ছবি প্রতীকী।
আজকের পর্বে আমরা আলোচনা করব প্রবীণদের পুষ্টির আরও কিছু সাধারণ দিক যেমন পানীয় জলের গুরুত্ব, নিউট্রিশনাল সাপ্লিমেন্ট-এর গুরুত্ব ইত্যাদি।
পর্যাপ্ত জল বা পানীয় পান করছেন তো?
● কথাতেই আছে জলই জীবন। প্রবীণদের ক্ষেত্রেও এটা ভীষণভাবে প্রযোজ্য। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল বা সামগ্রিক অর্থে পানীয় যার মধ্যে অন্য সব তরল খাদ্য ও পরে গ্রহণের মাধ্যমে শরীরের হাইড্রেশন রক্ষা করা ভীষণ জরুরি। পর্যাপ্ত তরল উপাদান গ্রহণের মাধ্যমে মূত্র উৎপাদনকে সঠিক রেখে দেহের বিপাকীয় বর্জ্য পদার্থকে নিষ্কাশন করার মাধ্যমে দেহকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করতে হবে। আবার কোনও কারণে দেহে তরলের বা জলের পরিমাণ অত্যধিক হয়ে গেলে তা দেহের বিভিন্ন ডিপেন্ডেন্ট পার্ট যেমন পা, হাত, তাছাড়া হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস ইত্যাদিতে জমা হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে তা প্রাণঘাতী হতে পারে।
কী কী দিক খেয়াল রাখতে হবে?
● কোনও বাধানিষেধ না থাকলে দৈনিক ২-৩ লিটার তরল যার বেশিরভাগ জল গ্রহণ করা উচিত।
● কিডনির অসুখ থাকলে অবশ্যই দৈনিক কতটা পানীয় পান করা যাবে তা চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে।
● ঠান্ডা পানীয় বা জল পান থেকে বিরত থাকুন।
● বসে জল পান করা বাঞ্ছনীয়। কোনও অবস্থাতেই শুয়ে পান করবেন না।
● একেবারে বেশি চুমুক না দিয়ে অল্প অল্প মাত্রায় চুমুক দিয়ে পান করা বাঞ্ছনীয়।
● আহারের আগে বা মধ্যে জল পান না করে শেষ হবার ১০-২০ মিনিট পর জল পান করলে ভালো হয়।
● তৃষ্ণার্ত হলে অবশ্যই জল পান করুন।
● সন্ধ্যার পর জল পানের পরিমাণ কমিয়ে আনুন। নতুবা রাতে বারবার প্রস্রাবের জন্য উঠতে হতে পারে।
● তামা বা রৌপ্যের পাত্রে জল রাখলে ভালো হয়। কারণ এগুলোর আ্যন্টিঅক্সিডেন্ট গুণ রয়েছে।
● সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর জল পান শরীরের জন্য উপযোগী।
আধা তরল খাবার মানে শুধুই চালের জাউ বা সুজি নয়
দাঁত না থাকার কারণে, গেলার অসুবিধার জন্য, অনেক বেশি বয়সে বা নানাবিধ শারীরিক সমস্যার কারণে অনেকেই তরল বা আধা তরল খাবারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। সে ক্ষেত্রে সুষম খাবার না দিলে অপুষ্টি হতে পারে। ব্লেন্ডারে বা জাউ করে যেভাবেই দেওয়া হোক, তাতে পর্যাপ্ত প্রোটিন যেমন মাছ, মাংস, ডিম ও ভিটামিনযুক্ত শাকসবজি মিশিয়ে দিন। শুধু চাল দিয়ে তৈরি জাউ বা সুজি জাতীয় খাবারে পুষ্টি হবে না। সব ধরনের খাবারই দিতে হবে। প্রয়োজন হলে বিশেষ ধরনের ক্যালোরি চার্টের জন্য পুষ্টিবিদের সাহায্য নিন।
প্রয়োজনে নিতে হতে পারে নিউট্রিশনাল সাপ্লিমেন্ট
বহুদিন রোগে ভোগার কারণে, অত্যধিক অপুষ্টির জন্য, শারীরিক নানান সমস্যার কারণে অনেক সময় শুধুমাত্র খাবারের মাধ্যমে পর্যাপ্ত পুষ্টি সম্পন্ন হয় না। তখন অনেক সময় চিকিৎসকেরা নিউট্রিশনাল সাপ্লিমেন্ট দিয়ে থাকেন যাতে পুষ্টি উপাদানগুলো সুষমভাবে বণ্টন করা থাকে। এবং পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারা যায়। তাই প্রয়োজন হলে নিউট্রিশনাল সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু অনেক সময় সাধারণ মানুষ টিভি বা পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে প্রভাবিত হয়ে নিজেরাই বিভিন্ন হেলথ সাপ্লিমেন্ট খেতে শুরু করেন বা দিতে শুরু করেন। এইসব বাজার চলতি জিনিসগুলো ততটা নিরাপদ নয়৷ তাছাড়া সব হেলথ সাপ্লিমেন্ট সবার জন্য উপযোগী নয়। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডায়াবেটিক, কিডনি রোগীদের জন্য রেনাল, যাঁদের প্রোটিন বেশি দরকার তাঁদের জন্য হাই প্রোটিন প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের নিউট্রিশনাল সাপ্লিমেন্ট রয়েছে। তাই সর্বদাই চিকিৎসকের বা ডায়াটিসিয়ানের পরামর্শে এই ধরনের নিউট্রিশনাল সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উচিত।
