ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে বাংলা ও ইংরাজি ভাষার পাশাপাশি তৃতীয় যে ভাষাটি উচ্চপ্রাথমিকের সপ্তম-অষ্টম শ্রেণিতে পড়ানো হয়ে আসছে, তা হল সংস্কৃত। নবম-দশম শ্রেণিতেও ঐচ্ছিক বিষয় হিসাবে সংস্কৃত ভাষার পাঠদানের ব্যবস্থা বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে বর্তমানেও চালু আছে। আর একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে কলা বিভাগের বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রীই মূল বিষয়রূপে সংস্কৃতকে বেছে নিচ্ছে বেশি নম্বর পাওয়ার আশায়। এরপর স্নাতক-স্নাতকোত্তর-গবেষণাস্তরেও সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য পাঠ যথেষ্ট স্বীকৃতির দাবি রাখে।
সংস্কৃত কী এবং সংস্কৃত শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা
পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষাসমূহের মধ্যে প্রাচীনতম ভাষা হল সংস্কৃত। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত গ্রিক, ল্যাটিন, জার্মানিক ভাষার মতো সংস্কৃতও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় ভাষা। প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতিকে জানতে হলে, তার ইতিহাস-সমাজ-রাজনীতি-অর্থনীতি-ধর্মীয় ভাবনা জানতে হলে সংস্কৃত ভাষার জ্ঞান অত্যাবশ্যক। সেই কারণেই সম্ভবত উচ্চপ্রাথমিক স্তর থেকে এই ভাষাচর্চার পথ প্রস্তুত করা হয়েছে। অন্যান্য ভাষা-সাহিত্যের মতোই সংস্কৃত ভাষাও যথেষ্ট সমৃদ্ধ। অসংখ্য গ্রন্থ এই ভাষাতে রচিত হয়ে আসছে সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে। সেই সমৃদ্ধ সাহিত্যের আস্বাদন নিতে হলে অবশ্যই সংস্কৃত ভাষা শিক্ষা অত্যন্ত জরুরি। এটি এমনই একটি আকর্ষণীয় বিষয় যা বিগত কয়েক দশক ধরেই শিক্ষার্থী ও শিক্ষাবিদের কাছের ও প্রাণের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রাথমিকভাবে হয়তো শিক্ষার্থী সঠিক নম্বর তোলার আশায় এই বিষয়কে পছন্দ করছে; কিন্তু অচিরেই এর রসাস্বাদনের দ্বারা কখন যে বিষয়ের প্রেমে পড়ে যাচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য। সংস্কৃত ভাষা শিক্ষা মানুষকে আত্মসচেতন, আত্মনির্ভর করে তোলে। এই ভাষায় রচিত কাব্যশাস্ত্রাদি পাঠে শিক্ষার্থী জীবনের মূল্যবোধ শিক্ষা করতে পারে।
উচ্চশিক্ষায় সংস্কৃত
স্কুলশিক্ষা সমাপ্ত করে প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রী উচ্চশিক্ষাঙ্গনে পদার্পণ করে। সেখানে বিষয়নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। জীবন-জীবিকার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিষয়নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই হিসেবে সংস্কৃত নিয়ে উচ্চশিক্ষা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। ভারতবর্ষের প্রায় সবকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং অধীনস্থ কলেজে সংস্কৃত নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে ডিগ্রি অর্জন করা যায়। পশ্চিমবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়—স্বশাসিত কলেজগুলিতে বি.এ., এম.এ., এম.ফিল ও পিএইচ.ডি. ডিগ্রি দেওয়া হয়। সরকারপোষিত কলেজগুলিতেও বি.এ.; এমনকী কোথাও কোথাও এম.এ. ডিগ্রিও দেওয়া হয়।
সংস্কৃত ও জীবিকা
সংস্কৃত এমনই একটি বিষয়, যেটাকে পাথেয় করে জীবিকা-নির্বাহের সুযোগ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে।
শিক্ষকতা
প্রথমেই শিক্ষকতাকে যাঁরা পেশা হিসাবে নিতে চান, তাঁদের জন্য সংস্কৃত বিষয়টি খুবই জনপ্রিয়। স্নাতক-স্নাতকোত্তর এবং তৎসহ বি.এড. ডিগ্রি সম্পূর্ণ করলে স্কুল-সার্ভিস-কমিশনের মাধ্যমে উচ্চপ্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণিতে পড়ানোর একটা সুযোগ বিদ্যালয়গুলিতে তৈরি হয়।
দ্বিতীয়ত, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে স্নাতকোত্তর স্তরে নির্দিষ্ট নম্বর নিয়ে পাশ করে নেট, সেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই কলেজ-সার্ভিস-কমিশনের মাধ্যমে সরকারপোষিত কলেজে এবং পাবলিক-সার্ভিস-কমিশনের মাধ্যমে সরকারি কলেজে পড়াবার সুযোগ তৈরি হয়। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সরাসরি ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে নিয়োগ করে।
গবেষণা জগতে সংস্কৃত
সংস্কৃত ও সহযোগীবিষয়নির্ভর উচ্চতর গবেষণা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ও প্রশংসনীয়। সংস্কৃত ভাষার সঙ্গে ভারতীয় দর্শনশাস্ত্র, শিক্ষাবিজ্ঞান, প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি এবং প্রত্নতত্ত্ব—এই সহযোগী বিষয়গুলি গবেষণার দিক উন্মোচন করে। কলকাতা ও মুম্বই Asiatic Society; Indian Museum; National Museum; Oriental Research Institute (ORI)– Baroda, Mysore, Chennai, Trivandrum; Bhandarkar Oriental Research Institute (BORI) Pune প্রভৃতি স্বশাসিত (autonomous) এই গবেষণাকার্য সম্পন্ন হয়—নির্দিষ্ট বৃত্তি (Fellowship)-র মাধ্যমে। এছাড়াও Indian Council for Cultural Research (ICCR); Indian Council for Historical Research (ICHR); Indian Council for Social Science and Research (ICSSR) প্রভৃতি পরিষদ থেকেও বিশেষ গবেষণাবৃত্তি (Research Fellowship)-র দ্বারা এই ধরনের সংশ্লিষ্ট গবেষণাকার্য অনুষ্ঠিত হয়।
অভিনব গবেষণাকার্য ও সংস্কৃত
সংস্কৃত ভাষায় তথা শাস্ত্রে পারদর্শিতা থাকলে গবেষণার একটি অভিনব দিক কয়েক দশক আগেই উন্মোচিত হয়েছে, তা হল পুঁথিবিদ্যা। ভারতবর্ষে প্রাপ্ত অধিকাংশ পুঁথিই সংস্কৃত ভাষায় লেখা। প্রাচীন ঐতিহ্য তথা শাস্ত্র পরম্পরাকে বাঁচিয়ে রাখে পুঁথি —পুঁথিবিদ্যা—সমীক্ষাত্মক সংস্করণ। সেই সংস্করণের কাজে পুরোধা হিসেবে সংস্কৃতের শিক্ষার্থীই অবস্থান করেন। রাষ্ট্রীয় পাণ্ডুলিপি মিশন (National Mission for Manuscript), ইন্দিরা গান্ধী রাষ্ট্রীয় কলা কেন্দ্র (Indira Gandhi National Centre for the Arts)—এই স্বশাসিত সংস্থাগুলি থেকে পুঁথিবিদ্যার ওপর উচ্চতর গবেষণাকার্ষ সম্পন্ন করা যায়।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে শুধুমাত্র ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তথা স্বশাসিত সংস্থাই নয়; বিদেশের বিশেষ করে ইউরোপের ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি এবং আমেরিকার বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়েও পুঁথিবিদ্যা তথা সমীক্ষাত্মক সংস্করণ (Text-Critical Edition)-এর গবেষণাকার্য সম্পন্ন হয়।
