বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

আমরা গত পর্বে আলোচনা করেছিলাম পেটের নীচের অংশ অর্থাৎ তলপেটে ব্যথা নিয়ে। আজকের পর্বে বয়স্কদের পেটে ব্যথার কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করব। যাঁদের কোষ্ঠকাঠিন্য বা ক্রমাগত পায়খানা শক্ত হয় অর্থাৎ পেট পরিষ্কার না হওয়ার কারণেও তলপেটের বাঁদিকে ব্যথা হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় কোষ্ঠকাঠিন্য হতে হতে বৃহদন্ত্র ক্রমশ বড় হয়ে গিয়ে সেখানে প্রদাহ শুরু হয়। একে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় ডাইভারটিকুলাইটিস বলা হয়। সেখানে জীবাণুও সংক্রমণ হতে পারে। এই ডাইভারটিকুলাইটিস থেকে প্রধানত তলপেটের বাঁদিকে ব্যথা হয়। তবে কখনও কখনও ডানদিকেও ব্যথা হতে পারে। আবার কারও কারও অ্যাপেনডিক্সের জায়গায়ও ব্যথা হয়।

বিশেষত যাঁদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে এবং পায়খানা পরিষ্কার হয় না তাঁদের এই ধরনের সমস্যা হতে পারে। যদিও এই ধরনের সমস্যা বয়স্কদেরই বেশি হয়। বয়স্কদের হঠাৎ করে পায়খানার কোনও পরিবর্তন হচ্ছে কি না, কোষ্ঠকাঠিন্য হচ্ছে কি না, পায়খানার সঙ্গে রক্তপাত হচ্ছে কি না বা ডায়েরিয়ার মতো সমস্যা হলেই সতর্ক হতে হবে। এ সব ক্ষেত্রে অন্ত্র বা কলোনের ভিতরে ক্যানসার হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। বয়স্ক রোগীদের পেটের মাঝখানে বা তলপেটে আরও একটা কারণে ব্যথা হতে পারে। যেমন অন্ত্রের চতুর্দিকে যে রক্ত সঞ্চালনকারী ধমনী থাকে যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘মেসেন্টেরিক ব্লাড ভেসেল’ বলা হয় সেগুলো অনেক সময় সরু হয়ে যায়। এক্ষেত্রে অনেকটা হার্টের করোনারি আর্টারি ডিজিজের মতো ‘মেসেন্টেরিক ভাস্কুলার ইস্কেমিয়া’ হয়। অর্থাৎ অন্ত্রের রক্ত সঞ্চালনকারী ধমনীগুলো সরু হয়ে যাওয়ায় সেখানে ঠিক মতো রক্ত পৌঁছতে পারে না। এই সমস্যার প্রাথমিক উপসর্গ হল, খাওয়ার পর পরই তলপেটে ব্যথা করবে। নাভির চতুর্দিকেও ব্যথা করতে পারে। কারও হার্টের সমস্যা থাকলে বুঝতে হবে, ‘মেসেন্টেরিক ভাস্কুলার ইস্কেমিয়া’ হচ্ছে। এক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এ সব ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু না করলে অন্ত্র পচেও যেতে পারে। অনেক সময় অন্ত্র বাদও দিতে হয়। তবে সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে এই সমস্যা এড়ানো যায়।

অনেক সময় অল্প বয়সীদের তলপেটে বা নাভির চতুর্দিকে ব্যথা হয়। কারও কারও ডায়েরিয়া হলে রক্তপাতও হয়। এই সমস্যা বিদেশে বেশি দেখা গেলেও, আমাদের দেশেও কারও কারও ক্ষেত্রে দেখা যায়। একে আমরা ‘ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজ’ বলি। এর দুটি ভাগ আছে, একটি ‘আলসারাইটিজ কোলাইটিজ’, অন্যটি ‘ক্রোন ডিজিজ’।
 

পেট ব্যথার সঠিক কারণ জানার কয়েকটি পরীক্ষা

যেহেতু বহু কারণে পেটে ব্যথা হয়, তাই সঠিক চিকিৎসার জন্য উপসর্গ অনুযায়ী কিছু শারীরিক পরীক্ষা করে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এতে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়।
 

পেটের ডানদিকে বা গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা

পাকস্থলীতে ঘা বা গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা হলে এন্ডোস্কোপি করতে হবে। অর্থাৎ মুখ দিয়ে একটি বিশেষ ধরনের নল ঢুকিয়ে ক্যামেরার সাহায্যে দেখা হয় পাকস্থলী ঠিক আছে কি না।
 

