
ছবি: সংগৃহীত।
মহর্ষি ভরদ্বাজের আশ্রমে রাত্রিবাস করলেন ভরত। মহর্ষির অগ্নিহোত্র যাগ সবেমাত্র সম্পন্ন হয়েছে। ভরতের সম্মুখে স্বয়ং ভরদ্বাজ ঋষি। অতিথি ভরতের সুখনিদ্রা হয়েছে কি না। অতিথি সৎকার মনোমত হয়েছে তো? মহর্ষি ভরদ্বাজের এমন সব উদগ্রীব প্রশ্ন।
ভরত, আশ্বস্ত করলেন, মহর্ষির আশ্রমে রাত্রিতে সৈন্যসহ সুখেই ছিলেন। তিনি নিজে পরিতৃপ্ত। এখন ভরতের উদ্দেশ্য হল, জ্যেষ্ঠ রামের বর্তমান আশ্রয়ের অনুসন্ধান। ভাইয়ের দর্শনলাভের আত্যন্তিক আগ্রহে, ভরতের জিজ্ঞাসা, আশ্রমং তস্য ধর্মজ্ঞ ধার্ম্মিকস্য মহাত্মনঃ। আচক্ষ্ব কতমো মার্গঃ কিয়ানিতি চ শংস মে।। ইতি পৃষ্ঠস্তু ভরতং ভ্রাতুর্দর্শনলালসম্।*
সেই ধার্মিক রামচন্দ্রের আশ্রমের পথটি কোথায়? হে ধার্মিক,আপনি বলুন। মহর্ষি ভরদ্বাজ প্রত্যুত্তরে জানালেন, এখান হতে সার্দ্ধ-দ্বিযোজন (প্রায় ২৮ মাইল) দূরে বিজন বনে রমণীয় ঝর্ণা ও সুরম্য কাননে বেষ্টিত চিত্রকূট পর্বত, যার উত্তরদিকে বয়ে চলেছে মন্দাকিনী নদী, কুসুমিত অজস্র তরু ও মনোহর পুষ্পিত কাননসমন্বিত সেই স্থানের নিকটে রয়েছে, রামলক্ষ্মণের পর্ণকুটির। সেখানেই বাস করছেন দুই ভাই। মহর্ষি নির্দেশ দিলেন, দক্ষিণের পথটি ধরে কিছু দূর গমন করে, বাম ও দক্ষিণের দুই দিকের পথেই অশ্ব ও হাতিপরিবৃত বাহিনী চালনা করতে করতে, গমনপথেই দেখা মিলবে রামচন্দ্রের। রাজরানিরা প্রস্থাবার্তা শুনে নিজ নিজ যান পরিত্যাগ করে, মহর্ষি ভরদ্বাজকে পরিবেষ্টন করে দাঁড়ালেন। কাঁপতে কাঁপতে ক্ষীণা, দুঃখিনী, কৌশল্যা দেবী সুমিত্রার সঙ্গে মহর্ষির চরণ দুটি স্পর্শ করলেন। যাঁর মনোবাসনা পূর্ণ হয়নি, সেই সর্বলোকনিন্দিতা, কৈকেয়ী সলজ্জে প্রণিপাত করলেন।
ভরত, আশ্বস্ত করলেন, মহর্ষির আশ্রমে রাত্রিতে সৈন্যসহ সুখেই ছিলেন। তিনি নিজে পরিতৃপ্ত। এখন ভরতের উদ্দেশ্য হল, জ্যেষ্ঠ রামের বর্তমান আশ্রয়ের অনুসন্ধান। ভাইয়ের দর্শনলাভের আত্যন্তিক আগ্রহে, ভরতের জিজ্ঞাসা, আশ্রমং তস্য ধর্মজ্ঞ ধার্ম্মিকস্য মহাত্মনঃ। আচক্ষ্ব কতমো মার্গঃ কিয়ানিতি চ শংস মে।। ইতি পৃষ্ঠস্তু ভরতং ভ্রাতুর্দর্শনলালসম্।*