প্রশাসনিক চাকুরি
প্রশাসনিক চাকুরির ক্ষেত্রেও সংস্কৃত ভাষার গুরুত্ব সমধিক প্রতিষ্ঠিত। কয়েক দশক ধরেই IAS, IPS, UPSC, WBCS, IFS ইত্যাদি সর্বভারতীয় উচ্চপ্রশাসনিক সব পরীক্ষাতেই সংস্কৃতকে মূল বিষয় (Main Paper) হিসাবে বেছে নেওয়া যেতে পারে।
এছাড়াও অন্যান্য নানা ধরনের সরকারি-বেসরকারি সংস্থার চাকুরি এমনকী সমাজসেবামূলক কাজেও একজন সুদক্ষ কর্মী হয়ে উঠতেও সাহায্য করে এই সংস্কৃত ভাষা শিক্ষা। ভারতীয় সামরিক বাহিনীতেও ধর্মীয়শিক্ষক (Religeous Teacher) পদে সংস্কৃতে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীকেই প্রার্থী হিসেবে যোগ্যস্থান দেওয়া হয়। সংগীত-নাটক-অ্যাকাডেমি (Song and Drama Division, Govt. of India) প্রতিবছর ভারতীয় নাট্যকলার উৎকর্ষতা বৃদ্ধির জন্য যে নানা ধরনের কার্যধারার সূচনা করে, তাতেও সংস্কৃত জানা—কাব্যশাস্ত্রের তথা নাট্যশাস্ত্রের অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্বের প্রয়োজন যথেষ্ট উল্লেখের দাবি রাখে।
গ্রন্থাগার পরিষেবা ও সংস্কৃত
পাণ্ডলিপি গ্রন্থাগার, সরকারপোষিত গ্রন্থাগার, সাহিত্য-পরিষৎ গ্রন্থাগারেও বিশেষ গ্রন্থাগারিকরূপে চাকুরির সুযোগ রয়েছে সংস্কৃত শিক্ষার্থীর। কলকাতার সংস্কৃত সাহিত্য পরিষৎ, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, হাওড়া সংস্কৃত সাহিত্য সমাজ, এশিয়াটিক সোসাইটি গ্রন্থাগার, ভারতীয় জাদুঘর গ্রন্থাগার প্রভৃতি বিভিন্ন গ্রন্থাগারে এই সুযোগ পাওয়া যায়।
পরিশেষে একথাই বলা যায় যে, কোনও বিষয়ই খারাপ নয়, অচল-বিকল নয়। ভালোবেসে মনোযোগসহকারে আত্মস্থ করতে পারলে যেকোনও বিষয়ের জ্ঞান জীবন-জীবিকার সহায়ক মূলধন হতে পারে—এতে কোনও সন্দেহ নেই।
পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষাসমূহের মধ্যে প্রাচীনতম ভাষা হল সংস্কৃত। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত গ্রিক, ল্যাটিন, জার্মানিক ভাষার মতো সংস্কৃতও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় ভাষা। প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতিকে জানতে হলে, তার ইতিহাস-সমাজ-রাজনীতি-অর্থনীতি-ধর্মীয় ভাবনা জানতে হলে সংস্কৃত ভাষার জ্ঞান অত্যাবশ্যক। সেই কারণেই সম্ভবত উচ্চপ্রাথমিক স্তর থেকে এই ভাষাচর্চার পথ প্রস্তুত করা হয়েছে। অন্যান্য ভাষা-সাহিত্যের মতোই সংস্কৃত ভাষাও যথেষ্ট সমৃদ্ধ। অসংখ্য গ্রন্থ এই ভাষাতে রচিত হয়ে আসছে সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে। সেই সমৃদ্ধ সাহিত্যের আস্বাদন নিতে হলে অবশ্যই সংস্কৃত ভাষা শিক্ষা অত্যন্ত জরুরি। এটি এমনই একটি আকর্ষণীয় বিষয় যা বিগত কয়েক দশক ধরেই শিক্ষার্থী ও শিক্ষাবিদের কাছের ও প্রাণের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রাথমিকভাবে হয়তো শিক্ষার্থী সঠিক নম্বর তোলার আশায় এই বিষয়কে পছন্দ করছে; কিন্তু অচিরেই এর রসাস্বাদনের দ্বারা কখন যে বিষয়ের প্রেমে পড়ে যাচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য। সংস্কৃত ভাষা শিক্ষা মানুষকে আত্মসচেতন, আত্মনির্ভর করে তোলে। এই ভাষায় রচিত কাব্যশাস্ত্রাদি পাঠে শিক্ষার্থী জীবনের মূল্যবোধ শিক্ষা করতে পারে।
