রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।

প্রসূতি নারী প্রসবের প্রাক মুহূর্তে মানসিকভাবে দুর্বল থাকে। এই সময় তাঁরা নিকট আত্মীয়র সঙ্গে সান্নিধ্য পছন্দ করেন। যেমন তাঁর মা বা স্বামী। সেই সমস্ত প্রসূতি নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা ভেবে রাজ্য সরকারের নতুন উদ্যোগ ‘প্রসবসাথী’ প্রকল্প।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য?
প্রসবের আগে মানসিক দিক থেকে দুর্বল হয়ে যাওয়া অনেকটাই ক্ষতিকারক বলেই মনে করেন চিকিৎসকরা। সমস্ত দিক বিবেচনা করে প্রসূতি নারীর কাছে তার মা বা স্বামীকে থাকার অনুমতি দিয়েছে রাজ্য সরকার।
প্রসবের সময় প্রসূতির শারীরিক ও মানসিকভাবে সক্ষম থাকা উচিত। এই প্রকল্পের কার্ডটির দ্বারা এই কাজটিই হবে। প্রসূতির মনোবল বাড়ানোর পাশাপাশি শারীরিক সমস্যায় তিনি তাঁর পাশে থাকতে পারবেন। প্রশাসন আশা করছেন এই প্রকল্পে প্রসবকালীন মৃত্যু বা শিশুমৃত্যুর হার অনেকটাই কমবে।

প্রসবসাথীর অনুমোদন পাবেন কারা?
যেকোনও মহিলা যিনি হবেন প্রসূতির নিকট আত্মীয়। যিনি এই রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন অর্থাৎ তাঁর অভিজ্ঞতা রয়েছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অনুমতিক্রমে প্রসূতি নারীর স্বামীও থাকতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে অন্যান্য প্রসূতির যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সেই বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।

যে ব্যক্তি প্রসবসাথী হবেন তাঁর কী কী গুণ থাকা আবশ্যক?
যিনি প্রসূতির সঙ্গে থাকবেন তাঁকে সংক্রমণ রোগমুক্ত হতে হবে।
প্রসবসাথীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরতে হবে। নোংরা পোশাক পরা যাবে না।
হাসপাতালের কোনও কর্মীদের কাজে বিঘ্ন ঘটনো যাবে না।

প্রসূতির কাছে থাকা প্রসবসাথীর বিভিন্ন দায়িত্ব
প্রসবসাথীকে নিজের নাম-ঠিকানা মোবাইল নম্বর প্রসূতি মহিলার সঙ্গে নিজের সম্পর্ক বিস্তারিতভাবে লিখে জানাতে হবে।
প্রসূতিকে তাঁর নিজের পছন্দমতো প্রসবভঙ্গি পরিবর্তনে সাহায্য করতে হবে।
প্রসূতি মহিলাদের প্রসবসাথী হতে গেলে প্রথমেই হাসপাতালে নিজের নাম নথিভুক্ত করতে হবে।
প্রসূতি মহিলাদের শারীরিক দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে তাঁর পিঠ মালিশ করে দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে অন্তত মানসিকভাবে তিনি দুর্বল না হয়ে পড়েন।
শৌচালয় ব্যবহারে প্রসূতি মহিলাকে সাহায্য করতে হবে।
প্রসূতি মহিলার কোনওরকম সমস্যা হয়ে থাকলে চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে তার প্রসবসাথীকে।
সদ্যোজাতের যত্ন নিতে তাঁর মাকে সাহায্য করবেন সন্তানের বাবা।
জন্মের পর সদ্যোজাতের কোনওরকম সমস্যা দেখা দিলে প্রসবসাথীকে দ্রুত খবর দিতে হবে ডাক্তার বা নার্সদেরকে।
সদ্যোজাতের সবচেয়ে প্রয়োজন হল মাতৃদুগ্ধ। সেই কারণে শিশুকে মাতৃদুগ্ধ পানে সাহায্য করতে হবে প্রসবসাথীকে।
জন্মের পর সদ্যোজাতের সঙ্গে মায়ের স্পর্শ সঠিকভাবে হয়ে থাকছে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রসূতির কোন কোন সমস্যায় প্রসবসাথী ডাক্তারবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করবেন?
পেটের যন্ত্রণা।
চোখ ঝাপসা দেখা।
প্রস্রাব করার ক্ষেত্রে সমস্যা।
খিঁচুনি হওয়া।
অতিরিক্ত রক্তস্রাব।
শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত কষ্ট।
মাথা ব্যথার সমস্যা।
যখন তখন কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা।
দুর্গন্ধ যুক্ত স্রাব নির্গমন।
সদ্যোজাতের জ্বর, ঠান্ডা লাগাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
মাতৃদুগ্ধ খেতে শিশুর কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না তার খেয়াল রাখতে হবে।
কোনও কারণে সদ্যোজাত ঘুমিয়ে পড়লে পায়ে হাতের তালুতে মালিশ করে তাকেও জাগিয়ে তুলতে হবে।
নিশ্বাস প্রশ্বাসে সদ্যোজাতের কোনও অসুবিধা হলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

যিনি প্রসবসাথী হবেন তাঁর কী কী করা উচিত নয়
দ্রুত প্রসবের জন্য অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে অযথা চাপ দিতে বলবেন না।
প্রসূতির জন্য নির্দিষ্ট বিছানায় বসতে পারবেন না।
*চিকিৎসক, নার্সের পরামর্শ ছাড়া নিজের ইচ্ছেমতো উপদেশ দেওয়া যাবে না।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধ খাওয়ানো যাবে না।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না হয়ে, হাত ভালো করে না ধুয়ে প্রসূতির কাছে যেতে পারবেন না।
প্রসূতি মহিলা হাঁটাচলা করতে চাইলে তাঁকে সাহায্য করতে হবে। অযথা বিছানায় বসে থাকতে জোর করবেন না।
প্রসবসাথী ছাড়া অন্য কাউকে প্রসূতির কাছে থাকতে দেওয়া যাবে না।
হাসপাতালে থাকাকালীন কোনও কাজের জন্য আর্থিক লেনদেন করা যাবে না।
নিজের সঙ্গী ছাড়া অন্য কোনও ব্যক্তির প্রসূতির কাছে যাওয়া যাবে না।
চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রক্রিয়াতে কোনও বাধা দেওয়া চলবে না।
জন্মের পর সদ্যোজাতের দেহে কোনও তেল বা কাজল লাগানো যাবে না।

তথ্য সহায়তা : https://www.wbhealth.gov.in

Skip to content