
ছবি: প্রতীকী।
শোনা যায়, রং মেখে নিজেকে অসুন্দর করে অপশক্তিকে ভয় দেখানোর একটা চেষ্টা রঙের উত্সবের মর্মে আছে। প্রতিবছর দোল কিংবা হোলি এলে শ্রীকৃষ্ণের গোপিনী-সহযোগে দোলযাত্রায় মেতে ওঠার কথা স্মরণ করে সকলেই। দোলের রং-এ প্রেম, অপ্রেম, বিরহ, বিস্মৃতি কিংবা ভাঙা দিনের মধুর ‘মুরতিখানি’-ও ভেসে ওঠে। প্রজন্মবাহিত হয়ে সেই রং নতুন দিনের গায়ে এসে লাগে।
দোল আর বসন্ত যেন সমার্থক। বসন্তের রং-এর দোল জাগে প্রকৃতিতে, মানুষের মনেও। এই লেখায় সেই মুগ্ধতাটুকু সরিয়ে রাখলাম। কৃষ্ণচূড়া অথবা সর্ষেফুলের রং দেখে কবি একদা উদ্বেল হয়েছিলেন, যথার্থ-ই বুঝেছিলেন রং যদি অন্তরের মর্মলোকে পৌঁছে যায় তবেই এই উত্সবের সার্থকতা, তবে রং কি আদৌ পৌঁছে যাচ্ছে মর্মে মর্মে?
দোল আর বসন্ত যেন সমার্থক। বসন্তের রং-এর দোল জাগে প্রকৃতিতে, মানুষের মনেও। এই লেখায় সেই মুগ্ধতাটুকু সরিয়ে রাখলাম। কৃষ্ণচূড়া অথবা সর্ষেফুলের রং দেখে কবি একদা উদ্বেল হয়েছিলেন, যথার্থ-ই বুঝেছিলেন রং যদি অন্তরের মর্মলোকে পৌঁছে যায় তবেই এই উত্সবের সার্থকতা, তবে রং কি আদৌ পৌঁছে যাচ্ছে মর্মে মর্মে?
বসন্ত প্রেমের ঋতুর মর্যাদা নিয়ে মানুষের সমাজ আর আকাঙ্ক্ষার অনেকটা জুড়ে আছে। ইস্কুলে বসন্তকালের রচনায় দোল উৎসবের উল্লেখটুকু না থাকলে নম্বর কাটা যায়। বসন্ত এমন-ই দোল দিয়ে যায় মনে মনে। জীবনে সারি সারি বসন্ত পার করে মানুষের বেঁচে থাকার রহস্যে গ্রীষ্মের দহন, শীতের শিরশিরে হাওয়া কিংবা অবিশ্রান্ত বর্ষণটুকুও মিশে থাকে, তবে সেসব পার করে জীবন এগিয়ে চলে বসন্তকে সামনে রেখে। ঋগ্বেদের ঋষির একশোখানি শরৎ অনায়াসে বেঁচে থাকার বাসনায় বোঝা যায় জগতে একচেটিয়া বলে কিছুই হয় না যেন। কখনও শরৎ, কখন বসন্ত মনোহরণ হয়ে মানুষের গায়ে পুলক, মনে রং আর চোখে ঘোর জাগিয়েছে।
ফাল্গুন আর চৈত্রের দুটি মাসেই বসন্তের রাজত্ব। তার মধ্যে ফাল্গুনমাস যেন শোকাতীত পূর্ণ আনন্দরূপ নিয়ে এসে দাঁড়ায়। চৈত্রের হাওয়ায় অনেকখানি শূন্য-রিক্ত হাহাকার মিশে থাকে। প্রেমের অনুষঙ্গে চৈত্ররজনী, পূর্ণশশী, মলয়বায়ু কিংবা বসন্তের উজ্জ্বল নবসাজ প্রাচীন সাহিত্য, শিল্প থেকে আধুনিক মননে সমান প্রাসঙ্গিক থেকে গেছে। এই বিশেষ কালখণ্ডের নানা প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রং-এর ঘনঘটা যেন দোলপুর্ণিমার এই বিশেষ উত্সবের মুখ্য প্রকরণ হয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে।
ফাল্গুন আর চৈত্রের দুটি মাসেই বসন্তের রাজত্ব। তার মধ্যে ফাল্গুনমাস যেন শোকাতীত পূর্ণ আনন্দরূপ নিয়ে এসে দাঁড়ায়। চৈত্রের হাওয়ায় অনেকখানি শূন্য-রিক্ত হাহাকার মিশে থাকে। প্রেমের অনুষঙ্গে চৈত্ররজনী, পূর্ণশশী, মলয়বায়ু কিংবা বসন্তের উজ্জ্বল নবসাজ প্রাচীন সাহিত্য, শিল্প থেকে আধুনিক মননে সমান প্রাসঙ্গিক থেকে গেছে। এই বিশেষ কালখণ্ডের নানা প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রং-এর ঘনঘটা যেন দোলপুর্ণিমার এই বিশেষ উত্সবের মুখ্য প্রকরণ হয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে।