দেখবেন যেন ‘বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো’ না হয়ে যায়
মিষ্টির দোকানে বা চপ শিঙাড়ার দোকানে অনেক সময়ই বেশ কিছু প্রবীণদের খেতে দেখেছি। তাঁদের খাবার তাড়া বা হাবভাব দেখে বেশ বুঝতে পারা যায় যে তাঁরা এগুলো লুকিয়ে খাচ্ছেন। হয়তো বাড়িতে কোনওদিন একটা মিষ্টি বা একটা আলুর চপ বা শিঙাড়া খেতে চেয়েও পাননি। কিন্তু এই অতিরিক্ত কড়াকড়ি করতে গিয়ে আদতে কিন্তু হিতে বিপরীত হচ্ছে। গদাগাদা ওষুধ খেয়েও সুগার কন্ট্রোল নয়। চিকিৎসকও বিভ্রান্ত। ধরতেই পারা যাচ্ছে না আসল কারণ। তাই আমার নিজস্ব মতে অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করবেন না। এতে বরং শারীরিক এমনকী মানসিক ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি। একদিন একটা মিষ্টি খেলে ডায়াবেটিস রোগীর রামায়ণ মহাভারত উলটে যাবে না। একটা মিষ্টি দিয়ে বা শিঙাড়া দিয়ে সেদিন বরং অন্য খাবার একটু কমিয়ে ক্যালোরির মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। সেটা অনেক ভালো। বাড়িতে মাঝে মাঝে কিছু উপাদেয় খাদ্য বানিয়ে বয়স্ক মানুষটিকে দিন, দেখবেন মানসিকভাবে কত আনন্দ পাবেন তিনি।
কোনও কোনও ডায়াটিসিয়ান এমন ডায়েট চার্ট তৈরি করে দেন যা মেনে চলা একেবারে অসাধ্য। অনেক কিছু লেখেন যা সহজে পাওয়া যায় না বা গেলেও সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। আমি মনে করি, প্রবীণদের খাদ্য নির্বাচনে থিওরিটিকাল না হয়ে হতে হবে বাস্তববাদী বা র্যা শেনাল। তবে বেশিরভাগ পুষ্টি বিশারদ বা ডায়াটিসিয়ান বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করেই তাঁদের সুচিন্তিত পরামর্শ দেন যা সামগ্রিকভাবে প্রবীণ মানুষটির শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাকে সুনিশ্চিত করে। তাই অবশ্যই বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে তাঁদের পরামর্শ গ্রহণ অতি আবশ্যিক।
পরিশেষে বলি, পুষ্টি বা খাবার নিয়ে অযাচিত আতঙ্কিত বা চিন্তার কোনও কারণ নেই। আমাদের চারপাশে সহজলভ্য এবং সকলের আয়ত্তের মধ্যে যে খাবার পাওয়া যায় তাতেই বেশিরভাগ পুষ্টিগত উপাদান রয়েছে। তাই সঠিক পদ্ধতিতে রান্না এবং সহজ সরল কিছু নিয়মাবলি মেনে চললেই কিন্তু সুষম পুষ্টির অধিকারী হয়ে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিয়ে জীবনের এই দ্বিতীয় ইনিংসকে সুন্দরভাবে কাটাতে পারবেন আমাদের প্রবীণ প্রজন্ম।
ছবি : লেখক
দাঁত না থাকার কারণে, গেলার অসুবিধার জন্য, অনেক বেশি বয়সে বা নানাবিধ শারীরিক সমস্যার কারণে অনেকেই তরল বা আধা তরল খাবারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। সে ক্ষেত্রে সুষম খাবার না দিলে অপুষ্টি হতে পারে। ব্লেন্ডারে বা জাউ করে যেভাবেই দেওয়া হোক, তাতে পর্যাপ্ত প্রোটিন যেমন মাছ, মাংস, ডিম ও ভিটামিনযুক্ত শাকসবজি মিশিয়ে দিন। শুধু চাল দিয়ে তৈরি জাউ বা সুজি জাতীয় খাবারে পুষ্টি হবে না। সব ধরনের খাবারই দিতে হবে। প্রয়োজন হলে বিশেষ ধরনের ক্যালোরি চার্টের জন্য পুষ্টিবিদের সাহায্য নিন।