সেই ধার্মিক রামচন্দ্রের আশ্রমের পথটি কোথায়? হে ধার্মিক,আপনি বলুন। মহর্ষি ভরদ্বাজ প্রত্যুত্তরে জানালেন, এখান হতে সার্দ্ধ-দ্বিযোজন (প্রায় ২৮ মাইল) দূরে বিজন বনে রমণীয় ঝর্ণা ও সুরম্য কাননে বেষ্টিত চিত্রকূট পর্বত, যার উত্তরদিকে বয়ে চলেছে মন্দাকিনী নদী, কুসুমিত অজস্র তরু ও মনোহর পুষ্পিত কাননসমন্বিত সেই স্থানের নিকটে রয়েছে, রামলক্ষ্মণের পর্ণকুটির। সেখানেই বাস করছেন দুই ভাই। মহর্ষি নির্দেশ দিলেন, দক্ষিণের পথটি ধরে কিছু দূর গমন করে, বাম ও দক্ষিণের দুই দিকের পথেই অশ্ব ও হাতিপরিবৃত বাহিনী চালনা করতে করতে, গমনপথেই দেখা মিলবে রামচন্দ্রের। রাজরানিরা প্রস্থাবার্তা শুনে নিজ নিজ যান পরিত্যাগ করে, মহর্ষি ভরদ্বাজকে পরিবেষ্টন করে দাঁড়ালেন। কাঁপতে কাঁপতে ক্ষীণা, দুঃখিনী, কৌশল্যা দেবী সুমিত্রার সঙ্গে মহর্ষির চরণ দুটি স্পর্শ করলেন। যাঁর মনোবাসনা পূর্ণ হয়নি, সেই সর্বলোকনিন্দিতা, কৈকেয়ী সলজ্জে প্রণিপাত করলেন।
মহর্ষি, ভরতের মায়েদের বিস্তারিত পরিচয় জানতে ইচ্ছুক হলেন। করজোড়ে ভরত মায়েদের পরিচয় জানালেন। পিতার শোকে অনশনে ক্ষীণকায়া দুঃখিনী দেবীসদৃশী নারী হলেন পিতার প্রধানা মহিষী। ইনিই কৌশল্যা, যিনি ইন্দ্রমাতা অদিতির মতো পুরুষসিংহসম শৌর্যশালী রামের জন্মদাত্রী। কৌশল্যা দেবীর বামবাহু ধারণ করে রয়েছেন যিনি সেই দুঃখার্তা নারী, মধ্যমা রানি সুমিত্রা। কুসুমবিহীন শ্রীহীন কর্ণিকা তরুর দশা,তাঁর।দেবপ্রতিম, সত্যপরায়ণ লক্ষ্মণ ও শত্রুঘ্ন,এই দুই ভাই এনার গর্ভজাত সন্তান। সবশেষে, নিজের মায়ের পরিচয় দিলেন ভরত। যাঁর কারণে দুই ভাই বিপন্ন, সেই পুত্রশোকে পিতা আজ স্বর্গত, সেই ক্রুদ্ধ, অপরিশীলিত বুদ্ধি, গরবিনী, সৌভাগ্যহেতু দর্পিতা, ঐশ্বর্যলোলুপ, আর্যরূপিণী অনার্যা, নিষ্ঠুর, পাপিষ্ঠা ইনিই আমার জননী কৈকেয়ী। এনার জন্যেই আমার যত বিপদ। যস্যাঃ কৃতে নরব্যাঘ্রৌ জীবনাশমিতো গতৌ। রাজা পুত্রহীনশ্চ স্বর্গং দশরথো গতঃ।। ক্রোধনামকৃতপ্রজ্ঞাং দৃপ্তাং সুভগমানীনাম্। ঐশ্বর্য্যকামাং কৈকেয়ীমনার্য্যামার্য্যরূপিণীম্। মমৈতাং মাতরং বিদ্ধি নৃশংসাং পাপনিশ্চয়াম্। যতো মূলং হি পশ্যামি ব্যসনং মহদাত্মনঃ।।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৮৮: সুন্দরবনের পাখি — শালিক

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৭১: ধর্মকার্যের জন্য টাকা জোগাড় করা আর সাদা কাপড়ে ময়লা লাগিয়ে ধোয়া, দুই-ই সমান
