বৃহস্পতিবার ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

প্রথমেই শিশুদের পেট ব্যথার কারণগুলো জানতে হবে ও বুঝতে হবে। প্রথমে ছোট শিশুদের কথা ধরা যাক—
 

পাচনতন্ত্র অপরিপক্ষ থাকে

এক থেকে চার মাস বয়স পর্যন্ত শিশুদের পাচনতন্ত্র অপরিপক্ষ থাকে, যা খাদ্য, গ্যাস এবং মল প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট বিকশিত নয়। এর ফলে পেটে বেশি গ্যাস তৈরি হয় ও পেট ব্যথা হয়।
 

রিফ্লাক্স বা বিপরীতমুখী প্রবাহ

খাদ্যের এই রিফ্লাক্স-এর কিছু অংশ আবার খাদ্যনালী বা পাকস্থলীতে ফিরে আসে এবং এর ফলে ছোট শিশুদের পেটব্যথা হয়।
 

অতিরিক্ত খাওয়ানো

মা অনেক সময় শিশুকে অতিরিক্ত খাইয়ে ফেলেন। এর ফলে পেট ফুলে যায়— উপরের দিকে চাপ পড়ে ও পেট ব্যথা হয়।
 

বেঠিক ভাবে খাওয়ানো

মা শিশুকে বোতল বা স্তন সঠিকভাবে ধরাতে না পারলে শিশু দুধের সঙ্গে কিছু হাওয়া খেয়ে নেয়। এর ফলে পেটে ব্যথা হয়।
 

অ্যালার্জি

নির্দিষ্ট কিছু খাবারে সংবেদনশীলতা বা অ্যালার্জি — এটা ফর্মুলা দুধে যেমন হতে পারে, মায়ের বুকের দুধেও হতে পারে।
 

ল্যাকটোজ ওভারডোজ

শিশুর জন্মের পর মার প্রথম হলদেটে বুকের দুধ যাতে ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকে, কিন্তু ল্যাকটোজের পরিমাণ বেশি থাকে। ফ্যাট কম থাকায় ল্যাকটোজ সঠিকভাবে পাচিত হয় না এর ফলে বেশি গ্যাস তৈরি হয় ও পেট ব্যথা হয়।
 

গ্যাস ও শাক-সবজি

গ্যাস হয় এমন শাকসবজি যেমন — ফুলকপি, বাঁধাকপি, বিন্স, পেঁয়াজ মা বেশি পরিমাণে খেলে শিশুর পেটে গ্যাস হয় যা পেট ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে।
 

কোষ্ঠকাঠিন্য

কোষ্ঠকাঠিন্য ছোট শিশুদের পেট ব্যথার একটা অন্যতম কারণ।
 

দুধ খাওয়ানো

দুধ খাওয়ানোর পরে শিশুকে ঠিকমতো ঢেকুর না তোলালে সেই গ্যাসের জন্য সন্ধ্যার দিকে যে ব্যথা হয় তাকে ইভিনিং কোলিক বলে।

 

প্রি-স্কুল বা স্কুল বয়সের শিশুদের পেট ব্যথা

পেট ব্যথার সঙ্গে পাতলা পায়খানা বা রক্ত পায়খানা থাকলে, খাদ্যনালী সংক্রমনের জন্য পেট ব্যথা ভাবতে হবে। পেট ব্যথার সঙ্গে প্রস্রাবের কোনও কষ্ট যেমন প্রস্রাব করার সময় যন্ত্রণা বা প্রস্রাবে রক্ত — এসব থাকলে প্রস্রাবের বা মূত্রনালী সংক্রমণ হয়েছে ভাবতে হবে।

ফুসফুস বা অন্ত্রের পর্দার (কভারিং) সংক্রমণের জন্য পেটে ব্যথা হলে শ্বাস প্রশ্বাস বা কাশির সময় সেই ব্যথা বেড়ে যায়। এই ব্যথা সূচ ফোটানোর মতো হয়।

পেট ব্যাথার সঙ্গে মাথাব্যথা থাকলে মাইগ্রেন বলে সন্দেহ করা হয়।

পেট ব্যথা মাঝে মাঝে হলে সেটা কখনোই অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা নয়। অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা সব সময়ই হবে। নাভির চারপাশের ব্যথা সাধারণত ফাংশনাল বা সাইকোজেনিক। অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা সাধারণত নাভিতে শুরু হয়ে পেটের ডান দিকের নিচে স্থায়ী হতে পারে।

