শুক্রবার ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫


বই প্রকাশ অনুষ্ঠান।

গতকাল শীতের সন্ধ্যাটি বড় মাধুর্যময় হয়ে উঠেছিল রবীন্দ্রসদনের অদূরে অবস্থিত রোটারি সদনে। বাচিক-জগতের নক্ষত্র সমাবেশে, বিশিষ্ট বহু চিকিৎসক ও সাহিত্য ব্যক্তিত্বদের উজ্জ্বল উপস্থিতিতে শীতসন্ধ্যাটি সত্যিই বড় মাধুর্যময়, বড় মনোরম হয়ে উঠেছিল। প্রকাশিত হল এদেশের খ্যাতনামা চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ও চেন্নাই-শংকর নেত্রালয়ের ডিরেক্টর ডাঃ জ্যোতির্ময় বিশ্বাসের লেখা চমৎকার একটি বই, ‘চিকিৎসকের আত্মকথন’।
বইটি প্রকাশ করেছে বইপাড়ার নামি প্রকাশন-সংস্থা ‘পুনশ্চ’। প্রকাশিত হয় ভারি অভিনব ভঙ্গিতে। পনেরো কিলো ওজন, নলের গুড়ের সন্দেশ দিয়ে প্রস্তুত, বিখ্যাত মিষ্টান্ন-ব্যবসায়ী ফেলু মোদকের পাঠানো উপহার-কেকটি কেটে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় খাইয়ে দেন ডাঃ জ্যোতির্ময় বিশ্বাসকে। এই পর্বের আগে প্রকাশক সন্দীপ নায়ক স্বাগত ভাষণ দেন।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১০৯: কী ছিল চিঠিতে, উত্তর লিখতে গিয়ে উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের হাত কেঁপেছিল

প্রজাতন্ত্র

প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা পর মঞ্চ আলো করে বসে থাকা বিশিষ্টজনেরা একে একে ডাঃ বিশ্বাসের কর্মময় জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিখরে অবস্থান করা এই মানুষটি কতখানি কাব্যপ্রাণ, সাহিত্যমনস্ক, তা সকলের আলোচনায় বারবার ফুটে ওঠে। চিকিৎসক হিসেবে তিনি কতখানি সফল, বিদেশেও তাঁর যে খ্যাতি ও স্বীকৃতি সে বিষয়েও বক্তারা আলোকপাত করেন। ডাঃ বিশ্বাসের গবেষণাকর্মে চিকিৎসাবিজ্ঞান আরও এগিয়ে যাক, আলোকিত হোক সকলে। সচল থাকুক তাঁর কলম। উপস্থিত সকলেই এই প্রার্থনা করেন।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৮৫: সুন্দরবনের পাখি — মাছরাঙা

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৪৮: প্রতিভা দেবী—ঠাকুরবাড়ির সরস্বতী

এই আনন্দময় সন্ধ্যায় উপস্থিত ছিলেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, ব্রততী বন্দোপাধ্যায়, স্বপ্নময় চক্রবর্তী, বিজয়লক্ষ্মী বর্মন, প্রণতি ঠাকুর, সৌমিত্র মিত্র, ডাঃ পূর্ণেন্দুবিকাশ সরকার, রজত বন্দ্যোপাধ্যায় ও পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সহ বহু বিশিষ্টজন। অনুষ্ঠানে ডাঃ জ্যোতির্ময় বিশ্বাস নিজের লেখা একটি রম্য রচনা পাঠ করেন। বিষয়- মাহাত্ম্যে ও উপস্থাপন-মুন্সিয়ানায় এই রম্যরচনা পাঠ পরম উপভোগ্য হয়ে উঠেছিল। ব্রততী বন্দোপাধ্যায় ও প্রণতি ঠাকুরের বক্তৃতার মাঝে কবিতার উচ্চারণ উপস্থিত শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ডাঃ দেবাশিস দাশ। গ্রন্থ-প্রকাশ অনুষ্ঠানের পর দেখানো হয় একটি তথ্যচিত্র, ‘এসেছো জ্যোতির্ময়’। তথ্যচিত্রটি নির্মাণ করেছেন পলাশ দাশ।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৪: শিকারী ও ‘শিকার’