অশ্রুরুদ্ধ কণ্ঠে সব কথা বলতে বলতে ভরত আরক্ত নয়নে সাপের মতো রাগে ফুঁসতে লাগলেন। মহর্ষি প্রত্যুত্তরে অর্থপূর্ণ ভাষায় বললেন, কৈকেয়ীকে দোষারোপ নয়, কারণ, রামের বনবাস সুখপ্রদ। এর ফলে দেব, দানব, চিন্তাশীল ঋষি, সকলের মঙ্গল হবে। মহর্ষিকে প্রদক্ষিণসহ অভিবাদন করে, সসৈন্যে সুসজ্জিত রথের ঘণ্টাধ্বনিতে চতুর্দিক মুখরিত করে, প্রস্থান করলেন ভরত। কৌশল্যা প্রভৃতি দশরথের মহিষীরা রামকে দেখবার ইচ্ছায় আনন্দে ভরতকে অনুসরণ করলেন। সৈন্যদল, দক্ষিণ দিক আচ্ছাদিত করে, গঙ্গার পশ্চিম তীরে অবস্থিত, বহু হরিণ ও বিহঙ্গসঙ্কুল বনভূমি অতিক্রম করে মহামেঘরাশির মতো ধেয়ে চলল। হস্তী ও অশ্ব পরিবৃত হৃষ্ট সেনাবাহিনী, মৃগ ও বিহঙ্গকুলকে ত্রস্ত করে গহনারণ্যে প্রবেশ করল। দলপতি হাতিগুলি,বনে বিচরণরত মৃগভল্লুকসমূহ চতুর্দিকে দিশাহারা হয়ে ছুটাছুটি করতে লাগল। ধার্মিক ভরত, তাঁর চতুরঙ্গ সেনাসহ, সন্তুষ্ট মনে এগিয়ে চললেন। বর্ষার মেঘের মতো, সাগরের প্রবাহতুল্য ভরতের সেনাবাহিনী পৃথিবী আচ্ছন্ন করে তুলল। সেই সময়ে, তাদের উপস্থিতিতে, ভূমিতল লোকচক্ষুর অগোচরে রয়ে গেল।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০৩: গ্রহের ফের

উপন্যাস: আকাশ এখনও মেঘলা/৫
পথশ্রমে ক্লান্ত, শ্রান্ত সেনাদল। ভরত মন্ত্রীশ্রেষ্ঠ বশিষ্ঠকে বললেন, মহর্ষি ভরদ্বাজের পথ নির্দেশ অনুসারে, ওই দেখা যায় চিত্রকূট পর্বত। মন্দাকিনী নদীও দৃশ্যমান। দূরে দেখা যায় নীল মেঘসদৃশ বনভূমি। ভরতের গিরিতুল্য গজগুলি, চিত্রকূটের সানুদেশ পিষ্ট করছে। বর্ষার নীল জলভারাক্রান্ত মেঘ যেমন জল বর্ষণ করে তেমনি তরুরাজি রাশি রাশি পুষ্প বর্ষণ করছে। মকর সমাকীর্ণ সমুদ্রতুল্য এই পর্বত কিন্নরদের আবাস, সেখানে অশ্বদল চতুর্দিক আবৃত করে বিরাজমান। শরতকালে গগনে বায়ুবেগে চালিত মেঘমালার মতো দ্রুতবেগে ধাবিত হরিণেরা শোভা বিস্তার করছে। মেঘসম অস্ত্র ও ফলকধারী সৈন্যরা, মস্তকে সুগন্ধি কুসুম ধারণ করে, যেন দাক্ষিণাত্যের মানুষের সাজে সেজেছে। ফলে, এই ভয়ানক নিশ্চুপ অরণ্য এখন যেন জনবহুল অযোধ্যার তুল্য প্রতিভাত হয়েছে। অশ্বগুলির খুরোত্থিত ধূলিতে আকাশ সমাচ্ছন্ন। প্রবহমান সমীরণ যেন ভরতের প্রিয়সাধনের উদ্দেশেই সেই ধূলিরাশি অপসারিত করছে।
আরও পড়ুন:

গল্পবৃক্ষ, পর্ব-১৬: পূতিমাংসজাতক—শেয়ালের বুদ্ধি না ছাগলের বুদ্ধি?

