বুধবার ১২ মার্চ, ২০২৫


সেই পুরনো সময়ে পাড়ায় পাড়ায় ছোটখাটো পত্রিকা বের হতো হাতে লিখে স্টেশনে বা বাসস্ট্যান্ডে দেয়াল পত্রিকার খুব চল ছিল। বাড়িতে বাড়িতে নিয়মিত গানবাজনার চর্চা ছিল। অনেক নাটকের দল নিয়মিত অভিনয় করত। পাড়ায় পাড়ায় একাঙ্ক নাটকের প্রতিযোগিতা হতো। দুর্গাপুজোর পরে লক্ষীপুজো থেকে কালীপুজোর মধ্যে বেশ কিছু জায়গায় নানা বয়সের সকলে মিলেমিশে সাড়ম্বরে নাট্য উদযাপন করতেন।
বিনোদন সিঙ্গল স্ক্রিনের সাদাকালো এবং পরের দিকের রঙিন সিনেমা আর কলকাতা শহরের পেশাদারী আর গ্রুপ থিয়েটারের নাটকে সীমাবদ্ধ ছিল। ঘরে ঘরে টেলিভিশন মাল্টিপ্লেক্স হাতে হাতে মোবাইলে যথেচ্ছ বিনোদনের চটজলদি উপকরণ ছিল না। আর ছিল না বলেই কিছু গড়ে উঠত। চেষ্টা না করেই চটজলদি সাফল্যের রাস্তা খুঁজে ফেরার ফিকির আজকের মতো সব ভালোটুকু গিলে খেয়ে ফেলেনি।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯o: ছাতারে

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৪৮: এখানে দিন-রাত-শীত-গ্রীষ্ম-আলো-অন্ধকার, সব কিছুরই হিসেব আলাদা

কিন্তু সৎ থাকার আপ্রাণ চেষ্টার পরেও আচমকা আঘাতে মানুষের আত্মবিশ্বাস খান খান হয়ে যায়। অমৃতলাল পাড়ার ভিতরেররাস্তা দিয়ে সাইকেল চালিয়ে টিউশানি করতেন। জিটি রোড থেকে চুঁচুড়া রেল স্টেশন এই অংশটুকুর মধ্যেই অমৃতের যাতায়াত। বড় রাস্তা বলতে চুঁচুড়া স্টেশন রোড টপকাতে হতো। স্টেশন রোডে রাস্তা সারাই-এর কাজ হচ্ছিল। বাড়ি ফেরার সময় আচমকা সাইকেলের চাকাটা লিক হয়ে গেল। রাত বেশি নয়, শেষের টিউশনিটা সেদিন করতে হয়নি। ছাত্রীর আচমকা জ্বর। অমৃতলাল ছাত্রীর বাড়িতে একটু বসলেন চা খেলেন। ওই যে মূল্যবোধ চক্ষুলজ্জা ভদ্রতা মাস্টারমশাই এসেছেন পড়ান বা না-পড়ান তাঁকে আপ্যায়ন করাটা ন্যূনতম সামাজিক রীতি।
আরও পড়ুন:

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-১৯: আপনামাঝে শক্তি ধরো নিজেরে করো জয়

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০৪: প্রকৃতির সান্নিধ্যে কি গ্লানিমুক্তি সম্ভব? লক্ষ্মণের আবেগ কি সাধারণের মধ্যে সহজলভ্য?