স্কুলশিক্ষা সমাপ্ত করে প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রী উচ্চশিক্ষাঙ্গনে পদার্পণ করে। সেখানে বিষয়নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। জীবন-জীবিকার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিষয়নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই হিসেবে সংস্কৃত নিয়ে উচ্চশিক্ষা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। ভারতবর্ষের প্রায় সবকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং অধীনস্থ কলেজে সংস্কৃত নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে ডিগ্রি অর্জন করা যায়। পশ্চিমবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়—স্বশাসিত কলেজগুলিতে বি.এ., এম.এ., এম.ফিল ও পিএইচ.ডি. ডিগ্রি দেওয়া হয়। সরকারপোষিত কলেজগুলিতেও বি.এ.; এমনকী কোথাও কোথাও এম.এ. ডিগ্রিও দেওয়া হয়।
সংস্কৃত এমনই একটি বিষয়, যেটাকে পাথেয় করে জীবিকা-নির্বাহের সুযোগ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে।
প্রথমেই শিক্ষকতাকে যাঁরা পেশা হিসাবে নিতে চান, তাঁদের জন্য সংস্কৃত বিষয়টি খুবই জনপ্রিয়। স্নাতক-স্নাতকোত্তর এবং তৎসহ বি.এড. ডিগ্রি সম্পূর্ণ করলে স্কুল-সার্ভিস-কমিশনের মাধ্যমে উচ্চপ্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণিতে পড়ানোর একটা সুযোগ বিদ্যালয়গুলিতে তৈরি হয়।
দ্বিতীয়ত, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে স্নাতকোত্তর স্তরে নির্দিষ্ট নম্বর নিয়ে পাশ করে নেট, সেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই কলেজ-সার্ভিস-কমিশনের মাধ্যমে সরকারপোষিত কলেজে এবং পাবলিক-সার্ভিস-কমিশনের মাধ্যমে সরকারি কলেজে পড়াবার সুযোগ তৈরি হয়। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সরাসরি ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে নিয়োগ করে।
সংস্কৃত ও সহযোগীবিষয়নির্ভর উচ্চতর গবেষণা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ও প্রশংসনীয়। সংস্কৃত ভাষার সঙ্গে ভারতীয় দর্শনশাস্ত্র, শিক্ষাবিজ্ঞান, প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি এবং প্রত্নতত্ত্ব—এই সহযোগী বিষয়গুলি গবেষণার দিক উন্মোচন করে। কলকাতা ও মুম্বই Asiatic Society; Indian Museum; National Museum; Oriental Research Institute (ORI)– Baroda, Mysore, Chennai, Trivandrum; Bhandarkar Oriental Research Institute (BORI) Pune প্রভৃতি স্বশাসিত (autonomous) এই গবেষণাকার্য সম্পন্ন হয়—নির্দিষ্ট বৃত্তি (Fellowship)-র মাধ্যমে। এছাড়াও Indian Council for Cultural Research (ICCR); Indian Council for Historical Research (ICHR); Indian Council for Social Science and Research (ICSSR) প্রভৃতি পরিষদ থেকেও বিশেষ গবেষণাবৃত্তি (Research Fellowship)-র দ্বারা এই ধরনের সংশ্লিষ্ট গবেষণাকার্য অনুষ্ঠিত হয়।
