সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


ধুলিমাটির মর্ত্যজগতে রাজসিংহাসনে আসীন হয়ে রাজ্য শাসন, পালন করে গেলেন কত শত পার্থিব রাজাধিরাজ। ঋষিজনোচিত ঔদার্য কিংবা মহত্ত্বে কেউ কেউ হয়ে ওঠেন রাজর্ষি। কিন্তু ক্ষাত্রশক্তির উর্দ্ধে অধ্যাত্মশক্তিকেই একমাত্র অবলম্বন করে জীবন অতিবাহিত করার সিদ্ধান্ত বড় কঠিন, বড় বিরল। অধ্যাত্মশক্তির অর্জনের পথ, প্রতি পদে তার সংকট। কাঁটার পথে ক্ষতবিক্ষত হতে হতে অবশেষে পার দেখা যায় বুঝি। আবার মুহুর্তের অসতর্কতায় চূড়ান্ত পদস্খলন অপেক্ষা করে থাকে সে পথের শেষে। ক্ষুরের ধারের মতো তীক্ষ্ণ, ধারালো সে পথে প্রতিটি নিমেষ চায় একাগ্র মগ্নতা।

পৃথিবীপতি বিশ্বামিত্র পৃথিবী জয় করে এলেন মহর্ষি বশিষ্ঠের আশ্রমে। বশিষ্ঠের কামধেনু শবলাকে দেখে জাগল তাকে অধিকারের প্রবল বাসনা। সে বাসনা চরিতার্থ করতে গিয়ে একে একে হারালেন বিপুল সৈন্যদল, এমনকী পুত্রদেরও। ক্ষত্রিয়ের বাহুবল, অস্ত্রবিদ্যা নিরস্ত্র ঋষির ব্রহ্মবিদ্যার কাছে পরাস্ত হল। রাজশক্তি ঋষিশক্তির কাছে পরাজিত হল। অমিততেজস্বী ক্ষত্রিয় বীর একদিকে অনুভব করলেন ব্রহ্মবিদ্যার অপরাজেয় শক্তির পাশে ক্ষত্রিয় বাহুবলের তুচ্ছতা। বড় গ্লানি, অপমানবোধে ভারাক্রান্ত হলেন রাজা। সংসার, রাজ্যপাট সব ছেড়ে তিনি চলে গেলেন হিমালয়ের প্রত্যন্ত প্রদেশে তপস্যার দিব্যশক্তি অর্জন করবেন বলে। কিন্তু ক্ষাত্রতেজের অহমিকা তাঁর অন্তরে জাগিয়ে রাখল প্রতিশোধের অগ্নিশিখা। দিব্যশক্তিতে বলীয়ান হয়ে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে হবে, এই ছিল তাঁর পণ।