পেট ব্যথা নাভির থেকে যত দূরে হবে ততই সেটা মারাত্মক পেটের ভিতরের কোন অর্গানের সংক্রমনের জন্য হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

পেট ব্যথা পেটের যে কোনো এক জায়গায় সব সময় স্থির থাকলে সেটা পেটের কোন প্যাথলজিক্যাল কারণের জন্য হচ্ছে বলে মনে করা উচিত।

যে পেট ব্যথা ক্রমান্বয় বেড়ে যায় তার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

শিশুর সাংঘাতিক পেট ব্যথা এক থেকে দুই মিনিট, তারপরেই শিশু যদি ঘুমিয়ে পড়ে, তবে মৃগী রোগের সন্দেহ করতে হবে।

শিশুদের পেট ব্যথা একটানা তিন ঘন্টার বেশি স্থায়ী হলে — কোন সার্জিক্যাল এমারজেন্সি ভাবতে হবে এবং দ্রুত হাসপাতালে বা ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

আরও পড়ুন:

ছোটদের যত্নে: সন্তান জ্বরে ভুগছে? কী ভাবে সামলাবেন? রইল ঘরোয়া চিকিৎসার খুঁটিনাটি

ত্বকের পরিচর্যায়: টানটান ত্বক চাই? বয়স ধরে রাখতে মেনে চলুন ত্বক বিশেষজ্ঞের এই পরামর্শগুলি

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১৮: কবি স্নানঘর থেকেও ডাক দিতেন দিনেন্দ্রনাথকে

 

আপনার শিশুর পেটে ব্যথা কীভাবে কমানোর চেষ্টা করবেন?

প্রথমেই মা-বাবাকে শান্ত থাকতে হবে।

প্রতিটি ফিডের পরে শিশুকে কাঁধে নিয়ে পিঠে চাপড় দিয়ে দিয়ে ঢেকুর তোলাতে হবে। শিশু একবার দুধ খেলে অন্তত দু বার ঢেকুর তুলতে হবে। তারপর শোয়াতে হবে।

শিশুকে কোলে নিয়ে আস্তে আস্তে দোলাতে হবে এবং বিভিন্ন পজিশন করে ধরতে হবে।

শিশুর মনোযোগ অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করতে হবে।

আনন্দদায়ক গান চালিয়ে রাখুন — এমনকি মা বাবার কন্ঠস্বর শিশুর কাছে ব্যথার উপশমের কাজ করে।

মায়ের জীবনশৈলী এবং ডায়েট এমন হওয়া উচিত যা শিশুকে অসস্তি দেবে না — যেমন মা যদি ধূমপান করে সেটা পরিত্যাগ করতে হবে।

ঈষদুষ্ণ জলে শিশুকে স্নান করালে তা শরীরকে শিথিল করে এবং পেট ব্যথা কমায়।

শিশুকে চুষি দেওয়া একদম বিজ্ঞান সম্মত নয়।

পেট ব্যথায় হালকা গরম সেঁক দিলে বা তেল মালিশ করলে খানিকটা উপশম হয়।

শিশুকে হাঁটু বাঁকানোর মৃদু ব্যায়াম করালে পেট ব্যথার উপশম হয়।

ওষুধ যে কোন একটা সিমেথিকন ড্রপ যেমন কলিজা, ডিকোলিক ইনফ্যান্ট বা কলিমেক্স ডিএফ — প্রতি কেজি ওজনের জন্য দু’ ফোটা হিসাবে দিলে সাময়িক পেট ব্যথার উপশম হয়।

 

কখন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন?

যদি পাতলা পায়খানা হয় বা পায়খানার সঙ্গে রক্ত পড়ে।

১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি জ্বর হয়।

একদম খেতে না পারে।

ঘন ঘন বমি হয়।

টানা তিন ঘন্টার বেশি সময় পেট ব্যথা থাকে।

ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

যোগাযোগ: ৯৮৩০২৯৪৯৩২


Skip to content