ঝুলন গোস্বামী। ছবি সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।
নদীয়ার চাকদহ থেকে ইডেনের বিশ্বকাপ ফাইনাল, সহজ ছিল না যাত্রাটা। হাজার একটা ‘করতে নেই’-এর মাঝে নিয়ত জীবন যাপন যে ভারতীয় মহিলাদের তাঁদের মধ্যে এই মেয়েটা বরাবরই ছিল লম্বা রেসের ঘোড়া। কোনও বাধাই তাঁর কাছে বাধা নয়। একগুচ্ছ ‘করতে নেই’কে অতিক্রম করে তিনি যথার্থ অর্থেই হয়ে উঠেছিলেন ভারতবর্ষের ‘সোনার মেয়ে’। তিনি ঝুলন গোস্বামী। ইস্ট জোন উইমেন, এশিয়া উইমেন ইলেভেন এবং বেঙ্গল উইমেনের দলের মুখপাত্র হিসাবে ক্রিকেটার ঝুলন গোস্বামীর নাম আজ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের প্রতিটি কোনায়। ব্যক্তিত্বের এই অপার বিস্তৃতি কি কেবলই প্রতিভার জোরে? না, প্রতিভা এবং চারিত্রগত মাহাত্ম্য—এই উভয়ের যোগসাধনেই একজন খেলোয়াড়, শিল্পী, বৈজ্ঞানিক বা গবেষক হয়ে ওঠেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রতিভার অধিকারী। আনন্দবাজারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ঝুললনকে বলতে শুনেছিলাম—’আমার কাছে মানুষ হওয়াটাই আসল। আমি সেলিব্রিটি হতে চাইনি কখনও।’ মনুষ্যত্বের এই প্রজ্ঞাবাহী আলোকেই তিনি আজ তাই অন্যতমা, স্বতন্ত্র।
পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার এক ছোট্ট শহর চাকদহে জীবন আরম্ভ হয়েছিল তাঁর। জন্ম ১৯৮২ সালের ২৫ নভেম্বর। পিতা নিশীথ গোস্বামী ছিলেন এয়ার ইন্ডিয়ার একজন ক্যান্টিন কর্মী এবং মা ঝর্ণা গোস্বামী ছিলেন গৃহবধূ। এক ভাই কুণাল ও বোন ঝুম্পা। ছেলেবেলা থেকেই ঝুলন খুঁজে নিয়েছিলেন নিজের যথার্থ লক্ষ্যটিকে আর সেই মতোই চলেছে লড়াই। স্থানীয় খেলার মাঠ ফ্রেন্ডস ক্লাব এবং নবারুণ সমিতিতে ঝুলনের ক্রিকেট খেলার হাতেখড়ি। এর পর থেকেই আরম্ভ হল সাধনা। চাকদহ থেকে প্রতিদিন ভোরের ট্রেনে কলকাতায় এসে বিবেকানন্দ পার্কে কোচ স্বপন সাধুর কাছে শুরু হয় ক্রিকেটের প্রথাগত প্রশিক্ষণ। তাঁর গুরুই তাঁকে পরামর্শ দেন বোলার হিসেবে খেলা শুরু করার। অধ্যবসায়, সততা এবং প্রকৃত মনুষ্যত্বের অধিকারী হওয়ার ফলে আর পিছনে ঘুরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। চাকদহের ঝুলন থেকে অচিরেই হয়ে উঠেছেন জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ঝুলন গোস্বামী। ক্রিকেটের ইতিহাসে তাঁর হাত ধরে সৃষ্টি হয়েছে একের পর এক যুগান্তকারী রেকর্ডের। এখনও পর্যন্ত ওয়ান ডে ম্যাচের সর্বোচ্চ উইকেট ডাউনার হিসাবে তিনি অস্ট্রেলিয়ার নামজাদা ক্রিকেটার ক্যাথরিন ফিটজপ্যাট্রিকের রেকর্ড ভেঙেছেন। পোচেস্ট্রুমে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে ঝুলন রেইসিবে এসতোজাকেকে আউট করার মাধ্যমে ৭.৩ ওভারে মাত্র ২০ রানে ৩ উইকেট দখল করেছেন। অন্যতম দ্রুততম বোলার হিসাবে বিবেচ্য এই রাইট হ্যান্ডার খেলোয়াড়ের ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক মঞ্চে অবতরণের মুহূর্তটি ইতিহাসের পাতায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে চিরকাল।
২০০২ সালের ৬ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ান ডে ম্যাচে ঝুলন ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক মঞ্চে অবতরণ করেন। এখনো পর্যন্ত তাঁর কেরিয়ারে সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ৩১ রানে ৬ উইকেট। এখনও পর্যন্ত এখনও পর্যন্ত খেলেছেন ১৬৪টি ম্যাচ। ২০০৫ এবং ২০১৭—এই দুই বছর মহিলা বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালে পৌঁছায় ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল। ২০১৭ বিশ্বকাপ ফাইনালে ১০ ওভারে, ৩টে মেডেন ওভার সহ ২৩ রানে ৩ উইকেট পান ঝুলন। যদিও দুবার বিশ্বকাপ ফাইনালে পৌঁছালেও বিশ্বকাপ জয় এখনও অধরা ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের। এখনও পর্যন্ত ঝুলনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওয়ান ডে ম্যাচে গড়া সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড হল ১৬৪টি ম্যাচে ৯৯৫ রান। এছাড়াও টেস্ট ক্রিকেট ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচের ১০টি টেস্টে ঝুলনের উইকেট সংখ্যা ৪০ এবং মোট রান ২৮৩। টি-টোয়েন্টিতে ৬০টি ম্যাচে গড়েছেন ৫০টি উইকেটে মোট ৩৯৯ রানের রেকর্ড।
জীবনে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন ঝুলন। ২০০৭ সালের বর্ষসেরা আইসিসি নারী খেলোয়াড় হিসাবে সম্মানিত করা হয় তাঁকে। ২০১১ সালে পান শ্রেষ্ঠ নারী ক্রিকেটার হিসেবে এম এ চিদাম্বরম ট্রফি। সাম্প্রতিক সময়ে । ২০০৬ সালে ক্যাস্ট্রল অ্যাওয়ার্ড এবং ২০১০ সালে পান অর্জুন পুরস্কার। এই পুরস্কার ২০১০-এর ২৯ অগাস্ট রাষ্ট্রপতিভবনে তৎকালীন মাননীয়া রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিলের হাত থেকে ঝুলন গোস্বামী গ্রহণ করেন ক্রীড়া ক্ষেত্রের সর্বোচ্চ সরকারি সম্মাননা হিসাবে এবং এর দুবছর পরেই অর্থাৎ ২০১২-তে ক্রীড়া ক্ষেত্রের বিশেষ অবদানের জন্য ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান পদ্মশ্রী পুরস্কার লাভ করেন তিনি। শুধু তাই নয়, বাংলা তথা ভারতের প্রথম ডিলিট সম্মানপ্রাপ্ত মহিলা ক্রিকেটার যিনি তিনি হলেন ঝুলন গোস্বামী। ২০১৭ সালে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় ডিলিট সম্মান প্রদানের মাধ্যমে সম্মানিত করে প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক এবং এখনও পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ওয়ান ডে ম্যাচের সর্বোচ্চ উইকেট জয়ী ঝুলন গোস্বামীকে। তৎকালীন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী স্বয়ং সাম্মানিক তুলে দেন আমাদের ‘সোনার মেয়ে’ ঝুলন গোস্বামীর হাতে।
