ছবি প্রতীকী
জানলে ভালো
আমরা যে কার্বোহাইড্রেট অর্থাৎ শর্করা খাই তা রক্তে গিয়ে গ্লুকোজে পরিণত হচ্ছে। অন্যদিকে, ফ্যাট আবার গ্লুকোজকে ব্যবহার করে না। স্বাভাবিক ভাবেই শরীরে ফ্যাট থাকলে গ্লুকোজের ব্যবহার কমে যায়। তাহলে সমাধান? এক্ষেত্রে আমাদের শরীরের মাংসপেশির ব্যবহার যতটা সম্ভব বাড়াতে হবে। এতে মাংসপেশি রক্ত থেকে গ্লুকোজ টেনে বা গ্লুকোজ খেয়ে নিয়ে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে দেবে। ফলস্বরূপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে ডায়াবেটিস।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মের মাধ্যমে তো মাংসপেশি এমনিই গ্লুকোজ খায়। জেনে রাখা ভালো, সাধারণ ব্যক্তির সঙ্গে ডায়াবিটিস রোগীদের একটা পার্থক্য আছে। যখন আমরা কোনও কাজ করি না অর্থাৎ বিশ্রামে নিই তখন যে মাংসপেশি রক্ত থেকে গ্লুকোজ শুষে বা খেয়ে নেয় সেটা সম্পূর্ণ ভাবে ইনসুলিনের উপর নির্ভরশীল। যাঁর ডায়াবিটিস নেই অর্থাৎ শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা স্বাভাবিক, একমাত্র সেই সব ব্যক্তি কোনও কাজ না করলেও মাংসপেশি রক্ত থেকে গ্লুকোজ শুষে নিতে পারে। আর যে ব্যক্তির ডায়াবিটিস আছে তাঁর ক্ষেত্রে এমন হবে না। কারণ তাঁর রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা কম। পাশাপাশি মাংসপেশি যেহেতু ইনসুলিনের উপর নির্ভরশীল রক্ত গ্লুকোজ শোষার জন্য, ফলে বিশ্রামে থাকলে মাংসপেশি গ্লুকোজ টেনে নিতে সক্ষম হবে না। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যাবে।
কী কী শরীরচর্চা করা যেতে পারে
মাংসপেশির অদ্ভুত একটা নিয়ম আছে। যখন আমরা শরীরচর্চা করছি অর্থাৎ মাংসপেশি সচল থাকছে তখন কিন্তু রক্ত থেকে গ্লুকোজ শুষে নেওয়া ইনসুলিনের উপর নির্ভরশীল নয়। ফলে শরীরচর্চা করার সময় ডায়াবিটিস রোগীর পাশাপাশি সাধারণ সুস্থ ব্যক্তিরও মাংসপেশি রক্ত থেকে গ্লুকোজ শুষে নেবে। সেই জন্যই বলা হয় ডায়াবিটিস রোগীদের ক্ষেত্রে নিয়মিত শরীরচর্চা করা খুবই জরুরি। করোনার কারণে বা ব্যস্ততার জন্য যদি বাইরে হাঁটতে যেতে না পারেন, তাহলে প্রতি বার খাবার পর অন্তত ১৫ মিনিট করে হাঁটুন। যদি রোজ সকালে ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা হাঁটতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়। ডায়াবিটিসের জন্য আর একটা খুব ভালো শরীরচর্চা হল—সাঁতার কাটা। শুধু ডায়াবিটিস এর জন্য নয়, গাঁটে ব্যথা, কোমরে ব্যথাও কমতে পারে নিয়মিত সাঁতার কাটলে। পাশাপাশি বয়স্ক ব্যক্তিরা যারা সাঁতার কাটতে পারবে না তাঁরা খাবার পর অন্তত ৩০ মিনিট করে হাঁটার চেষ্টা করুন।
মনে রাখবেন, করোনা পরিস্থিতিতে মাস্ক পরে বেশি জোরে হাঁটবেন না। যাঁরা কোমর, পিঠ, হাত, পায়ে যন্ত্রণার জন্য হাঁটতে পারেন না তাঁরা বসে বসেই হাত, পা, কোমর বিভিন্ন ভঙ্গিতে নাড়িয়ে ব্যায়াম করে মাংসপেশি সচল রাখুন। যাঁরা জিমে যেতে সক্ষম তাঁরা জিমে গিয়ে ওয়েট ট্রেনিং করুন, যাতে মাংসপেশি সচল থাকে। ডায়াবিটিসের ক্ষেত্রে শরীরচর্চা করার প্রধান কারণ, ফ্যাট কমিয়ে ফেলা এবং মাসলের কার্যক্ষমতা বাড়ানো। মাংসপেশির কর্মক্ষমতা যত বাড়াতে পারবেন, ততই মাংসপেশি রক্ত থেকে গ্লুকোজ শুষে নিতে সক্ষম হবে। ফ্যাটও কমবে। আমাদের অগ্নাশয়ের অবশিষ্ট ইনসুলিনও কাজ করতে সাহায্য করবে। এর ফলে আমরা সহজেই ডায়াবিটিসের হাত থেকে রেহাই পেতে পারবো।
আশাকরি আপনারা বুঝতে পেরেছেন ডায়াবিটিসের সমস্যা থাকলে হাঁটার গুরুত্ব কতটা। আমরা সেই জন্যই ডায়াবিটিস রোগীদের সব সময়ই বলে থাকি, শরীরচর্চা না করে ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা আর পড়াশুনো না করে পরীক্ষা দিতে যাওয়া অনেকটা একই রকম।
ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে
যোগাযোগ: ৯৮৩১৬৭১৫২৫