বৃহস্পতিবার ১৩ মার্চ, ২০২৫


রহস্যময় আলাস্কা।

শরৎকালে পশ্চিম-আকাশে
সূর্যাস্তের ক্ষণিক সমারোহে
রঙের সঙ্গে রঙের ঠেলাঠেলি–
তখন পৃথিবীর এই ধূসর ছেলেমানুষির উপরে
দেখেছি সেই মহিমা
যা একদিন পড়েছে আমার চোখে
দুর্লভ দিনাবসানে…


কবিগুরুর খোয়াই কবিতার শরৎকালের এই পংক্তিগুলো যেন সুমেরুর গ্রীষ্মকাল কল্পনা করেই লেখা। সূর্যাস্তের ক্ষণিক সমারোহ, রঙের সঙ্গে রঙের ঠেলাঠেলি; কবিবরের কল্পনার শরতের খোয়াই এখানে এই মেরুর দেশে গ্রীষ্মের প্রতিদিনের বাস্তব। তবে পৃথিবীর ধূসর ছেলেমানুষির উপর সে মহিমার অবলোকন এখানে প্রকৃতির কোনও দুর্লভ খেয়াল নয়। বরং ‘দিনাবসান’ ব্যাপারটাই এই মেরুর দেশে এখন সত্যিই ‘দুর্লভ’। আর খোয়াই কবিতার শেষ পংক্তিতে, ঠিক এই বৈপরীত্যে পৌঁছেই একটা অদ্ভুত শিহরণ জাগে আমার মধ্যে। যেন মনে হয় আমার প্রাণের ঠাকুরের চাইতেও বেশি কিছু পেয়েছি এই জীবনে। যা মাত্র একদিন তাঁর চোখে পড়েছে ‘দুর্লভ দিনাবসানে’, তা আমি পেয়েছি গ্রীষ্মকালের প্রতিদিন।
খোয়াইকে ঘিরে যা কিছু তাঁর কল্পনা, এই মধ্যরাতের সূর্যের দেশে সবটাই আমার বাস্তব। আমার ছেলেবেলার সমস্ত কাব্যপাঠ; আমার সীমাহীন রাবীন্দ্রিক কল্পনার সবটুকু যেন এখানে এই নিশীথ সূর্যের দেশে এসে বাস্তবের সঙ্গে মিশে এক হয়ে যায়। আর তার চাইতেও বড় কথা, আমার সেই সীমাহীন কল্পনার মতোই এই বাস্তবেরও কোনও শেষ নেই; স্থান কালের গন্ডী পেরিয়ে এ বাস্তবও যেন অন্তহীন, অসীম। কারণ এখানে এখন ২৪ ঘণ্টাই দিন। শীত কালের তমসা কাটিয়ে আমরা এখন চলেছি জ্যোতির অভিমুখে।
আরও পড়ুন:

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৪৮: এখানে দিন-রাত-শীত-গ্রীষ্ম-আলো-অন্ধকার, সব কিছুরই হিসেব আলাদা

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯o: ছাতারে

সত্যিই, শীত কাল থেকে গ্রীষ্মকালের এই পরিবর্তনটা এখানে যেন আক্ষরিক অর্থেই ‘তমসো মা জ্যোতির্গময়ঃ’। মার্চ মাসের মাঝে মাঝি দিক থেকে সূর্যের উত্তরায়ণ (সামার সল্সটাইস) পর্বের প্রভাব বেশ ভালো ভাবে বোঝা যেতে শুরু করে। প্রতিদিন গড়ে সাত থেকে আট মিনিট করে সূর্যালোকের পরিমাণ বাড়তে বাড়তে শেষ-মেশ জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই মোটামুটি ভাবে হয়ে যায় চব্বিশ ঘণ্টা দিন, অর্থাৎ সারাদিনই সূর্যের আলো।
আরও পড়ুন:

গল্পবৃক্ষ, পর্ব-১৯: নাগজাতক— অকৃতজ্ঞ সেই লোকটা

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০৪: প্রকৃতির সান্নিধ্যে কি গ্লানিমুক্তি সম্ভব? লক্ষ্মণের আবেগ কি সাধারণের মধ্যে সহজলভ্য?

