আমি এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতে লাগলাম। হঠাৎ একটা জায়গায় গিয়ে রাস্তার ধারেই থরে থরে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড় করানো আছে ছোট থেকে মাঝারি মাপের অনেক বিমান। আমি আর কালক্ষেপ না করে সেখানেই গাড়ি ঢোকাতে গেলাম। ওমা, গাড়িটা দাঁড় করতে গিয়ে দেখি সে আরও মজার ব্যাপার। সেখানে গাড়ি আর বিমান পাশাপাশিই দাঁড় করানো আছে। শুধু তাই নয় আবার ঢোকার মুখেই বড় বড় করে একটা ফলকে লেখা আছে ‘প্লিজ ডু নট পার্ক ইওর কার ইন ফ্রন্ট অফ প্লেন’। অর্থাৎ কিনা বিমানের সামনে গাড়ি দাঁড় না করানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে সবাইকে।
আমি তো দেখেই অবাক। কোনও দিনও ভাবিনি এমন একটা অদ্ভুত জায়গা দেখবো বলে যেখানে কিনা গাড়ির পাশে পাশে লোকে বিমানও দাঁড় করিয়ে রেখেছে লোকজন। অদ্ভুত। আমি শুধু একবার মনে মনে ভাবলাম যে, কলকাতার গড়িয়াহাট সেতুর তলায় যেখানে প্রচুর লোক নিজের গাড়ি রেখে যায় সেখানে গাড়ির পাশে পাশে কয়েকটা বিমানও দাঁড় করানো আছে। অথবা প্লেটভিলে আমার বাড়ির সামনেটায় দাঁড় করানো আছে একখানা বড় হেলিকপ্টার। এটা ভেবেই আমি নিজের অজান্তেই হঠাৎ করে খুব জোরে হেসে উঠেছিলাম। হাসির জোর বুঝলাম অন্য কয়েকজন লোককে দেখে। দেখি তারা হঠাৎ করে আমার দিকে হতচকিত ভাবে চেয়ে দেখছে।
আরও পড়ুন:
রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৪৬: আলাস্কার আকাশে অহরহ ব্যক্তিগত বিমান ওঠানামা করে
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১০৫: রবীন্দ্রনাথ ভয় পেতেন মহর্ষিদেবকে
খোঁজ খবর করে দেখলাম, ওই পার্কিংয়ের জায়গা তা আসলে একটা পিৎজার রেস্তরাঁর পার্কিং। মানে সব মিলিয়ে পরিবেশ তা হল যে একটা ছোট্ট পিজার দোকানের সামনে গাড়ি আর বিমান দুইই রাখার বন্দোবস্ত। আবার দোকানের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য বিমানের সামনে গাড়ি দাঁড় করতে নিষেধ ও করা হয়েছে। বোঝো ঠেলা, যেন লোকে বিদেশ থেকে উড়ে আসবে শুধু এদের পিৎজা খেতে। আমি আরও জোরে হেসে উঠেছিলাম। আমি নিশ্চিত যে, ওই দিন যারা আমাকে ওখানে দেখেছিল তারা আমাকে পাগল বলেই ঠাহর করেছিল। পরে বুঝলাম যে না একদমই ব্যাপারটা সেরকম নয়। অবশ্যই সেরকম হওয়ার কথাও নয়।
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৭৮: মা সারদার ‘পরকে আপন করা’
সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৮১: সুন্দরবনের পাখি—বেনে বউ
আসলে এই দিকটা হচ্ছে ফেয়ারব্যাঙ্কসের মূল বিমানবন্দর মানে যেখানে আমি গতকাল এসে নেমেছিলাম এটা হচ্ছে তার পেছন দিকটা। অর্থাৎ, বিমান থেকে নেমে আমি যেদিক দিয়ে বেরিয়েছিলাম শহরে যাওয়ার জন্য সেদিকে না গিয়ে যদি বিমানের রানওয়ে পেরিয়ে উল্টো মুখে আস্তে থাকতাম তাহলে এখানে চলে আসতাম। এই দিকটা মূলত ব্যবহার করা হয় ব্যক্তিগত উড়ানের ওঠানামার জন্যই।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৯৬: রাজনৈতিক পরিসরে অখ্যাতি ও সন্দেহর আবিলতা থেকে কি মুক্তি সম্ভব?
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৬৯: টাকা-পয়সা থাকলে চোর-ডাকাতকেও লোকে সম্মান দেখায়
একটু এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করতে গিয়েই দেখলাম যে ওই থরে থরে সাজানো বিমানগুলো পেরিয়ে গেলেই সামনে পরপর দু-তিনটে বিরাট রানওয়ে। সেটা ধরেই এই ছোট ও মাঝারি মাপের ব্যক্তিগত বিমানগুলো ওঠা নাম করে। দূরে তাকালে মূল বিমানবন্দর টাও লক্ষ্য করা যায়। পরের দিন ফিরে যাওয়ার আগে আমাদের ডিন একবার বলেছিলেন দেখা করে যাওয়ার জন্য। তো সেই অনুরোধ রাখতে আমি পরদিন সক্কাল সক্কাল একবার গেলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
আরও পড়ুন:
শ্যাম বেনেগল সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে পারতেন
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৯৬: যদি হই চোরকাঁটা
ডিন মহাশয় সেদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় ছাত্র সংগঠনের কথা জানালেন। সেই সংগঠনের নাম ‘নমস্তে ইন্ডিয়া’। নমস্তে ইন্ডিয়ার উদ্যোগে এখানে প্রতি বছর দীপাবলি অনুষ্ঠিত হয় বেশ জাঁকজমকের সঙ্গেই। সঙ্গে এটাও জানালেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যিনি উপাচার্য; এখানকার ভাষায় যাঁকে বলা হয় প্রোভস্ট, তিনিও ভারতীয়। সেই সঙ্গে শহরের আরও কিছু দর্শনীয় স্থানের খোঁজ খবর দিলেন। —চলবে। —চলবে।
* রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা (Mysterious Alaska) : ড. অর্ঘ্যকুসুম দাস (Arghya Kusum Das) অধ্যাপক ও গবেষক, কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস।