শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

ত্বকের কিছু রোগের ক্ষেত্রে সচেতনতা খুব জরুরি। কারণ, খুব বাড়াবাড়ি কিছু না হলে অনেকেই চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না। অথচ, সঠিক সময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা শুরু না করলে ত্বকের অসুখও যথেষ্ট সমস্যায় ফেলতে পারে। এখানেই শেষ নয়, চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে, ফেলে রাখলে তা থেকে নানান অসুখ-বিসুখও হতে পারে। যেমন, সোরিয়াসিস। এটি একটি পরিচিত রোগ। অনেক মানুষ ত্বকের এই সমস্যায় বেশ ভোগেন।
 

সোরিয়াসিস ঠিক কী?

সোরিয়াসিস হল একটি দীর্ঘস্থায়ী, অসংক্রামক, অটোইমিউন রোগ, যা ত্বকের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে হয়।
এই রোগে ত্বক গাঢ়, শুষ্ক, চুলকানি এবং আঁশযুক্ত হয়। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে এই জায়গাগুলো লাল বা বেগুনি রঙের হয়ে যায়।
সোরিয়াসিস শরীরের যেকোনও জায়গায় হতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাথার ত্বক, কনুই, হাঁটু, পিঠে দেখা যায়। সোরিয়াসিসের তীব্রতা ছোট, স্থানীয় প্যাচ থেকে সম্পূর্ণ শরীরে হতে পারে। শুকনো ত্বক চুলকে খসে পরার পর সামান্য রক্ত ক্ষরণ হতে পারে। তবে ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্ততে অসংক্রামিত হয় না।
 

সোরিয়াসিস কেন হয়?

পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে সারা বিশ্বে ২-৩% মানুষ সোরিয়াসিসে আক্রান্ত। সোরিয়াসিস জিনগত কারণে বা পরিবারে এর ইতিহাস থাকলেও হতে পারে। তবে এটি প্রজন্মের পর প্রজন্ম নাও হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একজন দাদু এবং নাতি প্রভাবিত হলেও তাঁর কিন্তু সন্তান আক্রান্ত নাও হতে পারেন।
যে বিষয়গুলি সোরিয়াসিসের প্রাদুর্ভাবকে বাড়িয়ে দিতে পারে সেগুলির মধ্যে রয়েছে: কাটা স্থান, অস্ত্রোপচার, কোন সংক্রামক রোগ, মানসিক চাপ কিছু ওষুধের খাওয়া ইত্যাদি।
পরিবেশগত কারণেও সোরিয়াসিসের লক্ষণ বৃদ্ধি হতে পারে। যেমন: শুষ্ক আবহাওয়ায়, ঋতু পরিবর্তনের সময় ইত্যাদি। সোরিয়াসিসের লক্ষণ কয়েক মাস বা কয়েক বছর পর পর চক্রাকারে ফিরে আসতে বা রোগের লক্ষণ বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়।

 

সোরিয়াসিসের প্রকারভেদ

সোরিয়াসিসের প্রধানত পাঁচ ধরনের হয়
প্লেক
গুটাট
ইনভার্স
পাস্টুলার
এরিথ্রোডার্মিক
 

প্লাক সোরিয়াসিস

সোরিয়াসিস ভালগারিস নামেও পরিচিত। প্রায় ৯০% ক্ষেত্রে একে দেখা যায়। এটি সাধারণত ত্বকের উপরে সাদা আঁশ-সহ লাল ছোপ হিসাবে হাজির হয়। শরীরের যে অংশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেগুলি হল হাতের পিছনের অংশ, শিন, নাভির অংশ এবং মাথার ত্বক।
 