জনহীন, দুর্গম তুষারকান্তি হিমালয়। সেখানে একমাত্র বাস কিন্নর-কিন্নরীদের। মহাদেবের তপস্যায় আত্মস্থ হলেন বিশ্বামিত্র সেখানেই। দুশ্চর তপস্যায় কেটে গেল বেশ কিছু দিন। তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহেশ্বর এলেন বিশ্বামিত্রের কাছে, দিতে চাইলেন ইপ্সিত বর। কী বর চাইবেন একদা পৃথিবীজয়ী রাজা? রাজ্যপাট ছেড়ে এই দুশ্চর তপঃশ্চর্যার অন্তরালে যে লুকিয়ে আছে অপমানবোধ আর প্রতিশোধস্পৃহা, সে কথা আমরা যেন ভুলে না যাই। মহাদেবের কাছে বিশ্বামিত্র চাইলেন অঙ্গ-উপাঙ্গ-মন্ত্র-রহস্যসহ সমগ্র ধনুর্বেদ। চেয়ে নিলেন, দেবতা, দানব, যক্ষ, রক্ষদের কাছে যত অস্ত্র আছে, সব অস্ত্রের জ্ঞান আর প্রয়োগের শক্তি। অমিতপরাক্রমী ক্ষত্রিয় রাজা ছিলেন বিশ্বামিত্র, এখন মহাদেবের আশীর্বাদে দিব্য অস্ত্রের শক্তিতেও হলেন বলীয়ান। অহমিকা আর ক্ষাত্রশক্তির দর্পে আবার উজ্জীবিত হয়ে উঠলেন বিশ্বামিত্র। এবার বশিষ্ঠের আশ্রমে যেতে হবে তাঁকে, পরাস্ত হবে ব্রহ্মতেজ। মনে মনে বশিষ্ঠকে পরাজিত বলেই ধরে নিলেন বিশ্বামিত্র।
বশিষ্ঠের আশ্রমে পৌঁছে কাল বিলম্ব করতে চাইলেন না তিনি। উগ্র ক্ষাত্রতেজ তাঁর ফিরে এসেছে আবার। নানা রকম অস্ত্র বর্ষণে এক লহমায় দগ্ধ হয়ে গেল বশিষ্ঠের শান্তরসাস্পদ তপোবন। এমন অতর্কিত আক্রমণে প্রাণভয়ে ঋষিরা পালাতে শুরু করলেন সেখান থেকে। শত সহস্র পশুপাখি, যারা দীর্ঘকাল ধরে নির্ভয়ে বাস করছিল সে আশ্রমে, তারাও সকলে পরিত্রাণের আশায় পালিয়ে যেতে লাগল। মহাত্মা বশিষ্ঠের তপোবন এক মুহুর্তে প্রাণহীন মরুভূমির মতো হয়ে গেল। দীর্ঘকালের স্নেহে সংবর্দ্ধিত আশ্রমভূমিকে পুড়ে খাক হয়ে যেতে দেখে ঋষির সংযমের বাঁধ ভেঙে গেল। জ্বলে উঠল ক্রোধের আগুন। উদ্যত হল তাঁর ব্রহ্মদণ্ড।

এবার বিশ্বামিত্র বশিষ্ঠের উপর আগ্নেয়াস্ত্র নিক্ষেপ করলেন। জল যেমন প্রশমিত করে আগুনকে, তেমনই ব্রহ্মদণ্ডে প্রশমিত হল আগ্নেয়াস্ত্র। একে একে বিশ্বামিত্রের অধিগত মহাশক্তিশালী বিশিষ্ট সব অস্ত্রই বশিষ্ঠের ব্রহ্মদণ্ডে বিনষ্ট হল। শেষে ব্রহ্মাস্ত্রও প্রতিহত হল ব্রহ্মতেজের অপরিমেয় শক্তিবলে। বশিষ্ঠের হাতে ব্রহ্মদণ্ড, যেন হয়ে উঠল দ্বিতীয় যমদণ্ড। ভয়ে কম্পিত হল ধরণী। বশিষ্ঠের প্রসন্নতা প্রার্থনা করে দেবতারা স্তব করতে লাগলেন। দর্প চূর্ণ হল ক্ষত্রিয় বীর বিশ্বামিত্রের। ব্রহ্মবলের কাছে ক্ষাত্রতেজ, অস্ত্রশক্তি এমনকী দিব্যশক্তিও পরাস্ত হল।

পরাস্ত, অবসন্ন বিশ্বামিত্র ক্ষাত্রশক্তিকে ধিক্কার দিলেন মনে মনে। উপলব্ধি করলেন, ব্রহ্মশক্তির অপরাজেয়ত্ব। দূরে ফেলে দিলেন বহু কষ্টে আয়ত্ত করা অস্ত্রশস্ত্র। এবার প্রকৃতই ব্রহ্মশক্তি অর্জনের চেষ্টা করবেন তিনি, হয়ে উঠবেন ব্রহ্মশক্তিতে ব্রাহ্মণ। বশিষ্ঠের আশ্রম ছেড়ে সস্ত্রীক দক্ষিণ দিকে গিয়ে তপোবনবাসী হলেন। শুধু ফলমূল আহার করে অতি কৃচ্ছসাধনে কঠোর তপস্যায় দিন কাটতে লাগল। এভাবেই কেটে গেল হাজার বছর। বিশ্বামিত্র আজ ক্ষাত্রতেজে নয়, তপস্যার দীপ্তিতে যেন দীপ্ত অগ্নিশিখা।

