। যতবারই দেখছি ততবারই মনে হচ্ছে যেন আবার দেখি। প্রায় একঘণ্টা দেড় ঘণ্টা ওইভাবে হেঁটে আবার ঠিক হল গাড়িতে করে বসে ধীরগতিতে যাওয়া হবে একদম শেষ প্রান্ত পর্যন্ত। গাড়িতে বসেই আমি চালিয়ে দিলাম আমার বহুদিনের প্রিয় একটি হিন্দি গান:
‘খো গ্যায়ে হাম কাঁহা,
রংগ সা য়ে যাঁহা;
টেড়ে মেড়ে রাস্তে হ্যায়, জাদু-ই ইমারতে হ্যায়,
ম্যায় ভি হুঁ, তু ভি হয় ইয়াহাঁ। ….’
(বার বার দেখো ছায়াছবি থেকে শ্রেয়া ঘোষালের কণ্ঠে)

তারপর আর কী, সেই আঁকাবাঁকা পথ ধরে আমরা চললাম, বা বলা ভালো হারিয়ে গেলাম গ্রিন-বে অভিমুখে। সন্ধে নামার আগে পর্যন্ত আর কোত্থাও যাইনি।

ব্যারন কাউন্টির রাস্তায়

আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪: ধীরে চলো ‘ওরে যাত্রী’ [০২/০২/১৯৫১]

গৃহিণীদের মধ্যে বইয়ের নেশা বাড়াতে কাঁধে ঝোলা নিয়ে ঘুরে বেড়ান রাধা, ‘চলমান পাঠাগার’ তাঁর পরিচয়!

সন্ধে নামার মুখে হোটেল খুঁজতে গিয়ে দেখি সে এক বিপদ। ওই হস্তশিল্পের মেলার খাতিরে সেখানে যে গুটিকয়েক হোটেল ছিল তাদের একটিতেও জায়গা নেই। অগত্যা, হাত-পা বাঁধা। ফিরে আস্তে হল বাড়ি ওই রাতেই। তবে রাতে বাড়ি ফিরেই আবার বসে গেলাম পরের দিন কোথায় যাওয়া হবে তাই দেখতে। দেখলাম তিন ঘণ্টা দূরত্বের মধ্যে আছে চিপেওয়া নদী। চললাম সেখানে।
নদীর ধারে ধারে গাছ হলুদ হয়ে আছে। সেখানেই প্রথম লক্ষ করলাম যে এই অঞ্চলে উজ্জ্বল কমলা রং তা তেমন আসে না। ইন্টারনেটে খানিক ঘাঁটাঘাঁটির পরে জানা গেল যে ম্যাপেলের যে বিশেষ প্রজাতিগুলি ওইরকম রং ধারণ করে সেই গাছ এই অঞ্চলে সংখ্যায় খুব কম। এখানে মূলত বার্চ আর এস্পেন যারা হলুদ হয়ে যায়। আর আছে বেশ কিছু সাইপ্রেস যারা গাঢ় লাল বা অনেকটা মেরুন রঙের হয়ে যায়। এই গাঢ় লাল বা মেরুন হলে রংটা একটু চেপে যায়। আর সেটাই সম্ভবত এখানকার পার্থক্য আপস্টেট নিউইয়র্ক বা ভার্মন্টের সঙ্গে। সেখানে ওই কমলা রঙের উপস্থিতির জন্য ফল কালার আরও উজ্জ্বল।—চলবে

* ফল কালারের রূপ-মাধুরী (Wisconsin Fall Color : ড. অর্ঘ্যকুসুম দাস (Arghya Kusum Das) অধ্যাপক ও গবেষক, কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস।
 

বাইরে দূরে

লেখা পাঠানোর নিয়ম: এই বিভাগে পাঠকদের সঙ্গে আপনার সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কাহিনি ভাগ করে নিতে পারেন। ভ্রমণ কাহিনি লিখতে হবে ১০০০ শব্দের মধ্যে ইউনিকোড ফরম্যাটে। লেখার সঙ্গে বেশ কিছু ছবি পাঠাতে হবে। চাইলে ভিডিও ক্লিপও পাঠাতে পারেন। ছবি ও ভিডিও ক্লিপ লেখকেরই তোলা হতে হবে। ওয়াটারমার্ক থাকা চলবে না। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content