জমে যাওয়া লেক গ্যালেনার ওপরে সূর্যাস্ত।
যাই হোক। একবার নতুন এবং মনের মতো কিছু করার মতো পেলে আমি আর ঘরে থাকতে পারি না। কাজেই পরের দিন থেকে মাঝে মাঝেই চললাম কাছাকাছি হ্রদগুলোতে। বেশ হেঁটে চলে বেড়িয়ে, হ্রদের ধরে কোনও রেস্তোরাঁয় বসে খাবার খেয়ে, আবার চলে আসতাম। আমার বাড়ির সবচেয়ে কাছে লেক গ্যালেনা। অবস্থান সূত্রে হ্রদটি অবশ্য ইলিনয় প্রদেশে পড়ছে। কিন্তু আমার বাড়ি থেকে মাত্র আধ ঘণ্টার দূরত্ব। হ্রদের ধারে বেশ কিছু বসার জায়গা। গ্রীষ্মকালে বা শরতের সময় সেখানে আমি মাঝে মাঝেই আসি। সেখানে মিঠে রোদে খোলা হাওয়ায় বসে লেখালেখি করার জন্য। তবে শীতের সময় আর সে উপায় নেই। তাই হ্রদের ওপর একটু ঘোরাঘুরি করেই ফিরে আসতে হয়।
লেক সুপিরিয়রের পথে।
এরপর একদিন ঠিক হল যাব লেক সুপিরিয়র, অ্যাশল্যান্ড শহরে। লেক সুপিরিয়র শুধু পঞ্চহ্রদ এলাকারই নয়, পৃথিবীর বৃহত্তম সুপেয় জলের হ্রদ। সুপেয় মানে অবশ্য পানোপযোগী বলা যায় না বরং বলা ভালো অলবণাক্ত বা মিঠে জলের হ্রদ। আমার দুই বন্ধু থাকে স্টিভেন্সপয়েন্ট শহরে। তারা দু’জনেই ইউনিভার্সিটি অফ উইসকনসিনেরই অন্য দুটি ক্যাম্পাসে অধ্যাপক। আমরা সকলেই একই বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গেই পিএইচডি করে সকলে এই অঞ্চলেই এসেছি অধ্যাপনার চাকরি নিয়ে। আমার বন্ধুদ্বয় অবশ্য সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। তাদের সঙ্গে একসঙ্গেই যাওয়া স্থির হল। আমার বাড়ি অর্থাৎ প্লেটভিল থেকে স্টিভেন্সপয়েন্ট উত্তরে প্রায় ১৭০ মাইল। সেখান থেকে লেক সুপিরিয়র অর্থাৎ অ্যাশল্যান্ড শহর আরও ২০০ মাইল উত্তরে। কথামতো আগের দিন রাতে পৌঁছে গেলাম তাদের বাড়ি। তাদের আবার রান্নার শখ। তাই রাত্রিবেলায় পেটপুরে খেয়ে ঠিক হল সকালে যখন ঘুম ভাঙবে তখনই বেরোনো হবে।
সকাল সকালই ঘুম ভাঙল। সারা রাস্তা আমার বন্ধুরাই গাড়ি চালাল। আমি শুধু পেছনে বসে প্রকৃতি উপভোগ করলাম। এদিকে রাস্তা খুব সুন্দর। কালো মসৃণ সোজা রাস্তা চলে গিয়েছে যতদূর তাকানো যায়। আর তার ধারে ধারে ধবধবে সাদা বরফ। আর তার ওপরে সদ্য পাতা ঝরে যাওয়া গাছের ‘পাঁজর ফাটানো হাসি’। মাঝে মাঝে ওরই মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে কিছু চিরহরিৎ কনিফার। তার পাতায় লেগে আছে সাদা সাদা বরফ। মধ্যেমধ্যে আবার গুটিকয়েক গাছে রয়ে গিয়েছে ফল কালারের অবশিষ্ট লাল হলুদের কিছু ছিটে। বরফ ঝরছে সেখান থেকেও।
শীতকালে জমে যাওয়া লেক সুপিরিয়রের ওপরে আমাদের হুড়োহুড়ি। একটু পেছনে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে হ্রদের ওপরে গাড়িও চলে যায়।
সুপিরিয়রে পৌঁছে দেখি সে এক কাণ্ড। প্রথমে তো আমরা ঠিকই করতে পারছিলাম না যে কোনখান থেকে হ্রদ শুরু আর কোনখানেই বা পাড় আর কথায়ই বা গাড়ি রাখার জায়গা। সবটাই বরফ জমে একই রকম হয়ে আছে। ওরই মধ্যে যেখানে কয়েকটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে সেখানে গাড়িটা দাঁড় করানো গেল। তারপর আমরা নেমে পড়লাম হ্রদে। দেখলাম বরফের ওপরে গাছ বসিয়ে রাস্তা করা আছে। সেই রাস্তা ধরে হেঁটে গেলে পৌঁছে যাওয়া যাবে এপোস্টল আইল্যান্ড।
শীতকালে জমে যাওয়া লেক সুপিরিয়র।
তবে দেখে যা মনে হল সে অন্ততপক্ষে পাঁচ-ছ মাইল হাঁটাপথ। অন্তত যতদূর চোখ যায় ততদূর কিছু চোখে পড়ছিল না। তারপর মাথার ওপরে বেশ রোদ। সকাল থেকে গাড়ি চালিয়ে এসে আমাদের কারওই সে রকম হাঁটার ইচ্ছা ছিল না। তাই আমরা খানিকটা হেঁটে গিয়ে সেখানেই বেশ বাচ্চাদের মতো হুড়োহুড়ি লাফালাফি করতে লাগলাম। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই এমন জায়গায় এলে বয়সের খেয়াল ছিল না কারওই। আর থাকার কোনও প্রয়োজনও তেমন বোধ করছিলাম না। এমন দিন তো আর রোজ আসে না। প্রতিদিন যাদের পড়াই একদিনের জন্য তাদের বয়সে ফিরে যেতে ক্ষতি কী! তবে আশপাশে যদি কোনও ছাত্রছাত্রী থাকত তাহলে নিশ্চয়ই নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করত সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই।—চলবে
*ড. অর্ঘ্যকুসুম দাস (Arghya Kusum Das) অধ্যাপক ও গবেষক, কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস
*ড. অর্ঘ্যকুসুম দাস (Arghya Kusum Das) অধ্যাপক ও গবেষক, কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস
বাইরে দূরে
লেখা পাঠানোর নিয়ম: এই বিভাগে পাঠকদের সঙ্গে আপনার সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কাহিনি ভাগ করে নিতে পারেন। ভ্রমণ কাহিনি লিখতে হবে ১০০০ শব্দের মধ্যে ইউনিকোড ফরম্যাটে। লেখার সঙ্গে বেশ কিছু ছবি পাঠাতে হবে। চাইলে ভিডিও ক্লিপও পাঠাতে পারেন। ছবি ও ভিডিও ক্লিপ লেখকেরই তোলা হতে হবে। ওয়াটারমার্ক থাকা চলবে না। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com