রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

আমাদের পেটের পিছন দিকে অগ্ন্যাশয় নামক একটি গ্রন্থি থাকে। সেই গ্রন্থি থেকে কেমিক্যাল নিঃসরণ হয়। যেটিকে আমরা ইনসুলিন বলি। ইনসুলিনের কাজ হচ্ছে আমাদের রক্তে সুগারের মাত্রাটিকে কমিয়ে ফেলা। টাইপ-টু ডায়াবেটিসে পুরোপুরি কিন্তু ইনসুলিন বন্ধ হয় না। যেখানে ১০০ ভাগ ইনসুলিন নষ্ট হওয়ার কথা সেখানে নিঃসরণ হয় ৪০-৫০ ভাগ। কিন্তু সেই নিঃসৃত ইনসুলিন যেভাবে কাজ করার কথা সেভাবে কাজ করতে পারছে না। এর কারণ হল প্রধানত আমাদের শরীরে মেদের আধিক্য। এই মেদ বা চর্বির বৃদ্ধির পিছনে যেটি মূল কারণ, সেটি হল ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়া। এই কারণেই আমাদের শরীরে অবশিষ্ট ইনসুলিনটি কাজ করতে পারছে না।

এই ইনসুলিন কীভাবে কাজ করবে আমাদের শরীরে? দুটি পদ্ধতি আছে। একটি হল শরীরে যেটুকু ইনসুলিন আছে সেটুকু বের করতে হবে। এর জন্যও কিছু ওষুধ আছে। এই পদ্ধতিতে চললে সমস্যাও কিছু আছে। তাহলে আমাদের শরীরে যে ইনসুলিন আছে, সেটি কিছুদিনের মধ্যে অর্থাৎ ৫-১০ বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যেতে পারে। তারপর বাইরে থেকে আমাদের ইনসুলিন নিতে হবে। কারও কারও একবার, দু’বার, তিনবার বা চারবার পর্যন্তও ছুঁচ ফুটিয়ে ইনসুলিন নিতে হয়।

আর একটি পদ্ধতি হল, আমাদের যে অবশিষ্ট ইনসুলিন আছে সেটি যাতে সঠিকভাবে কাজ করতে পারে তার ব্যবস্থা করা। প্রথমত আমাদের শরীরের মেদকে কমিয়ে ফেলতে হবে। অর্থাৎ আমাদের যেটা আদর্শ ওজন সেই ওজনের কাছাকাছি নিজেকে নিয়ে যেতে হবে। সেই ওজনে নিজেকে নিয়ে যেতে গেলে নিজের খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন করতে হবে এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। নিয়মিত শরীরচর্চা বলতে আমাদের রোজ ৪০-৪৫ মিনিট হাঁটতে হবে। যাঁদের হাঁটার সময় নেই তাঁরা জিমে গিয়ে ট্রেট বিলও করতে পারেন বা সাঁতার কাটতে পারেন। একটা কথা মনে রাখবেন, না হেঁটে বা না শরীরচর্চা করে ডায়াবেটিস কমানো অনেকটা না পড়ে পরীক্ষায় বসার মতো। সুতরাং আমাদের প্রথম যেটা করতে হবে, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চা, যা মেদকে কমাতে সাহায্য করবে।
এরপর আপনার শরীরে ব্লাডসুগারের পরিমাণ কতটা তা দেখে আপনাকে কিছু কিছু ওষুধ খেতে হবে। আমরা সেই ধরনের ওষুধই বেছে নেব যেটা খেলে শরীরে যেটুকু ইনসুলিন অবশিষ্ট আছে তা কাজ করতে পারে।

এখন বাজারে বিভিন্ন উচ্চমানের ওষুধ এসেছে। ইনসুলিন যাতে কাজ করে সেরকম কোনও ওষুধ। কোনও ওষুধ ইউরিনের মধ্য দিয়ে ব্লাডসুগারটিকে বের করে দেয়। আবার কোনও ওষুধ শরীর থেকে ইনসুলিন বের করতে সাহায্য করে। এটি নির্ভর করছে আপনি কোন স্টেজে আছেন তার উপর।ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে আপনাকে শুরু করতে হবে।

সবচেয়ে জরুরি দ্বিতীয় পদ্ধতিটি। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চা এবং এমন ওষুধ নির্বাচন যেগুলি ইনসুলিনকে সঠিকভাবে কাজ করাতে সাহায্য করবে। এগুলি করলে ইনসুলিনের উপর নির্ভরশীল হওয়াটা আমরা কমিয়ে ফেলতে পারব, ইনসুলিনকে আমরা এড়িয়ে চলতে পারব ভালো সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চার মধ্য দিয়ে। এটিই হচ্ছে ডায়াবেটিস চিকিৎসার মূল পদ্ধতি। সুতরাং ডায়াবেটিস হয়েছে বলে চিন্তার কোনও কারণ নেই। ডায়াবেটিসকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধরে নিয়ে সঠিক বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এগিয়ে চলুন৷

Skip to content