অমৃত স্যার তারপর বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছিলেন। ভাগ্য ভালো রাস্তার ধারে একটা সাইকেলের দোকান তখনও বন্ধ হয়নি। আর কী আশ্চর্য, সেখানে এক পুরনো ছাত্রের সঙ্গে দেখা। রজত চুঁচুড়ার বাসিন্দা নয়, এখানে তার মামারবাড়ি। গঙ্গার উল্টোপারে নৈহাটির বিখ্যাত বড়মা’র মন্দির-এর কাছে ওদের বাড়ি। ফেরিতে গঙ্গা পেরিয়ে স্কুলে আসতো। ঝড়-বাদল বেশি হলে মামারবাড়ি থেকে যেত। সে সবে জুট টেকনোলজি নিয়ে পাশ করে ওয়েলেস্লি জুটমিলে প্রডাকশন ম্যানেজারের কাজে বহাল হয়েছে।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৮৭: মা সারদার লিঙ্গপুজো

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৮: দুর্গম গিরি কান্তার ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’

এটা সেটা কথা বলতে বলতে সাইকেল তৈরি ছেলেটি পুরোনো শিক্ষকের জন্য চা বলল। অমৃতলাল ঠাট্টা করলেন—
—এই চা খেয়ে এলুম..তবে চা-য়ে আমার অরুচি নেই কিন্তু তোর মিস্টি খাওয়ানোর কথা, চা খাইয়ে সেরে দিবি?
—বাড়িতে গিয়ে মিষ্টি খাইয়ে আসবো স্যার!
কথাটা বলতে বলতেই গরম চায়ের কাপটা অমৃতলালের হাতে ধরিয়ে দিল রজত।
—দেখে স্যার! গরম আছে।

এটুকু বলবার পর নিজের কাপটা হাতে নেওয়ার আগেই অমৃতলালের হাত থেকে চায়ের ভাঁড়টা মাটিতে খসে পড়ল।
—স্যার!
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০৫: সরজমিনে

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১১৩: শরৎকুমারী স্নানাগারের সামনে বসে সারাক্ষণই সাজতেন

আর কথা বলার সুযোগ পায়নি রজত। নিজের স্কুটার ওখানে রেখেই একটা রিকশাতে করে রক্তাক্ত অমৃতলাল সেনকে দুহাতে জড়িয়ে নিয়ে সামনের নার্সিংহোমটায় ছুটে গিয়েছিল।
এরকম দূর্ঘটনা যে ঘটতে পারে সেটা কেউ বিশ্বাস করবে না! একটা বড়সড় পাটের লরি বাঁক নিচ্ছিল। এই রাস্তায় এতো বড় লরি আসে না হয়ত ভুলভাবে ঢুকে পড়েছে। লরিটা বাঁক নিয়ে চলে গেল। ভোমরার মতো কী যেন একটা উড়ে এলো রাস্তা থেকে। চায়ের কাপটা পড়ল অমৃতস্যার মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন! ভোমরার মতো উড়ে আসা বস্তুটি একটি ধারালো তিনকোণা পাথরের টুকরো। সেটা ভারি চাকার কোণের চাপে পড়ে বুলেটের গতিতে সরাসরি স্যারের গলায় বিঁধে গিয়েছে। ক্লাসে সয়ারই বোঝাতেন প্যারাবোলিক মোশান। রিকশায় যাবার সময় জ্ঞান ছিল না কিন্তু বেঁচে ছিলেন। তবে কারো শরীর থেকে এত ভয়ঙ্কর রক্ত বের হতে রজত কখনও দেখনি। ওদের শরীর ভিজিয়ে রিকশার পাদানি ভরে উঠেছিল শরীর চুঁইয়ে পড়া রক্তে। না।—চলবে।

উপন্যাস: আকাশ এখনও মেঘলা, পরের পর্ব আগামী রবিবার ১৬ মার্চ, ২০২৫

* সৌম্যকান্তি জানা। সুন্দরবনের ভূমিপুত্র। নিবাস কাকদ্বীপ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা। পেশা শিক্ষকতা। নেশা লেখালেখি ও সংস্কৃতি চর্চা। জনবিজ্ঞান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণের জন্য ‘দ্য সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল ২০১৬ সালে ‘আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড’ এবং শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান লেখক হিসেবে বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ ২০১৭ সালে ‘অমলেশচন্দ্র তালুকদার স্মৃতি সম্মান’ প্রদান করে সম্মানিত করেছে।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content