বহুদিন রোগে ভোগার কারণে, অত্যধিক অপুষ্টির জন্য, শারীরিক নানান সমস্যার কারণে অনেক সময় শুধুমাত্র খাবারের মাধ্যমে পর্যাপ্ত পুষ্টি সম্পন্ন হয় না। তখন অনেক সময় চিকিৎসকেরা নিউট্রিশনাল সাপ্লিমেন্ট দিয়ে থাকেন যাতে পুষ্টি উপাদানগুলো সুষমভাবে বণ্টন করা থাকে। এবং পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারা যায়। তাই প্রয়োজন হলে নিউট্রিশনাল সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু অনেক সময় সাধারণ মানুষ টিভি বা পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে প্রভাবিত হয়ে নিজেরাই বিভিন্ন হেলথ সাপ্লিমেন্ট খেতে শুরু করেন বা দিতে শুরু করেন। এইসব বাজার চলতি জিনিসগুলো ততটা নিরাপদ নয়৷ তাছাড়া সব হেলথ সাপ্লিমেন্ট সবার জন্য উপযোগী নয়। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডায়াবেটিক, কিডনি রোগীদের জন্য রেনাল, যাঁদের প্রোটিন বেশি দরকার তাঁদের জন্য হাই প্রোটিন প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের নিউট্রিশনাল সাপ্লিমেন্ট রয়েছে। তাই সর্বদাই চিকিৎসকের বা ডায়াটিসিয়ানের পরামর্শে এই ধরনের নিউট্রিশনাল সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উচিত।
মিষ্টির দোকানে বা চপ শিঙাড়ার দোকানে অনেক সময়ই বেশ কিছু প্রবীণদের খেতে দেখেছি। তাঁদের খাবার তাড়া বা হাবভাব দেখে বেশ বুঝতে পারা যায় যে তাঁরা এগুলো লুকিয়ে খাচ্ছেন। হয়তো বাড়িতে কোনওদিন একটা মিষ্টি বা একটা আলুর চপ বা শিঙাড়া খেতে চেয়েও পাননি। কিন্তু এই অতিরিক্ত কড়াকড়ি করতে গিয়ে আদতে কিন্তু হিতে বিপরীত হচ্ছে। গদাগাদা ওষুধ খেয়েও সুগার কন্ট্রোল নয়। চিকিৎসকও বিভ্রান্ত। ধরতেই পারা যাচ্ছে না আসল কারণ। তাই আমার নিজস্ব মতে অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করবেন না। এতে বরং শারীরিক এমনকী মানসিক ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি। একদিন একটা মিষ্টি খেলে ডায়াবেটিস রোগীর রামায়ণ মহাভারত উলটে যাবে না। একটা মিষ্টি দিয়ে বা শিঙাড়া দিয়ে সেদিন বরং অন্য খাবার একটু কমিয়ে ক্যালোরির মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। সেটা অনেক ভালো। বাড়িতে মাঝে মাঝে কিছু উপাদেয় খাদ্য বানিয়ে বয়স্ক মানুষটিকে দিন, দেখবেন মানসিকভাবে কত আনন্দ পাবেন তিনি।
কোনও কোনও ডায়াটিসিয়ান এমন ডায়েট চার্ট তৈরি করে দেন যা মেনে চলা একেবারে অসাধ্য। অনেক কিছু লেখেন যা সহজে পাওয়া যায় না বা গেলেও সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। আমি মনে করি, প্রবীণদের খাদ্য নির্বাচনে থিওরিটিকাল না হয়ে হতে হবে বাস্তববাদী বা র্যা শেনাল। তবে বেশিরভাগ পুষ্টি বিশারদ বা ডায়াটিসিয়ান বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করেই তাঁদের সুচিন্তিত পরামর্শ দেন যা সামগ্রিকভাবে প্রবীণ মানুষটির শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাকে সুনিশ্চিত করে। তাই অবশ্যই বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে তাঁদের পরামর্শ গ্রহণ অতি আবশ্যিক।
পরিশেষে বলি, পুষ্টি বা খাবার নিয়ে অযাচিত আতঙ্কিত বা চিন্তার কোনও কারণ নেই। আমাদের চারপাশে সহজলভ্য এবং সকলের আয়ত্তের মধ্যে যে খাবার পাওয়া যায় তাতেই বেশিরভাগ পুষ্টিগত উপাদান রয়েছে। তাই সঠিক পদ্ধতিতে রান্না এবং সহজ সরল কিছু নিয়মাবলি মেনে চললেই কিন্তু সুষম পুষ্টির অধিকারী হয়ে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিয়ে জীবনের এই দ্বিতীয় ইনিংসকে সুন্দরভাবে কাটাতে পারবেন আমাদের প্রবীণ প্রজন্ম।
ছবি : লেখক
লেখক: কর্ণধার ‘বাঁচবো’, সহ সম্পাদক জেরিয়াট্রিক সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া, পশ্চিমবঙ্গ শাখা৷ উপদেষ্টা, প্রোটেক্ট দ্যা ওয়ারিয়ার্স। যোগাযোগ : ‘বাঁচবো’, ফোন : ৯৯০৩৩৮৮৫৫৬