সংস্কৃত ভাষায় তথা শাস্ত্রে পারদর্শিতা থাকলে গবেষণার একটি অভিনব দিক কয়েক দশক আগেই উন্মোচিত হয়েছে, তা হল পুঁথিবিদ্যা। ভারতবর্ষে প্রাপ্ত অধিকাংশ পুঁথিই সংস্কৃত ভাষায় লেখা। প্রাচীন ঐতিহ্য তথা শাস্ত্র পরম্পরাকে বাঁচিয়ে রাখে পুঁথি —পুঁথিবিদ্যা—সমীক্ষাত্মক সংস্করণ। সেই সংস্করণের কাজে পুরোধা হিসেবে সংস্কৃতের শিক্ষার্থীই অবস্থান করেন। রাষ্ট্রীয় পাণ্ডুলিপি মিশন (National Mission for Manuscript), ইন্দিরা গান্ধী রাষ্ট্রীয় কলা কেন্দ্র (Indira Gandhi National Centre for the Arts)—এই স্বশাসিত সংস্থাগুলি থেকে পুঁথিবিদ্যার ওপর উচ্চতর গবেষণাকার্ষ সম্পন্ন করা যায়।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে শুধুমাত্র ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তথা স্বশাসিত সংস্থাই নয়; বিদেশের বিশেষ করে ইউরোপের ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি এবং আমেরিকার বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়েও পুঁথিবিদ্যা তথা সমীক্ষাত্মক সংস্করণ (Text-Critical Edition)-এর গবেষণাকার্য সম্পন্ন হয়।
প্রশাসনিক চাকুরির ক্ষেত্রেও সংস্কৃত ভাষার গুরুত্ব সমধিক প্রতিষ্ঠিত। কয়েক দশক ধরেই IAS, IPS, UPSC, WBCS, IFS ইত্যাদি সর্বভারতীয় উচ্চপ্রশাসনিক সব পরীক্ষাতেই সংস্কৃতকে মূল বিষয় (Main Paper) হিসাবে বেছে নেওয়া যেতে পারে।
এছাড়াও অন্যান্য নানা ধরনের সরকারি-বেসরকারি সংস্থার চাকুরি এমনকী সমাজসেবামূলক কাজেও একজন সুদক্ষ কর্মী হয়ে উঠতেও সাহায্য করে এই সংস্কৃত ভাষা শিক্ষা। ভারতীয় সামরিক বাহিনীতেও ধর্মীয়শিক্ষক (Religeous Teacher) পদে সংস্কৃতে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীকেই প্রার্থী হিসেবে যোগ্যস্থান দেওয়া হয়। সংগীত-নাটক-অ্যাকাডেমি (Song and Drama Division, Govt. of India) প্রতিবছর ভারতীয় নাট্যকলার উৎকর্ষতা বৃদ্ধির জন্য যে নানা ধরনের কার্যধারার সূচনা করে, তাতেও সংস্কৃত জানা—কাব্যশাস্ত্রের তথা নাট্যশাস্ত্রের অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্বের প্রয়োজন যথেষ্ট উল্লেখের দাবি রাখে।
পাণ্ডলিপি গ্রন্থাগার, সরকারপোষিত গ্রন্থাগার, সাহিত্য-পরিষৎ গ্রন্থাগারেও বিশেষ গ্রন্থাগারিকরূপে চাকুরির সুযোগ রয়েছে সংস্কৃত শিক্ষার্থীর। কলকাতার সংস্কৃত সাহিত্য পরিষৎ, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, হাওড়া সংস্কৃত সাহিত্য সমাজ, এশিয়াটিক সোসাইটি গ্রন্থাগার, ভারতীয় জাদুঘর গ্রন্থাগার প্রভৃতি বিভিন্ন গ্রন্থাগারে এই সুযোগ পাওয়া যায়।
পরিশেষে একথাই বলা যায় যে, কোনও বিষয়ই খারাপ নয়, অচল-বিকল নয়। ভালোবেসে মনোযোগসহকারে আত্মস্থ করতে পারলে যেকোনও বিষয়ের জ্ঞান জীবন-জীবিকার সহায়ক মূলধন হতে পারে—এতে কোনও সন্দেহ নেই।