শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


ছবি সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

প্রতাপ চাঁদের থিয়েটারে নিয়মিত নাটক দেখতে আসতেন এক মাড়োয়ারি তরুণ-যুবক দর্শক। নাম গুর্মুখ রায়। তিনি নতুন নাট্যশালা খুলবার প্রতিশ্রুতি দিলেন। শর্ত একটাই বিনিময়ে বিনোদিনী নামের অভিনেত্রীকে থাকতে হবে গুর্মুখ রায়ের সঙ্গে। গিরিশচন্দ্র এ প্রস্তাব মেনে নেন। বিনোদিনী থিয়েটারের প্রতি দুর্বল হওয়ায় গিরিশচন্দ্র যেমনটি করতে বললেন তেমনটি করতে সম্মত হলেন। প্রস্তুতিপর্বে নতুন নাট্যশালার নাম বিনোদিনীর নামানুসারে প্রথমে ‘বিনোদিনী থিয়েটার’ পরে তার নামের আদ্যক্ষর অবলম্বনে ‘বি থিয়েটার’ রাখার কথা হলেও তা রক্ষিত হয়নি। সহকর্মী অভিনেতাদের চক্রান্তে এই নাট্যশালা স্টার থিয়েটার নামে রেজিস্ট্রি করা হয়।
১৮৮৩ সালের একুশে জুলাই শনিবার গিরিশচন্দ্রের ‘দক্ষযজ্ঞ’ নাটকের প্রথম অভিনয় হয় স্টার থিয়েটারে। প্রথম অভিনয় রজনীতে বিভিন্ন ভূমিকায় রূপদান করলেন দক্ষের ভূমিকায় গিরিশচন্দ্র ঘোষ, মহাদেবের ভূমিকায় অমৃতলাল মিত্র, দধীচির ভূমিকায় অমৃতলাল বসু, সতীর ভূমিকায় বিনোদিনী, ভৃগুপত্নীর ভূমিকায় গঙ্গামণি, তপস্বিনীর ভূমিকায় ক্ষেত্রমণি প্রমুখ। শুধু এই নাটকের নয় গিরিশচন্দ্রের অধিকাংশ নাটকের সুরকার ও সংগীত শিক্ষক ছিলেন সংগীতাচার্য বেণীমাধব অধিকারী। বেণী ওস্তাদ নামে যিনি সমধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি যে কতখানি সুদক্ষ সুরকার ও সংগীত শিক্ষক ছিলেন ‘দক্ষযজ্ঞ’ নাটকের বিভিন্ন রাগাশ্রয়ী তাল ভিত্তিক আটটি গান তার স্বাক্ষর বহন করছে।
বিনোদিনী তাঁর ‘আমার কথা বা বিনোদিনীর কথা’ গ্রন্থে ‘দক্ষযজ্ঞ’-এর বর্ণনা প্রসঙ্গে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার চমৎকার বিবরণ দিয়েছেন; ‘আমাদের এইসব দক্ষযজ্ঞ ব্যাপার। কিন্তু যখন অভিনয় আরম্ভ হইল, তখন দেবতার বরে যেন সত্যই দক্ষালয়ের কার্য আরম্ভ হইলো। বঙ্গের গ্যারিক গিরিশ বাবুর সেই গুরুগম্ভীর তেজপূর্ণ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মূর্তি যখন স্টেজে উপস্থিত হইল তখন সকলেই চুপ। তাহার পর অভিনয় উৎসাহ সে কথা লিখিয়া বলা যায় না। গিরিশ বাবুর দক্ষ, অমৃত মিত্রের মহাদেব যে একবার দেখিয়াছে, সে বোধহয় কখনোই তাহা ভুলিতে পারিবে না।’
গুর্মুখ রায়ের সঙ্গে নটী বিনোদিনীর সম্পর্ক মাত্র ছয় মাসের। ১৮৮৩ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত পারিবারিক চাপে পড়ে মাত্র পাঁচটি নাটক প্রযোজনা করে স্টার থিয়েটারের সমস্ত স্বত্ব ছেড়ে দিতে তিনি বাধ্য হন। গুর্মুখ রায় প্রথমে বিনোদিনীকে থিয়েটার-এর সমস্ত স্বত্ব দান করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু গিরিশচন্দ্রের প্রচেষ্টায় গুর্মুখ রায়ের উপর বিনোদিনীর প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে মাত্র ১১ হাজার টাকায় ৪ জনের নামে স্টার থিয়েটার কেনা হয়। এঁরা হলেন অমৃতলাল মিত্র, অমৃতলাল বসু, দাসুচরণ নিয়োগী এবং হরিপ্রসাদ বসু। লোকচক্ষুর বাহ্যিক দৃষ্টিতে ‘স্টার থিয়েটার’ বিক্রি করে তিনি থিয়েটার ও বিনোদিনীর সম্পর্ক পরিহার করলেন বটে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিনোদিনীকে ভুলতে পারেননি কোনওদিন। এই নাট্যশালায় ইচ্ছে করলে গিরিশচন্দ্র স্বত্বাধিকারী হতে পারতেন। কিন্তু ভাই অতুলকৃষ্ণকে তিনি কথা দিয়েছিলেন যে যতদিন তিনি থিয়েটারের সংস্পর্শে থাকবেন ততদিন তিনি কোনও থিয়েটার-এর স্বত্বাধিকারী হওয়ার চেষ্টা করবেন না।

Skip to content