শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪


সোনালি ফোগত

অভিনেত্রী সোনালি ফোগতের মৃত্যু ক্রমশ রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে। তাঁর মৃত্যুর পর প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়েছিল গোয়াতে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গিয়েছেন। ইতিমধ্যে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে এসেছে। সেই রিপোর্ট অন্য কিছু ইঙ্গিত করছে। তাঁর শরীর জুড়ে ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। মনে করা হচ্ছে ভোঁতা কিছু দিয়ে সোনালিকে আঘাত করা হয়।
এদিকে পরিবারের দাবি, হরিয়ানার এই বিজেপি নেত্রীকে খাবারে বিষ মিশিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। এর জন্য সোনালির দুই সহকর্মীকেই তাঁরা দায়ী করেছেন। পুলিশ সুধীর সাঙ্গোয়ান এবং সুখবিন্দর ওয়াসিকে নামে সোনালির দুই সহকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। সোনালির পরিবার পুরো ঘটনাটিকে দীর্ঘ দিনের চক্রান্ত এবং ষড়যন্ত্র হিসেবে মনে করছে। তার আভাসও নাকি সোনালির শেষ ফোনে তাঁরা পেয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার অভিনেত্রীর ভাই রিঙ্কু জানান, চক্রান্ত করেই সোনালিকে গোয়াতে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিনেত্রীর শ্যুটিং ছিল ২৪ অগস্ট। অথচ হোটেলের ঘর বুক করা হয় ২১ এবং ২২ তারিখের জন্য। সোনালিকে গোয়াতে নিয়ে যাওয়াও চক্রান্তেরই একটি অংশ। পাশাপাশি অভিনেত্রীকে চিকিৎসার জন্য গোয়ার সেন্ট অ্যান্টনি হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই হাসপাতাল আগেই জানিয়েছিল, সোনালির আগেই মৃত্যু হয়েছিল। পরিবার সূত্রে এও জানা যায়, মৃত্যুর আগের দিন সোনালি বাড়িতে ফোনে কথা বলেন। তখন তিনি জানিয়েছিলেন খাবার খেয়ে তাঁর অস্বস্তি হচ্ছে। যদিও তার পর থেকে আর তাঁর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এর থেকেই ক্রমশ সন্দেহ গাঢ় হচ্ছে। রিঙ্কু এও বলেন, “সবটাই একটা ছক ছিল। যদিও তদন্ত যে ভাবে চলছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট। আমরা এর বিচার চাই।”
সোনালির বোনের দাবি, সোনালি ফোনে বলেছিলেন যে, ‘‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’’ সেই কথার প্রেক্ষিতে সোনালির বোনের অনুমান, সোনালি নিজেই সন্দেহ করেছিলেন যে, তাঁর খাবারে কিছু একটা মেশানো হয়েছে। শুক্রবার সোনালির দেহ দিল্লিতে এসে পৌঁছেছে। এখন মরদেহ তাঁর বাসস্থান হিসারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
পরিবার সূত্রে খবর, সোনালি নাকি বছর তিনেক আগে তাঁর এক সহযোগীর যৌন হেনস্থার শিকার হন। তখন অভিনেত্রীকে হুমকি দিয়ে চুপ করিয়ে রাখা হয়। এদিকে, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিশেষ কিছু রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে দেখা হবে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে কি না। তার পরই জানা যাবে অভিনেত্রীর মৃত্যু-রহস্য।
তবে শুধু সোনালিই নন, তাঁর স্বামী সঞ্জয় ফোগটেরও ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয়। ৪২ বছর বয়সী সঞ্জয়ের মৃত্যু হয় খামারবাড়িতে। ভোর তাঁর মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। সোনালি এবং সঞ্জয়ের এক মেয়েও রয়েছে। মেয়ের নাম যশোধরা।
টিকটক থেকে পরিচিতি পেয়েছিলেন সোনালি। পরে তাঁকে ছোটপর্দার নানা ধারাবাহিকে দেখা যায়। ২০১৬ সালে টেলিভিশন সিরিয়াল ‘এক মা জো লাখো কে লিয়ে বনি আম্মা’-র মাধ্যমে তাঁর অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ। এর পর হরিয়ানভি চলচ্চিত্র ‘ছোড়িয়ান ছোরোঁ এস কাম নাহি হোতি’-তে অভিনয় করেন।
এছাড়াও বেশ কয়েকটি পঞ্জাবি এবং হরিয়ানভি মিউজিক ভিডিয়োতেও তাঁকে দেখা গিয়েছিল। ছোটপর্দায় সোনালি ফোগতকে দেখা গিয়েছিল বিগ বস ১৪-এ। তিনি এক জন ওয়াইল্ডকার্ড প্রতিযোগী হিসাবে প্রবেশ করেছিলেন। এই শো-মারফত বিজেপি নেত্রী সোনালি ফোগত যথেষ্ট পরিচিতি লাভ করেন।
অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনীতিও করেছিলেন। প্রথমে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য দল পাল্টে বিজেপিতে যোগ দেন সোনালি। ২০১৯ সালে হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে আদমপুর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। সোনালিকে শেষবার দেখা গিয়েছিল ওয়েব সিরিজ, ‘দ্য স্টোরি অব বদমাশগড়’-এ। তাঁর মৃত্যুর ঠিক আগের একটি ঘটনা অনুরাগীদের মনে দাগ কেটে গিয়েছে। মৃত্যুর কিছু আগে তিনি তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। একই সময়ে টুইটার অ্যাকাউন্টে তার প্রোফাইল ছবিও পরিবর্তন করেন। প্রাথমিকভাবে সোনালীর মৃত্যুর কারণ হার্ট অ্যাটাক বলে মনে করা হলেও পুলিশ এর তদন্ত শুরু করেছে।

Skip to content