গাট্টেট সোরিয়াসিস

এতে ড্রপ-আকৃতির ক্ষত দেখা যায়।
 

পুস্টুলার সোরিয়াসিস

ছোট, অসংক্রামক, পুঁজ-ভরা ফোসকার মতো হয়।
 

ইনভার্স সোরিয়াসিস

ত্বকের ভাঁজে ভাঁজে লাল দাগ তৈরি করে।
 

এরিথ্রোডার্মিক সোরিয়াসিস

যখন ফুসকুড়ি খুব ছড়িয়ে পরে এবং অন্য যেকোনও কিছু থেকে তৈরি হতে পারে।
 

সোরিয়াসিসের অন্যান্য প্রভাব

আঙ্গুল ও পায়ের নখ বিবর্ণ, ছিদ্রযুক্ত, অমসৃণ ও ভঙ্গুর হয়ে যায়।
সোরিয়াটিক আর্থরাইটিস: দীর্ঘদিন সোরিয়াসিসে আক্রান্ত থাকার ফলে অস্থি সন্ধিতে সোরিয়াটিক আর্থরাইটিস নামক বাতের সৃষ্টি হতে পারে, যা হাত-পায়ের ছোট সন্ধি এবং পরবর্তি সময়ে বড় সন্ধিগুলোকে আক্রমণ করে।

 

জানলে ভালো

সোরিয়াসিস ছোঁয়াচে অসুখ নয়। এটি জিনঘটিত একটি রোগ। সে কারণে রোগীর ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে চলার দরকার নেই।
বেশি ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করা উচিত নয়। এক্ষেত্রে গ্লিসারিনযুক্ত সাবান বা বেবি সোপ ব্যবহার করা যেতে পারে। ময়শ্চারাইজ়ার বা নারকেল তেলও উপকারী।
পোশাক ফুলস্লিভ এবং সুতির হওয়াই বাঞ্ছনীয়। সিন্থেটিক জাতীয় পোশাক প্রলে এই সোরিয়াসিসের সমস্যা বাড়ে।
খাওয়াদাওয়ার দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তত দু’ধরনের মরসুমি ফল রাখতে। এক্ষেত্রে ভিটামিন সি জাতীয় ফল খেতে ভালো। বাড়াতে হবে প্রোটিনের পরিমাণও।
এ সবের পাশাপাশি নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জেনে রাখা ভালো, সোরিয়াসিস মোটামুটি সারা জীবনের সঙ্গী।
 

হোমিওপ্যাথিতে সোরিয়াসিসের চিকিৎসায়

সোরিয়াসিস একটি দীর্ঘ মেয়াদি অসুস্থতা। এর থেকে সম্পূর্ণ নিরাময় সময় সাপেক্ষ। হোমিওপ্যাথি একটি ব্যাক্তিভিত্তিক সার্বিক চিকিৎসা পদ্ধতি যা অটোইমিউন রোগে খুব কার্যকরী। এই পরিস্থিতিতে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সোরিয়াসিসের লক্ষণগুলির তীব্রতা কমাতে এবং রোগীকে প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে এক বিশেষ ভূমিকা নিতে পারে।
সমীক্ষায় আরও দেখা গিয়েছে, অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে সঠিক হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করালে সোরিয়াসিসের পুনরায় ফিরে আসাকে প্রতিহত করা যায়। এমনকি, সোরিয়াসিস সম্পূর্ণ নিরাময় করতে সক্ষম।
সোরিয়াসিসের হোমিওপ্যাথি ওষুধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে রোগীর রোগের ইতিহাস বিস্তৃতভাবে লিপিবদ্ধ করার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফলে লক্ষণ সাদৃশ্যের উপর ভিত্তি করে রোগীর জন্য নির্দিষ্ট ওষুধ নির্বাচন করা হয়।
কিছু হোমিওপ্যাথি ওষুধ আছে যা সোরিয়াসিসে খুবই কার্যকর, যেমন: আর্সেনিক এলবাম, ক্যালি মিউর, গ্রাফাইটিস, পেট্রোলিয়াম, সালফার, সোরাইনাম, থুজা, নেট্রাম সালফ ইত্যাদি। তবে এই সব ওষুধ অবশ্যেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে, না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

যোগাযোগ: ৭০০৫৩৫৮৯১৬


Skip to content