ইউরিক অ্যাসিড ঠিক কী?
আমাদের শরীরে পিউরিন নামক একটি প্রোটিন জাতীয় পদার্থ থাকে, পিউরিন শরীরে বিপাক ক্রিয়ার পরে তৈরি হয় ইউরিক অ্যাসিড। এই ইউরিক অ্যাসিড হল একটি বর্জ্য পদার্থ। এই বর্জ্য পদার্থটি আমাদের রক্তে মিশে থাকে। কিডনির কাজ হল এই বর্জ্য পদার্থটিকে ইউরিন বা মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেওয়া।
কখন রক্তে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যায়?
● কিডনিতে কোনও সমস্যা থাকলে ইউরিক অ্যাসিড নামক পদার্থটিকে শরীর থেকে বের করতে না পারে রক্তে হাই ইউরিক অ্যাসিড হয়ে যায়।
● ইউরিক অ্যাসিড বাড়ার আর একটি কারণ হল কিডনি সঠিক কাজ করছে কিন্তু মানুষ পিউরিন যুক্ত খাবার খাচ্ছে।
● শরীরে যদি কোনও মেটাবলিজম রেলেটেড ডিজিজ থাকে যেমন ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, হাইপোথাইরয়েড এই সব কারণেও রক্তে ইউরিক অ্যাসিড বাড়তে পারে।
● নিয়মিতভাবে যাঁরা কিছু অ্যালোপ্যাথি ওষুধ খান যেমন– aspirin, thiazide, Bita blocker ইত্যাদি; পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে তাঁদের ইউরিক অ্যাসিড বাড়তে পারে।
● বংশগত কারণেও ইউরিক অ্যাসিড বাড়তে পারে।
● এছাড়া মহিলাদের থেকে পুরুষের ইউরিক অ্যাসিড বাড়ার প্রবণতা বেশি।
● শরীরে কী কী সমস্যা হয়?
●● ইউরিক অ্যাসিড বেশি থাকলে ইউরিক অ্যাসিড-এর সুচাকৃতি ক্রিস্টাল হাড়ের জয়েন্টে জমা হয় ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি জয়েন্ট পেইন-এ ভোগেন যাকে ‘গাউট’ বাত বলে। সবার আগে পায়ের বুড়ো আঙুলের প্রথম জয়েন্টটি আক্রান্ত হয় এবং পরবর্তী সময়ে অন্য জয়েন্টেও প্রভাব বিস্তার করে।
● ইউরিক অ্যাসিডে আক্রান্ত ব্যক্তি কী কী খাবার খাবেন না?
●● এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাই পিউরিন যুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে–লাল মাংস যেমন পাঁঠা, গোরু, মহিষ, ভেড়া এদের মাংস খাওয়া যাবে না, সামুদ্রিক মাছ, কৃত্রিম ঠান্ডা পানীয়, প্যাকেটজাত ফলের রস, পিচ্ছিল জাতীয় সবজি যেমন ঢেড়শ, পুঁইশাক, মাশরুম ইত্যাদি খাওয়া যাবে না। আগে বলা হত ডালজাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না কিন্তু বর্তমান পরীক্ষায় উঠে এসেছে ডাল, মটর-এ পিউরিন খুব কম থাকে এছাড়া উদ্ভিদ জাতীয় পিউরিন ইউরিক অ্যাসিড বাড়াতে ভূমিকা নগণ্য তাই পরিমিত পরিমাণে খাওয়া যেতেই পারে। অ্যালকোহল কোনওভাবেই খাওয়া যাবে না।
● ইউরিক অ্যাসিডে আক্রান্ত ব্যক্তি কী কী খাবার খাবেন?
●● সবুজ শাকসবজি খাবেন, খাবারে তেল, ঘি, মাখন কম করতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানীয় জল খেতে হবে যা ইউরিক অ্যাসিড প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে।
● ইউরিক অ্যাসিড আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনযাত্রার মান কীরূপ হবে?
●● যাঁদের শরীরের ওজন বেশি তাঁদের ইউরিক অ্যাসিড হওয়ার সম্ভাবনাও সবথেকে বেশি। ফলত তাদের দৈহিক ওজন কমানোর জন্য শরীরচর্চা আবশ্যক। তাঁরা যোগব্যায়াম করতে পারেন। কারণ এতে আছে অনেক সুফল।
● ইউরিক অ্যাসিডের চিকিৎসা পদ্ধতি কী?
প্রতিটি মানব শরীরেই ইউরিক অ্যাসিড থাকে। পুরুষের ক্ষেত্রে ৭ মিলিগ্রাম পার ডেসিলিটারের বেশি হলে এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ৬ মিলিগ্রাম পার ডেসিলিটারের বেশি হলে হাই ইউরিক অ্যাসিড বলা চলে। একটি বিশেষ নীতির উপর দাঁড়িয়ে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করা হয়, তা হল হলিস্টিক ট্রিটমেন্ট। রুগির শারীরিক ও মানসিক স্থিতির যথোপযুক্ত পর্যালোচনা করেই আমরা চিকিৎসা শুরু করি। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার মাধ্যমে শরীরের বিপাক ক্রিয়ার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা হয়, ফলে ইউরিক অ্যাসিড ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যায়। এর সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত রুগির ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ দেখার জন্য পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়। তারপর সেই পরীক্ষার রিপোর্টের উপর দাঁড়িয়েই চলে চিকিৎসা পদ্ধতি। হাই ইউরিক অ্যাসিডের ক্ষেত্রে রুগিকে সঠিক জীবনযাত্রার মান ও সুনির্দিষ্ট ডায়েটের কথা বলা হয়। যা পূর্বে উক্ত করা হয়েছে। এর পরে আসে ওষুধের প্রসঙ্গ।
● ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে কী কী ওষুধ খেতে হবে?
●● হাই ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ আছে। যেমন–কলচিকাম, আর্টিকাইউরেন্স, লেডাম পালসেটাম, লিথিয়াম কার্ব, প্রভৃতি। তবে কোন ওষুধ কোন রুগির জন্য উপযুক্ত, কোন পটেন্সি ভালো কাজ করবে এবং কেমনভাবে তা খেতে হবে তা একজন দক্ষ হোমিওপ্যাথি ডাক্তারবাবুই বলতে পারবেন। সুতরাং ডাক্তারবাবুর পরামর্শ অনুযায়ী চলুন।
যোগাযোগ : ৭০০৫৬৪৩২৩১
ছবি : চিকিৎসকের সৌজন্যে