শনিবার ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫


ছবি: প্রতীকী।

কর্মের এই দুরূহ স্বরূপ কীরকম ঠিক? কোনটি কর্ম, কোনটি অকর্ম, কোনটি বিকর্ম তা না জানলে নিষ্কাম কর্মের সাধন যথার্থ হতে পারে না। কর্তব্যের অনুষ্ঠান হল কর্ম, নিষিদ্ধের অর্থাৎ অকর্তব্যের অনুষ্ঠান বিকর্ম। কর্মোত্তীর্ণ সন্ন্যাস হল কর্মের অকরণ বা অকর্ম। বেদবিহিত কর্তব্যের যথার্থ অনুগমন কর্তব্য বলে নন্দিত। আবার বেদাদি শাস্ত্রে যা নিন্দিত তা বিকর্ম। কিন্তু এভাবেই কি কর্ম কিংবা তার ভেদ যথার্থরূপে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে? সেই কোন অতীতে কর্মের অনুষ্ঠাতা স্বীয় কর্মের সফল সম্পাদনের মধ্য দিয়েই শতায়ু হতে চেয়েছেন।
কর্মফলের ভার জীবকে অনুসরণ করবে এমন বলা হলেও কর্মত্যাগ কখনোই উপদিষ্ট হয়নি। তা একান্তই অসম্ভব-ও বটে। যিনি শুদ্ধহৃদয়ে নিষ্কাম কর্মের অভ্যাস করেন, তাঁর কর্মে সচ্চিদানন্দস্বরূপের হিরণ্যকান্তির প্রভা, তিনিই হয়ে ওঠেন যথার্থ জ্ঞানী। আর যে সন্ন্যাসী কলুষচিত্তে আসক্তহৃদয়ে কর্মত্যাগ করেন, তাঁর দুর্গতি তাঁকে কর্মবন্ধনে জর্জরিত করে তোলে।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১১: ক্যাথেরিন ম্যান্সফিল্ড ও মিডলটন মারে: এক আশ্চর্য বিবাহিত সম্পর্ক

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১০১: খামখেয়ালির গিরীন্দ্রনাথ

এরকম কর্ম ও অকর্মের যথার্থ রূপ যিনি উপলব্ধি করেন, তিনিই যথার্থ ধীমান ও মনুষ্যকুলে কর্মের অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ করেন। ফলের কামনা একান্তভাবেই ত্যাগ করে যিনি জ্ঞানাগ্নিতে বিহিত ও নিষিদ্ধ কর্মসমূহকে দগ্ধ করতে সক্ষম হন, তিনিই বিদগ্ধ, বিবেকী ও পণ্ডিত।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৯১: নুনিয়ার অদ্ভুত ক্ষমতা

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৪৫: ঠাকুরবাড়ির মেয়েরা এবং চলচ্চিত্র

একটি মহাযুদ্ধ, দুটি যুযুধান পক্ষ জীবন অথবা মৃত্যু, ভূভাগ কিংবা পরাজয় এই দুয়ের মাঝে দাঁড়িয়ে। যে দ্বন্দ্বের সমাধান যুদ্ধ, ধ্বংস অথচ সে পথেই অধর্মের বিনাশ ঘটে অধিকার ও ধর্মের প্রতিষ্ঠা, সেই মহাসংগ্রাম অনিবার্য হয়েছিল সেদিন। গীতার অনন্ত আহ্বানেই সেই দাবী, সেই বাণীর প্রতিষ্ঠা। যখন ধর্মের গ্লানি আচ্ছন্ন করে বোধকে, সেই পথেই অধর্মের অভ্যুত্থান ঘটে বিপুল বেগে, তখন শুভবোধ নিজেকে প্রকাশ করে।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১০: ভার্জিনিয়া ও লিওনার্ড উলফ—উন্মাদনা ও সৃষ্টি /২

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫১: সেই ‘পৃথিবী আমারে চায়’

বিবেকবান মানুষ তখন আশু যথার্থ কর্তব্যকর্মের অনুষ্ঠানে সফলকাম হয়, যাদের অন্তঃকরণ আলোকিত নয়, বিহ্বলচিত্ত হয়ে যাদের মগ্নচৈতন্য সংকোচ-আশঙ্কা, লাভ-ক্ষতি কিংবা লজ্জা-হতাশার আবর্তে দীর্ণ-জীর্ণ হয় তাদের জীবনতরণীর বৈঠা নিতে মনমাঝি আসেন ভবনদীর কুলে, তাদের থমকে যাওয়া বিজয়রথের রশি তুলেন ধরেন পরাণসখা বন্ধু…পথ বেঁধে দেন, ভেঙেও দেন, গড়েও তোলেন। তাঁর অমৃতনিষ্যন্দিনী আনন্দগীতিই গীতা।
* গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে (A Special Write Up on Shrimad Bhagwat Gita): লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।

Skip to content