বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর, ২০২৪


শহিদ মিনার। ছবি সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।

আমার মাকে মা বলে ডাকতে দেবে না, তা-ও কি হয়! দুর্বৃত্ত শাসক যত অন্যায় আবদারই করুক না কেন দামাল ছেলেগুলোর সঙ্গে আপামর বাঙালি ফুঁসে উঠেছিল সে দিন। রক্ত জবার মতো দগদগে যে ক্ষত পিঠে জ্বলজ্বল করছে আমাদের, যে অপমান আমাদের বাকরুদ্ধ করে তুলেছিল সে দিন, যে বেদনায় আমরা নীল হয়েছি প্রতি মুহূর্তে, তা আমাদের স্বস্তি দেয়নি। স্লোগানে কেঁপেছিল বিশ্ব। ঝলসে উঠেছিল শাণিত কথার তরবারি। হাজার বছরের গ্লানি আর পরাধীন স্নায়ুতন্ত্রে যেন আগুন ধরে গিয়েছিল সে ফাল্গুনে। পলাশের রং তো শহিদের রক্তের প্রতীক মাত্র। ভিতু বাঙালি, বুকের চাপা আগুনকে প্রবল প্রতিরোধে মায়ের ভাষার অমর্যাদা হতে দেয়নি মোটেই। ওরা ভেবেছিল খর্ব দেহ অনার্য বাঙালি চিরদিন মাথা নিচু করে মেনে নেবে সমস্ত অনাচার। রফিক, বরকত, জব্বার, সালাম তো মাথা নিচু করবার ছেলে ছিল না। বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিল রাইফেলের নলের সামনে। বুক পকেটে মায়ের চিঠিটা রক্তে ভিজে গিয়েছিল। ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছিলেন মা। মায়ের কোলে শুয়ে আর গল্প শোনা হয়তো হল না তার। কিন্তু, আমরা তো আজ স্পর্ধায় মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছি।

কবিতা লেখার হাতগুলোতে ভারী রাইফেল গর্জে উঠেছে প্রবল বিক্রমে। হার না-মানা বাঙালি বারবার প্রমাণ করেছে তার শক্তি আর সাহস। বাহান্ন থেকে একাত্তরে। আজও আমরা সেই ভালোবাসার সেই আত্মদানের উত্তরাধিকার বহন করে চলেছি। বুক দিয়ে আগলে রেখেছি মা আর মাতৃভূমিকে। একদিন রংপুরে নুরুলদীনের ডাকে যেমনি করে কেঁপে উঠেছিল বাংলা, তেমনি করেই চিরকাল চিরদিন কেউ না কেউ ডেকে যাবে আমাদের। কখনও সালাম বা কখনও বা নুর হোসেন।
আমার প্রতিবাদের ভাষা
আমার প্রতিরোধের আগুন
দ্বিগুণ জ্বলে যেন
দ্বিগুণ দারুণ প্রতিরোধে।

Skip to content