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৬: জীবন নিয়ে কৌতুক আর ‘যৌতুক’
ভরত, শত্রুঘ্নের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন, কেমনভাবে অরণ্যভূমিতে সারথির সুপরিচালনায় অশ্বগুলি সত্বর রথগুলি পৌঁছে দিয়েছে। প্রিয়দর্শন ময়ূরেরা ত্রস্ত হয়ে বিহঙ্গের আবাস এই অরণ্য আশ্রয় করেছে। ভরতের অনুভূতি হল, এই দেশ অতি মনোরম। নিষ্পাপ তাপসগণের নিবাস এই দেশ যেন স্বর্গের দর্শনীয় পথটি। বহু মৃগ, মৃগীদের সংসর্গে যেন ফুলসাজে মনোহররূপে লক্ষিত হচ্ছে।ভরত নির্দেশ দিলেন, একদল বিশ্বস্ত সৈন্য ধীরে ধীরে অরণ্যের অভ্যন্তরে পুরুষশ্রেষ্ঠ রাম ও লক্ষ্মণের অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করুক। সাধু সৈন্যাঃ প্রতিষ্ঠন্তাং বিচিন্বন্তু চ কাননম্।যথা তৌ পুরুষব্যাঘ্রৌ দৃশ্যেতে রামলক্ষ্মণৌ।।
ভরতের আদেশানুসারে, সশস্ত্র বীরেরা গহনারণ্যে প্রবেশ করল। বনমধ্যে ধূমশিখার অস্তিত্ব সম্বন্ধে, তারা ভরতকে অবহিত করল। জনহীন স্থানে অগ্নির অস্তিত্ব অসম্ভবপ্রায়, রাম ও লক্ষ্মণ নিশ্চিত এখানেই আছেন। এটি স্পষ্ট যে, যদি সেই পুরুষোত্তম রাজপুত্রদ্বয় এখানে নাও থাকেন তবে রামের তুল্য কোনও তাপস এখানে আছেন। ভরত এই যুক্তিপূর্ণ সৎ বক্তব্য শুনে, তাদেরকে বললেন, যত্তা ভবন্তস্তিষ্ঠন্তু নেতো গন্তব্যমগ্রতঃ। অহমেব গমিষ্যামি সুমন্ত্রো ধৃতিরেব চ।। তোমরা যেখানে রয়েছে সেখান থেকে আর কোথাও যেয় না। মন্ত্রী সুমন্ত্র ও ধৃতিকে সঙ্গে নিয়ে আমি যাব সেখানে। সেইখানে, সৈন্যরা চতুর্দিকে অবস্থান করতে লাগল। ভরতের দৃষ্টি এখন ধূম উদগীর্ণ হচ্ছে যেখানে, সেখানেই নিবদ্ধ। ভরতের ব্যবস্থানুসারে,সেখানে অপেক্ষমান সৈন্যবাহিনী অচিরেই রামের দর্শনলাভের আশায় আনন্দিত হয়ে উঠল।
ভরতের আদেশানুসারে, সশস্ত্র বীরেরা গহনারণ্যে প্রবেশ করল। বনমধ্যে ধূমশিখার অস্তিত্ব সম্বন্ধে, তারা ভরতকে অবহিত করল। জনহীন স্থানে অগ্নির অস্তিত্ব অসম্ভবপ্রায়, রাম ও লক্ষ্মণ নিশ্চিত এখানেই আছেন। এটি স্পষ্ট যে, যদি সেই পুরুষোত্তম রাজপুত্রদ্বয় এখানে নাও থাকেন তবে রামের তুল্য কোনও তাপস এখানে আছেন। ভরত এই যুক্তিপূর্ণ সৎ বক্তব্য শুনে, তাদেরকে বললেন, যত্তা ভবন্তস্তিষ্ঠন্তু নেতো গন্তব্যমগ্রতঃ। অহমেব গমিষ্যামি সুমন্ত্রো ধৃতিরেব চ।। তোমরা যেখানে রয়েছে সেখান থেকে আর কোথাও যেয় না। মন্ত্রী সুমন্ত্র ও ধৃতিকে সঙ্গে নিয়ে আমি যাব সেখানে। সেইখানে, সৈন্যরা চতুর্দিকে অবস্থান করতে লাগল। ভরতের দৃষ্টি এখন ধূম উদগীর্ণ হচ্ছে যেখানে, সেখানেই নিবদ্ধ। ভরতের ব্যবস্থানুসারে,সেখানে অপেক্ষমান সৈন্যবাহিনী অচিরেই রামের দর্শনলাভের আশায় আনন্দিত হয়ে উঠল।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০১: অর্জুন প্রমাণ করলেন, রাজধর্ম পালনের ক্ষেত্রে মিথ্যাচারের কোনও স্থান নেই

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১১২: দারুণ এক গগনবিহারী খেলনা বানিয়েছিলেন গগনেন্দ্রনাথ
মহর্ষি ভরদ্বাজের আশ্রমে পরিত্যাগের সময়ে মহর্ষি নির্দিষ্ট পথনির্দেশ দিলেন, যেখানে রয়েছেন পুরুষোত্তম রাম।রাজা দশরথের ধর্মপত্নী পুত্রশোকাতুরা ক্ষীণকায়া দুঃখিনী কৌশল্যার আকৃতিতেই তাঁর পরিচয় সুস্পষ্ট। শোকের ভাষা বোধ হয় শারীরিক অভিব্যক্তিতেই সব থেকে বেশি পরিস্ফুট হয়। লক্ষ্মণজননী সুমিত্রাও কৌশল্যার সমব্যথিনী।পুষ্পবিহীন তরুর দশা তাঁর। কৈকেয়ীর শারীরিক বিভঙ্গে শোকের অভিব্যক্তির প্রকাশ নেই।শুধু পুত্র ভরতের তীব্র ক্ষোভের প্রকাশে কৈকেয়ী চরিত্রের পূর্ণ প্রকাশ। এর থেকে লজ্জার আর কী হতে পারে? গর্ভজাত সন্তানের সমালোচনা জননীকে যে ভাবে বিদ্ধ করে সেই তুলনাহীন অন্তর্দহনজ্বালা সহ্য করে বেঁচে থাকা,কতটা নিন্দিত, ন্যক্কারজনক তা শুধু কৈকেয়ীরাই জানেন।
প্রজ্ঞাবান দূরদর্শী মহান মহর্ষি ভরদ্বাজের ব্যাখ্যা ভরতের মায়ের প্রতি নঞর্থক ভাবকে সদর্থক দিকে চালিত করেছে। মহর্ষির মতানুসারে, রামের বনবাস সুখপ্রদ হয়েছে।কারণ এর ফলে দেব, দানব, প্রজ্ঞাবান ঋষি সকলের মঙ্গল সম্ভব। রাম ছাড়া অন্যদের কল্যাণ কীভাবে সম্ভব হয়েছে সেটি হয়তো প্রসঙ্গান্তরের বিষয়। তবে ভাবি অযোধ্যাপতি রাম যে বিপুল অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে একজন পরিণত রাজায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, এ কথা হয়তো বলার অপেক্ষা রাখে না। অযোধ্যার রাজপ্রাসাদে, উত্তরাধিকারসূত্রে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত হয়ে, রাজকীয় বিলাসবহুল জীবনযুদ্ধবিহীন সেই যাপনে, বৈষয়িক পার্থিব সুখ হয়তো ছিল, ছিল না বনবাসজীবনে প্রকৃতি ও তার অনুষঙ্গের প্রতিকূলতার সঙ্গে অনবরত সংগ্রাম। ভবিষ্যতে রাম একজন সফল রাজা হয়েছেন। তাঁর এই উত্তরণের চালচিত্রে, এই সাদাকালোর আঁচরে আঁকা অরণ্যপ্রকৃতির সুখকর অনুভূতি ও তার বৈপরীত্য, হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়া বিরুদ্ধশক্তির আগ্রাসী থাবা, সবমিলিয়ে এক বিচিত্র রঙরূপের সমন্বয় সৃষ্টি করেছে, যেটি হয়তো রাজা রামচন্দ্রের জীবনের এক অনবদ্য রসায়ন।
প্রজ্ঞাবান দূরদর্শী মহান মহর্ষি ভরদ্বাজের ব্যাখ্যা ভরতের মায়ের প্রতি নঞর্থক ভাবকে সদর্থক দিকে চালিত করেছে। মহর্ষির মতানুসারে, রামের বনবাস সুখপ্রদ হয়েছে।