বাথটাব (পর্ব-১০)
ইউটিউবার শব্দটা ইংরিজি ভাষায় প্রথম আমদানি হয়েছে ১৮ বছর আগে ২০০৬ সালে। নানা দেশের নানা ভাষায় ইউটিউব কন্টেন্ট তৈরি হয় জনপ্রিয় হয়। ভিউয়ের নিরিখে ইউটিউব ইনফ্লুয়েন্সার বা মাইক্রো সেলিব্রিটিসরা এর থেকে অর্থ উপার্জন করেন। এ ভাবেই বাংলা ভাষাতেও নানা ধরনের ব্যক্তিগত ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। বিষয় বৈচিত্র্য নানা ধরনের। একদম ইউটিউবার শুধু স্কুপ নিয়ে ভিডিয়ো কনটেন্ট তৈরি করেন এবং যদি তাদের প্রচার করা খবর সঠিক তকমা পেয়ে যায় তখন তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা বেড়ে যায়। স্কুপ বা গোপন খবর ফাঁস করবার প্রতিযোগিতায় অনেকে রয়েছেন তারই মধ্যে ‘ইউটিউবানন্দ’ নামে একজন চোখে কালো চশমা পরে তার গোপন ডেরা থেকে খবর পরিবেশন করেন। তিনি মানে সেই কম বয়সী ছেলেটি বেশ বিখ্যাত। সেদিন যে ভিডিয়ো বাবু দেখেছিল শ্রেয়া যেটা আবার পরে শেয়ার করেছিল, মফিজুল সেই ইউটিউবানন্দেরই একটা নতুন ভিডিও পাঠিয়েছে। এই ভিডিওতে আরও স্পষ্ট অভিযোগ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সেই নায়িকা হলেন মৃত অভিনেত্রী কৌশিকী দত্তগুপ্ত।
কৌশিকী কলকাতা শহরের একজন বিখ্যাত ডাক্তারবাবুর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ১০ মিনিটের নতুন ভিডিয়োতে নানান তথ্য দিয়ে ইউটিউবানন্দ স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে সেই বিখ্যাত ডাক্তারবাবুর সঙ্গে অধুনা মৃত টালিগঞ্জের উঠতি সেন্সেশন কৌশিকী দত্তগুপ্তের রগরগে প্রেম ছিল। এই ভিডিওতে বলা হয়েছেযে মাস আষ্টেক আগে কৌশিকীর বাবাকে মৃত্যুমুখ থেকে ফিরিয়ে আনেন এই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারবাবু আর তাঁর দাবি মেটাতেই কৌশিকীকে সেই বিবাহিত ডাক্তারবাবুর সঙ্গে গোপনে সিঙাপুরে রাত কাটাতে হয়েছিলো। আসলে কৌশীকী গিয়েছিলো শ্যুটিংয়ে আর সিঙ্গাপুরেই নাকি সেই ডাক্তারবাবুও ওষুধকোম্পানি স্পনসর্ড ছুটি কাটানোর কনফারেন্স ছিল। আসল সত্যটাও প্রমাণসমেত জানিয়ে দিল সেই মশলামুড়ি ইউটিউবার।
ওষুধ কোম্পানির কনফারেন্স ছিল তাইল্যান্ডের রিভারক্রুজে। ডাক্তারবাবু প্রথম দিনটা ক্রুজে কাটিয়ে ব্যাঙ্কক থেকে আড়াই ঘণ্টা দূরে সিঙাপুরে উড়ে গেলেন। তারপর আবার শেষদিনে এসে জয়েন করে ছিলেন তাইল্যান্ড রিভারক্রুজে। এর প্রমাণ হিসেবে কৌশিকীর কলকাতা সিঙ্গাপুর এয়ার টিকিট। ডাক্তারবাবুর ব্যাংককের রিভার ক্রুজের টিকিট কলকাতা ব্যাঙ্ক অফ ব্যাঙ্ক অফ কলকাতা এয়ার টিকিট সব দেকে খিয়ে দিলেন। কিন্তু এত কিছু বলা সত্বেও ডাক্তারবাবুর নামটা এখানে কোথাও প্রকাশ করা হল না। টিকিটে নামের অংশটাকে কালো করে দেওঁয়া হয়েছে। ঠিক আজ রাত বারোটায় আবার একটি ভিডিয়ো আসবে যাতে সেই ডাক্তারবাবুর পূর্ণ পরিচয় থাকবে। কিছুই নয়, সেদিনের প্রথম ভিডিওতেই সবটুকু বলে দেওয়া যেত, সব প্রমাণ হাতে নিয়েই আরও দুটো ভিডিয়ো করা হল এবং তাতে আরও ভিউয়ারশিপ বাড়ানোর একটা অংককষা খেলা। রোগীকে যেমন ফোঁটা ফোঁটা ড্রিপ দেওয়া হয় ঠিক তেমন ফোঁটা ফোটা কেচ্ছা একটু একটু করে বাজারে চাড়া হচ্ছে। একটা জিনিস খুব স্পষ্ট। এই ইউটিউবার খুব জেনে বুঝে এই ভিডিয়োটি করেছেন। সেই ডাক্তারবাবুর সব প্রমাণ যে তার হাতে রয়েছে এটা সে জনসমক্ষে জানিয়ে দিয়েছে।
