শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪


২০১২ সালে স্টার জলসায় সম্প্রচারিত হওয়া অন্যতম জনপ্রিয় ধারাবাহিক হল ‘আঁচল’। আর এই ধারাবাহিকেই জনপ্রিয় হয়েছিল ‘টুসু’ ও ‘ভাদু’ চরিত্র দুটি। আজও এই দুই মেয়ের জীবনযুদ্ধের গল্প দর্শকের মনের মণিকোঠায় উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। এই ‘আঁচল’ ধারাবাহিকেই ‘ভাদু’ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মিষ্টি সিং। সেখান থেকেই এখন তিনি সকলের প্রিয় অভিনেত্রী হয়ে উঠেছেন। ‘আঁচল’, ‘টেক্কা-রাজা-বাদশা’, ‘বিকেলে ভোরের ফুল’, ‘খোকাবাবু’, ‘তিতলি’-র মতো ধারাবাহিকে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। আজ সময় আপডেটস-এর মুখোমুখি বিভাগে একান্ত সাক্ষাৎকারে মিষ্টি সিং

● কবে থেকে অভিনয় জগতে পা রেখেছ?
●● ২০০৯-২০১০ সাল নাগাদ আমার অভিনয় জগতে আসা। তখন আমি পড়াশোনা করি। পাশাপাশি মডেলিংও করতাম। সেই সময় একটা বিউটি কনটেস্টে নাম দিয়েছিলাম। সেখানে আমি বিজয়ী হই। তারপরই অডিশনের জন্য আমাকে ডাকা হয় এবং আমি সিলেক্টও হয়ে যাই। এভাবেই আমার অভিনয় জগতে আসা।

● ‘আঁচল’ তোমার প্রথম ব্রেক। সেখানে প্রথমদিকে একজন প্যারালাইসড মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করতে হয়েছিল তোমাকে। সেই অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিল?
●● হ্যাঁ। ‘আঁচল’ আমার প্রথম ব্রেক। তবে এর আগে আমি ‘যখন একুশে পা’ ধারাবাহিকে কাজ করেছিলাম। তারপর ‘আঁচল’-এ ভাদু চরিত্রে অভিনয় করি। অভিনয়ের বেসিক জ্ঞানটা ছিল, তবে এই ধারাবাহিকের জন্য সামান্য হলেও হার্ড ওয়ার্ক করতে হয়েছিল। কারণ, চরিত্রটা গ্রামের মেয়ের। তার উপর চরিত্রটা প্রথমদিকে প্যারালাইসড ছিল। যেখানে কথা বলা যাবে না, হাঁটা-চলা কিছুই করা যাবে না। এগুলোকে আয়ত্ত করতে সময় লেগেছিল আমার। তবে এই চরিত্রটা গড়ে তুলতে ধারাবাহিকের পরিচালক ও সহকর্মীরা আমাকে খুবই সাহায্য করেছিলেন। তারপর চরিত্রটা বেশ জনপ্রিয়ও হয়ে ওঠে। সবমিলিয়ে ‘আঁচল’ আমার কাছে একটা মাইলস্টোন বলা যায়।

● অভিনয়ের প্রথম দিনটা কেমন ছিল?
●● প্রথম দিন আমাকে বলা হয়েছিল যে স্ক্রিপটা মুখস্থ করতে এবং তারপর সেটা উপস্থাপন করতে। আর আমি যেহেতু ইতিহাসের ছাত্রী তাই মুখস্থবিদ্যাটা আমার ভালোই আছে। তাই সহজেই স্ক্রিপ্ট মুখস্থ করে ফেলেছিলাম। প্রথম যখন অভিনয় শুরু করেছিলাম আমার কোনও এক্সপেক্টেশন ছিল না। সেই কারণে কাজটা করতে গিয়ে কখনওই ভয় পাইনি।
● স্টার জলসার জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘আলতা ফড়িং’-এ তোমাকে নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাচ্ছে। এর আগে তুমি যে কটা চরিত্রে অভিনয় করেছ সবকটিই ছিল পজিটিভ চরিত্র। কোনটা বেশি চ্যালেঞ্জিং বলে তোমার মনে হয়? পজিটিভ চরিত্রে অভিনয় করা না নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করা?
●● নেগেটিভ চরিত্রের ক্ষেত্রে অভিনয়টা আরও অনেক বেশি করতে হয়। একটা পজিটিভ চরিত্রে অভিনয় করা খুব সহজ। রোজকার জীবনে আমরা যেভাবে কথা বলি বা যা যা করি, পজিটিভ চরিত্রের অভিনয় করার ক্ষেত্রে সেসব কিছুই করতে হয়। ফলে পজিটিভ চরিত্রে অভিনয় করাটা সহজ। কিন্তু নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করা সত্যিই চ্যালেঞ্জিং। কারণ, চরিত্রটার যে নেগেটিভিটি রয়েছে সেটা দর্শকের মনে কতটা গেঁথে গেল সেটা এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দর্শক নেগেটিভ ভাবলে তবেই নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করার সার্থকতা রয়েছে। আর আমি এইরকম একটা নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করতে পেরে ভীষণ খুশি। তবে এখানে ধারাবাহিকের মুখ্য দুই চরিত্র অর্থাৎ নায়ক-নায়িকার কোনও ক্ষতি চায় না খলনায়িকা। বরং শাশুড়িকে জব্দ করার জন্য নায়ক-নায়িকা এক করতে চায় এই ধারাবাহিকের খলনায়িকা। এই ধরনের একটা নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করতে পারছি। বেশ ভালো লাগছে। যেহেতু নেগেটিভ চরিত্রে আমি প্রথম অভিনয় করছি। তাই প্রথমদিকে একটু বুঝতে সমস্যা হচ্ছিল, যে চরিত্রটাকে আমি কীভাবে উপস্থাপন করব। সেই সময় আমাদের ‘আলতা ফড়িং’-এর প্রযোজক সুশান্তদা আমাকে ভীষণভাবে সাহায্য করেছিল।

