বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।

প্রথম পর্বের আলোচনাতেই বলেছি শিশুদের মতো বয়স্কদেরও টিকার ভীষণ গুরুত্ব রয়েছে। প্রবীণ মানুষেরা একাধিক রোগে ভোগেন এবং তাঁদের প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাও কমতে থাকে। ফলে তাঁরা খুব সহজেই বিভিন্ন সংক্রমণে ভুক্তভোগী হন। অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলো মারাত্মক আকার ধারণ করে। এমনকী অনেক সময় মৃত্যুর কারণও হয়ে দাঁড়ায়। তবে এই সমস্ত সংক্রমণের অনেকগুলোই প্রতিরোধ করা সম্ভবপর যদি সঠিক সময়ে টিকা নেওয়া যায়। সেকথাও আমি আগের আলোচনায় বলেছি। আবার এর সঙ্গে এটাও বলে রাখা দরকার যে, টিকা নিলেই সেই রোগটি আর হবে না তার কিন্তু ১০০% গ্যারান্টি নেই। প্রতিটি টিকাই (কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে) ৭০% প্রতিরোধ দেয়। কিন্তু টিকা নিয়ে থাকলে দেখা গিয়েছে যে, ক্ষতিকারক ক্ষমতা অনেকটাই হ্রাস পায়। আমরা করোনার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ভাবে সেটা লক্ষ্য করেছি। যাঁরা করোনার দুটি টিকা নিয়েছেন তাঁদের ক্ষেত্রে করোনা হলেও খুব সাধারণ উপসর্গ হয়েই তা সেরে গিয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে আমাদের সংস্থা ‘বাঁচবো’-এর মাধ্যমে বহু প্রবীণ মানুষকে হোম আইসেলেশনে রেখে চিকিৎসা করেছি। ব্যতিক্রম কিছু ঘটনা ঘটেছে যা সংখ্যায় অতি নগন্য।

বুস্টার ডোজ

প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক করোনার ‘প্রিকশোনারি’ ডোজ নিয়ে। যাঁদের কোভিশিল্ড-এর দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া হয়ে গিয়েছে তাঁদের ক্ষেত্রে ৩৯ সপ্তাহের পর তাঁরা বুস্টার বা প্রিকশোনারি ডোজ নিতে পারবেন। কিন্তু এর মধ্যে যদি কারও করোনা হয়ে থাকে তাঁরা করোনা থেকে সেরে ওঠার তিন মাস পর এই বুস্টার ডোজ নিতে পারবেন। প্রথম দুটি ডোজে কিছু প্রতিক্রিয়া না হলে এক্ষেত্রেও কিছু হবে না এটা ১০০% নিশ্চিত। জ্বর বা ইনফেকশন হয়ে থাকলে তার দু’ সপ্তাহ পর টিকা নিতে সাধারণত কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু আমি বলবো, এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আরও একটি ব্যাপারে অনেকের দ্বিধাবোধ রয়েছে যে, করোনার টিকা নেওয়ার কতদিন পর অন্য টিকা নেওয়া যাবে? এর উত্তর হল, সাধারণত কোনও বাধা নিষেধ না থাকলে ১৪ দিন পর টিকা নেওয়া যাবে।

বয়স্কদের দুটি জরুরি টিকা

বয়স্কদের ক্ষেত্রে মূলত দুটি টিকা খুব জরুরি। একটি ইনফ্লুয়েঞ্জা, আর অন্যটি হল নিউমোকক্কাল টিকা। ৬৫ বছর বা বেশিদের জন্য বছরে একবার ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা IIV বা RIV দিতে হবে। এর মাধ্যমে ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধ করা যায়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই সাধারণ সমস্যা থেকে কিন্তু অনেক সময় জটিল সমস্যার আকার ধারণ করতে পারে। সাধারণত টিকা নেওয়ার জন্য সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর এই সময়টাই উপযুক্ত। তবে অন্য সময়ও নেওয়া যেতে পারে। এই টিকা প্রতিবছরই নিতে হবে। কোনও বছর না নিলে সেই বছরের জন্য কোনও প্রতিরোধ থাকবে না।
এছাড়াও একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হল নিউমোক্কাল টিকা। এটি দু’ধরনের নিউমোকক্কাল কনজুগেটেড টিকা PCV ১৩ এবং নিউমোকক্কাল পলি স্যাকারাইড টিকা PCV ২৩। যদি আগে না দেওয়া থাকে তাহলে প্রথমে PCV ১৩ দিয়ে তার এক বছরের মধ্যে PCV ২৩ নিতে হবে। যদি কেউ PCV ২৩ নিয়ে থাকেন কিন্তু PCV ১৩ নেওয়া হয়নি, তাহলে এক বছরের মধ্যে নিতে হবে। তবে এই বিষয়ে কোনও দ্বিধাবোধ থাকলে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এই টিকা মারণব্যাধি নিউমোনিয়া থেকে প্রতিরোধ গড়তে সাহায্য করে। প্রবীণদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বা মৃত্যুর অন্যতম মূল কারণ এই নিউমোনিয়া। পরিসংখ্যান বলছে, যেসব প্রবীণদের নিউমোকক্কাল টিকা নেওয়া নেওয়া হয়েছিল, তাঁদের ক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণ এবং করোনার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হার ৩০% কম। এটিও কিন্তু একটি বড় যুক্তি এই টিকা নেওয়ার জন্য।

অন্যান্য টিকা

হেপাটাইটিস-এ এবং বি, এমএমআর, মেনিনগোকক্কাল, জস্টার ভাইরাস টিকা, হিউম্যান প্যাপিলোমা টিকা ইত্যাদি প্রবীণদের দেওয়া যায়। কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে এগুলো জরুরি। চিকিৎসকরাই এ বিষয়ে সঠিক আপনাকে পরামর্শ দিতে পারবেন।

লেখক: কর্ণধার ‘বাঁচবো’, সহ সম্পাদক জেরিয়াট্রিক সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া, পশ্চিমবঙ্গ শাখা৷ উপদেষ্টা, প্রোটেক্ট দ্যা ওয়ারিয়ার্স। যোগাযোগ : ‘বাঁচবো’, ফোন : ৯৯০৩৩৮৮৫৫৬


Skip to content