শুক্রবার ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫


হেথা হতে যাও পুরাতন, হেথায় নূতন খেলা আরম্ভ হয়েছে।

‘নিশি অবসানপ্রায়, ওই পুরাতন
বর্ষ হয় গত।
আমি আজি ধূলিতলে এ জীর্ণ জীবন
করিলাম নত।’


সৌর বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বছরের প্রথম মাস হিসেবে গণ্য করা হয় বৈশাখকে। চক্রাকারে আমাদের ঋতুসমূহের পরিবর্তন হয়। বছরের শেষদিন চড়ক নামই সেই বর্ষশেষ ও বর্ষবরণের ইঙ্গিত দেয়। বৈশাখ আসে নতুনের ডাক নিয়ে। নতুনকে বরণ করার জন্য আমরা সকলেই উদগ্রীব হয়ে থাকি। অনেকেই মনে করেন বাঙালিদের কাছে নববর্ষ মানে শুধুই নতুন আর্থিক বছরের সূচনা, ব্যবসায়িক লেনদেন ও খাওয়াদাওয়া। কিন্তু শুধু কি তাই? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয় ‘সত্য আলোক ও অমৃতের জন্য আমরা করপুট করিয়া দাঁড়াইয়াছি।’ এই সত্য, আলোক আমাদের অমৃতলোকে নিয়ে যাওয়ার বার্তাবহক। সমস্ত গ্লানি, দ্বিধা, দ্বন্দ্ব মুছে দিয়ে আমাদের ভেতরে ভেতরে উদ্ভাসিত হওয়ার বার্তা এনে দেয় এই নতুন বছর। আমরা কামনা করে থাকি ‘মধুবাতা ঋতায়তে মধু ক্ষরন্তি সিন্ধবঃ’।

অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগে এই নববর্ষ পালনের রীতি কবে থেকে চলে আসছে? এ নিয়ে যদিও নানা মতানৈক্য আছে। আকবরের সময় থেকেই পয়লা বৈশাখ উদযাপন শুরু হয়েছিল। আবার কেউ বলেন নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর সময় থেকে পুণ্যাহ নাম দিয়ে এই নববর্ষের প্রথা চলে আসছে আবার কেউবা বলেন কবি ঈশ্বর গুপ্ত প্রথম এই প্রথার সূচনা করেছিলেন। সূচনা যেভাবেই হোক না কেন দিনে দিনে এই উৎসবে আসছে নানা বৈচিত্র। নবাবি আমলে এই দিন খাজনা আদায় ও নানা হিসেবনিকেশের পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হত মেলা, চলত গানবাজনা। সেই রীতি মেনে এখনও ভারত ও বাংলাদেশের নানা জায়গায় বৈশাখী মেলা বসে। নববর্ষ উদযাপনের দিন হালখাতা অনুষ্ঠান হয়। এ নিয়ে মানুষের উন্মাদনাও দৃষ্টি এড়ায় না। হালখাতা শব্দটি এসেছে হালহকিকত শব্দ থেকে। বর্ষবরণের দিন পুরনো ব্যবসায়িক হিসাব যাচাই করে নেওয়া হয়। তাই সকল ব্যবসায়ী এই দিনটায় পুরনো ধারদেনা মিটিয়ে নতুন করে শুরু করার অপেক্ষায় থাকেন। এভাবেই কাটে বাঙালির নববর্ষ।

নতুন বছরে আমরা পুরাতন সমস্ত ব্যথা, বেদনা যন্ত্রণা ভুলে কবির সুরে সুর মিলিয়ে বলে উঠি—
‘বন্ধু হও, শত্রু হও, যেখানে যে কেহ রও
ক্ষমা করো আজিকার মতো
পুরাতন বরষের সাথে
পুরাতন অপরাধ যত।’


ছবি সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।

Skip to content