আরও পড়ুন:

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৫০: রোজই দেখি আলাস্কা পর্বতশৃঙ্গের বাঁ দিকের চূড়া থেকে সূর্য উঠতে

ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব-৫৩: ‘বালক’ পত্রিকার প্রথম সংখ্যাতেই রবীন্দ্রনাথ ‘মুকুট’ লিখতে শুরু করেন
অশুভকে দমন করার নানা শাস্ত্রীয় আচার, সাংস্কৃতিক প্রয়াস, সামাজিক বোধ আমাদের উত্সবের অঙ্গে অঙ্গে জেগে থাকে। বসন্তের একদিকে যেমন পূর্ণতা, প্রেমের নবসাজ, তেমনই অন্যদিকে করাল আধি ব্যাধির আশঙ্কা। একদা মহামারীর রূপ কেমন হতো তা এই সহস্রাব্দের মানুষ অভিজ্ঞতায় জেনেছে। সেই অশুভকে দমন করার কিছু প্রচেষ্টা ন্যাড়াপোড়া, রং মেখে নিজেকে অজ্ঞাতপরিচয় করে তোলার মধ্যে আছে। টেনিদার গল্পেই দেখা গেছে জ্যান্ত মানুষকে মড়া সাজিয়ে খাটিয়ায় চাপিয়ে তাকে লাল রং-এ রাঙিয়ে খুনের লাশ বানানোর স্টোরি। একদা ফাগ কিংবা আবিরেই আটকে থাকলেও যুগের সঙ্গে সঙ্গে রঙখেলার ধারণা ও ধরণ বদলে গিয়েছে। জলভরা বেলুন কিংবা বাঁদুরে রং-এর প্রচলন আগেও ছিল, স্বেচ্ছায় রং মাখার পাশাপাশি চড়াও হয়ে অনিচ্ছুক নিরীহ শিশু থেকে অবোধ পশু সকলকেই টার্গেট করা হতো। এই নিয়ে সকলেরই নানা অম্লমধুর অভিজ্ঞতা থাকে। কিন্তু কালে কালে আবিরখেলা নয়, রং খেলা হয়ে উঠেছে মুখ্য। উত্সব থেকে আবেগ বা অনুভূতি অনেকটাই ফিকে হয়ে প্রদর্শন হয়েছে আসল ও শেষ কথা।
দোল এবং হোলি এখন একত্রে দোলি, বাঙালির উত্সব, ভারতের উত্সব এইসব হিসেব নিকেশ এখন ততটা কিছু নয়। রং-এর উত্সব এখন বাণিজ্যের রং-এ রঙিন। টিভিতে মেগাসোপে সকলে এই সময় সাদা পোশাক পরে রং খেলে, মারা গেলেও একই পোশাক পরে শোক করে। অথবা, বিচিত্র উপায়ে দোল খেলে রিলস বানিয়ে হাততালির হাটে বিকোয়। দোলের রং গায়ে কিংবা জামায় লাগলে তাকে মুছে ফেলার প্রাণান্তকর চেষ্টাগুলো মনে পড়লে হাসি পায়। এই তো কী সুন্দর সকলে যেচে জামায় রং লাগাচ্ছে।
দোল এবং হোলি এখন একত্রে দোলি, বাঙালির উত্সব, ভারতের উত্সব এইসব হিসেব নিকেশ এখন ততটা কিছু নয়। রং-এর উত্সব এখন বাণিজ্যের রং-এ রঙিন। টিভিতে মেগাসোপে সকলে এই সময় সাদা পোশাক পরে রং খেলে, মারা গেলেও একই পোশাক পরে শোক করে। অথবা, বিচিত্র উপায়ে দোল খেলে রিলস বানিয়ে হাততালির হাটে বিকোয়। দোলের রং গায়ে কিংবা জামায় লাগলে তাকে মুছে ফেলার প্রাণান্তকর চেষ্টাগুলো মনে পড়লে হাসি পায়। এই তো কী সুন্দর সকলে যেচে জামায় রং লাগাচ্ছে।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০৫: বনবাসে অর্জুনের অসংযত জীবন, আশ্রয়দাতার বিশ্বাসভঙ্গ কি অনুসরণযোগ্য আচরণ?