একদিন এলেন তাঁর কাছে লোকপিতামহ ব্রহ্মা। বললেন, “বিশ্বামিত্র, তুমি রাজর্ষিলোক জয় করেছ। তোমাকে আমি রাজর্ষি মনে করি।” শুনে বিশ্বামিত্রের মন ভেঙে গেল। এত দীর্ঘ সময় তপস্যার পরেও মাত্র রাজর্ষিলোক প্রাপ্তি! বশিষ্ঠের মতো ব্রহ্মর্ষি হয়ে ওঠা কি তবে হল না? এখন তিনি ক্ষত্রিয় নন কিন্তু ব্রাহ্মণও তো হয়ে উঠতে পারলেন না। এ দ্বন্দ্বময় জীবন তো তাঁর কাম্য নয়। আবার তপশ্চর্যায় মগ্ন হলেন তিনি।
ঠিক এই সময়, ত্রিশঙ্কু নামে এক ইক্ষ্বাকু বংশীয় রাজা ছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন, যজ্ঞবলে সশরীরে স্বর্গে যেতে। কুলপুরোহিত বশিষ্ঠের কাছে মনের ইচ্ছাটি প্রকাশ করেছিলেন তিনি। এমন যজ্ঞ করতে রাজি নন বশিষ্ঠ। ফিরিয়ে দিলেন তিনি রাজাকে। ত্রিশঙ্কু এবার গেলেন বশিষ্ঠের পুত্রদের কাছে। তাঁরা সব শুনে রেগে বললেন, “আপনি মূর্খ! গাছের শিকড় ছেড়ে শাখার দিকে হাত বাড়িয়েছেন আপনি। আপনার গুরু কুলপুরোহিত বশিষ্ঠ যা অসাধ্য বলেছেন, তার সাধনের জন্য আমাদের কাছে এসেছেন!”

ত্রিশঙ্কু বিপাকে পড়ে ক্রোধে উত্তেজিত হয়ে বললেন, “আমার গুরু এবং গুরুপুত্ররা আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন, আমি এবার যজ্ঞের জন্য অন্য হোতার সন্ধান করব।” বশিষ্ঠের পুত্ররা এবার ক্রুদ্ধ হয়ে তাঁকে অভিশাপ দিলেন, “রাজা, আপনি চণ্ডাল হবেন।” রাত্রি পার হতে না হতেই ত্রিশঙ্কু চণ্ডালত্ব লাভ করলেন। রুক্ষ, শ্রীহীন দেহে নীল বসন, রক্তবর্ণের উত্তরীয়। চোখে ক্রুদ্ধ দৃষ্টি। হাতে, কানে, পায়ে লোহার অলংকার। তাঁকে এমন অবস্থায় দেখে চলে গেলেন সব সচিব, অমাত্য, পৌরজন।

দুঃখে আকুল রাজা শেষে গেলেন বিশ্বামিত্রের কাছে। তিনি জানেন, বশিষ্ঠের প্রতিদ্বন্দ্বী বিশ্বামিত্র। বিশ্বামিত্র উৎসাহিত হলেন ত্রিশঙ্কুর যজ্ঞ করতে। সে যজ্ঞকর্ম চণ্ডাল রাজার, ক্ষত্রিয় পুরোহিতের। বিশ্বামিত্রের আহ্বানে বিভিন্ন স্থান থেকে ঋত্বিকরা এলেন। যজ্ঞে এলেন না মহোদয় নামক ঋষি এবং বশিষ্ঠপুত্ররা। ক্রুদ্ধ বিশ্বামিত্রের অভিশাপ আগুনের মতো ভস্মীভূত করল তাঁদের। সাত জন্মের চণ্ডালত্ব লাভ করলেন তাঁরা। ক্ষত্রিয়ের ক্রোধ কি দমন করতে পেরেছিলেন বিশ্বামিত্র? না, পারেননি তিনি। ব্রাহ্মণোচিত ক্ষমা, নম্রতা বা করুণা আজও অধরা তাঁর কাছে। তাঁর ক্রোধের এমন প্রকাশে অন্য ঋষিরা ভয়ে তটস্থ হয়ে যোগ দিলেন যজ্ঞকর্মে। কিন্তু এ যজ্ঞে হবি ভোজন করতে দেবতারাও এলেন না। ক্রমশ ক্রোধের উত্তাপে তপ্ত হচ্ছেন বিশ্বামিত্র। যজ্ঞের স্রুব (কাষ্ঠনির্মিত যজ্ঞপাত্রবিশেষ) উত্তোলন করে নিজের তপঃশক্তির প্রভাবে ত্রিশঙ্কু স্বর্গে প্রেরণ করলেন।