সম্প্রতি অধিনায়কত্বের পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন ঝুলন। পরিকল্পনা চলছে পরিচালক সুশান্ত দাসের পরিচালনায় ভারতের মহিলা ক্রিকেট দলের অন্যতম নক্ষত্র ঝুলন গোস্বামীর বায়োপিক নির্মাণের, প্রাথমিকভাবে যার নাম এখনও পর্যন্ত ঠিক হয়েছে ‘চাকদা এক্সপ্রেস’। জীবনের অন্য এক নিশানা ভারতীয় দর্শক এবার নিরীক্ষণ করতে চলেছে এই বায়োপিকের মাধ্যমে। ঝুলন গোস্বামীর এই উড়ানের যাত্রায় সাফল্যের সমারোহ এভাবেই জারি থাকুক চিরকাল, এই স্বপ্নকে অবলম্বন করেই প্রতিদিন বাংলার ঘরে ঘরে জন্ম নিক একজন করে ‘ঝুলন গোস্বামী’। তাদের হাত ধরে আমাদের দেশের প্রতিটি দিন হয়ে উঠুক সোনার দিন।
পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার এক ছোট্ট শহর চাকদহে জীবন আরম্ভ হয়েছিল তাঁর। জন্ম ১৯৮২ সালের ২৫ নভেম্বর। পিতা নিশীথ গোস্বামী ছিলেন এয়ার ইন্ডিয়ার একজন ক্যান্টিন কর্মী এবং মা ঝর্ণা গোস্বামী ছিলেন গৃহবধূ। এক ভাই কুণাল ও বোন ঝুম্পা। ছেলেবেলা থেকেই ঝুলন খুঁজে নিয়েছিলেন নিজের যথার্থ লক্ষ্যটিকে আর সেই মতোই চলেছে লড়াই। স্থানীয় খেলার মাঠ ফ্রেন্ডস ক্লাব এবং নবারুণ সমিতিতে ঝুলনের ক্রিকেট খেলার হাতেখড়ি। এর পর থেকেই আরম্ভ হল সাধনা। চাকদহ থেকে প্রতিদিন ভোরের ট্রেনে কলকাতায় এসে বিবেকানন্দ পার্কে কোচ স্বপন সাধুর কাছে শুরু হয় ক্রিকেটের প্রথাগত প্রশিক্ষণ। তাঁর গুরুই তাঁকে পরামর্শ দেন বোলার হিসেবে খেলা শুরু করার। অধ্যবসায়, সততা এবং প্রকৃত মনুষ্যত্বের অধিকারী হওয়ার ফলে আর পিছনে ঘুরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। চাকদহের ঝুলন থেকে অচিরেই হয়ে উঠেছেন জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ঝুলন গোস্বামী। ক্রিকেটের ইতিহাসে তাঁর হাত ধরে সৃষ্টি হয়েছে একের পর এক যুগান্তকারী রেকর্ডের। এখনও পর্যন্ত ওয়ান ডে ম্যাচের সর্বোচ্চ উইকেট ডাউনার হিসাবে তিনি অস্ট্রেলিয়ার নামজাদা ক্রিকেটার ক্যাথরিন ফিটজপ্যাট্রিকের রেকর্ড ভেঙেছেন। পোচেস্ট্রুমে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে ঝুলন রেইসিবে এসতোজাকেকে আউট করার মাধ্যমে ৭.৩ ওভারে মাত্র ২০ রানে ৩ উইকেট দখল করেছেন। অন্যতম দ্রুততম বোলার হিসাবে বিবেচ্য এই রাইট হ্যান্ডার খেলোয়াড়ের ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক মঞ্চে অবতরণের মুহূর্তটি ইতিহাসের পাতায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে চিরকাল।
২০০২ সালের ৬ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ান ডে ম্যাচে ঝুলন ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক মঞ্চে অবতরণ করেন। এখনো পর্যন্ত তাঁর কেরিয়ারে সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ৩১ রানে ৬ উইকেট। এখনও পর্যন্ত এখনও পর্যন্ত খেলেছেন ১৬৪টি ম্যাচ। ২০০৫ এবং ২০১৭—এই দুই বছর মহিলা বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালে পৌঁছায় ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল। ২০১৭ বিশ্বকাপ ফাইনালে ১০ ওভারে, ৩টে মেডেন ওভার সহ ২৩ রানে ৩ উইকেট পান ঝুলন। যদিও দুবার বিশ্বকাপ ফাইনালে পৌঁছালেও বিশ্বকাপ জয় এখনও অধরা ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের। এখনও পর্যন্ত ঝুলনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওয়ান ডে ম্যাচে গড়া সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড হল ১৬৪টি ম্যাচে ৯৯৫ রান। এছাড়াও টেস্ট ক্রিকেট ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচের ১০টি টেস্টে ঝুলনের উইকেট সংখ্যা ৪০ এবং মোট রান ২৮৩। টি-টোয়েন্টিতে ৬০টি ম্যাচে গড়েছেন ৫০টি উইকেটে মোট ৩৯৯ রানের রেকর্ড।
জীবনে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন ঝুলন। ২০০৭ সালের বর্ষসেরা আইসিসি নারী খেলোয়াড় হিসাবে সম্মানিত করা হয় তাঁকে। ২০১১ সালে পান শ্রেষ্ঠ নারী ক্রিকেটার হিসেবে এম এ চিদাম্বরম ট্রফি। সাম্প্রতিক সময়ে । ২০০৬ সালে ক্যাস্ট্রল অ্যাওয়ার্ড এবং ২০১০ সালে পান অর্জুন পুরস্কার। এই পুরস্কার ২০১০-এর ২৯ অগাস্ট রাষ্ট্রপতিভবনে তৎকালীন মাননীয়া রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিলের হাত থেকে ঝুলন গোস্বামী গ্রহণ করেন ক্রীড়া ক্ষেত্রের সর্বোচ্চ সরকারি সম্মাননা হিসাবে এবং এর দুবছর পরেই অর্থাৎ ২০১২-তে ক্রীড়া ক্ষেত্রের বিশেষ অবদানের জন্য ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান পদ্মশ্রী পুরস্কার লাভ করেন তিনি। শুধু তাই নয়, বাংলা তথা ভারতের প্রথম ডিলিট সম্মানপ্রাপ্ত মহিলা ক্রিকেটার যিনি তিনি হলেন ঝুলন গোস্বামী। ২০১৭ সালে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় ডিলিট সম্মান প্রদানের মাধ্যমে সম্মানিত করে প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক এবং এখনও পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ওয়ান ডে ম্যাচের সর্বোচ্চ উইকেট জয়ী ঝুলন গোস্বামীকে। তৎকালীন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী স্বয়ং সাম্মানিক তুলে দেন আমাদের ‘সোনার মেয়ে’ ঝুলন গোস্বামীর হাতে।
সম্প্রতি অধিনায়কত্বের পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন ঝুলন। পরিকল্পনা চলছে পরিচালক সুশান্ত দাসের পরিচালনায় ভারতের মহিলা ক্রিকেট দলের অন্যতম নক্ষত্র ঝুলন গোস্বামীর বায়োপিক নির্মাণের, প্রাথমিকভাবে যার নাম এখনও পর্যন্ত ঠিক হয়েছে ‘চাকদা এক্সপ্রেস’। জীবনের অন্য এক নিশানা ভারতীয় দর্শক এবার নিরীক্ষণ করতে চলেছে এই বায়োপিকের মাধ্যমে। ঝুলন গোস্বামীর এই উড়ানের যাত্রায় সাফল্যের সমারোহ এভাবেই জারি থাকুক চিরকাল, এই স্বপ্নকে অবলম্বন করেই প্রতিদিন বাংলার ঘরে ঘরে জন্ম নিক একজন করে ‘ঝুলন গোস্বামী’। তাদের হাত ধরে আমাদের দেশের প্রতিটি দিন হয়ে উঠুক সোনার দিন।