প্রথম ভিডিয়ো নামহীন, পরেরটায় মৃতা কৌশিকীর নাম। এরপর ডাক্তারবাবুর নাম যিনি এখন বর্তমান। কৌশিকীর মা-বাবার যা অবস্থা তাতে তাঁরা মানহানির কেসকাছারি কিছু করবেন না। এখন পরের ভিডিয়ো প্রকাশ করবার আগে সেই ডাক্তারবাবুর সঙ্গে একটা বেচাকেনার খেলা হতে পারে। মোটা টাকার বিনিময়ে সেই ডাক্তারবাবু যদি পরের ভিডিয়োটা বন্ধ করে দিতে সক্ষম হন।তাতে তাঁর নাম আসবে না। খবর তো সোর্স দেয়। খবর দেয়নি। এটা সরাসরি টাকা আদায়ের একটা ফাঁদ কিন্তু আইন মেনে তাকে ধরা কঠিন। অন্যদিকে যেহেতু এই টিকিটের ব্যাপার-স্যাপারগুলো এত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, তাই ডিজিটাল রেফারেন্স ধরে অন্য কেউ এইসব প্রমাণের কাছাকাছি পৌঁছে যেতেই পারেন। সুতরাং ডাক্তারবাবু ঘুষ দিয়ে কতজনের মুখ বন্ধ করবেন? তাছাড়া কৌশিকীর প্রেগন্যান্সির ব্যাপারটা আজ গোপন আছে বলে কাল তো আর গোপন থাকবে না। তখন কুৎসা কেলেঙ্কারির টকঝাল চুরমুর পরিবেশন-এর লোভে বহু লোকজন ছোটাছুটি শুরু করবেন কৌশিকীর দুর্গাপুরের বাড়িতে।
সিনেমার সিরিয়ালে বিখ্যাত হয়ে গেলে পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না, সেটা যেমন সত্যি ঠিক, তেমনি সাদাজামা পরে কাদারাস্তায় দৌড়াতে গেলে যেরকম গায়ে কাদার দাগ লেগে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে সেটাও সত্যি। কৌশিকির মা-বাবা নিশ্চয়ই এখন বুঝতে পারছেন যাঁরা তখন তাঁদের মেয়ের সিরিয়াল করার বিষয়ে রাজি হবার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন তাঁরা হয়ত শুধু চাঁদের রূপোলি জ্যোৎস্নাটুকুই দেখেছিলেন চাঁদের গায়ে খানাখন্দের কালো কালো দাগগুলো খেয়াল করেননি।
ঘটনাক্রম যেদিকে এগোচ্ছে তাতে কেমন যেন মনে হচ্ছে যে এই ডাক্তারবাবু শ্রেয়ার অনুমান মতো চিনি যদি প্রৌঢ় ডাঃ সুরজিত ব্যানার্জি হন তাহলে তিনি আষ্টেপৃষ্ঠে এই খুনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়বেন। যদি ধৃতিমানের অনুমান সত্যি হয় তাহলে এই কদিনের নিউটাউনের হোটেলে থাকার মধ্যে সেই রোমিও ডাঃ সুরজিত ব্যানার্জি নিশ্চয়ই একবার কৌশিকীর সঙ্গে দেখা করতে যাবেন।
নিউটাউনের সেই হোটেলের রিসেপশনের মহিলাকে ফোন করল ধৃতিমান। জানাল হোটেলের রিসেপশনের সিসি ক্যামেরা রেজিস্টার এর এন্ট্রি মিলিয়ে প্রথম দিন হোটেলে চেকিং করার পর থেকে শেষ দিন পর্যন্ত কে কে নায়িকা কৌশিকীর হোটেল রুমে এসেছেন তার লিস্ট চাই। খুব জরুরি।
এসব ভাবতে ভাবতেই ইতিমধ্যে রাত বারোটা বেজে গেছে সেটা বাবুর খেয়াল ছিল না। খেয়াল হলো শ্রেয়া বাসুর ফোন পেয়ে । শ্রেয়া জানালো – ইউটিউবানন্দের ভিডিয়োর কথা! সন্ধ্যেবেলায় প্রথম ভিডিয়োটাও শ্রেয়া দেখেছে। কথামতো এখন দ্বিতীয় ভিডিয়োতে ডাক্তারবাবুর পরিচয় দিয়েছে ইউটিউবার! তিনি কি সুরজিত ব্যানার্জি নাকি অন্যকেউ?—চলবে।
কৌশিকি দত্তগুপ্ত হত্যারহস্য পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ৫ ডিসেম্বর ২০২৪
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।