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৮৯: উদ্বোধনের ঠাকুরঘরে মা সারদার সঙ্গে স্বামী অরূপানন্দের কথোপকথন
দোকানে দোকানে মোড়ে মোড়ে লাল-নীল-হলুদ-সবুজ কিংবা সোনালী রং-এর-দোকান, না ওঠার গ্যারান্টিযুক্ত ঘন কালো রং, বেলুন, পিচকারি, বিচিত্র মুখোশ, নকল চুল এসব দোলের অনুষঙ্গ। যেমন কামদেব সস্ত্রীক পুষ্পধনু, কোকিল, বসন্ত ইত্যাদি নিয়ে মহাদেবের ধ্যান ভাঙাতে এসেছিলেন এও তেমন বুঝি। নানা রকমের ও অভিনব আকার ও মাপের পিচকারি দোলের আকর্ষণ। আম জাম, কাঁঠাল, বন্দুক, কামান, স্টেনগান, হাতবোমা সকলকিছুই পিচকারি হতে পারে। জলের গতি ও পরিমাণ, লেটেস্ট ট্রেণ্ড অনেককিছুর ওপর নির্ভর করে দাম ও দামাদামি নির্ভর করে। রাসায়নিক রং-এ ত্বকের সমস্যা, অ্যালার্জি এসবের জন্য ভেষজ রং আছে, সর্বোপরি সব রকমের রং-এই ভেজাল আছে, আবির মেশানো রং, রং মেশানো আবির, পাকা রং, কাঁচা রং, ভদ্র রং, ভুতুড়ে রং, ম্যাজিক রং—সব পেয়ে যাবেন ন্যায্য মূল্যে।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯১: গো-শালিক

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৮: দুর্গম গিরি কান্তার ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’
অন্যকে রাঙিয়ে দেওয়ার মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে দোল-হোলির জনতা মাঠে নামবে। এক এক পবিত্র holy কর্তব্য। কুরুক্ষেত্রের শেষে যেমন ছত্রভঙ্গ অবস্থা, তেমনই দোলের শেষে রাস্তাঘাট, দোকান, বাজার, ব্রিজের থাম, বাসের সিঁড়ি, ট্রেনের সিট, বেঞ্চি, দেয়াল, কালু কুকুর, ধলো গরু, ওপাড়ার টুপাই, এপাড়ার টুম্পা, তোমার স্কুল কলেজ ভার্সিটি, তাদের রক, ঠেক সব একাকার, তোমার মনের রং-এ রঙিন হয়ে উঠবে। নিন্দুকরা গাল দেবে, কদাকার বলবে, কান দিও না মোটে। খেলে যাও।
খেলা জমলে, রং ফুরিয়ে গেলেও চিন্তা নেই– গোবর জল, জমাট কাদা, ড্রেনের পাঁক আছে। মনে রাখবে আঁকার স্কুলে এ রং সে রং লাগিয়ে লাগিয়ে, ঘষে ঘষে শেষে আলাদা করে আর কোনও রং দেখা যেত না, সবটাই কালো হয়ে খোলতাই হতো। এও তেমনই, সিম্পল। সূর্যের সাতরং মিশে যেমন সাদা, তেমন দোলের সব রং মিশে কালো। শুধু চোখটা বাঁচিয়ে খেলবে, কারণ কবি সাবধান করে বলেছিলেন, সব পথ এসে মিলে গেল শেষে তোমার দুখানি নয়নে। আজকের দিনে রাঙিয়ে দেওয়া মানেই ভুতুড়ে রং-এ অদ্ভুত করে দেওয়া।
