ছোটরা অনেক সময়ই মানসিক চাপের মধ্যে থাকে। সেটা হতে পারে পরীক্ষায় মা-বাবা বা শিক্ষকের প্রত্যাশা মতো ফল না করার জন্য অথবা দৈনন্দিন পড়াশোনা রুটিন মাফিক তৈরি করতে না পারার চাপও হতে পারে। কীভাবে বুঝবেন যে আপনার বাচ্চা মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছে?
মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছে কি না বোঝার উপায়
● বাচ্চা ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখবে।
● পড়া ঠিকমতো তৈরি করতে না পারলে চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ পরিলক্ষিত হবে।
● বাড়িতে অন্য কেউ কোনও বড় রোগে আক্রান্ত হলে বা মারা গেলে বাচ্চার চোখে মুখে অবসাদের ছাপ পড়বে।
● বাচ্চা যদি ঘন ঘন দুঃস্বপ্ন দেখে তাহলে বোঝার চেষ্টা করুন বাচ্চার মনের মধ্যে জমে থাকা ভয়টা কী?
● বাচ্চা যদি মানসিক ভাবে অশান্তিতে থাকে, তাহলে তার খাওয়া দাওয়া কমে যাবে। কখনও কখনও খাওয়া একেবারে ছেড়েও দিতে পারে।
● বাচ্চা কোনও পরিস্থিতি সহজে মেনে নিতে না পারলে অনেক সময় আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে। আবার কারও সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করেও দিতে পারে। তার জন্য রাগারাগি না করে মানসিক চাপের কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে হবে।
কোন বয়সে শিশুদের স্কুলে পাঠানো উচিত?
আগেকার দিনে শিশুদের পাঁচ থেকে ছয় বছরের আগে স্কুলে ভর্তি করা হত না। কিন্তু আজকাল বাচ্চার বয়স দু’ থেকে তিন বছর হলেই মা-বাবা শিশুকে একটা নির্দিষ্ট নিয়ম কানুনের মধ্যে বেঁধে দেওয়ার জন্য স্কুলে ভর্তি করে দেন। এখন প্রশ্ন হল শিশুদের কী পাঁচ বছর বয়সের স্কুলে ভর্তি করা উচিত?
শিশুদের বিকাশকে তিন ভাগে ভাগ করা হয় — এক: মানসিক বিকাশ, দুই: নিউরো লজিক্যাল বা নার্ভগত বিকাশ এবং তিন: পারস্পরিক যোগসূত্র বোঝানোর ক্ষমতা। শিশুর বয়স তিন বছর হওয়ার পর পরই এই তিন রকমের বিকাশের ক্ষমতা প্রায় শীর্ষে পৌঁছয়। তাই এটাই শিশুর স্কুলে ভর্তির আদর্শ সময়। যখন সে স্কুলে একটা নির্দিষ্ট নিয়ম কানুনের মধ্যে অনেক বেশি জিনিস শিখতে পারে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, যে সব বাচ্চারা তাড়াতাড়ি স্কুলে ভর্তি হয়, তারা একটু উঁচু ক্লাসে উঠলে দেরিতে ভর্তি হওয়া শিশুদের তুলনায় তাড়াতাড়ি সবকিছু শিখে নেয়। গবেষণায় আরও দেখা গিয়েছে যে- পাঁচ বছরে স্কুলে ভর্তি হওয়া বাচ্চারা একটু বেশি বাধ্য, মনোযোগী ও সুশৃঙ্খল পরায়ণ হয়।
স্কুলে ভর্তির আগে কয়েকটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিন
শিশুকে স্কুলে ভর্তি করার আগে কিছু প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হবে, যাতে স্কুলে এসে সব কিছুর সঙ্গেই মানিয়ে চলতে পারে—
● টয়লেট ট্রেনিং।
● কিছুটা সময়ের জন্য হলেও শিশু যাতে চুপ করে থাকতে পারে তা শেখাতে হবে।
● আপনার শিশু যেন অন্তত দু’ থেকে তিন ঘন্টা মা-বাবাকে ছেড়ে দূরে থাকতে পারে সেটা অভ্যাস করাতে হবে।
● নিজের কথা অন্যকে বোঝাতে পারে বা অন্যের কথা যেন ও নিজে বুঝতে পারে— সে বিষয়ে নজর দিতে হবে।
যেসব বাচ্চা কথা শোনে না তাদের বাগে আনার টিপস
● কেন বড়দের কথা শোনা উচিত, সেটা বাচ্চাকে বুঝিয়ে বলুন। বাচ্চার সঙ্গে তাদের মতো করে মিশে বন্ধুর মতো আচরণ করতে হবে। বকাঝকা করলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
● শিশুর বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু ব্যবহারগত পরিবর্তন আসে, মা-বাবাকে সেটা মেনে নিয়ে সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে।
● বাচ্চাদের বড়দের কথা শোনার অভ্যাস মোটামুটি ছয় বছর বয়স থেকে শুরু হয়। তাই তার আগের কার্যকলাপকে বন্ধুর মতো মেনে নিতে হবে।
● বাড়ির পরিবেশ ও মা বাবা সম্পর্কের উপর বাচ্চার বাধ্য হওয়ার ব্যাপারটা নির্ভর করে।
● যে কোন পরিস্থিতিতে সন্তানকে বকাবকির পরিবর্তে তাকে সময় দিয়ে ভালো মন্দর তফাৎটা বোঝাতে হবে।
● শিশুর সঙ্গে কথা বলার সময় বাবা-মায়ের চোখাচোখি অর্থাৎ ‘আই কন্টাক্ট’ খুব জরুরি। এর ফলে মা-বাবার প্রতি শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস তৈরি হয়।