ত্রিশঙ্কুকে স্বর্গলোকে দেখে ইন্দ্র তাঁকে বললেন, “ত্রিশঙ্কু, তুমি গুরুশাপে অভিশপ্ত। স্বর্গবাসে তোমার অধিকার নেই। তুমি অধোশিরে ভূমিতে পতিত হও।” বিশ্বামিত্র নিজ তপোবলে আটকে রাখলেন তাঁর পতন। দেবতাদের সঙ্গে বাদানুবাদের পর স্বর্গভ্রষ্ট ত্রিশঙ্কুর জন্য তিনি সৃষ্টি করলেন ভিন্ন এক সপ্তর্ষিমণ্ডল। সেখানে অধঃশিরা নক্ষত্র হয়ে বিরাজ করলেন ভাগ্যাহত ত্রিশঙ্কু।

ত্রিশঙ্কুর সন্নিধান থেকে নিজেকে এবার সরিয়ে নিতে চাইলেন বিশ্বামিত্র। চলে গেলেন পশ্চিমপ্রান্তে, পুষ্করতীর্থে। তাঁর জীবনেও তপস্যার শক্তি অর্জিত হয়েছে, কিন্তু তাতে নেই অধ্যাত্মপরশ। তাই এখনও সহজেই ক্রোধে, কামনায়, ঈর্ষ্যায় বশীভূত হন তিনি। রাজবেশ ছেড়েছেন, কিন্তু মনে প্রাণে ঋষি হয়ে ওঠার বন্ধুর পথ অতিক্রম করে লক্ষ্যে পৌঁছনো হয়নি তাঁর। নিজের এই অসম্পূর্ণতা তিনি জানেন নিজেও। তাই আবার মগ্ন হলেন তপস্যায়। সহস্র বছর পর সেখানে দেবতাদের সঙ্গে এলেন ব্রহ্মা। বললেন, “বিশ্বামিত্র তুমি এবার ঋষি হয়েছ।” তবুও দিন কাটতে লাগল তপস্যায়। কিন্তু কামনার প্রলোভন, তপোবিঘ্ন? তাকে জয় করতে যে এখনও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে তাঁকে। উত্তীর্ণ হতে হবে কঠোর পরীক্ষায়।
পুষ্করতীর্থে একদিন স্নানে এলেন স্বর্গের অপ্সরা মেনকা। রূপের সম্মোহনী শক্তির কাছে পরাস্ত হলেন বিশ্বামিত্র। মেনকাকে অনুরোধ করলেন আশ্রমে বাস করার জন্য। এ ভাবে কেটে গেল দশ বছর। দীর্ঘ তপস্যার ফসল যেন কামের আগুনে দগ্ধ হয়ে গেল। হঠাৎ যেন চেতনা ফিরে এল বিশ্বামিত্রের। মেনকার উপর ক্রোধ নয়, কৃতকর্মের অনুশোচনায় দগ্ধ হলেন নিজেই। ঋষিজীবনের সবচেয়ে বড় সংকট কাটিয়ে উঠলেন বুঝি। স্থান পরিত্যাগ করে এবার এলেন উত্তর প্রান্তে। কৌশিকী নদীর তীরে বসলেন তপস্যায়। দেবতারা ভয় পেলেন এমন কঠিন তপস্যায়। ব্রহ্মা এলেন আবার। বললেন, “বিশ্বামিত্র, তোমার তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়েছি। তুমি মহর্ষি হয়ে উঠেছ। শ্রেষ্ঠ ঋষিদের মহত্ত্ব তুমি লাভ করেছ।”