দর্শনে বলে, অহংকে ভুলতে পারলে প্রকৃত মুক্তি মেলে। দোলের রং মাখার পরে একরকম মুক্তি ঘটে। যদুর পরিচয়ে মধু সেঁধিয়ে যায়, কৃষ্ণ রাধাকে বেবাক চিনতে পারে না, জগাবৌদি “পরে আসবেন, বাবু বাড়ি নেই” বলে বসন্তদিনে রঙিন হয়ে মাংস কিনে ঘরে ফেরা জগাদাকে খেদিয়ে দেয়। রং ছিল বলে এসব হয়।
খেলা জমলে, রং ফুরিয়ে গেলেও চিন্তা নেই– গোবর জল, জমাট কাদা, ড্রেনের পাঁক আছে। মনে রাখবে আঁকার স্কুলে এ রং সে রং লাগিয়ে লাগিয়ে, ঘষে ঘষে শেষে আলাদা করে আর কোনও রং দেখা যেত না, সবটাই কালো হয়ে খোলতাই হতো। এও তেমনই, সিম্পল। সূর্যের সাতরং মিশে যেমন সাদা, তেমন দোলের সব রং মিশে কালো। শুধু চোখটা বাঁচিয়ে খেলবে, কারণ কবি সাবধান করে বলেছিলেন, সব পথ এসে মিলে গেল শেষে তোমার দুখানি নয়নে। আজকের দিনে রাঙিয়ে দেওয়া মানেই ভুতুড়ে রং-এ অদ্ভুত করে দেওয়া।
দর্শনে বলে, অহংকে ভুলতে পারলে প্রকৃত মুক্তি মেলে। দোলের রং মাখার পরে একরকম মুক্তি ঘটে। যদুর পরিচয়ে মধু সেঁধিয়ে যায়, কৃষ্ণ রাধাকে বেবাক চিনতে পারে না, জগাবৌদি “পরে আসবেন, বাবু বাড়ি নেই” বলে বসন্তদিনে রঙিন হয়ে মাংস কিনে ঘরে ফেরা জগাদাকে খেদিয়ে দেয়। রং ছিল বলে এসব হয়।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৯: বেশি ঘুম শরীরের পক্ষে ভালো?

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০৬: নীল রাত্রি, নীল অন্ধকার
চোখের রং, মনের রং, গায়ের রং, রাজনীতি বা ধর্মের রং, সং আর রং বদলানো বহুরূপী গিরগিটি আর ওরাংওটাংরাও দোলের রং-এ হলদে সবুজ হবে। সে হোক, স্পিরিট থাকুক না থাকুক, উত্সব জীবনকে শুদ্ধ করে, করুক। তবে মহোত্সব যেমন কথায় কথায় মোচ্ছব হয়ে ওঠে, তেমনই দোলির শেষটায় সব রং চোখে এসে ভিড় জমালে কামজয়ী মহাদেবের নেশাতুর, অচেতন রূপটাও মনে পড়ে বৈকী! যে রং দিনের সূচনায়, শেষলগ্নের বর্ণময় মায়াজালে, কামে কিংবা প্রেমে, আবেগে অথবা অনুরাগে, জীবনের প্রতিটি কোণে কোণে, তাকে কালিমালিপ্ত করে অশিব প্রলয়ঙ্কর করে তুললে সবটাই Rong হয়ে যায় না?
* ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।