মাই নেম ইজ গওহর জান—ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে অঘোষিত বিপ্লব এনেছিলেন এই শিল্পী

এই অনুষ্ঠানে অভূতপূর্ব জনসমাগম হয়েছিল। বহু মানুষ সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। ডাঃ বিশ্বাসের জন্ম নদিয়ার বাদকুল্লায়। চিকিৎসাবিদ্যা নিয়ে পড়াশুনার শুরু হয়েছিল কলকাতায়।’তরুণ-বয়সে বাচিক শিল্পী হিসেবে এই শহরে যথেষ্ট খাতি লাভ করেছিলেন। সেই কবে তিনি কলকাতা ছেড়েছেন। এত বছর পর কলকাতা বিশিষ্টজনেরা যেভাবে তাঁকে প্রাণের আনন্দে সংবর্ধিত করলেন, স্বীকৃতি দিলেন, তা অতুলনীয়। এমনভাবে স্বীকৃতি দিতে বোধ হয় কলকাতাই পারে।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৯৯: আলোকলতা তিলোত্তমারা যুগে যুগে পুরুষের উজ্জীবনী শক্তির আধার

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০০: চোর মাচায়ে শোর

চিকিৎসকের আত্মকথন’ বইটির প্রথম লেখার শিরোনাম ‘চোখের আলোয় দেখেছিলাম চোখের বাহিরে’। রবীন্দ্রনাথের গানের পঙক্তিটির আশ্চর্য-সুন্দর ব্যবহার চমকিত করে। রবীন্দ্রনাথ যে ডাঃ জ্যোতির্ময় বিশ্বাসের জীবনের পরতে পরতে রয়েছেন, তা আরও কয়েকটি লেখায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাঁর অনুভূতিতে, উপলব্ধিতে কবি চিরজাগ্রত। ডাঃ জ্যোতির্ময় বিশ্বাসের অন্তর উৎসারিত এই রবীন্দ্রপ্রেম তাঁর বেশ কয়েকটি লেখাকে ভিন্নতর মাত্রা দিয়েছে।

ডাঃ জ্যোতির্ময় বিশ্বাস।

একজন হৃদয়বান চোখের ডাক্তার হিসেবে রোগীদের মনের কাছাকাছি পৌঁছতে পারেন ডাঃ জ্যোতির্ময় বিশ্বাস। রোগীও পরম নির্ভরতায় নিজেকে মেলে ধরে। ভারত-বিখ্যাত ডাক্তারবাবুটি সব সময় রোগীকে সত্য অকপটে বলতে পারেন, তা নয়। সত্যটিকে কৌশলে এড়িয়ে রোগীর মনে আশা জাগিয়ে রাখেন। মানসিকভাবে রোগীকে ভালো রাখার জাদুমন্ত্র যে ডাঃ জ্যোতির্ময় বিশ্বাস জানেন, অহরহ তার বাস্তব প্রয়োগ ঘটান, এ বইয়ের বেশ কয়েকটি লেখায় সে দৃষ্টান্ত রয়েছে। বইটির ভূমিকা লিখেছেন বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক ও গবেষক ড. পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

ডাঃ বিশ্বাসের গবেষণাকর্মে চিকিৎসাবিজ্ঞান আরও এগিয়ে যাক, আলোকিত হোক সকলে। সচল থাকুক তাঁর কলম। আরও লিখুন, আরও কবিতা বলুন। আমরা মুগ্ধ হয়ে পড়তে চাই, শুনতে চাই। জানি, তাঁর জন্য অনেক অনেক সাফল্য অপেক্ষা করছে।

Skip to content