পেটের ডানদিকে বা গলব্লাডারে স্টোন

এক্ষেত্রে পেটে আলট্রাসনোগ্রাফি করতে হবে। এই পরীক্ষা করলে গলব্লাডার, প্যানক্রিয়াসের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানা সম্ভব। অনেক সময় নিয়মিত মদ্যপান করার জন্য পেটের মাঝখানে কারও কারও ব্যথা হলে গ্যাস্ট্রাইটিস ছাড়াও প্যানক্রিয়াটাইটিসের কথা ভাবতে হবে। প্যানক্রিয়াটাইটিসের ব্যথার বিশেষত হচ্ছে ব্যথা পিছনের দিকে অর্থাৎ শিরদাঁড়ার দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এর অসহ্য ব্যথা চলতে থাকে, সহজে কমে না। সুতরাং আলট্রাসাউন্ড আমাদের একটা আভাস দিতে পারে গলব্লাডারে স্টোন হচ্ছে কি না বা প্যানক্রিয়াটাইটিসের মতো কোনও সমস্যা দেখা দিচ্ছে কিনা। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, প্যানক্রিয়াস কতটা ক্ষতি হয়েছে তা বুঝতে গেলে আমাদের সিটিস্ক্যান করতে হবে।
 

কিডনিতে পাথর

কিডনিতে পাথর হয়েছে কি না জানার জন্য প্রাথমিক পরীক্ষা হচ্ছে আলট্রাসনোগ্রাফি। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে আলট্রাসনোগ্রাফি করলেও স্টোন বোঝা যায় না। সেক্ষেত্রে সিটিস্ক্যান করতে হবে।
 

অ্যাপেনডিক্স

অ্যাপেনডিক্সের ক্ষেত্রে আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করে বোঝা যায় না। এক্ষেত্রেও সিটিস্ক্যান করতে হবে।
 

ডাইভারটিকুলাইটিস

দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার ফলে যে প্রদাহ হয় সেক্ষেত্রেও সিটিস্ক্যান করে দেখতে হবে। সিটিস্ক্যান করলে অন্ত্রে ক্যানসার হচ্ছে কিনা সে সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু অন্ত্রে ক্যানসারের লক্ষণ থাকলে এন্ডোস্কোপি মতো কোলনোস্কোপি পরীক্ষা করতে হবে।
 

একটোপিক প্রেগনেন্সি

একটোপিক প্রেগনেন্সি রাপচার বা ওভারিয়ান সিস্ট রাপচার হচ্ছে কি না তা দেখার জন্য আলট্রাসনোগ্রাফি করা যায়। তবে ইউটেরাসে বা ওভারি ক্যানসার হচ্ছে কি না জানার জন্য সিটিস্ক্যান করাই সব থেকে বুদ্ধিমানের কাজ।
 

মেসেন্টেরিক ভাস্কুলার ইস্কেমিয়া

অন্ত্রের চতুর্দিকের রক্ত সঞ্চালনকারী ধমনীগুলোর পরিস্থিতি জানতে আমারা যেমন হার্টের রক্ত সঞ্চালনকারী ধমনী সরু হয়ে যাচ্ছে কি না দেখার জন্য করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাফি করি, এক্ষেত্রে মেসেন্টেরিক ভাস্কুলার অ্যাঞ্জিওগ্রাফি পরীক্ষা করে দেখতে পারি। এই পরীক্ষার মাধ্যমে অন্ত্রের চতুর্দিকের রক্ত সঞ্চালনকারী ধমনী সম্বন্ধে একটা পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে। পাশাপাশি পায়খানার সঙ্গে কোনও জীবাণু বা ক্রিমি আসছে কি না তা দেখার জন্যও অনেক সময় স্টুল পরীক্ষা করে দেখা হয়।

এই পরীক্ষাগুলি করলে নির্দিষ্ট ভাবে বোঝা যাবে ঠিক কী কারণে পেটে ব্যথা হচ্ছে। ফলে রোগ নির্ণয় হয়ে গেলে সঠিক চিকিৎসাও দ্রুত শুরু করা সম্ভব। তবে কোনও পরীক্ষাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া করা উচিত নয়।

ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

যোগাযোগ: ৯৮৩১৬৭১৫২৫


Skip to content