জন্মের পর থেকে কমবেশি কাঁদে সদ্যোজাতরা। এটা খুবই সাধারণ একটি বিষয়। অনেকসময় দেখা যায় খিদে পেলে, প্রচুর ঘুম পেলে কিংবা কোনও শারীরিক সমস্যা হলে যখন-তখন বাচ্চা কাঁদে। কিন্তু যদি জন্মদাত্রী মা যথেষ্ট যত্ন নেওয়ার পরেও কোনও শিশু সপ্তাহে অন্তত তিন দিনে তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কান্নাকাটি করে, তাহলে বুঝতে হবে শিশুটি অতিরিক্ত কাঁদছে। কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস বয়সি শিশুদের মধ্যে এই অতিরিক্ত শিশু কাঁদলে প্রথমেই ধারণা করা হয় যে, শিশুর খিদে পেয়েছে। সেইসময় শিশু অস্থির হয়ে ওঠে। আবার ডায়পার নোংরা থাকলেও অস্বস্তির কারণে শিশু কেঁদে ওঠে। যখন শিশু ক্লান্ত হয়, তখন ঘুমের প্রয়োজন হয়। আর ঠিক সেই সময়ই কাঁদতে থাকে শিশু। অনেক সময় পেটের সমস্যা হলেও শিশু কাঁদে। আবার বেশি ঠান্ডা লাগলে কিংবা গরম লাগলেও বাচ্চা কাঁদতে থাকে। এগুলি খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু বাচ্চার অতিরিক্ত কান্না কি কোনও শারীরিক সমস্যার ইঙ্গিত দিচ্ছে? সাজানো থাকল কিছু প্রশ্নোত্তর।
● বাচ্চার অতিরিক্ত কান্না শারীরিক সমস্যার ইঙ্গিত নয় তো?
●● অনেক সময় খিদে পেলে বা জল তেষ্টা পেলে বাচ্চা কাঁদে। এছাড়াও, ডায়পার ভিজে গেলে কিংবা অতিরিক্ত খাবার খাওয়ানোর কারণেও বাচ্চা কাঁদতে থাকে। এগুলোর কোনওটাই রোগ নয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে এমন হয়, কোনও রোগ না থাকা সত্ত্বেও বাচ্চা কাঁদছে। সেই সময় মাকে বাচ্চার দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। যেমন, যদি কোনও বাচ্চা টয়েলেটের আগে বা টয়লেটের পরে কাঁদে তাহলে বুঝতে হবে বাচ্চাটি মূত্র সংক্রান্ত কোনও সংক্রমণের শিকার হয়েছে। আবার সদ্যোজাতদের ক্ষেত্রে প্রায়ই কানে সংক্রমণ দেখা দেয়। কানের ভিতর পুঁজ পর্যন্ত জমতে পারে। ফলে যন্ত্রণায় বাচ্চা কাঁদে। তাই বাচ্চা অতিরিক্ত কাঁদলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
● বাচ্চার সঠিক যত্নে মাকে কোন কোন দিকে নজর রাখতে হবে?
●● বাচ্চা অতিরিক্ত কাঁদলে মাকে বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে। যদি দেখা যায়, বাচ্চার সঠিক যত্ন নেওয়া সত্ত্বেও বাচ্চা কাঁদছে, তাহলে তার কোথায় সমস্যা হচ্ছে সেটা আগে বুঝতে হবে মাকে। সদ্যোজাত ছেলেদের ক্ষেত্রে অনেক সময় ‘টর্সন অফ টেস্টিস’ ধরা পড়ে। সদ্যোজাত শিশুটির টেস্টিস যদি ঘুরে যায় তাহলে প্রচণ্ড যন্ত্রণায় ছটফট করতে পারে সে। কান্না থামানো এই সময় মুশকিল হয়ে পড়ে। তবে এটি কোনও রোগ নয়, এর সঠিক চিকিৎসা করলে বাচ্চা সুস্থ হয়ে যায়। এছাড়াও, সদ্যোজাতর ইনটেসটাইনাল অবস্ট্রাকশন এবং ইন্ট্রাশাসেপশন হওয়ার প্রবণতা থাকে সর্বাধিক। তাই খাবার খাওয়ানোর সময় মাকে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে।
খাওয়ানোর সময় যদি খাবার কোথাও গিয়ে আটকে যায় তাহলে বাচ্চার পেট ফুলে যেতে পারে। সেই সময় বাচ্চার কান্না কিছুতেই থামানো যায় না। কাঁদার পাশাপাশি বাচ্চা বমি করতে পারে, মলত্যাগ করা বন্ধ করে দিতে পারে। এই সমস্যা থেকে বাচ্চাকে বাঁচাতে অপারেশন পর্যন্ত করতে হতে পারে। সেই কারণে এইসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এই সমস্যাগুলি বাচ্চার কোনও রোগ নয়। এগুলি সবই ফিজিওলজিক্যাল সমস্যা। আর তাই বাচ্চা অতিরিক্ত কাঁদলে মাকে একটু বেশি নজর রাখতে হবে বাচ্চার প্রতি।
● জন্মের পর সদ্যোজাতর মাথার নীচে সরষের বালিশ রাখার আসল কারণ কী?
●● অনেক সময় দেখা যায় তুলোর তৈরি বালিশে মাথা দেওয়ার কারণে শিশুর প্রাণহানি পর্যন্ত হয়। এই ধরনের বালিশে বাচ্চার মাথা রেখে শোয়ানো হলে বাচ্চাটি পাশ ফেরার সময় তার নাক বালিশে চাপা পড়ে যেতে পারে। ফল খুব মারাত্মক হতে পারে বাচ্চার। চিকিৎসকদের ভাষায় এটিকে ‘ইনফ্যান্ট ডেথ সিন্ড্রোম’ বলে। বর্তমানে এই ‘ইনফ্যান্ট ডেথ সিন্ড্রোম’ প্রায়ই হয়ে থাকে। তাই এক্ষেত্রে সরষের বালিশ ব্যবহার করলে বিপদ কমবে। কারণ সরষের বালিশ, তুলোর বালিশের মতো অসমান হয় না। তাই সদ্যোজাতর মাথার নীচে সরষের বালিশ রাখলে মাথার আকার যেমন গোল হবে, তেমনই শিশুমৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনাও এড়ানো যাবে।
● শীতকালে অতিরিক্ত গরম পোশাক কি বাচ্চার ক্ষতি করে?
●● শীতকালে ঠান্ডা লাগার ভয়ে অনেকেই বাচ্চাকে একসঙ্গে দুটো তিনটে গরম পোশাক পরান। সেটা বাচ্চার পক্ষে সত্যিই ক্ষতিকর। মনে রাখতে হবে বেশি শীত করলে বা বেশি গরম করলে বাচ্চার কষ্ট হয়, এটা যেমন ঠিক তেমন কোনও কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়। শীতকালে বাচ্চার গায়ে দুটো লেয়ার অর্থাৎ দুটো গরম পোশাক থাকাই যথেষ্ট। এর বেশি গরম পোশাক পরালে বাচ্চার অস্বস্তি হতে পারে। শীতে সোয়েটারের পাশাপাশি বাচ্চাকে মাথায় উলের টুপি আর পায়ে মোজা পরানোও যেতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে, বাচ্চার জন্য যে শীতের পোশাকগুলি ব্যবহার করবেন সেগুলো যেন উলের হয়। শীতকালে উলের আরামদায়ক পোশাকেই শিশুরা স্বস্তিতে থাকে।