আমাদের আগের পর্বের শেষ দিকে যাকে ঘিরে আমাদের এতো আদিখ্যেতা, এতো প্রেম, সেই চাঁদ মামা পরবর্তী তিন চার মাসের জন্য ঘুমের দেশে পাড়ি দেন আর সূয্যি মামা তার সমস্ত ঘুম ভুলে সারাদিন ধরে পৃথিবীকে করে রাখে আলোকিত। আর সুয্যিমামার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গোটা রাজ্য শুদ্ধ সব লোক ঘুম ভুলে গিয়ে তখন মেতে ওঠে আলোর উৎসবে। তবে তার সঙ্গে চলতে থাকে বিভিন্ন রকমের দরকারি কাজ যেগুলো শীত কালে আর করা সম্ভব নয়। যেমন রাস্তা ঘাট মেরামতের কাজ, বাড়ি ঘর বানানোর কাজ, একটু প্রত্যন্ত গ্রামের দিকে গেলে শিকার করা, মাছ ধরা; অর্থাৎ কিনা শীতকালের জন্য খাবার সংরক্ষণ করে রাখা; আরও কত রকমের কাজ যেগুলো শীত কালে সম্ভব হয়না ঠান্ডা, বরফ আর সূর্যালোকের অনুপস্থিতির জন্য। তার ওপরে এসে হাজির হয় সারা পৃথিবী থেকে পর্যটকের দল। মানে গোটা রাজ্য জুড়ে যেন বেশ একটা সাজো সাজো রব; সবাই তখন ব্যস্ত। সে এক দেখার মতো ব্যাপার।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৮৭: মা সারদার লিঙ্গপুজো

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৮: দুর্গম গিরি কান্তার ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’

একমাস আগেই যে জায়গাগুলোকে দেখলে মনে হতো অন্ধকারের শহর, মৃতের শহর, সাদা বরফের চাদরের ভিতরে যার হারিয়ে গেছে সব কিছু; আজ সেখানে শুধুই আলোর উদযাপন, জীবন যাপন, শুধুই রঙের খেলা, উৎসবের মেলা। তার সঙ্গে যুক্ত হয় আরও সব অন্য রকমের অ্যাডভেঞ্চার সেই সমস্ত কথাই এ বার বলবো এই অধ্যায়ে।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৮৭: মা সারদার লিঙ্গপুজো

পর্দার আড়ালে, পর্ব-৬২: সত্যজিৎ রায় রুপটান শিল্পীকে বলেছিলেন, উত্তমকুমারের কোনও মেকআপ করার

তবে গ্রীষ্মের কথা শুরু করতেই হয় সুয্যিমামার কথা বলে; যার জন্য এতো কিছু। সমস্ত কিছুর আগে শুরু করি এখানকার সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সম্পর্কে একটা অদ্ভুত মজার ব্যাপার দিয়ে। ‘সূর্য পূর্বদিকে ওঠে আর পশ্চিম দিকে অস্ত যায়’ এই প্রচলিত ধারণা এখানে একেবারেই চলে না। পৃথিবীর নিজের অক্ষের উপর হেলে থাকার জন্য আর সেই অক্ষের একেবারে ওপরে অবস্থানের জন্য অর্থাৎ উচ্চ অক্ষাংশে অবস্থানের জন্য আলাস্কায় সূর্যের ওঠা আর নামা বিভিন্ন দিকে হতে থাকে। যত উপরের দিকে অর্থাৎ উত্তরে যাওয়া যায় এই ধারণা ততই বেশি করে ভুল হতে থাকে। আমি বেশি বৈজ্ঞানিক খুঁটিনাটির ভেতরে যাচ্ছি না। —চলবে।
* রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা (Mysterious Alaska) : ড. অর্ঘ্যকুসুম দাস (Arghya Kusum Das) অধ্যাপক ও গবেষক, কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content