● বড়পর্দার ছবি ‘শঙ্কর মুদি’-তে তোমাকে দেখা গিয়েছিল। আবারও কি ইচ্ছা আছে বড়পর্দায় কাজ করার?
●● অনিকেত চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ছবি ‘শঙ্কর মুদি’-ই আমার বড়পর্দার প্রথম ছবি। এরপর বড়পর্দায় কাজ করার যদি সুযোগ আসে তবে অবশ্যই করব। কিন্তু আমি মেগাসিরিয়ালকে বেশি গুরুত্ব দিই। কারণ, ধারাবাহিক প্রতিদিন হয়, এখানে প্রতিদিনই দেখা যাবে আমাকে। এছাড়াও, এটা রেগুলার চাকরির মতো। আর বাড়ির মা, দিদিমা সকলেই টেলিভিশন দেখতে বেশি পছন্দ করে থাকেন। আমরা ধারাবাহিকের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ওদের ঘরের লোক আর কি। আর আমি যেহেতু টেলিভিশন ধারাবাহিক থেকেই এত জনপ্রিয়তা পেয়েছি। তাই অবশ্যই মেগাসিরিয়াল বেশি পছন্দ।

● ওয়েব সিরিজ দেখতে ভালো লাগে?
●● আমি প্রতিদিনই কাজের শেষে রাতে একটা করে সিনেমা দেখি ওটিটিতে। ওয়েব সিরিজও দেখি মাঝেমধ্যে। আর অভিনেতা, অভিনেত্রীদের জন্য সিনেমা দেখাটা খুব জরুরি। এর থেকে অনেক কিছু জানা যায়। বোঝাও যায়। বর্তমান সময়ে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের গুরুত্ব আছে। টেলিভিশন ও ওটিটি কোনওদিন যাবে না। বরং এই মাধ্যমগুলোই আমাদের ভবিষ্যৎ।

● সুযোগ পেলে ওটিটিতে কাজ করবে?
●● অবশ্যই ওটিটিতে কাজ করব। এখন একটা ধারাবাহিকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। এরপর কোনওদিন সুযোগ পেলে, ভালো চরিত্র পেলে অবশ্যই ওটিটিতে কাজ করার ইচ্ছা আছে।

● থিয়েটার করার ইচ্ছা আছে?
●● থিয়েটার একটা ভালো প্ল্যাটফর্ম। এখান থেকেই ছেলেমেয়েরা ভালো করে অভিনয় শেখে। তবে আমি আগেই বলেছি যে মেগাসিরিয়াল করতে আমার বেশি ভালো লাগে। ওটা আমার বেশি পছন্দের। সেক্ষেত্রে যদি সুযোগ পাই তাহলে একদিন কি দু’দিন হয়তো আমি থিয়েটার করতে পারি। কিন্তু আমার লক্ষ্য সেই সিরিয়ালই।

● পরবর্তী কোথায় দেখা যাবে মিষ্টি সিংকে?
●● আপাতত ‘আলতা ফড়িং’-এই আমাকে দেখা যাবে। আমি বর্তমানে বিশ্বাসী। তাই পরবর্তী কোথায় আমাকে দেখা যাবে আমি নিজেও জানি না সেটা। নিশ্চয়ই কিছু না কিছু অবশ্যই করব। কিন্তু সেটা কী করব আমি নিজেও জানি না।

Skip to content