কারণ এর ফলে দেব, দানব, প্রজ্ঞাবান ঋষি সকলের মঙ্গল সম্ভব। রাম ছাড়া অন্যদের কল্যাণ কীভাবে সম্ভব হয়েছে সেটি হয়তো প্রসঙ্গান্তরের বিষয়। তবে ভাবি অযোধ্যাপতি রাম যে বিপুল অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে একজন পরিণত রাজায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, এ কথা হয়তো বলার অপেক্ষা রাখে না। অযোধ্যার রাজপ্রাসাদে, উত্তরাধিকারসূত্রে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত হয়ে, রাজকীয় বিলাসবহুল জীবনযুদ্ধবিহীন সেই যাপনে, বৈষয়িক পার্থিব সুখ হয়তো ছিল, ছিল না বনবাসজীবনে প্রকৃতি ও তার অনুষঙ্গের প্রতিকূলতার সঙ্গে অনবরত সংগ্রাম। ভবিষ্যতে রাম একজন সফল রাজা হয়েছেন। তাঁর এই উত্তরণের চালচিত্রে, এই সাদাকালোর আঁচরে আঁকা অরণ্যপ্রকৃতির সুখকর অনুভূতি ও তার বৈপরীত্য, হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়া বিরুদ্ধশক্তির আগ্রাসী থাবা, সবমিলিয়ে এক বিচিত্র রঙরূপের সমন্বয় সৃষ্টি করেছে, যেটি হয়তো রাজা রামচন্দ্রের জীবনের এক অনবদ্য রসায়ন।

ছবি: সংগৃহীত।
পর্বতের যে সমাহিত রূপ, সেখানে মনের ক্ষত নিরাময় হয়তো সম্ভব। তাই বোধ হয় মহর্ষি ভরদ্বাজ রামচন্দ্রের বনবাস জীবনের প্রারম্ভে চিত্রকূট পর্বতে বাসস্থান নির্বাচন করেছিলেন। রামচন্দ্র সত্যের প্রতিমূর্তি যাঁকে আমরা নিজের অগোচরে খুঁজে চলি জীবনভর, সেই সত্যান্বেষী বিবেকবান ভরতের মতো। অনুষঙ্গে থাকেন অনেকে, যাঁরা নৈতিকভাবে আমাদের সমর্থক, এক প্রলম্বিত যাত্রায় যাঁরা সহযাত্রী হতে ইচ্ছুক হন। গৃহস্থালির ধোঁয়া যেন প্রাত্যহিকতার আঙ্গিকের প্রচ্ছন্ন আবরণ।
প্রহেলিকামাখা নিত্য ঘর গেরস্থালির মধ্যে লুকিয়ে থাকে অনেক সৎ প্রচেষ্টা। ভরতের মতো কেউ তার উৎসসন্ধানে হয়তো সফল হন, হীরের দ্যুতি কী সকলে চিনতে পারে? পারে না তো,সেই কষ্টিপাথরের আধার তো থাকে না সকলের। তাই ভরত হতে পারি না। একমুখী লক্ষ্যে, দৃঢ়তার সঙ্গে সত্যানুসন্ধান, তাঁকে জীবনে জাড়িত করে, নিজে একজন ন্যায়নিষ্ঠ সৎ ব্যক্তিত্ব হতে পারি কী?না তো। সেই কারণেই আলো কালোর বিরোধ, সামঞ্জস্যহীন গ্লানিময়তায় লীন হয়ে, প্রাত্যহিক যাপনের দৈনন্দিন ক্লেদ আচ্ছন্ন করে রাখে আমাদের জীবন।—চলবে।
প্রহেলিকামাখা নিত্য ঘর গেরস্থালির মধ্যে লুকিয়ে থাকে অনেক সৎ প্রচেষ্টা। ভরতের মতো কেউ তার উৎসসন্ধানে হয়তো সফল হন, হীরের দ্যুতি কী সকলে চিনতে পারে? পারে না তো,সেই কষ্টিপাথরের আধার তো থাকে না সকলের। তাই ভরত হতে পারি না। একমুখী লক্ষ্যে, দৃঢ়তার সঙ্গে সত্যানুসন্ধান, তাঁকে জীবনে জাড়িত করে, নিজে একজন ন্যায়নিষ্ঠ সৎ ব্যক্তিত্ব হতে পারি কী?না তো। সেই কারণেই আলো কালোর বিরোধ, সামঞ্জস্যহীন গ্লানিময়তায় লীন হয়ে, প্রাত্যহিক যাপনের দৈনন্দিন ক্লেদ আচ্ছন্ন করে রাখে আমাদের জীবন।—চলবে।
* মহাকাব্যের কথকতা (Epics monologues of a layman): পাঞ্চালী মুখোপাধ্যায় (Panchali Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা, সংস্কৃত বিভাগ, যোগমায়া দেবী কলেজে।