কিন্তু, ব্রহ্মার বাক্য সন্তুষ্ট করল না বিশ্বামিত্রকে। তাঁর লক্ষ্য ব্রহ্মর্ষি হয়ে ওঠা। কিন্তু সে লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে হতে হবে জিতকাম, ইন্দ্রিয়জয়ী। সে অবস্থায় এখনও উত্তীর্ণ হননি তিনি। আবার ডুবে গেলেন তিনি গভীর সাধনায়। ব্রহ্মর্ষি হয়ে উঠতে হবে যে। সে সাধনায় কম্পিত হল দেবলোক। ইন্দ্রের ছলনায় বসন্ত বাতাসে যেন কামনার অস্থির আবাহন। সামনে এসে দাঁড়ালেন অলোকসামান্য রূপসী অপ্সরা রম্ভা। অনিন্দিত সেই রূপের লীলাচঞ্চল আর্তি বাধা দিল সাধনায়। ধ্যানের আসন টলে উঠল। কিন্তু এবার সন্দেহ হল, এ নিশ্চয়ই ইন্দ্রের কাজ। ক্রুদ্ধ হয়ে অভিশাপ দিলেন রম্ভাকে, পাষাণমূর্তিতে পরিণত হল সে।
কিন্তু আবার স্খলন হল বিশ্বামিত্রের। এবার কামে নয়, ক্রোধে। রম্ভার প্রতি অভিশাপ নষ্ট করে দিল তপঃফল। অনুতপ্ত হলেন তিনি। মনে মনে স্থির করলেন, আর ক্রুদ্ধ হবেন না, অভিশাপ দেবেন না কাউকে। কঠোর প্রতিজ্ঞা করলেন, ব্রাহ্মণত্ব যতদিন না তিনি অর্জন করছেন, ততদিন তিনি রুদ্ধনিঃশ্বাসে একাসনে বসে মগ্ন থাকবেন সাধনায়। এমন কঠোর সংকল্প বৃথা হওয়ার নয়। উত্তর দিক থেকে এবার এলেন পূর্বদিকে। বজ্র নামক স্থানে অচল অটল পর্বতের মতো স্থির সাধক মগ্ন হয়ে রইলেন সাধনায়। কেটে গেল সহস্র বছর। দেবতারা এবার বুঝলেন, ঋষির প্রশান্তচিত্তে আর নেই কাম-ক্রোধের তাড়না। ষড়রিপু জয় করে তিনি আজ জিতেন্দ্রিয় পুরুষ। তপঃসিদ্ধি করায়ত্ত তাঁর। বহু প্রলোভনের পরীক্ষায় আজ উত্তীর্ণ তিনি। লোভে, ক্রোধে, কামে তাঁকে কিছুতেই বিচলিত করতে পারলেন না দেবর্ষি, গন্ধর্বরা।

সমস্ত দেবতাদের নিয়ে ব্রহ্মা এলেন বিশ্বামিত্রের কাছে। তাঁকে ব্রহ্মর্ষি পদে বরণ করে নিলেন সকলে। ধন্য হলেন বিশ্বামিত্র। দীর্ঘ সাধনপথের উত্থান-পতন অতিক্রম করে আজ তিনি ব্রহ্মশক্তির অধিকারী। কেটে গিয়েছে তাঁর দম্ভের, ক্রোধের, কামনার অন্ধাকার। ব্রহ্মবিদ্যার আলোয় আলোকিত আজ তাঁর হৃদয়। ব্রহ্মার কাছে আজ প্রার্থনা তাঁর, সমগ্র বেদবিদ্যা আয়ত্তে আসুক তাঁর, আর বশিষ্ঠও তাঁকে ব্রাহ্মণ বলে স্বীকার করুন।
এলেন বশিষ্ঠ। স্বীকার করলেন বিশ্বামিত্রের ব্রাহ্মণত্ব। মৈত্রী হল দুই ব্রহ্মর্ষির। সৃষ্টি হল নতুন ইতিহাস।—চলবে

ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে
*শাশ্বতী রামায়ণী (Saswati Ramayani – Ramayana) : ড. অমৃতা ঘোষ (Amrita Ghosh) সংস্কৃতের অধ্যাপিকা, আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল মহাবিদ্যালয়। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সম্পাদিত গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর বেশ কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ।

Skip to content