আলাস্কার আকাশে হেলিকপ্টার।
প্রথমত আলাস্কা হল অনেকগুলো দ্বীপের সমষ্টি। সেদিক থেকে এই রাজ্যকে একটি দ্বীপপুঞ্জও বলা যেতে পারে। কাজেই এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে দ্রুত যাতায়াত করতে গেলে কিছু না কিছু উড়ানের মাধ্যম খুবই জরুরি। আবার একই দ্বীপের মধ্যেও সমস্যা কম নয়। কিছু ক্ষেত্রে গ্রামের চারিদিকে রয়েছে বিশাল বনভূমি, যা পেরিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আবার কিছু গ্রাম এমনই প্রত্যন্ত জায়গায় যে, সেখানে শীতকালে বরফ পড়লে রাস্তা পরিষ্কার করার উপায় থাকে না।
মুশকিল হল, সেই সব জায়গায় বরফ পরিষ্কার করা জন্য যে সব বিরাট বিরাট যন্ত্রপাতি দরকার, সেগুলো নিয়ে যাওয়াই এখনও পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। সেখানে গাড়ি তো দূর অস্ত হেটে চলেও বেশি দূর যাওয়া মুশকিল হয়ে যায়। এখন এই সমস্ত জায়গায় সুষ্ঠু ভাবে বিমান পরিষেবা দেওয়া এক সরকারের পক্ষে অথবা কোনও একটি বা দুটি কোম্পানির পক্ষে সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন:
ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব ৩৮: পুত্র বীরেন্দ্রর বিয়েতে রবীন্দ্রনাথকে আমন্ত্রণ জানান মহারাজ রাধাকিশোর
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১০১: খামখেয়ালির গিরীন্দ্রনাথ
আমাদের যেমন দেশে খুব প্রত্যন্ত জায়গায় যেতে হলে নিজের গাড়ি করে বা চেনাপরিচিত কারও গাড়ি ভাড়া যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না, ঠিক তেমনই এই অঞ্চলে বিমান ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই। তাছাড়া পর্যটনের একটা ব্যাপার তো রয়েইছে। তাই এখানে প্রচুর ছোট ছোট ব্যক্তিগত বিমান রয়েছে।
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৮৯: মাথার কান
রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৪৫: বহু আলাস্কাবাসীর ব্যক্তিগত বিমান বা হেলিকপ্টার রয়েছে!
কিছু ক্ষেত্রে সেগুলো পুরোপুরি ব্যক্তিগত প্রয়োজনেই ব্যবহার করা হয়, যেমন আমরা গাড়ি রাখি বাড়িতে অনেকটা সেরকমই। আবার কিছু ক্ষেত্রে সেগুলো ভাড়া খাটে। মানে যেমন আমাদের দেশে গাড়ি ভাড়া পাওয়া যায়, ঠিক সেরকমই ব্যাপারটা। আবার কিছু ক্ষেত্রে কিছু স্থানীয় লোক কোনও কোনও নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যে বিমান পরিষেবা দিয়ে থাকে, ঠিক যেমন আমাদের দেশে অটো বা টোটোর মালিকেরা একটি নির্দিষ্ট রাস্তায় বা রুটে সেগুলোকে ভাড়া খাটান, একেবারেই সেরকমই। শুধু অটো বা টোটোর বদলে এখানে চলছে একটা বিমান।
আরও পড়ুন:
বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১০: ভার্জিনিয়া ও লিওনার্ড উলফ—উন্মাদনা ও সৃষ্টি /২
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫১: সেই ‘পৃথিবী আমারে চায়’
কাজেই বেশ বোঝা যাচ্ছে এখানে বিমানের দরকার কতটা। এখন দেশের অটো-টোটো বা গাড়ির প্রাচুর্যের সঙ্গে তুলনা করলেই বোঝা যাবে এখানে বিমান বা হেলিকপ্টারের প্রাচুর্য ঠিক কতটা। এই কথাটা আমি আগেই শুনেছিলাম, কিন্তু ওই ইন্টারভিউয়ের দিন চাক্ষুষ করার আগে ব্যাপারটা ঠিক উপলব্ধি করতে পারিনি। প্রথমত ইন্টারভিউয়ের সময় যখনই ওই ডিন মহাশয়ের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় পরিভ্রমণে বেরিয়েছিলাম তখনই আকাশে দেখেছি ওই ব্যক্তিগত বিমানগুলো উড়ছে মুহুর্মুহু। ইন্টারভিউ শেষ হতে হতে প্রায় হয়ে গেল প্রায় সন্ধে সাতটা-সাড়ে সাতটা।
আরও পড়ুন:
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৬৪ : অকারণে কেউ অন্যের ভালো করতে যায় না
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৭১: মা সারদার নলিনীর মানভঞ্জন
বিশ্ববিদ্যালয়েই নৈশভোজের ব্যবস্থা ছিল। ভোজ সেরে বেরোতে প্রায় সাড়ে আটটা মতো বাজল। তারপর আমি গাড়ি নিয়ে ঘুরতে বেরোলাম আবার। আগেই বলেছি, সেই সময়টা চিল গ্রীষ্মকাল। কাজেই সারাক্ষণই সূর্যের আলো। যদিও দিনটা ঈষৎ মেঘলা। কাজেই মধ্যরাত্রের সূর্য দেখার ইচ্ছাটা জলাঞ্জলি দিতে হল। —চলবে।
* রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা (Mysterious Alaska) : ড. অর্ঘ্যকুসুম দাস (Arghya Kusum Das) অধ্যাপক ও গবেষক, কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস।